এমপি-নেতারা মুখোমুখি
০৭ মে ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ০৭ মে ২০২৪, ১২:০৫ এএম
চলমান উপজেলা নির্বাচনে চট্টগ্রামে অনুগত প্রার্থীদের পক্ষে মাঠে নেমে পড়েছেন শাসক দল আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা। তারা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে জিতিয়ে আনতে নাড়ছেন কলকাঠি। বসে নেই এমপির সমর্থন বঞ্চিতরাও। তারাও এমপি বিরোধী হিসেবে পরিচিত নেতাদের সরাসরি সহযোগিতা নিয়ে ভোটের মাঠে বিজয়ী হতে নানা তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন।
স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনকে ঘিরে সরকারি দলের এমপি-নেতারা এখন মুখোমুখি। ভোটের মাঠে শুধুই আওয়ামী লীগ। প্রতিটি উপজেলায় দলের একাধিক নেতা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়াইয়ে শামিল হয়েছেন। তাদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে দলের তৃণমূলে বিভক্তি এখন চরমে উঠেছে। মূল দলের পাশাপাশি অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতারাও নেতায় নেতায় বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ সমমনা দল ও জোট এবং জামায়াতে ইসলামি ও ইসলামি আন্দোলনের বর্জনের মুখে উপজেলা নির্বাচন এখন পুরোপুরিই একতরফা। এই নির্বাচনকে ঘিরে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে কোন সাড়া নেই। দলে বিভক্তির কারণে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের প্রচারেও উপজেলাগুলোতে নির্বাচনী কোন আমেজ নেই। বিএনপি ভোট বর্জন করে ভোটের দিন ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছে ভোটারদের। দলের পক্ষ থেকে চলছে গণসংযোগ।
সাধারণ ভোটারদের কোন আগ্রহ নেই একদলীয় নির্বাচনে। কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি নিয়েও রয়েছে নানা সংশয়। গেল ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে সব ছিল, শুধু ছিলনা ভোটার। এবার পরিস্থিতি আরো নাজুক হবে এমন ধারণা সবার। আর তাই প্রার্থীরা এটা বুঝতে পেরে ভোটে নয়, কৌশলে জেতার নানা প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানা গেছে।
এ ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যরা তাদের অনুসারীদের জিতিয়ে আনতে ইউপি চেয়ারম্যানদের নানা দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। আবার প্রশাসন আর নির্বাচন কর্মকর্তাদেরও নিজ নিজ প্রার্থীর পক্ষে রাখতে নানা কলকাঠি নাড়ছেন এমপিরা। এমপি বিরোধী হিসাবে পরিচিত প্রার্থীরাও দলের নেতাদের সমর্থন আদায়ে মরিয়া। তারাও প্রশাসন ও নির্বাচনীকাজে নিয়োজিতদের উপর নানাভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কোন কোন এলাকায় প্রকাশ্যে দরিদ্র ভোটারদের মধ্যে টাকা বিলির ঘটনাও ঘটছে। নিরুত্তাপ ভোটের মাঠে চলছে আচরণবিধি লঙ্ঘনের হিড়িক। অভিযোগ রয়েছে-দুই দিকেই সরকারি দল, আর তাই নিরব দর্শক নির্বাচন কমিশন।
চট্টগ্রামে ১৫টি উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ আগামীকাল ৮ মে। ওইদিন সন্দ্বীপ, মীরসরাই ও সীতাকুণ্ড উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদে নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আগামী ২১ মে। ওইদিন রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী, ফটিকছড়ি ও রাউজানে ভোট। তবে এমপিদের ইশারায় রাঙ্গুনিয়া ও রাউজানে একক প্রার্থী থাকায় ওই দুই উপজেলায় ভোট হবে না। দ্বিতীয় ধাপে ভোট হবে শুধু হাটহাজারী ও ফটিকছড়ি উপজেলায়। তৃতীয় ধাপে আগামী ২৯ মে অনুষ্ঠিত হবে আনোয়ারা, বোয়ালখালী, পটিয়া ও চন্দনাইশ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এই চারটি উপজেলায় মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া শেষ হয়েছে। চতুর্থ ধাপে বাঁশখালী উপজেলা ও লোহাগাড়া উপজেলায় আগামী ৫ জুন ভোট প্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
জানা গেছে,
সীতাকুণ্ড, সন্দ্বীপ, মীরসরাই, হাটহাজারী ও ফটিকছড়িতে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের নিজেদের অনুগত প্রার্থী রয়েছেন। রাউজান ও রাঙ্গুনিয়ায় এমপিদের অনুগতরাই বিনাভোটে বিজীয় হচ্ছেন। আনোয়ারা, বোয়ালখালী, পটিয়া ও চন্দনাইশ উপজেলায়ও এমপিদের প্রার্থী রয়েছেন। সবকটি উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ। যদিও সাধারণ ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্য করতে এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেয়নি আওয়ামী লীগ। কিন্তু প্রার্থীদের দলীয় প্রভাব কাজে লাগানোর চেষ্টা রয়েছে। দলীয় নেতা-কর্মীরা একই দলের বিভিন্ন প্রার্থীকে কেন্দ্র করে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। সাধারণ ভোটারের কাছে এটিও আমি আর ডামির নির্বাচন। জানা গেছে প্রায় প্রতিটি উপজেলায় দলের তৃণমূলের নেতাদের নিজ নিজ প্রভাববলয়ে আনতে কাজ করছেন প্রার্থীরা। আর এ জন্য অনেকে দেদারছে টাকাও খরচ করছেন।
সীতাকুণ্ডে চেয়ারম্যান প্রার্থী আরিফুল আলম চৌধুরীর স্থানীয় এমপির প্রার্থী হিসাবে পরিচিত। সংসদ সদস্য এস এম আল মামুন তার পক্ষে কাজ করছেন বলেও জানা গেছে। আরিফুল আলমের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মহিউদ্দিন আহমেদ। তার পেছনেও নেতাদের অনেকে কাতারবন্দি হয়েছেন। হাটহাজারীতে বর্তমান চেয়ারম্যান ও উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতি এস এম রাশেদুল আলম এবারও প্রার্থী হয়েছেন। উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের নেতা ইউনুছ গনি চৌধুরী এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হাসান চৌধুরীও ভোটের মাঠে। চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ইউনুছ গনি চৌধুরী স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদের অনুসারী। তিনি সংসদ সদস্যের আনুকূল্য পাচ্ছেন বলে অন্য প্রার্থীরা অভিযোগ করছেন। ওই তিন নেতার পক্ষে ভাগ হয়ে গেছেন দলের নেতাকর্মীরা সন্দ্বীপের বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাঈনুদ্দিন মিশন এক বছর আগে উপ-নির্বাচনে বিজীয় হন। ওই ভোটে এমপি মাহফুজুর রহমান মিতা তাকে সমর্থন দিয়েছিলেন। এবার তার সমর্থন পাচ্ছেন অন্যপ্রার্থী মগধারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম আনোয়ার হোসেন। সেখানে চেয়ারম্যান পদে অপর তিন প্রার্থী হলেন আওয়ামী লীগের নাজিম উদ্দিন জামসেদ, ফোরকান উদ্দিন আহমেদ ও শেখ মুহাম্মদ জুয়েল।
মীরসরাই উপজেলায় উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান ও একই কমিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক এনায়েত হোসেনের মধ্যে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীতা হচ্ছে। দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত শেখ আতাউর রহমান। তবে এবার তিনি মোশাররফ হোসেন কিংবা তার ছেলে সংসদ সদস্য মাহবুব উর রহমানের সমর্থন পাচ্ছেন না। জানা গেছে তাদের দোয়া পাচ্ছেন এনায়েত হোসেন। চেয়ারম্যান পদে অপর তিন প্রার্থী ফেরদৌস হোসেন, মোহাম্মদ মোস্তফা ও উত্তম কুমার শর্মাও আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা। ফটিকছড়ি উপজেলা পরিষদে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মুহুরি ও একই কমিটির সদস্য বখতেয়ার সাঈদ। দুজনেই স্থানীয় সংসদ সদস্য খাদিজাতুল আনোয়ারের অনুসারী হিসাবে পরিচিত।
বোয়ালখালীতে ৮ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। তারা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা। তারা হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম সেলিম, মোহাম্মদ জাহেদুল হক, নুরুল আমিন চৌধুরী, রেজাউল করিম, মোহাম্মদ শফিউল আলম, বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এস এম নুরুল ইসলাম, মো. শফিক ও কাজী আয়েশা ফারজানা। চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর, সাধারণ সম্পাদক আবু আহমদ চৌধুরী জুনু, সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফুল ইসলাম চৌধুরী, জসিম উদ্দীন আহমদ ও আহমদ হোসেন ফকির।
পটিয়ায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীরা হলেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার দাশ, পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক হারুনুর রশিদ, কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ বদিউল আলম, উপজেলা কৃষক লীগের আহ্বায়ক সৈয়দ নুরুল আবছার ও মহানগর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম। আনোয়ারায় পাঁচ চেয়ারম্যান প্রার্থী হলেন- বর্তমান চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক এম এ মান্নান চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবুল কালাম চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কাজী মোজাম্মেল হক ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সদস্য ছাবের আহমেদ চৌধুরী।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
হামাসের হাতে বন্দিদের মুক্তির জন্য বিশেষ বৈঠকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ
নিজ জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে ইউরোপ: রাশিয়া
ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নিয়ে সশস্ত্র বিক্ষোভের আশঙ্কা
মাগুরার শ্রীপুরে নবী করিম সা. সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের প্রতিবাদে জনগনের বিক্ষোভ অভিযোগকারী আটক
মেট্রোরেলে ভ্যাট এনবিআরের ভুল সিদ্ধান্ত: ওবায়দুল কাদের
পুঠিয়া উপজেলা নির্বাচনে ৭৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৩টি কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ
আবারো পেছালো রূপপুর পরমাণু কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন
নেত্রকোণায় নো হেলমেট, নো ফুয়েল কার্যক্রম শুরু
সিঙ্গাপুরে মাথাচাড়া করোনার! আক্রান্ত প্রায় ২৬ হাজার
তিন জিম্মির পর গাজায় আরো এক জিম্মির লাশ উদ্ধার
ফের মাউন্ট ইবু থেকে ভয়াবহ অগ্ন্যুৎপাত, খালি করা হল সাতটি গ্রাম
কেন চীনকে ‘সোনার তরী’ ভাবছে রাশিয়া?
উপজেলা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে কোটিপতি প্রার্থীর সংখ্যা তিন গুণ : টিআইবি
‘চ্যালেঞ্জের মুখে ব্র্যান্ড মোদি’
সুন্দরবনের ভারতীয় অংশে চোরাশিকারিদের গুলিতে খুন বনকর্মী
ঢাকার গণপরিবহনের চেয়ে আফ্রিকার ছোট শহরের বাস সুন্দর : কাদের
পশ্চিমবঙ্গে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টের সন্ধান, আক্রান্ত অন্তত ৩০
বঙ্গোপসাগরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু, চরম দুশ্চিন্তায় জেলেরা
সিঙ্গাপুরে মাথাচাড়া করোনার! আক্রান্ত প্রায় ২৬ হাজার
নগরকান্দায় ট্রেনে কাটা পড়ে যুবক নিহত