বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্তে হোঁচট খেলো বাংলাদেশ ব্যাংক

ইউসিবির সঙ্গে একীভূত নয়, নিজেরাই সবল হতে চায় ন্যাশনাল ব্যাংক

Daily Inqilab অর্থনৈতিক রিপোর্টার

২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৫ এএম

কোনো ব্যাংকের সঙ্গে এখনই একীভূত না হয়ে বরং নিজেরাই সবল হতে চায় বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংক। ফলে ইউসিবির সঙ্গে একীভূত না হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাংকটির পরিচালনা পরিষদ (বোর্ড)।

গত শনিবার ন্যাশনাল ব্যাংকের বোর্ড সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। এমন পরিস্থিতিতে মার্জ (একীভূতকরণ) করার বিষয়ে চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্তে হোঁচট খেলো বাংলাদেশ ব্যাংক। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে রাষ্ট্রীয় মালিকানার বেসিক ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ফলে দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপ একে একে ভেস্তে যাচ্ছে। একীভূতকরণ নিয়ে ব্যাংক খাতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় অনেকে আমানত তুলে নিচ্ছে। এমন পরিস্থিতি সামলাতে গত ১৫ এপ্রিল জরুরি ভিত্তিতে সাংবাদিকদের ডেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, আপাতত পাঁচটি ব্যাংকের বাইরে কোনো একীভূতকরণের আবেদন নেওয়া হবে না। এর আগে, গত ১৮ মার্চ ব্যাংক দুটি একীভূতকরণের সমঝোতা চুক্তিতে সই করে। এটি ছিল একীভূতকরণের প্রথম ধাপ। অথচ একীভূতকরণ নীতিমালা তৈরি এবং প্রকাশ করা হয় পরের মাসের ৪ এপ্রিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালায় বলা হয়েছে, সম্পদ মূল্যায়নে উভয় ব্যাংককে একমত হতে হবে। যদি তারা চুক্তিতে পৌঁছাতে না পারে, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক মধ্যস্থতাকারী হয়ে মতপার্থক্য দূর করতে সহায়তা করবে।

ব্যাংকগুলোর মধ্যে এক্সিমের সঙ্গে পদ্মা, সিটির সঙ্গে বেসিক, ইউসিবির সঙ্গে ন্যাশনাল, সোনালীর সঙ্গে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক একীভূত করা হবে। যদিও এর আগে গভর্নর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জানিয়েছিলেন, আট থেকে ১০টি ব্যাংককে একীভূত করা হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ৯ এপ্রিল জানানো হয় যে, বেসরকারি খাতের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসির (ইউসিবি) সঙ্গে একীভূত হচ্ছে সঙ্কটে থাকা বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংক। ওইদিন ইউসিবি ব্যাংকের একজন পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ডেকে নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈঠক করেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।

বৈঠকে ইউসিবির কর্তৃপক্ষকে একীভূত করার বিষয় উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানানো হয়। এ সময় বৈঠকে ন্যাশনাল ব্যাংকের পক্ষে কেউ উপস্থিত ছিলেন না। তার একদিন আগে ৮ এপ্রিল বেসরকারি সিটি ব্যাংকের সঙ্গে সরকারি মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়। ওই দিন সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডিকে ডেকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। ওই বৈঠকেও বেসিক ব্যাংকের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। ন্যাশনাল ব্যাংককে একীভূত করার বিষয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকেও ব্যাংকটির কোনো প্রতিনিধি ছিলেন না। গভর্নর এককভাবে এসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

এর আগে, সরকারি দুটি ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়। এগুলো হলো, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল) এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে বিডিবিএল। আর বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে রাকাব। একীভূত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে জানিয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

ব্যাংক খাতকে ‘অর্থনীতির হৃদপিণ্ড’ বা চালিকা শক্তি বলা হয়ে থাকে। এই খাতের ভালো অবস্থা কিংবা মন্দ অবস্থা দুটোরই প্রভাব দেশের ওপর পড়ে বলে উদ্বেগও থাকে। বাংলাদেশের ব্যাংক খাত নিয়ে দীর্ঘদিন দেখা দিয়েছে উদ্বেগ। আর এই উদ্বেগকে নতুন করে আরও ঘনীভূত করেছে ব্যাংকের একীভূতকরণ বা মার্জার। মার্জারকে আর্থিকখাত সংশ্লিষ্টরা শুরুতে সাধুবাদ জানালেও পরবর্তীতে বিষয়টি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, অযৌক্তিক ও বৈষম্য হিসেবে দেখছেন। একই সঙ্গে দুর্নীতিবাজ ও অসৎ ব্যাংক মালিকদের রক্ষায় দেশে ব্যাংকিং সেক্টরকে অস্থিতিশীল করতে দূরভিসন্ধিমূলক ভাবে এই মার্জারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি একীভূত করার বিষয়টিকে দেখছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের চাপিয়ে দেওয়া বা নির্দিষ্ট ব্যাংককে টার্গেট করে নিজস্ব সিদ্ধান্ত হিসেবে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন পক্ষ থেকে নানা আপত্তিও উঠতে শুরু করেছে। ব্যাংকের আমানতকারী ও গ্রাহকরা অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন। ব্যাংক কর্মকর্তারাও এক ধরনের অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ ব্যাংকখাতকে বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ এবং কোন কোন ব্যাংক প্রধানমন্ত্রী বরাবর খোলা চিঠি দিয়েছে। এছাড়া ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার কথা বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে পাঁচটি ব্যাংককে একীভূত করতে চাইছে তাদের বেশির ভাগই একীভূত হতে চাচ্ছে না। একীভূতকরণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। #


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

নতুন করে রিজার্ভ চুরি হয়নি : বাংলাদেশ ব্যাংক

নতুন করে রিজার্ভ চুরি হয়নি : বাংলাদেশ ব্যাংক

উই ওয়ান্ট টু রিবিল্ড দ্য ট্রাস্ট- সালমান এফ রহমানকে লু

উই ওয়ান্ট টু রিবিল্ড দ্য ট্রাস্ট- সালমান এফ রহমানকে লু

আনন্দঘন পরিবেশে ক্রিকেট আইকন মাশরাফি বিন মুর্তজার সঙ্গে উপায় এজেন্টদের সাক্ষাৎ

আনন্দঘন পরিবেশে ক্রিকেট আইকন মাশরাফি বিন মুর্তজার সঙ্গে উপায় এজেন্টদের সাক্ষাৎ

সরকার জলবায়ু ঝুঁকি হতে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষদের সুরক্ষায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করছে : পরিবেশমন্ত্রী সাবের চৌধুরী

সরকার জলবায়ু ঝুঁকি হতে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষদের সুরক্ষায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করছে : পরিবেশমন্ত্রী সাবের চৌধুরী

উইলসন ডিজিজের’ জিন থেরাপি দিচ্ছে বিএসএমএমইউ

উইলসন ডিজিজের’ জিন থেরাপি দিচ্ছে বিএসএমএমইউ

কাদের-চুন্নু জাতীয় পার্টিকে বিক্রি করে দিয়ে নেতাকর্মীদের ক্রীতদাস বানানোর চেষ্টা করেছে : কাজী মামুন

কাদের-চুন্নু জাতীয় পার্টিকে বিক্রি করে দিয়ে নেতাকর্মীদের ক্রীতদাস বানানোর চেষ্টা করেছে : কাজী মামুন

কোলকাতায় এখন মণিপাল হসপিটাল

কোলকাতায় এখন মণিপাল হসপিটাল

ইসলামি দলগুলোর প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রশ্ন

ইসলামি দলগুলোর প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রশ্ন

ইউক্রেনের ১৬ হাজারেরও বেশি সাঁজোয়া যান ধ্বংস

ইউক্রেনের ১৬ হাজারেরও বেশি সাঁজোয়া যান ধ্বংস

সিঙ্গাপুরে প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্টের বিনিয়োগ রোডশো

সিঙ্গাপুরে প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্টের বিনিয়োগ রোডশো

এসবিএসি ব্যাংকের ১১তম বর্ষপূর্তিতে স্মার্ট ব্যাংকিং সার্ভিস উদ্বোধন

এসবিএসি ব্যাংকের ১১তম বর্ষপূর্তিতে স্মার্ট ব্যাংকিং সার্ভিস উদ্বোধন

কুষ্টিয়ায় কুলখানির আয়োজন নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে একজন নিহত

কুষ্টিয়ায় কুলখানির আয়োজন নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে একজন নিহত

রংপুরে কলেজ ছাত্র হত্যা মামলায় একজনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড

রংপুরে কলেজ ছাত্র হত্যা মামলায় একজনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড

চাকরিতে বয়স বাড়ানো হোক

চাকরিতে বয়স বাড়ানো হোক

তিস্তা বহুমুখী ব্যারাজ নির্মাণ নিয়ে ভারত-চীনের স্নায়ুযুদ্ধ

তিস্তা বহুমুখী ব্যারাজ নির্মাণ নিয়ে ভারত-চীনের স্নায়ুযুদ্ধ

বাসযোগ্য সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি অন্তরায়

বাসযোগ্য সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি অন্তরায়

বনাঞ্চল রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে

বনাঞ্চল রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে

নতুন ক্ষেপণাস্ত্র উন্মোচন করেছে হিজবুল্লাহ

নতুন ক্ষেপণাস্ত্র উন্মোচন করেছে হিজবুল্লাহ

আইসিজেতে গণহত্যা মামলার পক্ষে অবস্থান নিল মালদ্বীপ

আইসিজেতে গণহত্যা মামলার পক্ষে অবস্থান নিল মালদ্বীপ

ইউক্রেন যুদ্ধে গোপনে ভূমিকা রাখছে ব্রিটিশ কমান্ডো দল

ইউক্রেন যুদ্ধে গোপনে ভূমিকা রাখছে ব্রিটিশ কমান্ডো দল