যারা খেলাধুলা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছেন না
১২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক খেলাধুলা চলছে বাংলাদেশে। অনেকে আমাকে বলেন, আবার কি শুরু হয়েছে দেশে? স্বৈরাচার চলে গেছে, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে, আমাদের কি আবার ইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হবে? আমি বলেছি, চিন্তার কোনো কারণ নেই। খেলাধুলা যারা করছে, তারা বিএনপির শক্তিকে অনুধাবন করতে পারছে না। তারা বিএনপির শক্তি বুঝতে পারছে না। এই বিএনপি সেই বিএনপি নেই। এই বিএনপি অনেক শক্তিশালী অবস্থানে, এর শেকড় অনেক গভীরে চলে গেছে। এই বিএনপিকে টলানোর সাধ্য কারও নেই। বিএনপির কয়েকটা সিদ্ধান্ত তো আপনারা ইতোমধ্যে দেখেছেন। সুতরাং এরকম সিদ্ধান্ত দিলে এ অবস্থায় যেতে হবে।
তিনি গতকাল সোমবার বিকেলে নগরীর ইনস্টিটিউশন অফ ইঞ্জিনিয়ার্সে বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম সম্মিলিত পেশাজীবি পরিষদের আলোচনা সভা, পেশাজীবী সমাবেশ ও নবনির্বাচিত মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক সাংবাদিক জাহিদুল করিম কচির সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব ডা. খুরশীদ জামিল চৌধুরী ও এ্যাব চট্টগ্রাম বিভাগের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার জানে আলম সেলিমের পরিচালনায় প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। সংবর্ধিত অতিথি চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আলহাজ্ব এরশাদ উল্লাহ। অনুষ্ঠানে নবনির্বাচিত মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনকে ফুলের শুভেচ্ছা জানানো হয়। তাছাড়া ৭ নভেম্বর, ১৯৭৫ ও জুলাই বিপ্লব ২০২৪ এর ওপর নির্মিত ডকুমেন্টরী শর্টফিল্ম প্রদর্শনী করা হয়।
আমীর খসরু বলেন, বিএনপিকে জোর করে ক্ষমতার বাইরে রাখার তাদের যে ভাবনা ছিল, ওই ওয়ান-ইলেভেনের বিরাজনীতিকরণ, আবার নতুন চিন্তা, নতুন ভাবনা, ক্ষমতার স্বাদ তো কেউ কেউ পেয়েছেন, মনে রাখছেন এ ক্ষমতা ধরে রাখলে মন্দ কী ! কিন্তু এ স্বাদ পাবার কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশের মানুষ তার মালিকানা ফিরে পাবার জন্য ১৬ বছর যুদ্ধ করেছে। বিএনপিকে ভাঙার সব ধরনের চেষ্টা হয়েছে। কিছু বাকি নেই, গুম, খুন, মিথ্যা মামলা সব হয়েছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে বিনা চিকিৎসায় মেরে ফেলার চেষ্টার মধ্যেও দেশনেত্রী টলেননি, তারেক রহমান টলেননি, বিএনপির নেতাকর্মীরা কেউ টলেনি। সবার অবস্থান শক্ত।
তিনি বলেন, সাতই নভেম্বর হচ্ছে বাংলাদেশের অনেকটা দ্বিতীয় স্বাধীনতা। স্বাধীনতার যে ভাবনা, যে চিন্তা, যে আকাঙ্খা, সেটা স্বাধীনতার পরে সেদিন পূর্ণ হয়নি। বরং স্বাধীনতার পরে সেটাকে ভুলুন্ঠিত করা হয়েছিল। একদলীয় শাসন, সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়া, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করে দেয়া, মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা, দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি, জীবনের নিরাপত্তাহীনতা, কালো আইন, এসবের মাধ্যমে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষের গণতন্ত্রের লড়াই ছিল, সেই গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়ে তারা একদলীয় শাসন কায়েম করেছিল। সুতরাং মুক্তিযুদ্ধের যে আকাঙ্খা, মুক্তিযুদ্ধের যে ভাবনা, মুক্তিযুদ্ধের যে স্যাক্রিফাইস, সেটা বাংলাদেশের মানুষ আবার নতুনভাবে পেয়েছে, নতুনভাবে গ্রহণ করেছে এবং উজ্জীবীত হয়েছে সাতই নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবসে।
তিনি বলেন, একেকবার বাংলাদেশে স্বাধীনতা আসে, আবার সেটা হরণ হয়ে যায় স্বৈরাচার ফ্যাসিস্টের মাধ্যমে। প্রতিবারই সেটা মুক্তিলাভ করেছে শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাধ্যমে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মাধ্যমে এবং এবার দেশনায়ক তারেক রহমানের মাধ্যমে। প্রতিটি মুক্তি এসেছে বিএনপির নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে। এজন্য সাতই নভেম্বর আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। স্বৈরাচারের পদত্যাগ এবং তাদের ক্ষমতাচ্যুত করার দিনটি আমদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এবার পাঁচই আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকার স্বৈরাচারকে বিদায়, বিএনপির নেতৃত্বে, বিএনপির অবদানের মাধ্যমে দেশকে একটি সংকটময়, একটি অন্ধকারাচ্ছন্ন সময় থেকে মুক্ত করা গেছে।
তিনি বলেন, আজকের প্রেক্ষাপটে আমাকে যেকথা বলতে হয়, আমরা গত ১৫-১৬ বছর ধরে সবাই কঠিন সময় অতিক্রম করেছি। আমাদের নেতাকর্মীরা গুমের শিকার হয়েছে, খুনের শিকার হয়েছে, বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হতে হয়েছে পুলিশসহ অন্যান্য রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে। ১৬টা বছর এভাবে বিএনপি নেতাকর্মীরা অতিক্রম করেছে। ত্যাগ করতে শিখেছে বিএনপি নেতাকর্মীরা, এ ত্যাগের মাধ্যমে তারা জ্বলেপুড়ে খাঁটি সোনায় পরিণত হয়েছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের আর কারও কিছু করার সুযোগ কারও নেই। আমরা অনেক কষ্ট করেছি, আমাদের অনেক ত্যাগ করতে হয়েছে। কিন্তু একটা লাভ হয়েছে, আমাদের নেতাকর্মীরা, আমাদের এ দলটি কিন্তু ত্যাগ স্বীকার করতে শিখে গেছে। একটি রাজনৈতিক দলের জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক কষ্ট হলেও, সময় কঠিন হলেও এটা কিন্তু রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিকে অনেক ওপরের লেভেলে নিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েও এটা আমি বলছি। তাই আজ আমাদের বুকে সাহস হয়েছে, কোনো শক্তি আমাদের টলাতে পারবে না।
তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় সংস্কার হচ্ছে নির্বাচনী সংস্কার। সব কথা শুনছি, নির্বাচনী সংস্কারের কথা শুনছি না। একটা কমিশন গঠন করেছে, আমরা খুশি হয়েছি। ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছে, আমরা অপেক্ষা করছি। আমরাও কিন্তু নির্বাচনী সংস্কারের জন্য সবকিছু তৈরি করে রেখেছি। আমাদের সংস্কার তো আজকের না, বাংলাদেশ আগামীদিনে কি হবে, সেটা নিয়ে আমরা বহুদিন ধরে কাজ করছি, প্রত্যেকটি। ক্ষমতায় যেদিন বিএনপি বসবে, সেদিন থেকে ইনশল্লাহ সংস্কার কাজ শুরু হবে। বিচার বিভাগের সংস্কার, যেদিন থেকে বিএনপি বসবে ওইদিন থেকে শুরু হবে। একটা দিনও আমরা নষ্ট করবো না। শিক্ষাখাত, ব্যবসায়ীদের বিষয়, সব খাতের সংস্কার, সবকিছু প্রস্তুত। ডে-ওয়ান থেকে সংস্কারের কাজ শুরু হবে। আর কারা কি করবে আমরা জানি না, আমরা কি করবো সেটা আমরা জানি। আগামীদিনে বিএনপি সরকার গঠন করলে, বাংলাদেশ নিয়ে জনগণের যে প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছে, দেশকে সেখানে নিয়ে যাবে ইনশল্লাহ। একটা কথা বলি, শেখ হাসিনা পলায়ন করার পরে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি সাধারণ মানুষের মনোজগতের বিশাল পরিবর্তন হয়ে গেছে। এই মনোজগতের যে পরিবর্তন, যে স্বপ্ন দেখছে জনগণ, রাজনীতিবিদরা যদি সেই স্বপ্ন না দেখে, তাহেলে সেই রাজনীতির কোনো ভবিষ্যৎ নেই। বিএনপি এটা বুঝেছে, অনুধাবন করেছে, ধারণ করেছে এবং এটা শতভাগ প্রয়োগ করে দেশের মানুষের, নতুন প্রজন্মের প্রত্যাশা পরিপূর্ণভাবে আগামীদের সরকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এবং আমরা সে কাজটা করবো।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ৫ আগস্ট ২০২৪ একটি অবস্থায় বাংলাদেশ থেকে স্বৈরাচার পালিয়েছে।। কিন্তু তার দোসররা আমাদের মাছ আছে, সমাজে আছে। এ দোসরদের যদি আমরা চিহ্নিত করতে না পারি তাহলে সত্যিকার অর্থে যে মূল্যবোধ আবু সাইদ, মুগ্ধ, ইলিয়াছ আলী, চৌধুরী আলম, কোনো কিছুই আদায় হবে না। যদি দোসরদের আইনের কাঠগড়ায় না আনতে পারেন। তাদের ক্ষমতার যে দম্ভ অর্থাৎ মানুষের লুণ্ঠণকৃত টাকা, আইন-বেইনী অস্ত্র, সেগুলো যদি উদ্ধার এবং রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে না পারে তাহলে সকল শহীদের রক্ত বৃথা যেতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর এখন নাটক করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। কোনো লজ্জা নেই পালিয়ে গেলেন, এরপরও অডিও দেন ভিডিও দেন বিভিন্ন কথা বলেন কতক্ষণ পরে বলেন স্থগিত করা হলো, অর্থাৎ নাটক চলছে। দেশি বিদেশি ষড়যন্ত্র থেমে নেই।
চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালোরাত্রিতে আওয়ামী লীগের ব্যর্থতায় জাতি যখন নেতৃত্বশূন্য দিশেহারা তখনই জিয়াউর রহমান উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো আবির্ভূত হয়েছিলেন। এমনি এক অনিশ্চয়তার মধ্যে ষোলশহর বিপ্লব উদ্যানে তিনি পাক বাহীনির বিরুদ্ধে ‘উই রিভোল্ট’ বলে বিদ্রোহ ঘোষণা করে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেছিলেন। কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন।
এতে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এড. নাজিম উদ্দীন চৌধুরী, চবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. নসরুল কদির, ড্যাব চমেক শাখার সভাপতি অধ্যাপক ডা. জসিম উদ্দীন, সিএমইউজে সভাপতি সাংবাদিক মো. শাহনওয়াজ, চট্টগ্রাম জেলা ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. তমিজ উদ্দীন আহমেদ মানিক, ড্যাব মহানগর সভাপতি অধ্যাপক ডা. আব্বাস উদ্দীন, চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলমগীর, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের সভাপতি এম এ সাফা চৌধুরী, ব্যাংকার মেহরাব হোসেন খান প্রমুখ।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
সজাগ-সতর্ক না থাকলে হায়নারা আবারও পরিবেশকে বিনষ্ট করবে : এ্যানি
ইসলামী শক্তিগুলোর উত্থান ঠেকাতে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করতে চায় কেউ কেউ : ড. আহমদ আবদুল কাদের
ইসরায়েলি হামলায় গাজার এক নারী বন্দী নিহত, দাবি হামাসের
সোনারগাঁয়ে বসুন্ধরা পেপার মিলে ১০ শ্রমিক দগ্ধ
গাজীপুরের আরও এক মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান
পাঁচ ঘন্টা পর প্রশাসনিক ভবনের অবরোধ তুলে নিল জাবি শিক্ষার্থীরা
সোহরাওয়ার্দী-নজরুল কলেজে বহিরাগতদের হামলা ভাঙচুর,পরীক্ষা দিতে পারেননি শিক্ষার্থীরা
সাংবাদিক নূরুল কবিরকে হয়রানির ঘটনায় জামায়াত সেক্রেটারির উদ্বেগ
বিএনপি ক্ষমতায় এলে চাকরিপ্রত্যাশীদের ১ বছর রাষ্ট্র থেকে ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে: আমীর খসরু
মহারাষ্ট্রে ঐতিহাসিক জয়,মোদীর নেতৃত্বে বিজেপির নতুন উত্থান
‘গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর হাঙ্গার অ্যান্ড পোভার্টি’ জোটের সদস্য হয়েছে বাংলাদেশ
ইসলামাবাদের দিকে যাচ্ছে ইমরান খানের সমর্থকদের বিশাল বহর
আদালতের নির্দেশনায় ব্যাটারি চালিত রিকশা সমস্যার সমাধান হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
ঢাকা-ভাঙ্গা-নড়াইল-খুলনা রেল পথে চলল পরীক্ষামূলক ট্রেন
"অবশেষে গুজব ছড়ানোর অভিযোগ নিয়ে প্রকাশ্যে আসলো সায়রা বানুর বার্তা"
এস আলমের মালিকানাধীন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মহাসড়ক অবরোধ বিক্ষোভ
পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে তিন দিনের সংঘাতে নিহত ৮২ জন
‘গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে সৎ ও দেশপ্রেমীদের দিয়ে নির্বাচন করানোর ব্যাপারে বিএনপি বদ্ধ পরিকর’
ভারতের রান পাহাড়ের সামনে আবারও ব্যাটিং ধ্বসে অস্ট্রেলিয়া
শপথগ্রহণ করে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে যা বললেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার