সারাদেশের চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন অনেক কম গ্রামে না দিয়ে রাজধানী ঢাকায় বিদ্যুতের লোডশেডিং দিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ :: গ্রামাঞ্চলে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ৬ থেকে ৮ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকে, তিতাসের অর্ধেক গ্রাহকের চুলা জ্বলে না :: নিয়মিত বিল পরিশোধ করেও গ্যাস-বিদ্যুৎ না পাওয়ায় গ্রাহকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন

বিদ্যুৎ-গ্যাসে নাকাল গ্রাহক

Daily Inqilab পঞ্চায়েত হাবিব

০১ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম


‘ভাত দেবার মুরোদ নেই, কিল মারার গোঁসাই’ গ্রামীর এই প্রবাদটি রাষ্ট্রের সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ বিভাগ ও গ্যাস সেক্টর নিয়ে যুতসই উদাহরণ হতে পারে। ভুতুড়ে বিল রোধকল্পে অগ্রাধিকারভিত্তিতে প্রি-পেইড/স্মার্ট প্রি-পেইড মিটার দেয়া হচ্ছে। বিদ্যুৎ ব্যবহারের আগেই টাকা কেটে নিচ্ছে অথচ বিদ্যুতের লোকসেডিং ভয়াবহ। নোয়াখালিতে বিদ্যুতের দাবিতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে হামলার ঘটনাও ঘটেছে। সারাদেশে এইচ এইচ সি ও আলিম পরীক্ষা শুরু হয়েছে। লোডশেডিংয়ের কথা মাথায় রেখে টাঙ্গাইলের মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসান আদর্শ মহাবিদ্যালয় কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিতে কেন্দ্রে মোমবাতি ও দিয়াশলাই সঙ্গে আনার নির্দেশনা দিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। সারাদেশে বিদ্যুতের ভয়াবহ চিত্র। বিশেষ করে গ্রামগঞ্জের কোনো কোনো এলাকায় ২৪ ঘন্টার মাত্র ৬ থেকে ৮ ঘন্টা বিদ্যুত থাকছে। ইনকিলাবের ব্যুরো অফিস, জেলা ও উপজেলা সংবাদদাতাদের পাঠানো খবরে এমন চিত্রই উঠে এসেছে। সারাদেশে ৬টি বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থা/কোম্পানির মোট গ্রাহক ৪ কোটি ৭১ লাখ। সর্বোত্রই একই চিত্র। আর গ্যাস সুবিধা পায় দেশের মাত্র ৭ থেকে ৮ শতাংশ মানুষ। সেখানেও ভয়াবহ চিত্র। গৃহস্থতিতে গ্যাসের দেখা তো নাই শিল্প কারখানায় গ্যাসের সরবরাহ কমে যাওয়ায় অনেক শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন ইনকিলাবকে বলেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। প্রয়োজনে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বাড়িয়ে বিদ্যতের চাহিদা পূরণের চেষ্টা করা হচ্ছে।

অসহনীয় লোডশেডিংয়ের শিকার গ্রাহকরা ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। ঢাকার বাইরে বাড়ছে লোডশেডিং। জেলা শহরগুলোতে লোডশেডিং তুলনামূলক কম হলেও গ্রামাঞ্চলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা থাকছে না বিদ্যুৎ। এতে জনজীবন অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্টদের দাবি, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম পাওয়ায় লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। অনেকেই বিদ্যুৎ বিভাগকে কটূক্তি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখছেন। এর মধ্যে মঙ্গলবার সেনবাগে পল্লীবিদ্যুৎ অফিসে হামলা হয়। শুধু গ্রামে লোডশেডিং না দিয়ে প্রয়োজনে সমহারে ঢাকা এবং অন্যান্য এলাকায় লোডশেডিং দেওয়ার জন্য সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন। ঝড়ে ভাসমান টার্মিনাল (এফএসআরইউ) ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এক মাস ধরে দিনে গ্যাস সরবরাহ কম প্রায় ৬০ কোটি ঘনফুট। এতে পরিবহন, শিল্প ও বাসাবাড়িতে গুরুতর সংকট দেখা দিয়েছে। ফিলিং স্টেশনগুলোতে গাড়ির লাইন দীর্ঘ হচ্ছে। গ্যাস-স্বল্পতার পাশাপাশি সংস্কারের কারণে কয়লাভিত্তিক একাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আংশিক বন্ধ রয়েছে। এতে কমেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন। ঢাকার বাইরে ১০-১২ ঘণ্টা লোডশেডিং করা হয়। গ্যাস-বিদ্যুৎ দুটিরই সরবরাহ কমে যাওয়ায় গরমে জীবনযাপন কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বৃদ্ধ-শিশুরা। বিঘিœত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা। ব্যাহত হচ্ছে শিল্পকারখানায় উৎপাদন। লোডশেডিংয়ের কারণে এ গরমে জনজীবন হয়ে উঠেছে বিপর্যস্ত। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা ব্যাঘাত ঘটছে। অন্যদিকে কারখানায় উৎপাদন কমার পাশাপাশি ব্যয় বাড়ছে। আষাঢ় মাসের ১৬ দিন চলে যাচ্ছে পযাপ্ত বৃষ্টি হচ্ছে না। আমন ধানের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

গতকাল রোববার থেকে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। পরীক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে। আবার পরীক্ষা কেন্দ্র গুলোতে বিদ্যুৎ না থকতে পারেন এমন আশঙ্কায় ছাত্র-ছাত্রীদের মমবাতি নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্র আসতে বলা হয়েছে।

গরম বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। ১৫ থেকে ১৬ হাজার মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ১৩ থেকে ১৪ হাজার মেগাওয়াট। দৈনিক ঘাটতি থাকছে ৩ হাজার মেগাওয়াটের মতো। তবে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৬ হাজার মেগাওয়াট। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির (পিজিসিবি) হিসাবে বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ প্রায় ২ হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং ছিল। গতকাল শুক্রবার ছুটির দিন থাকায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল কম। ফলে লোডশেডিং কম হয়। তবে লোডশেডিংয়ের সরকারি তথ্য নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ঢাকার বাইরে এলাকাভেদে দৈনিক ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) চাহিদার চেয়ে আড়াই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম পাচ্ছে। এদিকে গ্রামঞ্চলে অতিরিক্ত লোডশেডিং কারণে বিদ্যুৎ অফিসে হামলার ঘটনা ঘটছে। এছাড়া গ্যাস সংকট শিল্পকারখানা-ফিলিং স্টেশনে গ্যাসের সরবরাহ কমায় ঢাকাসহ সারাদেশের ফিলিং স্টেশনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন ধরেও গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। শিল্পকারখানার অবস্থাও শোচনীয়। শিল্প মালিকরা বলছেন, এমনিতেই গ্যাসের চাপ থাকে না, এখন তা আরও কমে গেছে। গাজীপুর, কোনাবাড়ী, কাশিমপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের চাপ নেই।

এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব হাবিবুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, গতকাল রোববার বোনো লোডশোডিং ছিলো না। ইতোমধ্যে আমাদের একটি ইউনিট চালু হয়েছে। আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যুতের বিষয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা সেই ভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আগামীতে বিদ্যুৎতের সমস্যা হবে না।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ভারতের আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৮০০ মেগাওয়াটের একটি ইউনিট বন্ধ আছে। এটি আগামী ৫ জুলাই উৎপাদনে ফিরতে পারে। একই ক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিটে কারিগরি ত্রুটিতে উৎপাদিত হচ্ছে ৩৭০ মেগাওয়াট। দেশের আরেকটি বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র পটুয়াখালীর পায়রার ৬২২ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি ইউনিট রক্ষণাবেক্ষণে গেছে গত মঙ্গলবার। এতে বরিশাল অঞ্চলে লোডশেডিং বেড়েছে। এটিতে আগামী ২ জুলাই উৎপাদন শুরুর কথা রয়েছে।

পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার দেশে গ্যাসের চাহিদা ছিল ৪২০ কোটি ঘনফুট, বিপরীতে সরবরাহ ছিল ২৫৫ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে এলএনজি থেকে পাওয়া গেছে ৬০ কোটি ঘনফুট গ্যাস। গত মাসেও যখন দুটি এফএসআরইউ চালু ছিল, তখন ১১০ কোটি ঘনফুট পর্যন্ত গ্যাস এলএনজি থেকে সরবরাহ করা হয়। গত ২৭ মে ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে বঙ্গোপসাগরে দুই এলএনজি টার্মিনালের একটি (সামিট গ্রুপের) ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আগামী মাসে মেরামতের পর এটি চালু হতে পারে। সরবরাহ কমায় বিদ্যুতেও গ্যাস সরবরাহ কমেছে। গত বৃহস্পতিবার বিদ্যুতে ৯৭ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়, যা গত মাসেও ছিল ১১০ কোটি ঘনফুটের ওপরে। গ্যাস দিয়ে এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে; কিন্তু কয়লা ও তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম উৎপাদন করেছে। এর দুটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, কয়লা ও তেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বেশি। দ্বিতীয়ত, বকেয়া পরিশোধ না করায় তেল ও কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো উৎপাদন কম করছে। বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পিডিবির কাছে পাবে ১৫ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর পাওনা ৬ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। ভারতের আদানি গ্রুপ ৪ হাজার ১৪০ কোটি টাকা পাবে। এ ছাড়া জ্বালানি সংকটে প্রায় ১ হাজার মেগাওয়াট এবং কেন্দ্র মেরামতের জন্য ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম উৎপাদন হচ্ছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, জেলায় মোট চাহিদার অর্ধেকের কম সরবরাহ থাকায় লোডশেডিং দিতে তারা বাধ্য হচ্ছেন। নোয়াখালী জেলার নয়টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন গ্রাহকরা। দিনে ১২-১৫ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকছে না অনেক এলাকায়। কোথাও আবার সারাদিন বিদ্যুৎ যাওয়া-আসার মধ্যেই থাকে। অতিরিক্ত লোডশেডিংকে কেন্দ্র করে যেকোনো সময় বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীদের সঙ্গে গ্রাহকদের সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা গ্রামে যেতে পারছে না।
গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু জানিয়েছেন, চলতি অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে ৩১ হাজার ৮৩৩ কোটি ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে।

৬টি বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থা/কোম্পানির মোট গ্রাহক ৪ কোটি ৭১ লাখ। বিদ্যুৎ বিল যাতে যথাযথ হয়, সে বিষয়ে বহুবিদ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। কারিগরি ও অকারিগরি কারণে অনেক সময় ভুতুড়ে বিলের ঘটনা ঘটতে পারে। ভুতুড়ে/অস্বাভাবিক বিল রোধকল্পে অগ্রাধিকারভিত্তিতে প্রি-পেইড/স্মার্ট প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

এ পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মোমবাতি ও দিয়াশলাই সঙ্গে আনার নির্দেশনা দিয়েছে টাঙ্গাইলের এক কলেজ কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। মোমবাতি ও দিয়াশলাই আনার নির্দেশ দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়া কলেজটি হলো টাঙ্গাইলের মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসান আদর্শ মহাবিদ্যালয়। এটি ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে একটি পরীক্ষাকেন্দ্র। এখানে এক হাজার ১৯৭ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ড বলছে, মোমবাতি-দিয়াশলাই আনার এমন কোনো নির্দেশনা বোর্ড থেকে কেন্দ্রগুলোকে দেওয়া হয়নি। কেন্দ্রে বা পরীক্ষার হলে যা যা প্রয়োজন, তার সব আয়োজন করবেন কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ রয়েছে, ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অবগত করা যাচ্ছে যে, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সম্ভাবনা (আশঙ্কা) থাকায় তাদের সবাইকে পরীক্ষাকেন্দ্রে মোমবাতি ও দিয়াশলাই সঙ্গে আনার নির্দেশ দেওয়া হলো।

এর মধ্যেই তীব্র লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে ও নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবিতে গত মঙ্গলবার রাতে নোয়াখালীর সেনবাগ পল্লীবিদ্যুৎ অফিসে হামলা চালান স্থানীয়রা। উপজেলার নবীপুর ইউনিয়নের আইচেরটেক এলাকায় পল্লীবিদ্যুতের উপকেন্দ্রে এ হামলায় হতাহত না হলেও কার্যালয়ের জানালার কাঁচ ভেঙে যায়। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, জেলায় মোট চাহিদার অর্ধেকের কম সরবরাহ থাকায় লোডশেডিং হচ্ছে। নোয়াখালী পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে জেলা শহর ও জেলার নয় উপজেলায় ৯ লাখ ৪১ হাজার গ্রাহক রয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের গ্রাহক ১ লাখ ৬৮ হাজার এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গ্রাহক ৭ লাখ ৭৩ হাজার। সেনবাগ উপজেলার কাদরা ইউনিয়নের বাসিন্দা ওহিদুল ইসলাম জানান, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৮ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ থাকে না। তীব্র গরমে আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। অনেকেই ক্ষুব্ধ হচ্ছে।

চাটখিল পৌরসভার সুন্দরপুর মহল্লার বাসিন্দা খাতিজা আক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সারাদিনে ৩-৪ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ থাকে না। একবার বিদ্যুৎ এলে ৩০ মিনিট পর আবার চলে যায়। আইপিএসের ব্যাটারি চার্জ হচ্ছে না, ফ্রিজে মাছ গোশত, শাক-সবজি নষ্ট হচ্ছে।

সদর উপজেলার কাদির হানিফ ইউনিয়নের ওয়ার্ড সদস্য রানা বলেন, গত এক মাস ধরে অতিরিক্ত লোডশেডিং হচ্ছে। রোববার থেকে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। পরীক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে। অসহনীয় লোডশেডিংয়ের শিকার গ্রাহকরা ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। অনেকেই বিদ্যুৎ বিভাগকে কটূক্তি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখছেন।

যোগাযোগ করা হলে পল্লীবিদ্যুতের সেনবাগ আঞ্চলিক কার্যালয়ের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মিনারুল ইসলাম সেনবাগ পল্লীবিদ্যুৎ অফিসে হামলার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, গত কয়েকদিন ধরে লোডশেডিংয়ের মাত্রা কিছুটা বেড়েছে। সেনবাগ উপজেলার ৯ ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় প্রতিদিন ২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও সরবরাহ পাওয়া যায় ১২-১৪ মেগাওয়াট। যার কারণে বাধ্য হয়েই লোডশেডিং করতে হচ্ছে›

জানতে চাইলে পল্লীবিদ্যুৎ নোয়াখালী জেলা কার্যালয়ের জেনারেল ম্যানেজার জাকির হোসেন জানান, আট উপজেলায় আমাদের গ্রাহক ৭ লাখ ৭৩ হাজার। বিদ্যুতের চাহিদা ১৮০-১৮২ মেগাওয়াটের বিপরীতে সরবরাহ পাচ্ছি মাত্র ৪০-৪৫ শতাংশ। তাই বাধ্য হয়ে লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

পিডিবি নোয়াখালী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাবিবুল বাহার জানান, নোয়াখালী পৌরসভা ও আশপাশের এলাকার ৮০ হাজার গ্রাহকের প্রতিদিনের চাহিদা ৩৪-৩৫ মেগাওয়াটের বিপরীতে ৫০ শতাংশও সরবরাহ হচ্ছে না। এ কারণে তীব্র গরমের মধ্যেও লোডশেডিং দেওয়া হয়। বেগমগঞ্জের মিরওয়ারিশপুরে বেসরকারি বিদ্যুৎ উন্নয়ন সংস্থা হোসাব পাওয়ার প্ল্যান্ট রয়েছে। সেখানে দৈনিক ১১৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ করার কথা। কিন্তু ওই বিদ্যুৎকেন্দ্র ৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ করে। আবার প্রায়ই উৎপাদন বন্ধ রাখে। এতে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যায় না।

পিডিবি চৌমুহনী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশল মো. শাহাদাত ইসলাম বলেন, চৌমুহনীতে ৪৩ হাজার গ্রাহকের ২৪ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ পাওয়া যায় ১২ মেগাওয়াট।
দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার পরমেশপুর গ্রামের ভরত চন্দ্র রায় বলেন, আগে বিদ্যুৎসংযোগ ছিল না, তখনই ভালো ছিল। এখন বিদ্যুৎসংযোগ নিয়ে অভ্যাস খারাপ হয়ে গেছে। তীব্র গরমে বিদ্যুৎ ছাড়া থাকাই মুশকিল। এরপর একবার বিদ্যুৎ গেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টাও দেখা মিলছে না। এতে দুর্বিষহ অবস্থায় পড়তে হচ্ছে।’

নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) দিনাজপুর-২ অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী স্পন্দন বসাক পায়েল জানান, তার এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা ২৭ মেগাওয়াট, কিন্তু সরবরাহ পাচ্ছেন ১৯ মেগাওয়াট। চাহিদা অনুযায়ী কম সরবরাহ পাওয়ায় বাধ্য হয়েই এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।

নেসকোর দিনাজপুর-১ অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফজলুর রহমান জানান ভিন্নকথা। তিনি বলেন, তার এলাকায় চাহিদা বিদ্যুৎ সরবরাহও পাওয়া যাচ্ছে।
দিনাজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী ফেরদৌস আলম জানান, চাহিদার তুলনায় ১৫-১৬ শতাংশ বিদ্যুৎ কম পাওয়া যাচ্ছে। এ জন্য লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। গরম কমে গেলে চাহিদা কমবে এবং তখন সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে বলে জানান তিনি।

দিনাজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর জেনারেল ম্যানেজার বিপুল কৃষ্ণ ম-ল জানান, চাহিদার তুলনায় ১০-১৫ মেগাওয়াট কম বিদ্যুৎ সরবরাহও পাওয়া যাচ্ছে।
তালা (সাতক্ষীরা) সংবাদদাতা জানান, একদিকে তাপপ্রবাহ, অন্যদিকে ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটের নাকাল হয়ে পড়েছে তালা উপজেলাসহ গোটা সাতক্ষীরা জেলার ২৪ লক্ষাধিক মানুষ। সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা। অন্যদিকে লোডশেডিংয়ের কারণে জেলার বিসিক শিল্পনগরীতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, অসহনীয় গরমের মধ্যে ঘন ঘন লোডশেডিং সাধারণ মানুষজন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। গরমের যন্ত্রণায় রাতের ঘুম নষ্ট মানুষজন রাস্তায় রাস্তায় বেরোচ্ছেন। গতকাল থেকে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। এখন যদি শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো পড়াশোনা করতে না পারে, তাহলে পরীক্ষাতে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে তাদের।

সাতক্ষীরা বিসিক শিল্পনগরীর উপ ব্যবস্থাপক গৌরব দাশ বলেন, বিসিকে উৎপাদনশীল ৪২টি কারখানা রয়েছে। গত তিন দিন ধরে ঘনঘন লোডশেডিংয়ের কারণে এ শিল্প কারখানাগুলোতে মারাত্মকভাবে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যৎ সমিতির এজিএম মঞ্জুরুল আকতার জানান, জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ১১০ মেগাওয়াট। সেখানে পাওয়া যাচ্ছে ৬৮ মেগওয়াট। ঘাটতি থাকছে ৪২ মেগাওয়াট। ফলে গ্রাহকের চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান তিনি। অন্যদিকে সাতক্ষীরা পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুনুর রহমান জানান, তার অধীনে বিদ্যুতে চাহিদা রয়েছে ১৯ মেগাওয়াট। সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে ১৫ মেগওয়াট।

বাগমারা (রাজশাহী) সংবাদদাতা জানান, বাগমারায় দিনে-রাতে ১০-১২ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। উপজেলার বালানগর গ্রামের আব্দুল হাকিম, আব্দুর রহিম, আব্দুস সামাদসহ অনেকে বলেন, ‘একবার বিদুৎ গেলে টানা দুই ঘণ্টা থাকছে না। তীব্র গরমে কোনো কাজ করা যাচ্ছে না। রাতে ঘুম হচ্ছে না।’ নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বাগামারা জোনাল অফিসের ডেপুটি জেলারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) আমিনুর রাশেদ জানান, চাহিদার কম বিদ্যুৎ পাওয়ায় লোডশেডিং হচ্ছে। খরার পরিমাণ বাড়ায় বিদ্যুতের অতিরিক্ত চাহিদাও বেড়েছে। বৃষ্টি নামলে সমস্যা দূর হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

প্লাস্টিক দূষণরোধে বিদ্যানন্দের সাথে কাজ করবে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড

প্লাস্টিক দূষণরোধে বিদ্যানন্দের সাথে কাজ করবে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ডিএসই টেকনোলজি হাব হিসেবে কাজ করবে: ডিএসই চেয়ারম্যান

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ডিএসই টেকনোলজি হাব হিসেবে কাজ করবে: ডিএসই চেয়ারম্যান

স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক পিএলসি. এর রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটির ৩৫তম সভা অনুষ্ঠিত

স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক পিএলসি. এর রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটির ৩৫তম সভা অনুষ্ঠিত

বিজিএমইএ দফতরে চীনা ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল

বিজিএমইএ দফতরে চীনা ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল

রূপায়ণের উপহারে হাসি ফুটল সিলেটে বন্যার্ত কয়েক হাজার পরিবারে

রূপায়ণের উপহারে হাসি ফুটল সিলেটে বন্যার্ত কয়েক হাজার পরিবারে

সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে এক রোহিঙ্গা নিহত।

সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে এক রোহিঙ্গা নিহত।

প্রধানমন্ত্রীর সাথে ভারতের নৌবাহিনী প্রধানের সাক্ষাৎ

প্রধানমন্ত্রীর সাথে ভারতের নৌবাহিনী প্রধানের সাক্ষাৎ

আবারও সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা

আবারও সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা

ফের আন্দোলনের সূচনা চট্টগ্রাম থেকেই Ñআমীর খসরু

ফের আন্দোলনের সূচনা চট্টগ্রাম থেকেই Ñআমীর খসরু

দুর্নীতির শাস্তি নিয়ে সাবেক মন্ত্রীর স্ট্যাটাস ভাইরাল

দুর্নীতির শাস্তি নিয়ে সাবেক মন্ত্রীর স্ট্যাটাস ভাইরাল

১৫ জুলাই থেকে ঢাকা-বেইজিং সরাসরি ফ্লাইট চালু

১৫ জুলাই থেকে ঢাকা-বেইজিং সরাসরি ফ্লাইট চালু

রায়গঞ্জে অটোরিকশা চালককে কুপিয়ে হত্যা

রায়গঞ্জে অটোরিকশা চালককে কুপিয়ে হত্যা

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি ভাতা বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনাধীন: মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি ভাতা বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনাধীন: মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী

আসামের বিপক্ষে হ্যান্ডবল সিরিজ জিতল ঢাকা

আসামের বিপক্ষে হ্যান্ডবল সিরিজ জিতল ঢাকা

প্যারিস অলিম্পিকে বাংলাদেশের ৫ ক্রীড়াবিদ চূড়ান্ত

প্যারিস অলিম্পিকে বাংলাদেশের ৫ ক্রীড়াবিদ চূড়ান্ত

জবরদখলকৃত বনভূমি উদ্ধারে কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে : বনমন্ত্রী

জবরদখলকৃত বনভূমি উদ্ধারে কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে : বনমন্ত্রী

বড় জয়ে শুরু আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের

বড় জয়ে শুরু আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের

মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের কর্মীদের কর্মপরিবেশ সৃষ্টির সুপারিশ

মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের কর্মীদের কর্মপরিবেশ সৃষ্টির সুপারিশ

বোয়ালমারীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২

বোয়ালমারীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২

কুমিল্লায় চোরের হাতে গৃহকর্ত্রী খুন

কুমিল্লায় চোরের হাতে গৃহকর্ত্রী খুন