দেশের প্রকৃত রিজার্ভ ১৭ বিলিয়ন ডলার
০৬ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০২ এএম
নীতিগত সমন্বয়হীনতা ও নেতৃত্বের অভাবে রিজার্ভ কমছে -অর্থনীতিবীদদের মত
২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ ছিল ৪ হাজার ৮০০ কোটি বা ৪৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি। সেই রিজার্ভ এখন কমে হয়েছে ২ হাজার ৬৭৪ কোটি (২৬ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন) ডলার। গত দুই বছরে প্রতি মাসেই রিজার্ভ গড়ে ১০০ কোটি বা ১ বিলিয়ন ডলার করে কমেছে। প্রতিদিনই যেন কমছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত। আমদানি নিয়ন্ত্রণসহ নানা চেষ্টার পরও রিজার্ভের পতন ঠেকানো যাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী, রিজার্ভ বর্তমানে ২ হাজার ৯০ কোটি (২০ দশমিক ৯০ বিলিয়ন) ডলার। এর বাইরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে, যা শুধু আইএমএফকে দেয়া হয়। প্রকাশ করা হয় না। আইএমএফ সূত্রে জানা গেছে, সেই হিসাবে দেশের প্রকৃত রিজার্ভ এখন ১ হাজার ৭০০ কোটি বা ১৭ বিলিয়ন ডলার।
অর্থনীতিবিদদের হিসাবে, গত ২৪ মাস বা দুই বছরে প্রতি মাসে ১০০ কোটি ডলার করে রিজার্ভ কমেছে। ২০২২ সাল থেকে দেশে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের প্রবাহও কমছে। ২০২২ সালে যেখানে মাসে ২০০ কোটি ডলার আসত, সেখানে ২০২৩ সালের প্রথম তিন প্রান্তিকে দেশে প্রতি মাসে গড়ে ১৫০ থেকে ১৬০ কোটি ডলার প্রবাসী আয় এসেছে। অর্থনীতিবিদেও মতে, রিজার্ভ কমে যাওয়ার মূল কারণ নীতিগত সমন্বয়হীনতা ও নেতৃত্বের অভাব। বাণিজ্যের আড়ালে অর্থ পাচারও রয়েছে।
গত বুধবার বিশ^ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেছেন, দেশে যে পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা ঢুকছে এবং যা বেরিয়ে যাচ্ছে, তার প্রকৃত হিসাব মিলছে না। ব্যালান্স অব পেমেন্টে বা লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি তৈরি হওয়ায় রিজার্ভ হ্রাস পাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। তাঁর মতে, এখন বৈদেশিক মুদ্রার নিট মজুত কমে ১৮ বিলিয়ন ডলারের নিচে।
বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, রিজার্ভ কমার বড় কারণ হলো, এই সমস্যা বাণিজ্য ও মুদ্রানীতি দিয়ে মোকাবিলার চেষ্টা করা হচ্ছে। টাকার মূল্যমান কৃত্রিমভাবে ধরে রাখা হচ্ছে। যাঁরা তা করছেন তাঁরা মনে করছেন, টাকার মান কৃত্রিমভাবে ধরে রাখা হলে চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির রাশ কিছুটা টেনে ধরা যাবে। কিন্তু এই ব্যবস্থা টেকসই নয়। অর্থশাস্ত্র বলে, মুদ্রানীতির সঙ্গে আর্থিক নীতির সমন্বয় করতে হয়। মূল্যস্ফীতি কমাতে হলে সুদের হার বাড়াতে হয়, কিন্তু সরকার তা পারেনি।
সিপিডির এই বিশেষ ফেলো বলেন, রিজার্ভের অর্থ যেখান থেকে আসে ও ব্যয় হয়, এই দুটোর মধ্যে ভারসাম্য নেই। ফলে রিজার্ভ ধরে রাখা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানি নিয়ন্ত্রণ করায় বাণিজ্য ভারসাম্য গত দুই-এক মাসে কিছুটা ভালো হয়েছে, যদিও তার অন্য তাৎপর্য আছে। আর্থিক ও চলতি হিসাবে ঘাটতি আছে। সরকারের দায়-দেনা শোধ করতে হচ্ছে। সে কারণে আর্থিক হিসাব মিলছে না। তবে পরিস্থিতি যতটা খারাপ হয়েছে, তা অব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়হীনতার কারণে হয়েছে বলে মত দেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, এক ধরনের সংকীর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থও কাজ করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর মজুত ধরে রাখতে ব্যস্ত, যদিও তা পারছেন না। আইএমএফের শর্তগুলোর মধ্যে গভর্নরের ভাগে পড়েছে এটি। আবার এনবিআরকে রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে; কিন্তু আমদানি ও বিনিয়োগ না হলে রাজস্ব আদায় বাড়বে না। এসব ঠিক করার জন্য যে সমন্বয় দরকার ছিল, সেটা নেই। এখান থেকে উত্তরণের পথ দেখছি না; কারণ, বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে নির্দিষ্ট হয়ে গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের প্রফেসর ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘উন্নয়ন অন্বেষণ’-এর চেয়ারপারসন রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেছেন, দেশে বিদেশি মুদ্রার মজুত কমে যাওয়ার পেছনে মূল কারণ আমদানি বেড়ে যাওয়া। তিনি বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে আমদানি হয়েছিল ৬০ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলারের; ২০২১-২২ অর্থ বছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮২ দশমিক ৫০ ডলারে। ফলে সার্বিক ভারসাম্য ৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার ঋণাত্মক হয়ে গেল, আগের বছরে যা ছিল ৯ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার ধনাত্মক।
রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, বিশ্বজুড়ে সরবরাহব্যবস্থা ব্যাহত হয়েছে ঠিকই। তবে সারা পৃথিবীতে ১০ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হলেও ব্যয় বাড়ার কথা সমপরিমাণ। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, দেশের আমদানি ব্যয় বেড়ে গেল ৩২ শতাংশ। এমনকি বন্দরের হিসাবে দেখা যায়, আমদানি পণ্যের পরিমাণ বাড়েনি। আবার যে পরিমাণ রফতানি দেখানো হয়েছে, সেই পরিমাণে রফতানি আয় আসেনি। ৯ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলারের গড়মিল আছে। তিনি বলেন, নিঃসেন্দেহে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে। দেশে গোষ্ঠী শাসন চলছে বলে মনে করেন রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর। তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে বিভিন্ন গোষ্ঠীকে সুবিধা দেয়া হচ্ছে। সে জন্য ঋণের বোঝা বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে আইএমএফ বর্ণিত সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা রাজনৈতিক বিষয় বলে মত দেন তিনি।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
সুন্দরগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতার দখলে থাকা ১১ বিঘা জমি ১৮ বছর পর উদ্ধার
‘ওবায়দুল কাদেরের প্রশ্রয়ে কাদের মির্জা এলাকাকে সন্ত্রাসের জনপদ বানিয়েছিল’
ঝিনাইদহে তারেক রহমানের রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ
শেরপুরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী পালিত
ভোটার হালনাগাদে রোহিঙ্গা বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ ডিসি : ফৌজিয়া খান
সরাসরি ইলিশ বিক্রি করলে দাম কমানো সম্ভব: মৎস্য উপদেষ্টা
চট্টগ্রামকে উড়িয়ে জয়ের ধারায় বরিশাল
"১৯ বছর পর রাণীনগরে মোসারব হোসেন গোল্ডকাপ ফাইনাল, মাঠে হেলিকপ্টারে খেলোয়াড়দের আগমন"
বরিশালে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন সফল করতে সার্বিক সহযোগিতা প্রত্যাশা
কুড়িগ্রামে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৯ তম জন্মবার্ষিকী পালন
জেলেদের দিক নির্ণয়ের জন্য বরগুনায় লাইট হাউজ স্থাপন
চুপিসারে বিয়ে করলেন সংগীত তারকা দর্শন রাওয়াল
বিডিআর হত্যাকাণ্ড : বিস্ফোরক মামলায় ২ শতাধিক আসামির জামিন
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ইউটার্নে নেই সতর্ক চিহ্ন, বাড়ছে দুর্ঘটনা
ঝিনাইদহে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়ার মাহফিল
একশ’ মিটার ব্রিজ না থাকায় ১৫ কিলোমিটার ঘুরপথ, দুর্ভোগে শিক্ষার্থীসহ লাখো মানুষ
জাপানি ভাষার লেভেল টেস্ট পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
মুন্সীগঞ্জে তারুণ্যের উৎসবে গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট শুরু
আলফাডাঙ্গায় মধুমতী নদীর আড়াআড়ি বাঁধ অপসারণ করলেন ভ্রাম্যমাণ আদালত
কাউখালীতে বাল্যবিয়ে বন্ধ করলেন ইউএনও বরের ৭ দিনের কারাদণ্ড