রহস্য উদ্ঘাটনে তৎপরতা গতি পাচ্ছে না

মধুখালী ডুমাইনে দুই সহোদর খুন

Daily Inqilab আনোয়ার জাহিদ ফরিদপুর থেকে

৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১৪ এএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১৪ এএম

মধুখালী ডুমাইন পঞ্চপল্লীতে দুই সহোদর খুনের রহস্য উদ্ঘাটনের তৎপরতায় গতি পাচ্ছে না। এমন অভিযোগ নিহতদের পরিবারের। নিহতের পরিবারের দাবি বড় বড় কর্মকর্তারা আমাদের বাড়িতে এসে আশা ভরসা দেন তখন মধুখালীর ওসিসহ পুলিশ ভাইরা সাথে থাকে। মন্ত্রী, এমপি, আইজি, ডিআইজি, ডিসি এসপি সাহেবরা যখন সকলকের সাথে কথা বলেন তখন আমাদের একটু হলেও শান্তি লাগে। অফিসারা যা বলে যান মধুখালীর পুলিশরাই তাই করবেন এমনটাই সবার সামনে বলেন। আসলে বড় অফিসারা চলে যাবার পর মধুখালীর ওসি সাহেবের আর কোনো গরজ দেখি না।কথাগুলো একান্তভাবে ইনকিলাবের সাথে বললেন নিহত আশরাফুল ও আরশাদুলের বাবা মো. শাহজাহান খান।

নিহতদের আপন ছোট চাচা মো. সাজ্জাদ খানের সাথে তিনি ইনকিলাবকে বলেন, আমার দুটি কলিজার টুকরা খুন হলো আজ প্রায় ১২ দিন। কিন্তু মনিগের যারা মারিছে তাদের কেউ ধরা পড়ছে কিনা? আদৌও ধরা পড়বে কিনা? এই রকম কষ্টের কথা আমার বুকের মাঝখানে নড়েচড়ে। তিনি বলেন, সবাই কাঁদে আমি কাঁদতে পারি না। সবার কাছে বহুলোক কিছু না কিছু প্রশ্ন করে কিন্তু আমারে কেউ কিছু প্রশ্ন করে না। মনে হয় আমি যে মনিগের ছোট চাচা এটাই সবাই জানেন না। তিনি আরো বলেন, আমি ৭/৮ বছর বয়স কাল থেকে দুই জনরে দুই কাঁধে করেও রাস্তা থেকে বাড়ি আনছি। প্রতিদিন মধুখালী মাদরাসায় পড়ার জন্য নিয়ে গেছি। আমার সেই মনিগের যারা খুন করলো কি অপরাধে খুন করলো? ঐ এলাকার মন্দিরেই বা আগুন দিলো কারা? এটাও জানবার পারলাম না।

ইনকিলাবের সাথে কথা বললেন, দুই সহোদরের আরেক চাচা মো. রাজ্জাক খান বলেন, আমরা বলতে চাই ঘটনা ঘটছে আজ প্রায় ১২ দিন। ঘটনার পরদিন আমার ভাইয়ের কাছ থেকে একটি কাগজে সই নিলো ওসি সাহেব। বললো এটা হত্যা মামলার কপি। দুই সহোদরকে যারা খুন করলো তাদের নামে মামলা হয়েছে। পরে শুনলাম এই মামলা অজ্ঞাতনামা। মানে বুঝিনি। পড়ে শুনলাম ঐ মামলায় কারোর নাম নাই।

পুলিশ তদন্ত করে আসামি ধরবে তারপর ঐ মামলায় আটক হবে। ঘটনার দুই দিন পর বহু মানুষের মোবাইলে দেখলাম আমার ভাতিজা দুটোকে কিভাবে পিটিয়ে এবং ইট দিয়ে থেঁতলে হাত পা রশি দিয়ে বেঁধে নির্মম নির্যাতন করে কারা খুন করলো। ভিডিওতে কাদের দেখা গেছে স্থানীয়রা সবাইকে চিনেন। তার মধ্যে ঐ এলাকার চেয়ারম্যান মেম্বারও আছে। বাঁশের লাঠি বাটাম দিয়ে শরীরের জোর দিয়ে যে কজন আশরাফুল এবং আরশাদুলকে পিটিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করছে তাদের তো দেখাই যাচ্ছে।

পিটানোর সময় বাবাগো-মাগো আমাগো বাঁচাও বাঁচার জন্য বহু মিনতি করছে এমন আওয়াজ ভিডিও শুনিছি। মনিগের হাত পা ছিলো রশি দিয়ে বাঁধা। খুনিদের পায় ও ধরতে পারেনি তারা। আমরা হয়তো তাদের চিনি না। কিন্তু যারা খুনিদের চিনেন পুলিশ তাদের সাহায্য নিয়ে খুনিদের কেন ধরছে না।

নিহতদের ২য় মা সারমিন বেগমের সাথে কথা হলে তিনি ইনকিলাবকে বলেন, আমার মনিগের যারা পিটিয়ে খুন করলো তাদের তো আমরা মোবাইলে দেখলাম। পুলিশ ও দেখছে কিন্তু তাদের ঐ রাতেই বা তার পরদিন ধরলো না কেন? সবাই বলে তারা পালিয়েছে। আমার প্রশ্ন হলো পালিয়ে গেলো কোথায়? পালাতে সাহায্য করলো কারা? কিন্ত আমার দুঃখটা হলো ঐ খানে খুনিদের গ্রেফতার এব তাদের কঠোর বিচারের দাবিতে মধুখালীবাসী রাস্তাঘাট আটকিয়ে মানববন্ধন করলো, মিছিল করলো, বাস আটকালো। ইটাইটি হইছে পুলিশ বহু মানুষকে তারানোর জন্য গুলি মাইরলো আমার গ্রামের ১১ জন ছেলে আহত হইছে। ৪/৫ জনের গায়ে গুলি লাগছে। তারা চিকিৎসা নিয়া বাড়ি এসে ঘুমালো। পুলিশ রাতে এসে ওগার ধরে নিয়ে গেলো। অথচ পুলিশ খুনিদের খুঁজে পেল না।

নিহতদের আপন চাচাতো ভাই মো. ইমরান খানের সাথে তিনি ইনকিলাবকে বলেন, আমার দুই ভাই আশরাফুল ও আরশাদুলের খুনের ঘটনায় ৮ জন আটক হইছে। এটা বলছে ফরিদপুরের এসপি সাহেব। মধুখালীর ওসি সাহেব বললেন, এই মামলায় মোট ১২ জন আটক হয়েছে। সাংবাদিকদের ওসি বলছেন এসব আসামিদের মধ্যে দুই জন জবানবন্দি দিয়েছেন। তার মানে তারা খুনের সাথে জড়িত আছে এই কথা বলছে বিচারকের কাছে ও পুলিশের কাছে। খুব সুন্দর কথা।

ইমরান আরো বলেন, যেহেতু ২ জন স্বীকার করছে আমরা খুন করছি। তাহলে তাদের রিমান্ডে জিজ্ঞেস করা হোক আর ছিলো কারা? এই তথ্য বের করতে এতো লুকোচুরি কেন?
উল্লেখ্য, এই হত্যা মিশনে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন ডুমাইন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. তপন এবং মেম্বার অজিত কুমার। তাদের আটকে এবং সঠিক সংবাদদাতাকে জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার গত শুক্রবার তার কার্যালয় সংবাদ সম্মেলনে করে পুরস্কার ঘোষণা দিয়েছেন। হত্যাকাণ্ডের প্রায় ১২টি প্রহর কেটে গেলেও মুল আসামিরা রয়েছে ধরা ছোঁয়ার বাহিরে। এমনটাই নিহতদের আপনজনদের এবং এলাকাবাসীর দাবি। আগামীকাল পড়ুন এই মামলা নিতে পারে নতুন মোর। কোথায় আছে চেয়ারম্যান তপন এবং মেম্বার অজিত। চোখ রাখুন ইনকিলাবের পাতায়।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

১৫ কবি ও সাহিত্যিক পাচ্ছেন রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার

১৫ কবি ও সাহিত্যিক পাচ্ছেন রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার

ভূমিমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন ভারতীয় হাইকমিশনার

ভূমিমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন ভারতীয় হাইকমিশনার

হাতে চোট নিয়েও মেয়েকে নিয়ে কানে ঐশ্বরিয়া

হাতে চোট নিয়েও মেয়েকে নিয়ে কানে ঐশ্বরিয়া

ঢাকায় তিনদিনের কোল্ড চেইন ও অবকাঠামো প্রদর্শনী শুরু

ঢাকায় তিনদিনের কোল্ড চেইন ও অবকাঠামো প্রদর্শনী শুরু

ইট মারলে পাটকেল খাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকবেন

ইট মারলে পাটকেল খাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকবেন

মানুষের প্রতি শেখ হাসিনার আন্তরিকতা ও ভালোবাসা বিরল : নাছিম

মানুষের প্রতি শেখ হাসিনার আন্তরিকতা ও ভালোবাসা বিরল : নাছিম

দেশকে আরো এগিয়ে নিতে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

দেশকে আরো এগিয়ে নিতে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

সোনালিকে ‘অপহরণ’ করতে চেয়েছিলেন শোয়েব আখতার!

সোনালিকে ‘অপহরণ’ করতে চেয়েছিলেন শোয়েব আখতার!

সরকারের লুটপাটে দেশের অর্থনীতি খাদের কিনারায়: এমরান সালেহ প্রিন্স

সরকারের লুটপাটে দেশের অর্থনীতি খাদের কিনারায়: এমরান সালেহ প্রিন্স

রাবিতে গাঁজা সেবনে বাঁধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে মারামারি

রাবিতে গাঁজা সেবনে বাঁধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে মারামারি

বাসে জাবি ছাত্রীকে যৌন হয়রানিতে জড়িতদের শাস্তির দাবি

বাসে জাবি ছাত্রীকে যৌন হয়রানিতে জড়িতদের শাস্তির দাবি

পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ বাড়ানোর সুপারিশ

পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ বাড়ানোর সুপারিশ

মসজিদে জামাত হওয়ার পর আবার জামাত করা প্রসঙ্গে।

মসজিদে জামাত হওয়ার পর আবার জামাত করা প্রসঙ্গে।

রাজধানীতে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা বন্ধে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ

রাজধানীতে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা বন্ধে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ

বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সংসদীয় কূটনীতি কার্যকর হাতিয়ার : স্পিকার

বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সংসদীয় কূটনীতি কার্যকর হাতিয়ার : স্পিকার

সমাজে বিবাহকে সহজ করা দরকার

সমাজে বিবাহকে সহজ করা দরকার

সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি

সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি

ইসরাইলের গণহত্যার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ বদলে দিতে পারে বিশ্বরাজনীতি

ইসরাইলের গণহত্যার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ বদলে দিতে পারে বিশ্বরাজনীতি

কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে

কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে

হামলা বন্ধ না করলে ইইউ’র সাথে সম্পর্কে অবনতি ঘটবে

হামলা বন্ধ না করলে ইইউ’র সাথে সম্পর্কে অবনতি ঘটবে