চট্টগ্রামে ২০ রুটে বাস ধর্মঘটে চরম ভোগান্তি
১৯ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৫ এএম
দক্ষিণ চট্টগ্রামের ২০ রুটে বাস ধর্মঘটের কারণে দিনভর যাত্রীদের নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। আগাম ঘোষণা না দেওয়ায় যাত্রীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। বিকল্প ব্যবস্থায় কেউ কেউ গন্তব্যে যেতে পারলেও তিন-চারগুণ বেশি বাড়তি ভাড়া গুণতে হয়েছে। গতকাল বুধবার ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কক্সবাজার-বান্দরবানসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের ২০ রুটে ধর্মঘট পালন করেছে পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা। সকালে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বাস কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে যেতে গিয়ে কর্ণফুলী সেতু এলাকায় ধর্মঘটকারী শ্রমিকদের বাধার সম্মুখীন হন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় শ্রমিকরা সেতু এলাকায় অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার বাস কাউন্টার জোরপূর্বক বন্ধ করে দেন।
মহাসড়কে রুট পারমিটবিহীন যান ও দ্বিতল বাস চলাচল বন্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চল বান্দরবান-কক্সবাজার জেলা সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টার এ কর্মসূচি পালন করে। একই দাবিতে গত ৯ অক্টোবর দু’ঘণ্টা বাস চলাচল বন্ধ রেখে প্রশাসনকে সমস্যা সমাধানের জন্য এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম দিয়েছিল ঐক্য পরিষদ। ৯ দিনের মাথায় গত মঙ্গলবার রাতে ১২ ঘণ্টার ধর্মঘটের ডাক দেয় সংগঠনটি। তবে এ ঘোষণা জানা না থাকায় লোকজন গন্তব্যে যেতে বাস টার্মিনালে গিয়ে বিপাকে পড়েন।
দুই প্রান্তে যানজটের শঙ্কা
উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত বঙ্গবন্ধু টানেল : পতেঙ্গা-আনোয়ারায় সংযোগ সড়কসহ অপ্রতুল অবকাঠামো সুফল নিয়ে সংশয়
রফিকুল ইসলাম সেলিম ও নুরুল আবছার তালুকদার
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল হয়ে মাত্র তিন মিনিটেই পার হওয়া যাবে কর্ণফুলী নদী। ৩.৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ টানেলে ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার গতিতে চলবে যানবাহন। দেশের প্রথম এই টানেল চালুর পর প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০ হাজার যানবাহন চলাচল করবে। তবে টানেলের দুই প্রান্ত পতেঙ্গা এবং আনোয়ারায় পর্যাপ্ত সংযোগ সড়কসহ অবকাঠামো গড়ে না উঠায় টানেল ঘিরেই যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাতে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই সড়ক টানেলের সুফল নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
এদিকে উদ্বোধনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত বঙ্গবন্ধু টানেল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৮ অক্টোবর টানেল উদ্বোধন করবেন। এর পরদিন থেকে শুরু হবে টানেল হয়ে যানবাহন চলাচল। টানেলে কোন গাড়ি চলতে পারবে এবং কোনটি চলতে পারবে না সে বিষয়ে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। টোলহারও নির্ধারণ করা হয়েছে। চীনের আর্থিক সহযোগিতায় টানেল নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। নগরীর পতেঙ্গা ও আনোয়ারা উপজেলা প্রান্তে ৫.৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সংযোগ সড়ক রয়েছে। ইতোমধ্যে এ সংযোগ সড়কের নির্মাণ কাজও শেষ হয়েছে।
তবে ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছে, টানেলের দুই প্রান্তে সংযোগ সড়কসহ অবকাঠামো অপ্রতুল হওয়ায় যানজট হতে পারে। পতেঙ্গা প্রান্তে টানেলের মুখেই চারটি সড়কের সংযোগস্থল। এর ফলে টানেলের গোলচত্বর এলাকায় জটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে পতেঙ্গা প্রান্তে একাধিক বাইপাস, আন্ডার ও ওভারপাস নির্মাণের সুপারিশ করা হলেও তা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। টানেলের পতেঙ্গা প্রান্তে সিটি আউটার রিংরোড, পতেঙ্গা সৈকত সড়ক, বিমানবন্দর সড়ক এবং নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে যানবাহন চলাচল করবে। এ চারটি সড়কের যানবাহনের কারণে পতেঙ্গা প্রান্তে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে যাবে বলে মনে করেন ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা।
টানেল চালুর আগেই অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ সামাল দিতে নগরীর লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও তা হচ্ছে না। এখনও একপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। শুরুতে সিডিএর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, টানেলমুখী যানবাহনের চাপ সামাল দিতে এক্সপ্রেসওয়ের পতেঙ্গা থেকে বন্দর-নিমতলা অংশ চালু করে দেওয়া হবে। কিন্তু এখনও ওই অংশের কাজও শেষ করা যায়নি। টানেল থেকে যানবাহন পতেঙ্গা আউটার রিংরোড হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াত করবে। পতেঙ্গা থেকে কাট্টলী পর্যন্ত আউটার রিংরোড চার লেনের। এরপর সেটি দুই লেনের টোল রোড হয়ে ফৌজদারহাটে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাথে সংযুক্ত হয়েছে। ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও আউটার রিংরোডের সংযোগস্থল ওই সড়কে যানবাহন আটকে গিয়ে জটের আশঙ্কা রয়েছে।
একই অবস্থা আনোয়ারা প্রান্তেও। টানেল থেকে আনোয়ারা হয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামমুখী একটি সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। সড়কটি ছয় লেনের হওয়ার কথা থাকলেও কাজ শেষ হয়েছে চার লেনের। তাছাড়া চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কও এখনও চার লেনে উন্নীত করা হয়নি। ফলে টানেলের অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ এ মহাসড়কে পড়লে স্বাভাবিক যানবাহন চলাচল বিঘিœত হবে। তাতে যানজট আরো বেড়ে যাবে। টানেল থেকে বের হয়ে আনোয়ারা প্রান্তে তিনটি স্থানে যানজটের কারণে টানেলের সুফল নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
টানেল হয়ে অতিরিক্ত যানবাহন আনোয়ারা-পটিয়া হয়ে যাবে কক্সবাজার পর্যন্ত। কিন্তু আনোয়ারার ব্যস্ততম জংশন চাতরী চৌমহনী বাজার, কর্ণফুলীর ফাজিল খার হাট ও ফকিরনির হাটে সড়ক প্রশস্ত না করায় অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ সামাল দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে। এমনিতেই গুরুত্বপূর্ণ ওই তিনটি মোড়ে প্রতিনিয়ত যানজট হচ্ছে। তার উপর টানেলমুখী ২৮ থেকে ৩০ হাজার যানবাহনের চাপ সামাল দেওয়া রীতিমত দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রেখে টানেলের সুফল পেতে ওই তিনটি এলাকায় ওভারপাস অথবা ফ্লাইওভার নির্মাণ জরুরি বলে মনে করেন স্থানীয়রা। এছাড়া স্থানীয়দের প্রত্যাশা ছিল টানেল চালু হলে আনোয়ারা বাঁশখালী হয়ে কক্সবাজার অথবা আনোয়ারা চন্দনাইশ হয়ে কক্সবাজার রুটে যানবাহন চলাচল করবে। কিন্তু সংযোগ সড়ক না হওয়ায় পটিয়া হয়ে কক্সবাজার যাতায়াত করবে যানবাহনগুলো।
টানেল সংযোগ সড়ক আনোয়ারা থেকে কর্ণফুলীর শিকলবাহা ক্রসিং পর্যন্ত ছয় লেনের কাজ হলেও শিকলবাহা থেকে পটিয়া হয়ে কক্সবাজার সড়ক সম্প্রসারণ হয়নি। আনোয়ারা কালাবিবির দিঘি থেকে বাঁশখালী-পেকুয়া-চকরিয়া সড়কের অবস্থাও একই রকম। এসব সড়ক এখনো এক লেনেই চলছে। এতে করে টানেল থেকে বের হয়ে এসব সড়কে যানবাহনের গতি থেমে গিয়ে যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, টানেলের আনোয়ারা প্রান্তে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলো সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হবে। এছাড়া চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজও শিগগির শুরু করা হবে। টানেল প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, টানেল চালু হওয়ার পর ২০২৫ সাল পর্যন্ত গড়ে প্রতিদিন ২৮ হাজার ৩০৫টি যানবাহন চলাচল করবে। এছাড়া ২০৩০ সালে যানবাহন চলাচলের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৩৭ হাজার ৯৪৬টি এবং ২০৬৭ সালে যানবাহনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রতিদিন গড়ে ১ লাখ ৬২ হাজার। তবে টানেলের দুই প্রান্তে এখনও পর্যাপ্ত অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) ইঞ্জিনিয়ার আবদুল মান্নান মিয়া ইনকিলাবকে বলেন, টানেলের দুই প্রান্তেই অপ্রতুল অবকাঠামোর কারণে কিছুটা সমস্যা হতে পারে। সেটা মাথায় রেখেই যানবাহন নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে ট্রাফিক বিভাগ। যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে পর্যাপ্ত সংযোগ সড়ক, আন্ডারপাস ও ওভারপাস নির্মাণে ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএ ও সড়ক বিভাগের কাছে বেশকিছু প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি, সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে ট্রাফিক ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখা যাবে। টানেলের ভেতরে যানবাহন নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে নৌবাহিনী থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, দুই প্রান্তে ট্রাফিক বিভাগ দায়িত্ব পালন করবে।
সিডিএর কর্মকর্তারা বলছেন, পতেঙ্গা প্রান্তে টানেলমুখী যানবাহনের চাপ সামাল দিতে বেশকিছু আন্ডারপাস, ওভারপাস এবং সংযোগ সড়ক নির্মাণে একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে পতেঙ্গা এলাকায় যানবাহন চলাচলে আর কোনো সমস্যা থাকবে না।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
যুদ্ধবিরতি চললেও পশ্চিম তীরে ইসরাইলি হামলায় আহত ১২
সাভারে রূপালী ব্যাংকের এটিএম বুথ উদ্বোধন
মোরেলগঞ্জে স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করণে ডরপ’র মতবিনিময় সভা
কৃষক জামালের ক্ষেতে রঙিন ফুলকপি, উদ্বুদ্ধ হচ্ছে অন্য কৃষকরাও
জন্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার বাতিল
কুয়াশা ও তাপমাত্রা নিয়ে নতুন তথ্য আবহাওয়া অধিদপ্তরের
কলকাতায় প্রকাশ্যে মুরগির মাংস বিক্রি নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত
ভারত থেকে অনুপ্রবেশের সময় ফেনীতে সুদানের নাগরিক আটক
ক্ষমতা গ্রহণ করেই বাইডেন আমলের ৭৮ নির্বাহী আদেশ বাতিল ট্রাম্পের
পেকুয়ায় প্রাচীন খাল উদ্ধারে পদক্ষেপ জনমনে স্বস্তি
ঢাকার বাতাস ২৪৬ স্কোর নিয়ে আজ ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’
ট্রাম্প ক্যাপিটল হিলের দাঙ্গায় জড়িত ১৫০০ জনকে ক্ষমা করলেন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত ‘সেকেন্ড লেডি’
গাজা একটি ‘বিশাল ধ্বংসস্তূপ’, পুনর্নির্মাণ করা প্রয়োজন: ট্রাম্প
মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির প্রথম পদক্ষেপ গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি: ডোনাল্ড ট্রাম্প
ট্রাম্পের শপথ : যোগ দেন চীনের হ্যান ঝেং ভারতের জয়শঙ্কর
সুইজারল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন প্রধান উপদেষ্টা
সত্যিই কি মারা গেছেন ম্যাশ? কি বলছে রিউমর স্ক্যানার?
সেই যুবকের বিরুদ্ধে ৯০০ টাকা চুরির মামলা
প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার ঘোষণা ট্রাম্পের