পদ্মার ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে ৪ শতাধিক পরিবারের
১২ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৪ এএম
মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় নদীর বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প এলাকায় হঠাৎ ভাঙন দেখা দেয়ায় আবার হতাশ হয়ে পড়েছেন তীরবর্তী বাসিন্দারা। পদ্মার আকস্মিক ভাঙনে গত ৬ দিনে একটি পাকা ভবনসহ ৫টি বসতঘর বিলীন হয়েছে। বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প এলাকায় আবারো ভাঙনে নদীতীরের চার শতাধিক পরিবার ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে। অনেকে ঘরবাড়ি সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন।
গত বৃহস্পতিবার থেকে উপজেলার লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়নের বড়নওপাড়া এলাকায় হঠাৎ পদ্মায় ভাঙন শুরু হয়। ভাঙনের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে, চার ঘণ্টার ব্যবধানে ভিটামাটি নিয়ে একটি পাকা ভবন ও তিনটি বসতঘর নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে। নদীর ঢেউ ও প্রচ- স্রোতে ভাঙনের ভয়াবহতা দেখে নদীপাড়ের বাসিন্দারা দিশেহারা হয়ে পড়েন। আকস্মিক ভাঙনে এলাকার অর্ধশত বাড়ি ঝুঁকির মুখে রয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, হঠাৎ ভাঙন দেখা দেয়ায় তাৎক্ষণিক শ্রমিক না পাওয়ায় ঘরবাড়ি সরিয়ে নিতে বেগ পেতে হচ্ছে তাদের।
বাঘেরবাড়ি এলাকার ৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা কাজিম ঢালীর ছেলে জালাল ঢালী বলেন, নদীর বাঁধের কাজ চলমান থাকতেও এভাবে বাপ-দাদার ভিটা হারিয়ে যাবে ভাবতেও পারিনি। ঘর ভেঙে নিয়ে যাচ্ছে। জীবন সরকার তিনি বলেন, এই পর্যন্ত ১২ বার নদী ভাঙনের শিকার হলাম।
ভাঙনের শিকার ইকবাল মৃধা বলেন, নদী শাসনের সময়ে এভাবে ঘর বিলীন হবে ভাবতে পারিনি। আমার তিনটি ঘরের মধ্যে একটি বিলীন হয়েছে। একটি সরিয়ে নিয়েছি, অন্যটিও সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি। তিনি জানান, বর্তমান জায়গায় প্রায় একশো বছরের বসতি তাদের। ২৫ বছর আগে বাড়ির এক একর জমি পদ্মার পেটে গেছে। বাকি ছিল ৩৬ শতাংশ। তাও চলে গেল।
পদ্মায় বিলীন হওয়া তিন কক্ষের পাকা ভবন ও একটি টিন-কাঠের ঘরের মালিক জিতেন রাজবংশী পেশায় মাছ ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, বাড়ির সাথে নদী থাকলেও জিও ব্যাগ ফেলা ছিল। শুকনো মৌসুমে ব্লক ফেলে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হবে তাই নিশ্চিন্ত ছিলাম। কিন্তু এমনভাবে মুহূর্তেই আমার কষ্টের টাকায় বানানো বাড়িটি নদীর পেটে চলে যাবে ভাবিনি।
ভাঙনের মুখে থাকা দুইতলা পাকা ভবনের মালিক স্বপন রাজবংশী আসবাবপত্র সরিয়ে নিয়ে পরিবারের সদস্যসহ অন্যত্র চলে গেছেন। ভবনটি যেকোনো মুহুর্তে ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বুধবার দুপুরে সরজমিনে দেখা যায়, আতঙ্কগ্রস্ত বাসিন্দারা বাকি ঘর সরিয়ে নিচ্ছেন। ঘর সরিয়ে নিতে মিস্ত্রিদের হাতুড়ি পেটা ও কুড়াল দিয়ে গাছ কাটার শব্দের ব্যস্ততা দেখা গেছে। বাসিন্দাদের চোখেমুখে হতাশা ও আতঙ্কের ছাপ।
এলাকাটিতে ভাঙন ঠেকাতে এই অংশে রক্ষা বাঁধের কাজ চলছে এক বছর ধরে। প্রকল্পভুক্ত এলাকায় এমন ভাঙনে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। অবৈধ বালু উত্তোলন এবং জনপদ ঘেষে বড় বড় নৌযান চলাচলকেও দায়ী করছেন তারা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চলছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের মুন্সীগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী বলেন, পদ্মা সেতুর ভাটিতে বাম তীর রক্ষায় প্রায় ৪৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ চলছে প্রায় দুই বছর ধরে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই কর্মকর্তা আরো জানান, কয়েক দিন ধরে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, উজানের ঢলের পানি পদ্মা হয়ে সাগরের দিকে যাওয়ায় নদীতে এখন প্রচ- রকমের স্রোত বইছে। মূল পদ্মায় চর জেগেছে। সেজন্য জলযানগুলোর নদীর এ অংশের তীর ঘেঁষে যাতায়াত করছিল। স্রোতে হঠাৎ করেই নদীর তলদেশ থেকে মাটি ও জিওব্যাগ সরে গিয়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এ অংশ পদ্মার বামতীর প্রকল্পের মধ্যে পড়েছে। ইতোমধ্যে এ অংশের ২০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। শিগগিরই ভাঙনকবলিত এ অংশে জিও ব্যাগের মধ্যে বালু-সিমেন্ট মিশ্রিত করে অস্থায়ী প্রতিরক্ষা কাজ শেষ করা হবে।
মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া থেকে টঙ্গীবাড়ি উপজেলার দিঘিরপাড় পর্যন্ত প্রায় ১৪ কিলোমিটার এলাকায় রক্ষা বাঁধের কাজ চলছে। এরপরও কেন থামছে না ভাঙন এই প্রশ্ন স্থানীয়দের।
এরআগেও কয়েকবার উপজেলার লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়নে পদ্মার ভাঙন দেখা দেয়। সর্বশেষ গত বছরের মে মাসে ইউনিয়নটির ৩নং ওয়ার্ডের বড়নওপাড়া ভাঙনের মুখে পড়ে। এতে অর্ধশত বাড়ির ভিটেমাটি ও আবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়। সে সময় পদ্মার বামতীর প্রকল্পের মধ্যে এ অংশসহ ৪.৬২ কিলোমিটার অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
ভাঙনের বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ভাঙতে ভাঙতে এ ইউনিয়নটি প্রতিবছর ছোট হচ্ছে। ভাঙনরোধে সরকার ৫০০ কোটি টাকার যে প্রকল্প নিয়েছে, এখানে বড়নওপাড়াও রয়েছে। ঠিকঠাক মতই ভাঙন প্রতিরোধের কাজ চলছিল। মাঝখানে এক মাসের মতো এ প্রকল্পের কাজ বন্ধ ছিল। যদি বন্ধ না থাকতো, তাহলে ভাঙন নাও হতে পারতো।
এ বিষয়ে লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাকির হোসেন বলেন, ভাঙনের খবর শুনে তিনবার ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। সেখানকার ভাঙন নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে তিনহাজার বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। ভাঙন নিয়ন্ত্রণের দিকে। ভাঙন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত জিও ব্যাগ ফেলা হবে। সেইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্তদের পুর্নবাসনে উদ্যোগ নেয়া হবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ঈশ্বরগঞ্জে ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ বিষয়ক কর্মশালা
বনানীতে সড়কে সিএনজি চালকদের বিক্ষোভ, রাস্তা বন্ধ
বগুড়া সেনানিবাসে সাঁজোয়া কোরের ৪৪তম বাৎসরিক অধিনায়ক সম্মেলনে যোগ দিলেন সেনা প্রধান
গাজীপুরে এ্যাপারেলস্ কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে আহত ১২
ব্যবহারকারীদের আশ্বাস ট্রাম্পের, যুক্তরাষ্ট্রে ফের চালু টিকটক
পদ্মায় ধরা পড়লো ৪২ কেজির মহা বিপন্ন বাঘাইড় মাছ
আরও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রিয়ালের প্রেসিডেন্ট পেরেজ
সিলেটে প্রখ্যাত আলেম ইসহাক আল মাদানির ইন্তেকাল!
গাজার ধ্বংসস্তূপে নতুন স্বপ্ন বুনছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষ
গাজা চুক্তিকে যেকারণে ‘হামাসের জয়’ বলছে ইসরায়েলি গণমাধ্যম
সত্যিকারের সুখী হওয়া অনেক কঠিনঃ মিশা
গাজায় ব্যাংক সেবা পুনরায় চালুর প্রস্তুতি শুরু ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের
বদলে যাচ্ছে পুলিশ, র্যাব ও আনসার সদস্যদের পোশাক
লক্ষ্মীপুরে ড্রামট্রাকের চাপায় প্রাণ গেল দুই অটোরিকশা যাত্রীর
মানিকগঞ্জে পদ্মায় বড়শিতে ধরা পরল ৯ কেজি ওজনের বোয়াল
রাজশাহী নার্সিং কলেজের ১৪ শিক্ষার্থী ফেল করে অধ্যক্ষের কক্ষে তালা দিলেন
মেলানিয়া ট্রাম্প বাজারে আনলেন নিজস্ব ক্রিপ্টোকারেন্সি
সাবেক এমপি মোস্তফা জালাল গ্রেপ্তার
শরীয়তপুর পৌরসভার বিএনপি কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা
সাইফ ইস্যুতে মেজাজ হারালেন অভিনেতা জাকি শ্রফ