হাইকোর্টের রুল

সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ কেন অসাংবিধানিক নয়

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১২ এএম | আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১২ এএম

সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে বর্ণিত অধস্তন আদালতের দায়িত্বপালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতিদান ও ছুটি মঞ্জুরসহ) শৃঙ্খলাবিধানের দায়িত্ব প্রেসিডেন্টের ওপর ন্যস্ত থাকা কেন অসাংবিধানিক হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

গতকাল রোববার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব এবং বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর ডিভিশন বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। সরকার পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সৈয়দা সাজিয়া শারমিন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তামিম খান।

এর আগে গত ২৫ আগস্ট সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে বর্ণিত ‘অধস্তন আদালতের দায়িত্বপালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতিদান ও ছুটি মঞ্জুরসহ) শৃঙ্খলাবিধানের দায়িত্ব প্রেসিডেন্টের ওপর ন্যস্ত রয়েছে’ এই বিধানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে। রিটে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ কেন অসাংবিধানিক হবে নাÑ এই মর্মে রুল জারির আবেদন জানানো হয়েছে। অধস্তন আদালতের দায়িত্বপালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলাবিধানের দায়িত্ব প্রেসিডেন্টের ওপর ন্যস্ত থাকলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব হয়, এ কারণে এই বিধানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। গতকাল রোববার সুপ্রিমকোর্টের ১০ জন আইনজীবী এ রিট দায়ের করেছেন।

রিট আবেদনকারীরা হলেন, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন, মো: আসাদ উদ্দিন, মুজাহিদুল ইসলাম, জহিরুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান, শাইখ মাহাদী, আবদুল্লাহ সাদিক, মিজানুল হক, আমিনুল ইসলাম শাকিল এবং যায়েদ বিন আমজাদ।

রিটে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও পার্লামেন্টারি অ্যাফেয়ার্স বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব এবং সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে বিবাদী করা হয়। আবেদনকারীদের পক্ষে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির রিট করেন। রিটে ২০১৭ সালে প্রণীত বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (ডিসিপ্লিনারি) রুলসের সাংবিধানিক বৈধতাকেও চ্যালেঞ্জ করা হয়। রিট আবেদনে একটি পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করতে আদালতের নির্দেশনা এবং মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির পূর্বে সুপ্রিমকোর্টের ২০১২ সালের আদেশ প্রতিপালনে অগ্রগতি রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশনা চেয়ে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চাওয়া হয়। রিটে আরো বলা হয়, ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অধস্তন আদালতের দায়িত্বপালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতিদান ও ছুটি মঞ্জুরসহ) শৃঙ্খলাবিধানের দায়িত্ব যা প্রেসিডেন্টের ওপর ন্যস্ত রয়েছে। একই অনুচ্ছেদ প্রেসিডেন্টে ওই দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করবেন-মর্মে উল্লেখ রয়েছে। মূলতঃ প্রেসিডেন্টের ওপর ন্যস্ত এই দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের সরাসরি হস্তক্ষেপ দেখা যায়, যা বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে খর্ব করে।
১৯৭২ সালের সংবিধানে অধস্তন আদালতের দায়িত্বপালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতিদান ও ছুটি মঞ্জুরসহ) শৃঙ্খলাবিধানের এই দায়িত্ব সুপ্রিমকোর্টের ওপর ন্যস্ত ছিল। ১৯৭৪ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতিদান ও ছুটি মঞ্জুরসহ) শৃঙ্খলাবিধানের দায়িত্ব প্রেসিডেন্টের ওপর ন্যস্ত করা হয়। পরবর্তী সময়ে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে এবং ‘সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে প্রেসিডেন্ট কর্তৃক সেটি প্রযুক্ত হবে’ শব্দগুলো সন্নিবেশিত করা হয়। পরে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ পঞ্চম সংশোধনী আইন অসাংবিধানিক মর্মে ঘোষণা করলে পঞ্চদশ সংশোধন আইন, ২০১১ এর মাধ্যমে ১১৬ অনুচ্ছেদের বর্তমান একই বিধানটি প্রতিস্থাপন করা হয়। বর্তমানে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে এই বিধানটিই বিদ্যমান রয়েছে।
রিটে যেসব যুক্তি তুলে ধরা হয়, তাহলো, (এক) বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংবিধানের মৌলিক কাঠামো। ১১৬ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে এই মৌলিক কাঠামো বিনষ্ট করা হয়েছে। একই সাথে বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির বাস্তবায়ন কার্যতঃ আইন মন্ত্রণালয়ের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে। (দুই) সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়েছে। পঞ্চম সংশোধনী অসাংবিধানিক ঘোষিত হয়েছে। এবং পঞ্চদশ সংশোধনীতে ১১৬ এর বিধান বহাল রাখা হয়েছে, যা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও আইনের শাসনের পরিপন্থী। (তিন) পৃথক সচিবালয় না থাকায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কার্যতঃ স্থবির হয়ে পড়েছে। অধস্তন আদালতের ওপর আইন মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণের কারণে বিচার বিভাগের কর্মকর্তারা স্বাধীনভাবে বিচারকার্য পরিচালনা করতে পারছেন না।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ফিরোজার সামনে নেতাকর্মীদের উপচেপড়া ভিড়
শাহজালালের ৮ নম্বর ফটক দিয়ে বের হবেন খালেদা জিয়া
অবশেষে স্বতন্ত্র ১৫১৯ ইবতেদায়ি মাদরাসার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়
বিমানবন্দর থেকে যে পথে ফিরোজায় যাবেন খালেদা জিয়া
জামায়াত নেতা এটিএম আজহারের আপিল শুনানি শুরু
আরও
X
  

আরও পড়ুন

নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে গুতেরেস-শাহবাজ শরিফের দ্বিতীয়বার ফোনালাপ

নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে গুতেরেস-শাহবাজ শরিফের দ্বিতীয়বার ফোনালাপ

দেশে ফিরলেন খালেদা জিয়া

দেশে ফিরলেন খালেদা জিয়া

ফিরোজার সামনে নেতাকর্মীদের উপচেপড়া ভিড়

ফিরোজার সামনে নেতাকর্মীদের উপচেপড়া ভিড়

গোয়ালন্দে ওভারলোড ট্রাকে ক্ষতিগ্রস্ত মহাসড়ক, ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা

গোয়ালন্দে ওভারলোড ট্রাকে ক্ষতিগ্রস্ত মহাসড়ক, ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা

শাহজালালের ৮ নম্বর ফটক দিয়ে বের হবেন খালেদা জিয়া

শাহজালালের ৮ নম্বর ফটক দিয়ে বের হবেন খালেদা জিয়া

অবশেষে স্বতন্ত্র ১৫১৯ ইবতেদায়ি মাদরাসার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়

অবশেষে স্বতন্ত্র ১৫১৯ ইবতেদায়ি মাদরাসার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

শত্রুর যেকোনও আগ্রাসন মোকাবিলায় প্রস্তুত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী : শেহবাজ

শত্রুর যেকোনও আগ্রাসন মোকাবিলায় প্রস্তুত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী : শেহবাজ

বিমানবন্দর থেকে যে পথে ফিরোজায় যাবেন খালেদা জিয়া

বিমানবন্দর থেকে যে পথে ফিরোজায় যাবেন খালেদা জিয়া

জামায়াত নেতা এটিএম আজহারের আপিল শুনানি শুরু

জামায়াত নেতা এটিএম আজহারের আপিল শুনানি শুরু

সাবেক এমপি মিলনসহ আওয়ামী লীগের ৯ জন গ্রেফতার

সাবেক এমপি মিলনসহ আওয়ামী লীগের ৯ জন গ্রেফতার

খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে যেভাবে অবস্থান নিয়েছে বিএনপির অঙ্গ সংগঠন

খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে যেভাবে অবস্থান নিয়েছে বিএনপির অঙ্গ সংগঠন

সেনাবাহিনীর নিরাপত্তায় ফিরোজা

সেনাবাহিনীর নিরাপত্তায় ফিরোজা

খালেদা জিয়ার আগমন উপলক্ষে বিমানবন্দরে কড়া নিরাপত্তা

খালেদা জিয়ার আগমন উপলক্ষে বিমানবন্দরে কড়া নিরাপত্তা

বেগম খালেদা জিয়ার দেশে আসা গনতন্ত্রের পথকে আরো সহজ করবেঃ মির্জা ফখরুল

বেগম খালেদা জিয়ার দেশে আসা গনতন্ত্রের পথকে আরো সহজ করবেঃ মির্জা ফখরুল

বিমানবন্দর থেকে গুলশান: স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত রাজপথ

বিমানবন্দর থেকে গুলশান: স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত রাজপথ

ভারতে শিক্ষার্থীদের ভিসা অগ্রাধিকারে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ঘোষণা

ভারতে শিক্ষার্থীদের ভিসা অগ্রাধিকারে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ঘোষণা

অপেক্ষায় ফিরোজা

অপেক্ষায় ফিরোজা

খালেদা জিয়াকে আনতে ফিরোজা থেকে বিমানবন্দর গেল নতুন গাড়ি ‘টয়োটা ক্রাউন’

খালেদা জিয়াকে আনতে ফিরোজা থেকে বিমানবন্দর গেল নতুন গাড়ি ‘টয়োটা ক্রাউন’

ইসরায়েলের সহায়তায় গাজায় লুটপাট, ধরা পড়লেই মৃত্যুদণ্ড দিচ্ছে হামাস

ইসরায়েলের সহায়তায় গাজায় লুটপাট, ধরা পড়লেই মৃত্যুদণ্ড দিচ্ছে হামাস