জেরুজালেম মুসলমানদের, কখনোই ইহুদিদের ছিল না-২
১৫ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৪ এএম
বেশকিছুদিন আগে দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে ‘জেরুজালেম নিয়ে ট্রাম্পের উন্মাদ খেলার পরিণাম’ শিরোনামে এক লেখায় লেখক লিখেছিলেন : ‘...জেরুজালেমের ওপর ইসরায়েলের দাবির ভিত্তিটা নাকি ঐতিহাসিক। পশ্চিমাদের অনেকেও মনে করে থাকেন, মিসরীয় দাসত্ব থেকে পালিয়ে হজরত মূসার নেতৃত্বে ইহুদিরা তৎকালীন কানান দখল করে বসতি স্থাপন করে। ইহুদিদের ঈশ্বর এই ভূখ- তাদের উপহার দিয়েছেন। এখানেই তাদের সোলোমন ও ডেভিড (আরবি ভাষায় সোলায়মান ও দাউদ) শক্তিশালী সাম্রাজ্য স্থাপন করেন।
কিন্তু ৭০ খ্রিস্টাব্দে রোমানরা তাদের সেখান থেকে বিতাড়িত করলে তারা দুই হাজার বছরের জন্য উদ্বাস্তু হয়ে পড়ে। যে অল্পসংখ্যক ইহুদি সেখানে থেকে গিয়েছিল, সপ্তম শতাব্দীতে মুসলমান বিজেতারা তাদের বহিষ্কার করে। এই দীর্ঘ নির্বাসিত জীবনে ইহুদি রক্ত আর কারও সঙ্গে মেশেনি, তারা রয়ে গেছে দুই হাজার বছর আগের মতোই খাঁটি বিশুদ্ধ এবং ইহুদিরা চিরকালের জন্য এক ও অখ- ‘জাতি’। চূড়ান্তভাবে ইউরোপে ইহুদি গণহত্যার পর ‘ইহুদিরা দেশহীন মানুষ হিসেবে মানুষহীন দেশ ফিলিস্তিনে ফিরেছে।’
তাদের প্রতিশ্রুত ইসরায়েল লোহিত সাগর থেকে শুরু করে জর্ডান পর্যন্ত বিস্তৃত হবে একদিন। অর্থাৎ জর্ডান-সিরিয়ার বিরাট অঞ্চলসহ সমগ্র ফিলিস্তিনই হলো তাদের স্বপ্নের ইসরায়েল। এটাই তাদের সংবিধানে বলা আছে। আর এই মহান ইসরায়েল রাষ্ট্রের চিরকালীন অজেয় রাজধানী হলো জেরুজালেম। ‘বার বার পশ্চিমা গণমাধ্যম, ইতিহাস, বিদ্যালয় থেকে শুরু করে সাহিত্যে এবং অবশ্যই হলিউডি চলচ্চিত্রে এই গল্প অকাট্য ইতিহাস হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
ইহুদিদের ওপর শত শত বছর ধরে অত্যাচার ও গণহত্যা চালানো পাশ্চাত্য তার অপরাধবোধ থেকে বাঁচতে সর্বদাই ইসরায়েলের অন্যায্য দাবির ব্যাপারে রাজি অবস্থায় থাকে। তাছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের সম্পদ ও ভূমি কবজায় রাখতে ইসরায়েলের মতো ধারালো অস্ত্র তো তাদের লাগবেই। ‘যা হোক, এই গল্পে বাধ সেধেছেন ইতিহাসবিদেরা। তাদের প্রধানতম হলেন তেলআবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক শ্লোমো স্যান্ড।
... ‘স্যান্ড দেখিয়েছেন, বনি ইসরায়েল বলে যাদের কথা বাইবেলে বলা হয়েছে, আজকের ফিলিস্তিনি আরবেরাই (মুসলমান, ইহুদি, খ্রিস্টান মিলিয়ে) তাদের বংশধর। ভাষাতাত্ত্বিক ও ডিএনএ মিলের প্রমাণ তিনি হাজির করেছেন। হজরত ইব্রাহিমের বংশধরেরাই দিনে দিনে বংশবৃদ্ধি করে ইহুদিদের সংখ্যা বাড়িয়েছে, এমন ধারণাও ঠিক নয়। স্যান্ডের দাবি, দুই হাজার বছর ধরে ইহুদিরা এক জাতিভুক্ত ছিল না। বরং আরব ইহুদিরা আরবদের মতো, ইউরোপীয়রা ইউরোপীয় বংশধর এবং ইথিওপীয় কিংবা ভারতীয় ইহুদিরা যার যার জাতিরই বংশধর।
আজকের ইহুদিদের রক্তে বহু জাতির রক্ত প্রবাহিত, জাতিগত বিশুদ্ধতার ধারণা তাই বৈজ্ঞানিকভাবে ভুল। এমনকি ইহুদি ধর্মগ্রন্থেও পবিত্র নগরীতে বসবাসে নিষেধাজ্ঞা দেয়া ছিল। কেননা, পবিত্র মাটিতে বসতি হলে পাপ ঘটার আশঙ্কা থাকে। ১৯ শতক পর্যন্তও ইহুদিদের কল্পনাতেও জেরুজালেমে ফিরার আকাক্সক্ষা দেখা যায় না। কেবল বৃদ্ধরা মৃত্যুর আগে জেরুজালেমে আসত, পবিত্র মাটিতে কবর পাওয়ার আশায়। মুসলমানরা যেভাবে মক্কায় কবর পাওয়ার পুণ্যের আশা করে, সেভাবেই।
‘সুতরাং ইসরায়েল সকল ইহুদিদের আদি বাসভূমি ছিল না, কেবল আরব ইহুদিরাই সেখানকার লোক। ‘স্লোমো স্যান্ড দেখিয়েছেন, একটি ইহুদি রাজ্য সত্যিই উচ্ছেদ হয়েছিল তবে সেটা কোনো আরবভূমি থেকে নয়। বরং পূর্ব ইউরোপের ককেশাস অঞ্চলের তুর্কি বংশোদ্ভূত খাজাররা একসময় দলে দলে ইহুদি ধর্ম গ্রহণ করেছিল, সেখানে তাদের রাজত্বও ছিল। এদের বংশধরদেরই ইউরোপের ভূরাজনৈতিক চক্রান্তের অংশ হিসেবে আরবের বুকে শূলের মতো বিঁধিয়ে দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন। (প্রথম আলো, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৭)।
আমাদের দায়ীগণের এক কর্তব্য বর্তমান সভ্যতার অন্যায়-অবিচারের এই দৃষ্টান্তগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করা। বিশ্বব্যাপী মুসলিম উম্মাহর মাজলুমিয়াতকে যুক্তি ও আবেগের সাথে তুলে ধরা এবং নিজেদেরকে ও গোটা উম্মাহকে ঈমান ও তাকওয়ায়, ইলম ও আমলে ওই পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় আত্মনিয়োগ করা, যার নমুনা ছিলেন সাহাবায়ে কেরাম। শুধু এ পথেই আল্লাহ তায়ালার মদদ ও নুসরত হাসিল হতে পারে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানের অনুষ্ঠানিকতা শুরু
ঐতিহ্যবাহী ওষুধ পরীক্ষায় তৃতীয় স্থানে ইরান
একই গাড়িতে শপথ অনুষ্ঠানে পৌঁছলেন ট্রাম্প ও বাইডেন
সৌদি আরবে ব্যাপক ধরপাকড়, ২১ হাজার অভিবাসী গ্রেপ্তার
শেরপুরে ৪ মামলায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা বাবু কারাগারে
শপথের আগে ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানালেন পুতিন
গোরাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত
আবু সাঈদ হত্যা বেরোবির ৫৬ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার, ১৫ জনের বিরুদ্ধে হবে মামলা
বিরলে জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের চুড়ান্ত খেলা ও পুরষ্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত
ঈশ্বরগঞ্জে তারুণ্যের উৎসব ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত
ট্রাম্প ভাঙলেও রীতি রক্ষা করলেন বাইডেন
লক্ষ্মীপুরে কৃষি জমির মাটি কাটায় লাখ টাকা জরিমানা
হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প, স্বাগত জানালেন বাইডেন
চকরিয়ায় বসতবাড়িতে সন্ত্রাসী হামলা, লুটপাট, ব্যবসায়ীকে গুলির ঘটনায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা
৬ সংস্কার কমিশনের মেয়াদ বেড়েছে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত
কুমিল্লা নগরীতে দুই প্রতিষ্ঠানকে অর্ধলক্ষ টাকা জরিমানা ভ্রাম্যমান আদালতের
রাষ্ট্র সংস্কারের আগে কোন নির্বাচন নয়: ইসলামী আন্দোলন
ইরান-আফগানিস্তান বাণিজ্য বেড়েছে ৮৪ শতাংশ
‘ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের যাত্রা সুসংহত করবে বিচার বিভাগ’
ঈশ্বরগঞ্জে সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার