লবণাক্ত পানি ছেড়ে হালদার মিষ্টি পানিতে প্রবেশ করছে মা মাছ
০৫ মে ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ০৫ মে ২০২৪, ১২:০৬ এএম
হালদা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একটি নদী। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে উৎপত্তি এ হালদা চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, হাটহাজারী ও রাউজানের উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত জোয়ার-ভাটার এ নদীর নাম রাখা হয় বঙ্গবন্ধু মৎস্য হ্যারিটেজ হালদা নদী। প্রতি বছর যেখানে রুই জাতীয় মা মাছ ডিম ছাড়ে এবং নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করা হয়। বিখ্যাত মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ এই হালদা নদীতে মা মাছেরা আসতে শুরু করেছে। বর্তমানে চলতি ও আগামি মাসে বৃষ্টি ও মেঘের গর্জন হলে মা মাছ ডিম দেওয়া শুরু করবে। প্রতিবছর জুলাই ও জানুয়ারি পর্যন্ত এসব মা মাছ দেশের বিভিন্ন নদ-নদীর লবণাক্ত পানিতে বিচরণ করলেও ডিম দেওয়ার তিন মাস পূর্বে মা মাছগুলো পেট ভর্তি ডিম নিয়ে হালদার মিষ্টি পানি আহরণ করতে চলে আসে।
ইতিমধ্যে হালদা নদীতে মাছ বিচরণ করতে দেখা যাচ্ছে বলে স্থানীয় বেশ কয়েকজন ডিম সংগ্রহকারীরা জানিয়েছেন। বছরের মার্চ, এপ্রিল, মে, জুন পর্যন্ত বৃষ্টি ও মেঘের গর্জন হলে এই নদীতে মা মাছ ডিম দিয়ে থাকে। বিশেষ করে এপ্রিলের শেষের দিকে ডিম ছাড়ে। মার্চ ও এপ্রিল মাসে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে মা মাছ ডিম ছেড়ে দেয়। তবে ডিম ছাড়া পূর্বে মুষলধারে বৃষ্টি ও মেঘের গর্জন এবং পাহাড়ি ঢল ও ঘোলা পানির স্রোত থাকলে মা মাছেরা ডিম ছাড়বে বলে জানিয়েছেন অভিজ্ঞ ডিম সংগ্রহকারী মো. কামাল সওদাগর।
হালদা নদীর সংযুক্ত খাল মাথা মুহুরী সাঙ্গু কর্ণফুলী সেংখালি পুরাকপালি কাটাখালি বোয়ালিয়া প্রকৃতি খাল ও নদীর ধারে অবস্থানকারী মা মাছ চলে আসে। ডিম ছাড়ার উপযুক্ত পরিবেশ পেয়ে স্মরণতীতকাল থেকে হালদার মা মাছেরা ডিম ছেড়ে আসছে। বজ্রসহ প্রবল বর্ষণের ফলে নদীতে পাহাড়ি ঢলের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়ে নদীর পানি অপেক্ষাকৃত ঘোলাটে হলে পানির গভীরতা যেখানে বেশি কিংবা নদীর কুমের পানি ঘূর্ণায়মান স্থানে মা মাছ ডিম ছেড়ে থাকে। চৈত্র মাসেও কোনো কোনো সময় উপযুক্ত পরিবেশ পেলে বিশেষ করে বজ্রসহ প্রবল বর্ষণ হলে নদীর ঢল বৃদ্ধি পেলে মা মাছ ডিম ছাড়ার ঘটনার কথাও অনেক প্রবীণ ডিম সংগ্রহকারীরা বলতে শোনা যায়।
হালদা নদীতে তিন মাস এ সব মা মাছ বিচরণ করবে, ডিম দেওয়ার মৌসুম শেষ হলে তারা দেশের অন্যান্য নদীগুলোতে ফিরে যাবে। তবে বিশেষ করে চৈত্র মাসে নদীতে মা মাছের দেওয়া ডিম দ্রুত বর্ধনশীল হয়। তাই এই ডিমের প্রতি পোনা ব্যবসায়ী ও মাছ চাষীদের আগ্রহ বেশি। যদি চৈত্র মাসে প্রবল বর্ষণ ও বজ্রসহ বৃষ্টিপাত না হয় উপযুক্ত পরিবেশ না পাওয়া যায় তাহলে বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে নদীতে ডিম ছেড়ে থাকে বলে ডিম আহরোণকারী আশু বড়ূয়া জানান।
এদিকে হালদা নদীতে মা মাছ সময়মত ও উপযুক্ত ডিম ছাড়ার পরিবেশ তৈরি করতে রাত দিন পরিশ্রম করছে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ, বি, এম মসিউজজামান। বিভিন্ন সময়ে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে হালদা নদী থেকে বালু উত্তোলন, মা মাছ নিধন, বড়শি উদ্ধারসহ এমনকি এ নদী থেকে অবৈধ মাছ শিকারিকেও তিনি জরিমানা করেছেন।
এ নদীর ও নয়াহাট আজিমেরঘাটসহ যেসব স্থানে নদীর গভীর কুম রয়েছে সেই সব স্থানে বেশির ভাগ মা মাছের চলাচল নজরে পড়ছে বলে তারা জানান। তবে চলতি মৌসুমের ডিম ছাড়ার দুটি ‘জো’ শেষ হয়েছে এর মধ্যে মা মাছ ডিম ছাড়ার কোনো আলামত দেখা যাইনি। কারণ মেঘের গর্জন ও মুষলধারে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল হালদাতে প্রবেশ করছে না। তাই দুই জোতে ডিম না দিলেও আগামি ১৪ দিন পর আবারো একটি ‘জো’ রয়েছে সে জোতে ডিম দেওয়ার আশা করছেন ডিম সংগ্রহকারীরা।
এদিকে কয়েকজন প্রবীন ডিম সংগ্রহকারী জানান, প্রতি বছর এই হালদা নদীতে এই মৌসুমে মা মাছ ডিম দিয়ে থাকে কিন্তু গত দুই তিন বছর ধরে মা মাছ ডিম দেওয়ার মৌসুম যেন পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। বিগত কয়েকদিন আগে মা মাছ ডিম দেওয়ার দুইটি জো চলে গেছে, কিন্তু মুষলধারে বৃষ্টি ও মেঘের গর্জনসহ পাহাড়ি ঢল নেই। তাই মা মাছ ডিম ছাড়তে পারছে না। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সঠিক সময়ে বৃষ্টি না হওয়ার ফলে ডিম দিচ্ছে না মাছেরা। সামনে আরেকটি জো আসছে হয়তো বৃষ্টি আর মেঘের গর্জন হলে ডিম ছাড়তে পারে ।
হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদী মিঠাপানির মেজরকার্প জাতীয় মাছের (রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউশ) একটি অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র। এই জলজ বাস্তুতন্ত্রে রয়েছে ৯৩ প্রজাতির মাছ, চিংড়ি ও গাঙেয় ডলফিন। মৌসুমে অমাবস্যা ও পূর্ণিমার তিথিতে বজ্রপাতসহ পর্যাপ্ত বৃষ্টির ফলে পাহাড়ি ঢল নেমে পানিতে তীব্র স্রোত সৃষ্টি করে এবং পানির তাপমাত্রা কমে (২৭-২৯) ডিগ্রী সেলসিয়াস ও বিভিন্ন ভৌত ও রাসায়নিক প্যারামিটারের (পানির তাপমাত্রা, পানির স্রোত, পানির স্তর, তড়িৎ পরিবাহিতা, টারবিডিটি, দ্রুরীভূত অক্সিজেন, পিএইচ ইত্যাদি) মিত্রস্ক্রিয়তায় হালদা নদীতে কার্পজাতীয় মাছের ডিম ছাড়ার প্রাকৃতিক অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হলেই কেবল মা মাছ ডিম ছাড়ে। জলবায়ু পরিবর্তন ও মনুষ্যসৃষ্ট বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে হালদার মৎস্য সম্পদের উপর।
এই ব্যাপারে হাটহাজারী মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফারুক ময়েদুজামান জানান, মা মাছের এখন ডিম দেওয়ার মৌসুম কিন্তু ঝড় বৃষ্টি না হওয়ার কারণে ডিম ছাড়তে পারছেনা তবে সামনের জোতে ডিম দিতে পারে বলে তিনি জানিয়েছেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মঞ্চে অপ্রীতিকর ঘটনার মুখোমুখি মাহিরা খান
আ.লীগ সমর্থিত দুই সামাজিক দলের মধ্যে সংঘর্ষে আহত ২১
শিল্পী সমিতির সদস্যপদ ফিরে পেলেন জায়েদ খান
মেসির সেই ন্যাপকিন পেপারের মূল্য সাড়ে ৯ লাখ ডলার
ডিএ তায়েবের বিরুদ্ধে মামলা করবেন নিপুণ
কালকিনি পৌরসভার সব কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ দাবী চেয়ারম্যান প্রার্থী নূরুজ্জামানের
প্রহসন, কারচুপি ও দুর্নীতির উপজেলা নির্বাচন জনগণ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বর্জন করবে-শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি
শিরোপার সামনে দাঁড়িয়ে স্বতর্ক গুয়ার্দিওলা
ইউরো শেষ ইসকোর
একটি জাল ভোট পড়লেও কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হবে : নির্বাচন কমিশনার
শিরোপা খরা কাটাতে ভারতকে অনেক চাপ সামলাতে হবে: মিসবাহ
বঙ্গোপসাগরে শক্তি সঞ্চয় করছে ‘রেমাল’, আঘাত হানতে যেসব অঞ্চলে
কোটালীপাড়া উপজেলার হিরণ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিদর্শিকা শাহনাজ পারভিনের কারাদন্ড
ভারতে লোকসভা নির্বাচন : বেনাপোল-পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন তিন দিন বন্ধ
বিহারে পুলিশ হেফাজতে বর-কনের মৃত্যু, থানায় আগুন বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীর
কুয়াকাটায় দুর্যোগে পূর্বাভাস-ভিত্তিক আগাম কার্যক্রম বিষয়ক বিভাগীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত
বাকশাল সদস্য হয়েছিলেন জিয়াউর রহমান : ওবায়দুল কাদের
ভূঞাপুরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় কলেজ ছাত্র নিহত
মির্জাপুরে প্রচারণায় অংশ নেয়ায় বিএনপির ২০ নেতাকে সতর্ক বার্তা
বেতন বৃদ্ধির দাবীতে আন্দোলনে সরকারি কর্মচারীরা