রোডমার্চে উজ্জীবিত বিএনপি
০৭ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০১ এএম | আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০১ এএম
স্বতঃস্ফূর্ত জনতার অংশগ্রহণে অভূতপূর্ব সফল রোডমার্চে উজ্জীবিত বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। সরকার পতনের এক দফা দাবিতে কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখী এই কর্মসূচিতে জনতার স্রোত চলমান আন্দোলনে যোগ করছে নতুন মাত্রা। এর আগে সিলেট, বরিশাল, খুলনা, ময়মনসিংহ ও ফরিদপুরসহ দেশের পাঁচটি বিভাগের রোডমার্চেও জনতার অংশগ্রহণ ছিলো নজিরবিহীন। তাতে দারুণ আত্মবিশ্বাসী বিএনপির শীর্ষ নেতারা। বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রাম নগরীতে রোডমার্চ পরবর্তী সমাবেশ থেকে এবার ঢাকাকে ঘিরে চূড়ান্ত আন্দোলনের বার্তা দিলেন তারা । আর সেই বার্তা পেয়ে উচ্ছ্বসিত নেতাকর্মীরা এখন ‘রাজধানীর পতন’ ঘটানোর প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। সরকার পতনে আন্দোলনের অংশ হিসেবে রোডমার্চ কর্মসূচিতে ব্যাপক শোডাউনও করেছেন চট্টগ্রাম বিভাগের নেতারা। এবার রাজধানী কেন্দ্রীক কর্মসূচিতেও সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বেন তারা।
দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলনে আছে বিএনপি। চলমান এই আন্দোলনের সর্বশেষ কর্মসূচি চট্টগ্রাম বিভাগে রোডমার্চ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় কুমিল্লা থেকে শুরু হয়। প্রায় ২০০ কিলোমিটার মহাসড়ক অতিক্রম করে রাত সাড়ে ৯টায় চট্টগ্রামে পৌঁছে রোডমার্চের গাড়ি বহর। এরপর নগরীর কাজীর দেউড়ি নেভাল মোড়ে বিশাল সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয় রোডমার্চ। শান্তিপূর্ণ এই কর্মসূচিতে জনতার স্রোত ছিলো নজিরবিহীন। দলের নেতারা জানিয়েছেন কুমিল্লা শহর থেকে রোডমার্চের যাত্রা শুরুর কথা থাকলেও তা শুরু হয় মূলত দাউদকান্দি থেকে। ভোর থেকেই সেখানে হাজার হাজার নেতাকর্মী সমবেত হন। রাস্তায় রাস্তায় ছিলো সর্বস্তরের মানুষের ভিড়। সেখান থেকে কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রামের মীরসরাই হয়ে এগিয়ে যায় রোডমার্চের গাড়ির বহর। কিন্তু রাস্তার দুই পাশে স্বতঃস্ফূর্ত জনতার উত্তাল তরঙ্গে গাড়ি বহর এগিয়ে নিতে বেগ পেতে হয়। বৃষ্টি উপেক্ষা করে মানুষ সকাল থেকেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে রোডমার্চকে স্বাগত জানাতে অপেক্ষায় থাকে। মহাসড়কে স্থানীয় নেতারা ব্যাপক শোডাউন করেছেন। ব্যানার, ফেস্টুন, বাদ্য বাজনা বাজিয়ে রাজপথে নিজেদের অবস্থান জানান দেন সাবেক মন্ত্রী, এমপিসহ আগামী দিন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা। সরকার পতনের এক দফা দাবিতে সেøাগান সেই সাথে ব্যান্ড দলের সুরের মূর্ছনা ভিন্ন আমেজ সৃষ্টি করে। নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সাথে সাধারণ মানুষের উপস্থিতিতে পথসভাগুলো পরিণত হয় সমাবেশে। জনতার ভিড় ঠেলে গাড়ি বহর চট্টগ্রামে আসতে ১২ ঘণ্টা পার হয়ে যায়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের রোডমার্চের গাড়িবহর চট্টগ্রাম নগরীর প্রবেশদ্বার ‘সিটি গেইট’ দিয়ে প্রবেশ করে। এরপর সড়কের দুইপাশে হাজার হাজার নেতাকর্মীর ভিড় অতিক্রম করে শীর্ষ নেতাদের রোডমার্চের গাড়ি বহর সমাবেশ স্থলে এসে পৌঁছে রাত ৮টা ৫৪ মিনিটে। দিনভর বিএনপির রোডমার্চের সমাবেশস্থলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী মিছিলে সেøাগানে জড়ো হয়েছেন দুপুরের পর থেকে। সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির রোডমার্চকে ঘিরে বিএনপির বৃহত্তর চট্টগ্রামের সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যাপক শোডাউন ছিল চোখে পড়ার মতো। বর্তমান সরকারের অধীনে বিএনপি কোনো ধরনের নির্বাচনে আসবে না বলে ঘোষণা দিলেও গতকালের বিএনপির রোডমার্চের আড়ালে বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিএনপি সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনী শোডাউন করেছেন। এছাড়াও ট্রাকে পিকআপে এসব নেতাদের ব্যান্ডপার্টি এবং সাউন্ডবক্সে শোডাউন সকলের দৃষ্টি কেড়েছে। পুরো নূর আহম্মদ রোডসহ লাভ লেইন মোড়, কাজীর দেউড়ি, স্টেডিয়াম এলাকা, ওয়াসা মোড়, সিটি গেইট, কর্ণেলহাট একে খান গেইট ছেয়ে ফেলেছে ব্যানারে ফেস্টুনে। এছাড়াও ছোট মিনি ট্রাক, পিকআপে বৃহত্তর চট্টগ্রামের সম্ভাব্য বিএনপির প্রার্থীদের ছবিসহ ডিজিটাল ব্যানার লাগিয়ে নেতাকর্মীরা সেøাগানে সেøাগানে কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। দিনভর থেমে থেমে বৃষ্টি থামাতে পারেনি রোডমার্চে অংশগ্রহণকারী বিএনপির নেতাকর্মীদের আনন্দ-উচ্ছ্বাস।
৩টায় রোডমার্চের সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও চট্টগ্রাম মহানগরীসহ উত্তর ও দক্ষিণ জেলার প্রতিটি উপজেলা, ইউনিয়ন থেকে এবং বৃহত্তর চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, রাঙামাটি, কক্সবাজার থেকে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী বৃষ্টি উপেক্ষা করে দুপর ১টার পর থেকেই আসতে শুরু করেন। মহানগরী পরিনত হয় মিছিলের নগরীতে। থেমে থেমে বৃষ্টির মাঝেও ব্যান্ডপার্টি এবং গানের তালে তালে মিছিল নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন। রাত সাড়ে ৯টায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য দেয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেছেন তারা ।
প্রায় পক্ষকাল ধরে রোডমার্চ সফল করতে প্রস্তুতিগ্রহণ করে বিএনপি। কর্মসূচির সমর্থনে করা হয় সভা, সমাবেশ, গণসংযোগ। প্রস্তুতি সভা চলাকালে মীরসরাইতে আওয়ামী লীগের সাথে বিএনপির কর্মীদের সংঘর্ষে এক কিশোর দোকান কর্মচারী নিহত হয়। এই ঘটনায় বিএনপির নেতাদের বাড়ি ঘরে হামলা হয়। মামলাও হয়েছে বিএনপির নেতাদের নামে। এই পরিস্থিতিতে রোডমার্চে মীরসরাইতে গন্ডগোল হওয়ার আশংকা থাকলেও শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে কর্মসূচি। সমাবেশে আসার পথে বিএনপির গাড়ি বহরে লোহাগাড়ায় এবং চন্দনাইশে হামলা হয়। তবে নেতা কর্মীদের প্রতিরোধে হামলাকারী সরকারি দলের কর্মীরা পালিয়ে যায়। এই কর্মসূচি পালনে পুলিশের ভূমিকা ছিলো অনেকটা নিরপেক্ষ।
এদিকে সমাবেশে নতুন বার্তা দিয়েছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রোডমার্চের সমাপ্তি ঘোষণা করে বলেন, রোডমার্চে জনবিস্ফোরণ ঘটেছে। সব মানুষ আজ রাস্তায়। মানুষের মুখে এখন একটাই সেøাগান, শেখ হাসিনা কবে যাবি। মানুষের জন্য সেই বার্তা আমরা নিয়ে এসেছি। অনেক কথা হয়েছে, রোডমার্চ, সমাবেশ হয়েছে। এটাই শেষ রোডমার্চ। আর রোডমার্চ হবে না। এবার সব হবে ঢাকায়। এবার রাজধানীর পতন ঘটাতে হবে। এ সময় দফা এক, দাবি এক-শেখ হাসিনার পদত্যাগ সেøাগানে সেøাগানে পুরো সমাবেশস্থল প্রকম্পিত হয়ে উঠে। সমাবেশ থেকে সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ, অনশন এবং ঢাকায় ছাত্র ও যুব কনভেনশন ছাড়াও আগামী ১৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়। ঢাকার ওই মহাসমাবেশ থেকে সরকার পতনের আল্টিমেটাম দেয়া হবে। রোডমার্চের পর সামনের কর্মসূচীগুলো সর্বাত্মক সফল করে চূড়ান্ত বিজয় না আসা পর্যন্ত রাজপথে লড়াইয়ের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন নেতাকর্মীরা।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
কিশোরগঞ্জে পুলিশ সদস্যের বাড়ীতে বিয়ের দাবিতে কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীর অবস্থান
অবৈধ প্রেমের দেহজ সুখি নিতে পারলো না সিলেটে ১৬ কিশোর কিশোরী
পল্লী বিদ্যুতের বিল পরিশোধ সবচেয়ে সহজ বিকাশ-এ
জনগণের পাশে থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান
দেশপ্রেমিক গণমানুষের অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন জিয়াউর রহমান: গয়েশ্বর রায়
লাকসামের যুবদলের আহবায়ক রাসেল বহিষ্কার
যেভাবে বিদেশি মিডিয়ার মুখ বন্ধ করতে চেয়েছিল হাসিনা
শহীদ জিয়াউর রহমানের ৮৯ তম জন্মবার্ষিকী পালিত
গৌরনদীতে বসত বাড়ির গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ আহত-৫
যে কারণে সফল হয়েছিলেন শহীদ জিয়াউর রহমান
মাদারীপুরে স্কুলে ল্যাব না থাকলেও শিক্ষক নিয়োগ
কৃষকের প্রয়োজন পানি: মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পে সেচ সুবিধা না পেয়ে বিপর্যয়ের আশঙ্কা
দুর্যোগে নেতৃত্বহীনতায় জিয়াউর রহমানের আবির্ভাব - আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী
ব্রাহ্মণপাড়ায় গলায় ফাঁস দিয়ে এক যুবকের আত্মহত্যা
আশুলিয়ায় বাস চাপায় নারী পোশাক শ্রমিক নিহত
জানুয়ারির প্রথম ১৮ দিন রেমিট্যান্স এলো ১৪,৭২৩ কোটি টাকা
জনগণ নয়, ভারতের সম্পর্ক ছিল একটি দলের সাথে - খোকন
মানিকগঞ্জে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৯ তম জন্মদিন পালিত
ভোরের কাগজ কর্মীদের মানববন্ধন পাঁচদিনের আল্টিমেটাম সাংবাদিক নেতাদের
৬ শতাধিক কৃষকের জমিতে সরকারি পেয়াজের বীজ গজায়নি, লোকসানের ঘানি টানছেন কৃষকেরা