ডিমশূন্য ফরিদপুর শহর
১৪ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম | আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম
গতকাল শুক্রবার বিকেলে জানা গেল ফরিদপুর ডিম বাজারে ডিম নাই। পেঁয়াজের কেজি ৯০-১০০ টাকা। দাম কমেছে কাঁচা মরিচের। এ খবর পেয়ে সরেজমিনে শহরের ৪/৫টি বাজারের বিভিন্ন জিনিসপত্রের খোঁজ খবর নিতে গেলে দেখা যায়, ডিম বাজারে ডিম নাই। ডিমশূন্য ফরিদপুর বাজার। এই অবস্থায়হ ডিম ডিম ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেল, এক ভয়ঙ্কর কাহিনি। ডিম বাজারে ডিম নাই কেন? এই বিষয়ে ইনকিলাবের সাথে কথা হয় ফরিদপুর শরীতুল্লাহ বাজারের ডিমের মহাজন ‘বাদশা ভ্যারাইটিজ স্টোরের’ মালিক বাদশা মিয়ার সাথে। এ প্রতিনিধি তাকে প্রশ্ন করলেন, আপনার দোকান ডিমশূন্য কেন? ডিম কই? তিনি ইনকিলাবকে বলেন, বাবারে আমরা প্রতি খাচি ডিম কিনি ৩৭০ টাকায়। আমরা বিক্রি করবো কত? ভোক্তা অধিকার এসে প্রতি পিচ ডিম ১২ টাকায় বিক্রি করতে বলেন। তাতে এক হালি ডিমের দাম হয় ৪৮ টাকা। এক খাচি ডিমের ৩৬০ টাকা। আমি পাইকারি কিনি প্রতি খাচি ডিম ৩৭০ টাকা। একটু বেশী দামে বিক্রি করলে ভোক্তা অধিকার ৫০০/১০০০/২০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করেন। ডিম কিনলাম লোকসান দিয়ে, বিক্রি ও করি লোকসানে। মধ্যে থেকে লাভ হয় জরিমানা। ভোক্তা অধিকারের তথা সরকারের বেঁধে দেয়া দামের বাইরে বিক্রি করা নিষিদ্ধ। তাই ডিমও কিনিনি এ জন্য দোকান খালি।
ইনকিলাবের সাথে কথা হয় ডিম ব্যবসায়ী মো. হাবিবের সাথে তিনি হাবিব স্টোরের মালিক। কথা ডিমের মহাজন মো. জিন্নার সাথে তিনি বিসমিল্লাহ স্টোরের মালিক। তারাও ইনকিলাবকে বলেন, নিজের নগদ পুঁজি ভেঙ্গে নগদ টাকায় ডিম কিনে -কেন আমি ম্যাজিস্ট্রেটকে জরিমানা দিতে যাব। বেশী দামে কিনে ১/২ টাকা লাভ না করলে আমরা খাবো কি? দোকানভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, কর্মচারীর বেতন, কোথা থেকে দিবো। এ জন্য আমরা ডিম কিনিনি। তাই বাজার ডিমশূন্য। ডিম ব্যাবসায়ী মো. পাঞ্জু মিয়া ইনকিলাবকে জানান, ভাই প্রতিটি ডিম আমরা সাড়ে ১২ টাকায় কিনলে কি ১৩ টাকায় বিক্রি করা যায়? ভোক্তাদের সেবা কিভাবে দিবো বলেন। জরিমানা ও দিলাম না ডিমও বিক্রি করলাম না। সরকার ডিম আমদানি করবে শুনছি বাজারে ডিমের দাম কমলে আমরাও কম দামে ডিম বিক্রি করবো।
শরীয়তুল্লা বাজার ঘুরে দেখা যায়, একজন ডিম ব্যবসায়ী হাসের ডিম বিক্রি করছেন। তাকে প্রশ্ন করা হলো হাসের ডিম কত? তিনি ইনকিলাবকে বলেন, আগে বিক্রি করছি এক হালি ৪৮ টাকা। এখন মোকাম থেকে আমাদের কিনতে হয় ৬৪ টাকায়। আমাদের কাছ থেকে যারা কিনে নেয় উনারা ৬৬/৬৭ টাকাও হালি বিক্রি করেন। বেশীর ভাগই ডিম যারা সিদ্ধ করে বাজারের পাশে বসে বিক্রি করেন উনারা প্রতিটি ডিম ২৫ টাকা বিক্রি করেন। তাতে হালি পড়ে ৭৫ টাকা। তাতে প্রতি খাচি হাসের ডিম ৩৭৫ টাকা কেউ কেউ বিক্রি করেন। পাশা-পাশি ফরিদপুরের ৪/৫টি বড় বড় বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পেঁয়াজ ও প্রতি কেজি ৯০/১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। শরীতুল্লাহ বাজার কাঁচামাল ব্যাবসায়ী ভবেশ কুমার সরকার ইনকিলাবকে বলেন, শুক্রবার ফরিদপুর বাজারে দেশীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকা। এলসির পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকা। রসুন প্রতি কেজি দেশিটা ২০০ টাকা, ভারতীয় টা ১৬০ টাকা, বার্মার ররুনও ১৬০ টাকা। কমছে কাঁচা মরিচ ও আদার দাম।
জানা যায়, ফরিদপুর বাজার নিয়ন্ত্রণ রাখতে বৃহস্পতিবার, জেলা প্রশাসক ফরিদপুরের সম্মেলন কক্ষে এক জরুরি সভা হয়। এই সভায় সংশ্লিষ্ট সর্বস্তরের কর্মকর্তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাগণ, ভোক্তা অধিকার এবং বাজার কমিটির ব্যাবসায়ী নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে ফরিদপুর শরীতুল্লাহ বাজার ব্যবসায়ী কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. খায়রুজ্জামান লাবলু জেলা প্রশাসককে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমরা জেনেছি ঢাকার কাজি ফার্ম সিন্ডিকেট করে ফরিদপুর ডিমের বাজারটিও শেষ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ফরিদপুরের মুরগী এবং ডিম উৎপাদনকারী বৃহত্তর প্রতিষ্ঠান মুসলিম মিশনের ডিমগুলো কাজি ফার্ম কিনে নিয়ে যায় ঢাকায়। এই ডিমগুলো যদি ফরিদপুর বাজারগুলোতে ওপেন মার্কেট সেল দেয়া হতো তাহলে, এই বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে ডিমের চাহিদা পুরণ হতো। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিষয় হলো, কাজী ফার্ম বাজার ব্যবসায়ীদের কাছে ডিম পাঠিয়ে মোবাইলের এসএমএস এর মাধ্যমে ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেন। এখানে ব্যবসায়ীরা নিরুপায় হয়ে গেছে। জিম্মি হয়ে পড়ছে কাজী ফার্মের কাছে। ব্যাবসায়ী নেতা তথা শরীতুল্লাহ বাজারেরর সভাপতি হাজী নুর ইসলাম মোল্লা এবং রেল স্টেশন বাজার মুরগী ব্যবসায়ী হাজী আমীনুর রহমান মুসা এবং শরীতুল্লাহ বাজারে মুরগী ও ফিট ব্যাবসায়ী মো. জামাল হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, ব্যবসায়ীরা কাজী ফার্মের কাছে ডিমের চালান আগে পাঠায়ে দেন। তারপর নামে নামে ডিম আসে। ডিম বিক্রির বাজার দর এসএমএস এর মাধ্যমে তারা জানিয়ে দেন। বেশি দামে আনলে একটু বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয় ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, আমরা বুঝতে পারছি না, কার আদেশ ডিম ব্যবসায়ীরা মানবেন? সরকারের নাকি কাজী ফার্মের? বড় কে সরকার নাকি কাজী ফার্ম? এখন সুধীমহল একটাই কথা, ফরিদপুর মুসলিম মিশনের ডিম কেনা, কাজী ফার্মের সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। এ জন্য চাই ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের শক্ত অবস্থান। অন্যথায় এই জেলার সাধারণ মানুষ পড়বে চরম কষ্টে।
এ বিষয়ে ইনকিলাবের সাথে কথা হয় ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান তালুকদার (পিএএ) এর সাথে। তিনি বলেন, মুসলিম মিশনকে তাদের লাভজনক অবস্থান থেকে ফিরে আসতে বলতে পারি না। তারা যেখানে ব্যবসা পাবেন সেখানেই বিক্রি করবেন। তবে ডিমশূন্য বাজার এই বিষয়টি আমি জানি না। সরকার তো একশ’ কোটি ডিম আমদানি করছেন, এতেই কি এ অবস্থা।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন, সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ অনির্দিষ্টকাল হতে পারে না: ড. মোশাররফ
টিকটক ও ক্যাপকাটকে টক্কর দিতে মোক্ষম চাল মেটার!
৩৩ বছরের পুরনো পত্রিকা ‘ভোরের কাগজ’ বন্ধের ঘোষণা
তারেক রহমান ৩১ দফা দিয়েছে হাসিনার মত স্বৈরাচার সরকার আর যাতে আসতে না পারে - ব্যারিস্টার মীর হেলাল
ফেরার সময় তিন ইসরাইলি বন্দীকে কী উপহার দিল হামাস?
মানুষকে স্বস্তি দিতে অন্তবর্তীকালীন সরকার ব্যর্থ হচ্ছে : আমিনুল হক
পিঠার নাম হৃদয়হরণ, মুখচাহনি
শেরপুরে জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শীতার্তদের মাঝে যুবদলের কম্বল বিতরণ
গুরুদাসপুরে চিরকুট লিখে চুরি হচ্ছে বাণিজ্যিক মিটার
রাজনীতিতে স্লোগান নয়, মেধা ও বুদ্ধির প্রতিযোগিতা চলছে: মির্জা ফখরুল
মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেলেন সৈয়দপুর বিজ্ঞান কলেজের ৫৩ শিক্ষার্থী
হজ ও ওমরাহ যাত্রীদের বিশেষ নির্দেশনা শাহজালাল বিমানবন্দরের
দলে মেধাবীদের দেখতে চান তারেক রহমান
গাজীপুর মহানগর বিএনপির উদ্যোগে শহীদ জিয়াউর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে আলোচনা সভা
শরণখোলায় হোলি কুরআন অ্যাওয়ার্ড ও হিফজুল কুরআন প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত
ইসরাইল ছাড়া অন্য কোন দেশের জাহাজে হামলা করবে না হুথিরা
ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শুভ কামনা জানালেন ড. ইউনূস
সুন্দরগঞ্জে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা, স্বামীর মৃত্যুদণ্ড
নিকলীতে যুবলীগ নেতা গ্রেফতার