ব্রাহ্মণপাড়ায় মৃৎশিল্পে ভাটা : আগ্রহ হারাচ্ছেন শিল্পীরা
১৪ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম | আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় দিন দিন ভাটা পড়ছে বাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পে। পূর্বের সেই স্পন্দন নেই ব্রাহ্মণপাড়ার কুমার পাড়ায়। আধুনিকতার ছোঁয়ায় বাজারে আসা প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়াম পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না ঐতিহ্যবাহী এ শিল্প। এতে এ শিল্পে জড়িত অনেকেই জীবন-জীবিকার তাগিদে পেশা বদল করে চলে যাচ্ছেন অন্য পেশায়। আর বংশপরম্পরায় পাওয়া এ পেশার সাথে এখনও যারা জড়িয়ে আছেন তারা আগ্রহ হারিয়ে দিন কাটাচ্ছেন হতাশায় ।
সরেজমিনে মাধবপুরের ষাইটশালা এলাকার কুমার পাড়ায় দেখা যায়, মৃৎশিল্পের সাথে জড়িত পরিবারের সদস্য রবীন্দ্র রুদ্র পালের স্ত্রী অঞ্জনা রানী পালের সাথে। তিনি জানান, প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়ামের জিনিসপত্র বাজারে আসার পর থেকেই মাটি দিয়ে তৈরি পণ্যে ভাটা পড়া শুরু হয়েছে। এই কাজ করে এখন আর সংসার চলে না তাদের। বর্তমানে একটি পাতিল তৈরি করতে যে টাকা খরচ হয় সে টাকা অনেকসময় বিক্রিও করতে পারেন না তারা। এসব পণ্য তারা পাইকারী বিক্রি করেন ২০ টাকা করে। দৈনিক ৪৫/৫০টি পাতিল তৈরি করতে পারেন একজন শ্রমিক। আর এই আয়ে সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হয় তাদের। বাপ-দাদার পেশা, মায়ার কারণে ধরে রেখেছেন, আয় বলতে তেমন কিছু নেই, পাশাপাশি অন্য কিছু করে সংসার চালাতে হচ্ছে তাদের। তাদের ছেলে মেয়েরা এই কাজ করতে আগ্রহী না। তারাও চান না ছেলে মেয়েরা এই পেশায় আসুক।
কথা হয় স্বপন রুদ্র পালের সাথে তিনি জানান, আগে আশপাশের ডোবা-নালা থেকে মাটি এনে হাঁড়ি-পাতিলসহ নানা ধরনের মাটির পণ্য তৈরি করতেন। এখন এই মাটিটুকুও চড়া দামে কিনতে হচ্ছে। মাটির এইসব পণ্য আগুনে পোড়াতে প্রয়োজনীয় লাকড়ির দামও বেশি। এতে তাদের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। পাশাপাশি মাটির পণ্যের বিক্রি কমে যাওয়ায় লোকসানের বোঝা প্রতিনিয়ত ঘাড়ে চাপছে।
বাঙালির চিরচেনা ঐতিহ্য মৃৎশিল্পে ভাটার পেছনের গল্প জানান মৃৎশিল্পী কমল চন্দ্র পাল, নিরঞ্জন রুদ্র পাল, বিনোদ রুদ্র পাল ও সুমা রাণী পাল। তারা জানান, এই পল্লীতে কোনো একসময় চারশ’ পরিবার ছিল মৃৎশিল্পের কাজে নিয়োজিত। সময়ের পরিক্রমা ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় অনেকেই এ পেশা থেকে ভিন্ন পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন। তিনি আরো জানান, এক সময় মৃৎশিল্পপল্লীর শিল্পীরা ব্যস্ত সময় পার করতেন, হিমশিম খেতেন পাইকারদের চাহিদা মেটাতে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়াও শিশুদের খেলনা, গৃহসজ্জার শৌখিন পণ্যসহ বাহারি পণ্য থাকত কুমারপাড়া এলাকায়। এসব পণ্যে থাকত দৃষ্টিনন্দন আলপনার ছোঁয়াও। কিন্তু আজ এসবই হারিয়ে যাচ্ছে আধুনিকতার ছোঁয়ায়। তবে সময়ের পরিক্রমায় মৃৎশিল্পের অস্তিত্ব সংকটে পড়লেও ৪০টি পরিবার এখনও এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত থেকে বাপ-দাদার পেশা ধরে রেখে জীবিকা নির্বাহ করছেন। অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছেন পরিবারগুলো।
মাধবপুর ইউপি চেয়ারম্যান ফরিদ উদ্দিন বলেন, আমাদের মাধবপুর ইউনিয়নের ষাইটশালা এলাকার কুমারপাড়া মৃৎশিল্পীদের অবস্থা খুবই নাজুক। সবসময়ই তাদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করি। যদি সরকারি কোনো অনুদান আমার কাছে আসে আমি তাদের দিয়ে সহযোগিতা করি এবং ভবিষ্যতেও করব। আগে তাদের মাটি কিনতে হতো না, বাড়ির পাশের খাল-বিলের মাটি দিয়েই তাদের কাজ চলত। এখন তারা দূর থেকে মাটি কিনে জিনিসপত্র তৈরি করেন। কিন্তু সেই জিনিসপত্র আগের মতো না চলায় জীবিকা নির্বাহ করতে তাদের কষ্ট হচ্ছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ অনির্দিষ্টকাল হতে পারে না: ড. মোশাররফ
টিকটক ও ক্যাপকাটকে টক্কর দিতে মোক্ষম চাল মেটার!
৩৩ বছরের পুরনো পত্রিকা ‘ভোরের কাগজ’ বন্ধের ঘোষণা
তারেক রহমান ৩১ দফা দিয়েছে হাসিনার মত স্বৈরাচার সরকার আর যাতে আসতে না পারে - ব্যারিস্টার মীর হেলাল
ফেরার সময় তিন ইসরাইলি বন্দীকে কী উপহার দিল হামাস?
মানুষকে স্বস্তি দিতে অন্তবর্তীকালীন সরকার ব্যর্থ হচ্ছে : আমিনুল হক
পিঠার নাম হৃদয়হরণ, মুখচাহনি
শেরপুরে জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শীতার্তদের মাঝে যুবদলের কম্বল বিতরণ
গুরুদাসপুরে চিরকুট লিখে চুরি হচ্ছে বাণিজ্যিক মিটার
রাজনীতিতে স্লোগান নয়, মেধা ও বুদ্ধির প্রতিযোগিতা চলছে: মির্জা ফখরুল
মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেলেন সৈয়দপুর বিজ্ঞান কলেজের ৫৩ শিক্ষার্থী
হজ ও ওমরাহ যাত্রীদের বিশেষ নির্দেশনা শাহজালাল বিমানবন্দরের
দলে মেধাবীদের দেখতে চান তারেক রহমান
গাজীপুর মহানগর বিএনপির উদ্যোগে শহীদ জিয়াউর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে আলোচনা সভা
শরণখোলায় হোলি কুরআন অ্যাওয়ার্ড ও হিফজুল কুরআন প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত
ইসরাইল ছাড়া অন্য কোন দেশের জাহাজে হামলা করবে না হুথিরা
ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শুভ কামনা জানালেন ড. ইউনূস
সুন্দরগঞ্জে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা, স্বামীর মৃত্যুদণ্ড
নিকলীতে যুবলীগ নেতা গ্রেফতার
শেরপুর সরকারি কলেজের ২১ শিক্ষার্থী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেলো