উপজেলায় মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা প্রার্থী কেন্দ্রের নির্দেশনা নিয়ে ‘দোলাচলে’ দলের তৃণমূলে, আছে ক্ষোভও

কঠোর থেকে নরম আওয়ামী লীগ

Daily Inqilab আল হেলাল শুভ

০৬ মে ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ০৬ মে ২০২৪, ১২:০৬ এএম

দলীয় প্রভাবমুক্ত উপজেলা নির্বাচন করতেই বিভিন্ন এলাকার এমপি- মন্ত্রীদের স্বজনেরা নির্বাচন করতে পারবে না এমন বার্তা দিয়েছিল ক্ষমতাশীন দল আওয়ামী লীগ। ওই সিদ্ধান্তের বিষয়ে দল কঠোর অবস্থানে এমন বার্তাও দেয় দলটি। তবে শেষ পর্যন্ত অনেকটা নীরবে সেই অবস্থান থেকে সরে আসে দলটি। ফলে এমন কঠোর বার্তা দিয়েও এমপি-মন্ত্রীদের স্বজনদের অনেককে ভোট থেকে সরাতে পারে নি দল। ফলে এই বিষয়টি নিয়ে এখন দলটির নেতাদের মধ্যে কঠোর থেকে নরম সুর বিরাজ করছে। দলটির নেতারা এখন এ বিষয়ে দলীয় প্রধানের নির্দেশনা অনুসারেই চলার কথা জানিয়েছে। আর আওয়ামী লীগের তৃণমূলও দলের কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত নেমে নিয়েছে বলেই জানিয়েছেন। তবে বিষয়ে এখনো দল সিদ্ধান্ত জানায় নি বলেই জেলার নেতাদের কয়েকজন জানিয়েছেন। ফলে এক ধরনের ‘দোলাচল’ কাজ করছে আওয়ামী লীগের জেলার নেতাদের মধ্যে। অনেক জেলা নেতাদের মধ্যে আছে ক্ষোভও।

গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোধীদের অনেকেই নির্বাচন বর্জন করায় আওয়ামী লীগ সিদ্ধান্ত নেয় স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে দলীয় প্রতীক থাকবে না। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য করে তুলতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানিয়েছে আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা। তবে দলের সেই সিদ্ধান্ত অনেকটা লুফে নেন আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীদের স্বজনেরা। স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে ‘প্রভাব বলয় তৈরী করে’ জয়লাভ করাকে সুযোগ হিসেবে দেখতে শুরু করেন তাদের অনেকে। গতকাল রোববার উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের বিরত রাখা আওয়ামী লীগের নীতিগত সিদ্ধান্ত, এখানে আইনি কোনও বিষয় নেই। তিনি এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেছেন, প্রতীক ছাড়া নির্বাচন করলে নির্বাচন বেশি অংশগ্রহনমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে এমন ভাবনা থেকে আওয়ামী লীগ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দ স্থগিত করেছে। এর মানে এই নয় যে অন্য দলগুলো নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দ করতে পারবে না।

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, এমপি-মন্ত্রীর স্বজনরা প্রার্থী হতে পারবেন না, প্রার্থী হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমন কথা দলটির হাইকমান্ড থেকে বলা হয়েছিল। কিন্তু এখন দলের নেতারা বলছেন এমপিরা নির্বাচনে ‘প্রভাবিত করলে’ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ নেতাদের এই নরম সুরের কারণ, গত ৩০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে বলে আওয়ামী লীগের নেতারা বিভিন্ন সময় জানিয়েছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে এ বিষয়ে সে দিন স্পষ্ট করে কোনো সিদ্ধান্ত দেননি বরং দলের এক নেতা বৈঠকে এ প্রসঙ্গ উত্থাপন করতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী হাত তুলে তাকে বসতে বলেন। এ বিষয়ে পরে কথা হবে বলেও সে দিন জানান শেখ হাসিনা।

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের এক দিন পর গত বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাব দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, পারিবারিক ফর্মুলা কী? নিজের ছেলে মেয়ে- স্ত্রী, এই তো। তার পর হিসাব করে দেখেন কয়জন ছেলেমেয়ে, কয়জন স্ত্রী দাঁড়িয়েছে। এর বাহিরে তো পরিবার ধরা হয় না। আমাদের কথা হচ্ছে, নির্বাচনটা যেন প্রভাবমুক্ত হয়। মানুষ যেন স্বাধীনভাবে ভোটটা দিতে পারে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।

তবে দলীয় নেতাদের উদ্দেশ্যে কর্মীদের মূল্যায়ণ করা উচিত এমন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা আরো বলেন, আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মীর পরিবার দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছেন। তারা আগে নির্বাচন করেছেন। কেউ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, কেউ উপজেলা চেয়ারম্যান। তাদের তো রাজনৈতিক ঐতিহ্য আছে। তাদেরকে আমরা মানা করি কী করে? তবে এটা ঠিক, হয়তো এক জায়গায় বউকে দিল আর এক জায়গায় ছেলেকে দিলো, এগুলো আসলে ঠিক না। কর্মীদেরও মূল্যায়ণ করা উচিত, আমি সেটাই আমাদের নেতা-কর্মীদের বলতে চেয়েছি। সবকিছু নিজেরা নিয়ে নেব, আমার নেতা-কর্মীদের জন্য কিছু রাখব না, এটাতো হয় না। সেই কথাটা আমি বলতে চেয়েছি। উপজেলা নির্বাচনে দলীয় নেতা- সংসদ সদস্যদের উদেশ্যে তিনি বলেন, আর যেন বেশি প্রভাব না ফেলে। সবাই দাঁড়িয়েছে, নির্বাচন করছে, সেটার লক্ষ্যটা হল নির্বাচনটা অর্থবহ করা। এ দিকে গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সভায় এমপি-মন্ত্রীদের উপজেলা নির্বাচনে প্রভাবমুক্ত রাখতে বার্তা দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ওই বৈঠকে তিনি বলেন, এমপি-মন্ত্রীদের উচিত না উপজেলা নির্বাচনে আত্নীয়-স্বজনদের প্রার্থীরা করা। আওয়ামী লীগ প্রধান দলীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের জন্য ছাড় দিতে এমপি-মন্ত্রীদের নির্দেশনা দেন। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ স্থানীয় পর্যায়ে দ্বন্দ্ব ও গ্রুপিং না করতে নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা।

দলীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, তৃণমূল পর্যায়ে বিতর্ক ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এড়াতে এমপি-মন্ত্রীর স্বজনদের বিষয়ে কঠোর না হয়ে এখন নরম হয়েছে আওয়ামী লীগ। এখন দলের নজর উপজেলা নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত রাখা। কারণ নির্বাচনে দলের অনেক এমপি-মন্ত্রীর স্বজনরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এমনকি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেক স্বজনরাও নির্বাচনে আছেন। যদি এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ কঠোর হয় তাহলে দলের তৃণমূলে ‘চেইন অব কমান্ড’ ভেঙে যেতে পারে। আর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে যে সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে তার ক্ষত এখনো পুরোপুরি মিটে যায় নি দল থেকে। এমন পরিস্থিতিতে এমপি-মন্ত্রীদের বিষয়ে কঠোর হয়ে দলের তৃণমূলে আর বিরোধ বাড়াতে চাচ্ছে না আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। তবে এ বিষয়ে দলের কেউ যদি অতিরঞ্জিত কোন কিছু করে তাহলে অবশ্যই তবে দল অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেবে।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, এমপি-মন্ত্রীর স্বজনদের বিষয়ে দলে আলোচনা ছিল। দলীয় প্রধান ‘স্বজনদের’ বিষয়ে ‘সংজ্ঞা’ পরিষ্কার করেছেন। এর আগে কৌশলগত কারণে দলের সাধারণ সম্পাদক একটি নির্দেশনা দিয়েছেন, এখন আবারও কৌশল নিয়েছে দল। সেটা আমরা মেনে চলছি। এ বিষয়ে দলের অবস্থান নিয়ে দলটির নেতারা এও বলছেন, আসলে বাস্তবতার আলোকে পরিস্থিত বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, দলীয় প্রধানের নিদের্শনা অনুসারে চলতেই তারা বাধ্য। এর বাইরে তাদের আর কোন বক্তব্য নেই। আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, উপজেলা নির্বাচন শান্তিপূর্ণ, প্রভাবমুক্ত ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করাই আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্য। এ বিষয়ে যারা দলীয় সিদ্ধান্ত অমাণ্য করবে তাদের বিষয়ে পরে দল পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা নেবে।
উপজেলা নির্বাচনে এমপি মন্ত্রীদের স্বজনদের প্রার্থী হওয়া নিয়ে দলের মধ্যে অনেক আগে দুই ধরনের মত ছিল বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগে এক সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য। তিনি ইনকিলাবকে জানিয়েছে, আগে যে ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সেখান থেকে কিছুটা পরিবর্তন তো এসেছেই। কারণ একজন এমপির ভাই যদি ৩০ বছর ধরে রাজনীতি করে সে কেন এমপি প্রার্থী হতে পারবে না। এমন অবস্থা করলে তো পরবর্তীতে দলের ক্ষতিই হতো। তিনি বলেন, আমাদের নেত্রী, দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা পরিবার নিয়ে যে বিষয়টি বলেছে, সেটাই আসলে সঠিক। কারণ একজন এমপির স্ত্রী-মেয়ে যে কোন দিন রাজনীতি করে নি সে কেন প্রার্থী হবে। এটাও তো ঠিক না। এমপি-মন্ত্রীর স্বজনদের উপজেলায় প্রার্থী হওয়া নিয়ে আওয়ামী লীগ তৃণমূলে কি বার্তা দিচ্ছে জানতে চাইলে
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এম এম কামাল হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, এ বিষয়টি কোন নেত্রী (শেখ হাসিনা) পরিস্কার করেই দিয়েছেন। দলীয় প্রধানের নির্দেশনার বাইরে আমাদের আর কোন কথা নেই।

এর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলের শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতা এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তারা বলেছিলেন, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী ও এমপিদের নিকটাত্মীয় এবং স্বজনদের প্রার্থী না হতে দলীয় যে নির্দেশনা, তা না মানলে সময়মতো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গত ২৪ এপ্রিল এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমন বক্তব্যের পাশাপাশি আরো বলেছিলেন, উপজেলা নির্বাচনে প্রথম পর্যায়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় পেরিয়ে গেছে। তাদের মধ্যে অনেকেই বলেছেন যে, আমরা বিষয়টি আরো আগে অবহিত হলে সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হতো। তার পরো কেউ কেউ প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন, কেউ কেউ করেননি। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া সময় শেষ হয়ে গেলে কেউ প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে পারেন না। এই বিষয়টি চূড়ান্ত হতে নির্বাচন হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এখানে কেউ অমান্য করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে। সময় মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা এ জন্য তালিকাও তৈরি করছেন।

তবে গত শুক্রবার এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিকদের বলেন, এমপি মন্ত্রীদের নিকট আত্মীয় বলতে দলীয় সভাপতি সুনির্দিষ্ট ভাবে স্ত্রী এবং সন্তানদেরকেই বুঝিয়েছেন। তিনি গতকাল (বৃহস্পতিবার) সকালে এবং বিকেলে দলীয় সভায় তার খোলাসা করেছেন। নির্দেশ দিয়েছেন, নির্বাচনে কোন প্রকার প্রভাব বিস্তার, হস্তক্ষেপ না করতে। প্রশাসনকে কোনভাবে প্রভাবিত করা যাবে না। পরিষ্কার করে তিনি সে কথা বলেছেন। নেত্রীর গাইডলাইন্স অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করব। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরো বলেন, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আমি যেসব বক্তব্য রেখেছি, অনেকে ভেবেছিলেন আমি নিজেই নিজের নামে বলে বেড়াচ্ছি। কিন্তু গতকাল নেত্রী নিজেই এ নিয়ে খোলাসা করে বলেছেন। স্বজন বলতে তিনি দুটো শব্দ উল্লেখ করেছেন স্ত্রী ও সন্তান। এখনো অনেকের স্বজন প্রার্থী রয়ে গেছেন, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, উপজেলা নির্বাচনে এমপি মন্ত্রীর স্বজনদের অনেকেই প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে অনেকেই করেছেন। সবশেষ গোলাম দস্তগীরের ছেলে প্রত্যাহার করেছেন। সামনে আরো সময় আছে।

উপজেলা নির্বাচনে নিজের ভাইয়ের প্রার্থী হওয়া নিয়েও ওই সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, একটা প্রশ্ন হয়তো আপনারা করতে পারেন, আমার স্বজনও একজন প্রার্থী হয়েছেন, আমার নিজের উপজেলায়। সেখানে প্রশ্নটা হচ্ছে আমার এই প্রার্থিতার পেছনে সমর্থন আছে কি না, সম্মতি আছে কি না, আমি তার পক্ষে প্রশাসন বা নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছি কি না। সরেজমিনে সেটাই দেখার বিষয়। আমার দলের এর সঙ্গে কোনো সংযোগ নেই। নেতৃস্থানীয় কারো সমর্থন নেই। আমার সমর্থন তো প্রশ্নই ওঠে না। কাজেই আর এটা শেষ পর্যন্ত সরে যাবে না, এটাও বলা যায় না।

জানা গেছে, গতকাল রোববার অবশ্য নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই শাহদাত হোসেনের মনোনয়ন বাতিল হয়ে যায়। গতকাল দুপুর ১২টায় রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইসমাঈল হলফনামায় মামলা ও আয় বিবরণীর তথ্য গোপন করায় তার মনোনয়ন বাতিল করা হয়। তবে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনে ওবায়দুল কাদেরের ভাগনে (আপন বোনের ছেলে) মাহবুবুর রশীদ মঞ্জু প্রার্থী হয়েছেন ভাইস চেয়ারম্যান পদে।

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, তৃতীয় ধাপে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাইয়ের মনোনয়ন বাতিল হলেও দলের অনেক এমপি এমনকি মন্ত্রীদের আত্নীয় ও স্বজনরা প্রার্থী রয়েছেন। তবে কয়েকজন এমপির স্বজন সরেও দাঁড়িয়েছেন। তবে একটি বড় অংশকে এখনো ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রয়েছেন। এর আগে দলীয় সিদ্ধান্তের পর আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালকসহ কয়েকজন মন্ত্রী-এমপির স্বজন ভোটের লড়াই থেকে সরে দাঁড়ান। তৃতীয়ধাপে সারা দেশে এমপি-মন্ত্রীদের স্বজনেরা প্রার্থী হয়েছিলেন প্রায় ২ ডজন।

এ দিকে আওয়ামী লীগের তৃণমূলও দলের কেন্দ্রর নির্দেশনা মেনে নিয়েছে। তবে দলের জেলার নেতাদের মধ্যে এক ধরনের দোলাচল কাজ করছে। জেলা পর্যায়ের অনেক নেতাদের মধ্যে ক্ষোভও কাজ করছে। তবে তারা না প্রকাশ্যে এখনই আনতে চান না বলেই জানিয়েছেন। এ বিষয়ে এক জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইনকিলাবকে বলেন, এমপি-মন্ত্রীদের স্বজনদের বিষয়ে কোন নির্দেশনা এখনো আমরা দল থেকে পাই নি। তবে এ বিষয়ে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত নেবে নিলেনও আমাদের তৃণমূল নেতাদের মধ্যে অনেক ক্ষোভ বিরাজ করছে। তিনি জানান, আমার জেলায় ২ জন প্রার্থী তারা এমপির কোন স্বজন না। তবুও তাদের বিষয়ে এমপিদের প্রভাব রয়েছে। এ বিষয়টি এই মুহুর্তে আমরা দলের কেন্দ্রকে বলতে পারছি না। কিন্তু হয়তো পরে বলতে পারবো।

গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক মন্ডল বলেন, আসলে এখানে আমাদের কোন ভূমিকা নেই। কেন্দ্র আমাদের যে নির্দেশে আমরা তার বাস্তবায়নে মাঠে কাজ করি। আমার এই জেলায় দলের নেতা কর্মীরা যে যার যার মত করে তার প্রার্থীর জন্য কাজ করতেছে। দল আমাদেরকে সিদ্ধান্ত জানায়নি তাই আমরাও এ বিষয়ে বেশি মন্তব্য করতে চাই না। রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী কাজী আব্দুল ওয়াদুদ দারা বলেন, আসলে দল আমাদেরকে যে সিদ্ধান্ত দিবে সেটা বাস্তবায়ন করা আমাদের দায়িত্ব আমরা সেই লক্ষ্যই রয়েছি। নরসিংদী জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক পীরজাদা কাজী মোহাম্মদ আলী বলেন, কেন্দ্র থেকে আমরা এই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত পাইনি। যা করতে বলবে আমরা তার বাস্তবায়ন করার জন্য কাজ করব। বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির বলেন, আমার জেলায় এমপি মন্ত্রীদের তেমন কোন সমস্যা নাই। দল এখন পর্যন্ত কিছু জানায়নি। দেখি দল কি সিদ্ধান্ত জানায় ।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

সমীকরণ মেলানোর রুদ্ধশ্বাস নাটকীয়তা শেষে চেন্নাইকে বিদায় করে প্লে-অফে বেঙ্গালুরু

সমীকরণ মেলানোর রুদ্ধশ্বাস নাটকীয়তা শেষে চেন্নাইকে বিদায় করে প্লে-অফে বেঙ্গালুরু

ইসরাইলি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে

ইসরাইলি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে

প্রোটিন উদ্ভাবনে নতুন উদ্যোক্তাদের সুযোগ দিচ্ছে ইউএসএসইসি-এর পিচ-টু-ফর্ক

প্রোটিন উদ্ভাবনে নতুন উদ্যোক্তাদের সুযোগ দিচ্ছে ইউএসএসইসি-এর পিচ-টু-ফর্ক

স্যানিটেশন কর্মীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা দিতে হারপিক ও সাজেদা ফাউন্ডেশন সমঝোতা

স্যানিটেশন কর্মীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা দিতে হারপিক ও সাজেদা ফাউন্ডেশন সমঝোতা

বড় পরিসরে আর. কে. মিশন রোডে ব্র্যাক ব্যাংকের শাখা উদ্বোধন

বড় পরিসরে আর. কে. মিশন রোডে ব্র্যাক ব্যাংকের শাখা উদ্বোধন

বিএনপি ভোট বর্জন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে : শামসুজ্জামান দুদু

বিএনপি ভোট বর্জন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে : শামসুজ্জামান দুদু

ভালুকার সেই শিশু দত্তক নিতে ৪ আবেদন, সিদ্ধান্ত রোববার

ভালুকার সেই শিশু দত্তক নিতে ৪ আবেদন, সিদ্ধান্ত রোববার

যক্ষা রোগ প্রতিরোধে ওয়ার্ডভিত্তিক প্রচারণা

যক্ষা রোগ প্রতিরোধে ওয়ার্ডভিত্তিক প্রচারণা

সুনামগঞ্জে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের দাফন সম্পন্ন

সুনামগঞ্জে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের দাফন সম্পন্ন

পানির সংকট

পানির সংকট

নীতি ও দুর্নীতির লড়াই

নীতি ও দুর্নীতির লড়াই

শিক্ষা ব্যবস্থার ভয়াল দশা

শিক্ষা ব্যবস্থার ভয়াল দশা

মামলাজট কমাতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে

মামলাজট কমাতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে

ইসলামী আন্দোলনের নেতা অধ্যাপক বেলায়েত হোসেনের দাফন সম্পন্ন

ইসলামী আন্দোলনের নেতা অধ্যাপক বেলায়েত হোসেনের দাফন সম্পন্ন

দালালীকে পেশা হিসাবে নেওয়া প্রসঙ্গে।

দালালীকে পেশা হিসাবে নেওয়া প্রসঙ্গে।

দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হামাস ভয়াবহ আঘাতের মুখে ইসরাইল

দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হামাস ভয়াবহ আঘাতের মুখে ইসরাইল

পথ হারিয়েছে বিশ্ব : জাতিসংঘ

পথ হারিয়েছে বিশ্ব : জাতিসংঘ

তাইওয়ান প্রণালীতে মার্কিন জাহাজের অনুপ্রবেশ

তাইওয়ান প্রণালীতে মার্কিন জাহাজের অনুপ্রবেশ

যুক্তরাষ্ট্রের উচিত আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধি না করা

যুক্তরাষ্ট্রের উচিত আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধি না করা

গাজা ইস্যুতে বন্ধু হারাচ্ছে ইসরাইল নানামুখী চাপে নেতানিয়াহু

গাজা ইস্যুতে বন্ধু হারাচ্ছে ইসরাইল নানামুখী চাপে নেতানিয়াহু