খুলছে এলিভেডেট এক্সপ্রেসওয়ে
০৫ মে ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ০৫ মে ২০২৪, ১২:০৬ এএম
অবশেষে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এক্সপ্রেওয়ের পতেঙ্গাপ্রান্তের উঠানামার পথ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে আগেই। এরমধ্যে নির্মাণ শেষ হয়েছে লালখান বাজারপ্রান্তের উঠানামার পথও। পতেঙ্গায় অস্থায়ীভাবে নির্মাণ করা হয়েছে টোল প্লাজা। চারলেনের উভয় পাশের কাজও প্রায় শেষ।
এখন চলছে রোড মার্কিং, সেফটি পার্কিং, গতি নিয়ন্ত্রণে স্পিডব্রেকার, বাঁক মার্কিং, বৈদ্যুতিক সংযোগ লাইন স্থাপন। সেই সাথে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই এক্সপ্রেসওয়ের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজও এগিয়ে চলছে। তবে র্যাম্পের কাজ শেষ করা যায়নি এখনো। এসব কাজ শেষ হতে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এক্সপ্রেসওয়েতে লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত সরাসরি এবং পতেঙ্গা থেকে টাইগারপাস মোড়ে সরাসরি উঠানামার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এ অবস্থায় চলতি মাসের শেষ নাগাদ এক্সপ্রেওয়েটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার যাবতীয় প্রস্ততি এগিয়ে চলছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএর কর্মকর্তারা। তারা আশা করছেন পবিত্র ঈদ উল আযহার আগে এক্সপ্রেসওয়ে চালু করা গেলে নগরীতে যানজট সেই সাথে জনদুর্ভোগ কমবে। তবে উঠানামার জন্য ১৫টি র্যাম্পের একটিও চালু না করে এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে তার সুফল কতটুকু পাওয়া যাবে তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।
গত বছরের ১৪ নভেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্মাণকাজ অসমাপ্ত অবস্থায় এক্সপ্রেসওয়েটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। ওইদিন পতেঙ্গা থেকে টাইগারপাস পর্যন্ত তিন ঘণ্টার জন্য যানবাহন চলাচল করে। পরে যানবাহন চলাচল আবার বন্ধ করে দেওয়া হয়। এক্সপ্রেসওয়েরটির নামকরণ করা হয়েছে চট্টলবীর মরহুম এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে।
দুই দফা ব্যয় বাড়িয়ে চার হাজার ৩৬৯ কোটি সাত লাখ ১০ হাজার ৮১৯ টাকায় পতেঙ্গা থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত সাড়ে ১৬ কিলোমিটারের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি বাস্তবায়ন করছে সিডিএ। ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেক সভায় তিন হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকার এই প্রকল্প অনুমোদন পায়। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। এক্সপ্রেসওয়েটি পতেঙ্গা থেকে শুরু হয়ে লালখান বাজারে শেষ হয়। কয়েক দফা নকশা বদল করে প্রকল্পের মেয়াদ এবং ব্যয় বাড়ানো হয়। সর্বশেষ আগামী বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
মহানগরীর প্রধান সড়কে নির্মিত পুরো এক্সপ্রেসওয়ের ৯টি এলাকায় গাড়ি উঠানামার জন্য ১৫টি র্যাম্প রাখা হয়েছে। এর মধ্যে জিইসি মোড়ে দুটি, টাইগারপাস মোড়ে দুটি, আগ্রাবাদ মোড়ে দুটি, ফকিরহাটে একটি, নিমতলায় দুটি, সিইপিজেড মোড়ে দুটি এবং কর্ণফুলী ইপিজেড মোড়ে দুটি। প্রতিটি র্যাম্প হবে দুই লেনের এবং একমুখী। চার লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেওয়েতে নির্মিত হয়েছে ৩৮৯টি পিলার, বসানো হয়েছে ৩৮৯টি গার্ডার।
সবার আগে শুরু হয় বন্দর নিমতলা বিশ^রোড়ের মুখে র্যাম্প নির্মাণকাজ। তবে এখনো তা শেষ করা যায়নি। অন্যান্য পয়েন্টেও র্যাম্প নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। টাইগারপাস এলাকায় নগরীর আইকনিক দ্বিতল সড়কের শতবর্ষী গাছ কেটে র্যাম্প নির্মাণকাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। নাগরিক সমাজের আন্দোলনের মুখে সিডিএর সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ আইনকনিক সড়ক সুরক্ষায় বিকল্প এলাকায় র্যাম্প নির্মাণের আশ^াস দেন।
তবে নগরীর ওয়াসা মোড়ে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের সঙ্গে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগের কাজ প্রায় শেষ। এর মাধ্যমে নগরীর কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু থেকে বহদ্দারহাট-আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার হয়ে সরাসরি বিমানবন্দর এলাকা পর্যন্ত উড়াল পথে সংযোগ স্থাপিত হচ্ছে। কর্ণফুলী সেতুর উত্তরপ্রান্ত থেকে কেউ চাইলে ছয় লেনের সড়ক হয়ে বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার হয়ে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার থেকে এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে পতেঙ্গায় যেতে পারবেন।
ফলে এই পথে আসা-যাওয়ায় সহজে নগরীর যানজট এড়ানো যাবে। নগরীর প্রধান এই সড়কে নিত্য যানজট হচ্ছে। যানজটে পড়ে বিমান মিস করার ঘটনাও ঘটছে। দুর্ভোগে পড়তে হয় বিমানযাত্রীসহ দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের। গণপরিবহনের যাত্রীদের ভোগান্তিও দীর্ঘদিনের। এক্সপ্রেসওয়ে খুলে দিলে সমস্যা নিরসন হবে। পণ্যবাহী ও দূরপাল্লার যানবাহন এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলাচল করলে মূল সড়কে যানজট অনেকাংশে কমে যাবে।
আগেই চালু হয়েছে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত সিটি আউটার রিং রোডেও যানবাহন চলাচল করছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ওই দুটি প্রকল্পের সাথে সংযুক্ত হবে। এর ফলে মহানগরীর যানজট এড়িয়ে খুব সহজে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার যানবাহন দক্ষিণ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান আসা যাওয়া করতে পারবে।
গত বছরের ১৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর লালখান বাজার প্রান্তে উঠানামা সড়ক নির্মাণ শেষ করে এক্সপ্রেসওয়ে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। মার্চের শুরুতে এটি খুলে দেয়ার কথা বলা হলেও নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত আর এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহন চলাচল শুরু করা যায়নি। সম্প্রতি সিডিএতে নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুস। সিডিএ কর্মকর্তাদের সাথে প্রথম বৈঠকেই তিনি এক্সপ্রেসওয়েটি যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার বিষয়টি অগ্রাধিকার দেন। আর সেই লক্ষ্যেই বাকি কাজ এখন এগিয়ে নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান। তিনি ইনকিলাবকে বলেন, র্যাম্প ছাড়া এক্সপ্রেসওয়ের পুরো কাজ শেষ। এখন চলছে আলোকায়ন ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ। চলতি মাসের শেষ নাগাদ এসব কাজ শেষ হবে। আমরা আশা করছি ঈদুল আজহার আগেই এক্সপ্রেসওয়েতে যান চলাচল শুরু করা যাবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে গণতন্ত্র ধ্বংসের জন্য ভারত সরকার দায়ী : কর্নেল অলি
গাজায় ১০ দিন ধরে চিকিৎসা সামগ্রী পাওয়া যাচ্ছে না
ইয়েমেনে তেলের ট্যাঙ্কারে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
তালতলীতে জমি নিয়ে বিরোধে নারীসহ ৫জনকে কুপিয়ে জখমঃ লুটপাটের অভিযোগ
দেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে : আইজিপি
জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে কেউ যেন বৈষম্যের শিকার না হন: প্রেসিডেন্ট
দুঃস্বপ্নের আসর শেষে পেলেন নিষেধাজ্ঞাও
ট্রানজিট বাতিলের হুমকি দিন সীমান্ত হত্যা শূন্য হয়ে যাবে
সুপ্রিম কোর্টে শুনানিকালে আইনজীবীদের কালো গাউন পড়তে হবে
নরসিংদীর চরাঞ্চলে বজ্রপাতে মা ছেলেসহ নিহত ৩
রাশিয়া ও ইরান একক ব্রিকস মুদ্রা তৈরির কাজ করছে: ইরান
আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলে আকস্মিক বন্যায় ৫০ জনের মৃত্যু
লিগ্যাল এইডে অসচ্ছল বিচারপ্রার্থীদের ৩৮৪৮৮৬ মামলায় আইনি সহায়তা প্রদান
টাঙ্গাইলে বজ্রপাতে নিহত ২, আহত ৪
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় কলেজ ছাত্র নিহত
কক্সবাজারে সুপ্রিম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন প্রধান বিচারপতির
টেক্সাসে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ জনে
সুইজারল্যান্ড শান্তি’ সম্মেলনে চীনকে যোগ দেয়ার আহ্বান জেলেনস্কির
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ঐক্য ও শক্তির প্রতীক : ধর্মমন্ত্রী
আইন অঙ্গনে খুবই পারদর্শী ইবি শিক্ষার্থীরা: এটর্নি জেনারেল আমিন