আমদানিকারকদের সিন্ডিকেটের কারণেই নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না বাজারমূল্য
২০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিকারকদের সিন্ডিকেটের কারণেই বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না। আমদানির ক্ষেত্রে সকল আমদানিকারকদের এ জাতীয় পণ্য অবাধে উন্মুক্ত আমদানির সুযোগ দিলে সিন্ডিকেট ভেঙ্গে যাবে বলে জানান ক্রেতা সাধারণ।
আমদানিকারক আল মামুন জানান, চাল-ডাল, ডিম, পিয়াজ, কাঁচা মরিচ, চিনি, ভোজ্য তেল আমদানিতে সরকার বরাবরই হাতে গোনা কিছু ব্যবসায়ীদের আমদানির অনুমতি দিয়ে থাকেন। অনুমোদিত আমদানিকারক ছাড়া অন্য কেউ এ জাতীয় পণ্য আমদানি করতে পারবে না। অবিলম্বে আমদানি পর্যায়ে অবাধ ও সকল ব্যবসায়ীদের জন্য আমদানি উন্মুক্ত করার দাবি ওঠেছে ব্যবসায়ী মহল থেকে।
ফলে অনুমোদিত আমদানিকারকরা সিন্ডিকেট করে বাজারে যে মূল্যে বিক্রি করছে সেই মুল্যেই ক্রয় করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষের। নিত্য প্রয়োজণীয় পণ্য অমাদানি অবাধ ও উন্মুক্ত করে দিলে আমদানিকারকদের সিন্ডিকেট ভাঙ্গা সম্ভব। যেমন বাজারে ডিমের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার নতুন করে ৪ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেয় ১২টি প্রতিষ্ঠানকে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই ডিম আমদানির ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আমদানি-রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তরকে চিঠি দেয় বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
অনুমতির পর শুধুমাত্র বেনাপোল বন্দর দিয়ে এ পর্যন্ত ৫টি চালানে মোট ৯ লাখ ৮৯ হাজার ৩১০ পিস মুরগির ডিম আমদানি করা হয়েছে। এসব ডিমের আমদানিকারকদের মধ্যে রয়েছে ‘হাইড্রো ল্যান্ড সল্যুশন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। ডিমগুলো ভারতের ‘শ্রী লক্ষ্মী নারায়ণ ভান্ডার’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে আমদানি করা হয়।
আমদানিকারক হাইড্রোল্যান্ড সলিউশনের ম্যানেজার ইকরামুল হাসান সজিব বলেন, চলতি বছরের ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫ শতাংশ শুল্কের সুবিধা পাচ্ছেন ডিম আমদানিকারকরা। এই শুল্কে শুল্কায়ন করা প্রতিটি ডিম পাইকারি বাজারে ৯ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। সরকার ডিমের বাজার মূল্য বেধে দিলেও তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি শুধুমাত্র আমদানিকারক সিন্ডিকেটের কারণে। সিন্ডিকেটের সদস্যরা হাতবদলের সাথে ধাপে ধাপে মূল্য বুদ্ধি করে বাজারে পণ্য ছাড়ছে। বেশ কয়েকটি ধাপে শক্তিশালী সিন্ডিকেট কাজ করছে বাজারে।
কাস্টম হাউস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রায় ১০ লাখ ডিম আমদানি হয়েছে। গত ৮ অক্টোবর ৭ প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে ৪ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেয়া হয়। সে হিসাবে দুই সপ্তাহে ১৯ প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে ৮ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ অনুমতি বলবৎ থাকবে। দেশে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ কোটি ডিমের চাহিদা রয়েছে বলে মনে করা হয়।
সরকার ডিম আমদানির অনুমতি দিলেও এ ক্ষেত্রে কয়েকটি শর্ত আরোপ করেছে। প্রথম শর্তটি হলো এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লুমুক্ত দেশগুলো থেকে ডিম আমদানি করতে হবে। দ্বিতীয়ত, ডিমের প্রতিটি চালানের জন্য রপ্তানিকারক দেশের সরকার নির্ধারিত বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের দেয়া বার্ড ফ্লু ভাইরাস ও ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ামুক্ত থাকার সনদ দাখিল করতে হবে। তৃতীয়ত, প্রতিটি চালানের কমপক্ষে ১৫ দিন আগে সংশ্লিষ্ট সঙ্গনিরোধ কর্মকর্তাকে জানাতে হবে। চতুর্থত, অনুমতি পেলে ৭ দিন পরপর এ সংক্রান্ত অগ্রগতি প্রতিবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দাখিল করতে হবে।
সর্বশেষ দেশীয় বাজারে চালের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করে নেয় সরকার। ফলে ২৪ জন আমদানিকারককে চাল আমদানির অনুমতি দেয়া হয়। এর মধ্যে যশোর এলাকার ১২ জন আমদানিকারককে ৭৩ হাজার সিদ্ধ চাল ও ১৯ হাজার জনকে আতপ চাল আমদানির অনুমতি দেয়া হয়। শর্তঅনুযায়ী অনুমোদিত আমদানিকারকরা সঠিক সময়ে চাল আমদানি করতে পারবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। কারণ আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে সমুদয় চাল আমদানি করে বাজারজাত করা সম্ভব নয়। চাল আমদানি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হলে চাল আমদানিকারকরা সিন্ডিকেট করতে পারবে না। ফলে বাজার মূল্য থাকবে স্বাভাবিক।
বেনাপোল বন্দরের উপপরিচালক সজিব নাজির জানান, এই বন্দর দিয়ে কাঁচা মরিচ আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৪ অক্টোবর থেকে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত ৯ দিনে ১২২ ট্রাকে করে ১ হাজার ৪২১ টন কাঁচা মরিচ আমদানি হয়েছে। কেনা থেকে শুরু করে শুল্ককর মিলিয়ে আমদানি করা এই মরিচের কেজিপ্রতি খরচ পড়েছে ৯৬-১০০ টাকা। অথচ বিভিন্ন বাজারগুলোতে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে আমদানি করা ভারতীয় কাঁচা মরিচ। তবে দেশব্যাপী বন্যার কারণে সবজি সহ কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে যায়।
বেনাপোল কাস্টমস থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, দেশের ২৮ জন আমদানিকারক প্রায় ৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা মূল্যের ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি করেন। প্রতি টনের আমদানি মূল্য ৬০ হাজার টাকা। আমদানি শুল্ক প্রায় ৩৬ হাজার টাকা হিসাবে প্রতি কেজির আমদানি মূল্য ৬০ টাকা এবং শুল্ক ৩৬ টাকা পড়ে।
যশোর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, এই মুহুর্তে সরকারের উচিত আমদানিকারকদের সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দেয়া। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে অবাধে সকল আমদানি কারকের জন্য পণ্য আমদানি উম্মুক্ত করে দেয়া হলে সিন্ডিকেট বলে কিছুই থাকবে না। ফলে বাজারে এ জাতীয় পণ্যের মুল্য স্বভাবিক থাকবে বলে আমি মনে করি।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
মাইলফলকের টেস্ট স্মরণীয় করে রাখতে চান মিরাজ
আজারবাইজানে কপ-২৯ সম্মেলনে ঠাকুরগাঁওয়ের ইএসডিওর সাইড ইভেন্ট অনুষ্ঠিত
বেতন পেয়ে অবরোধ প্রত্যাহার করল বেক্সিমকোর শ্রমিকেরা
লেবাননে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ৪৭
ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য মনোনীত দুই সদস্যের বিরুদ্ধে যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ
ট্রাম্প ব্যবসায়ী, আমরাও একজন ব্যবসায়ী পার্টনার চাই : টাইম ম্যাগাজিনকে ড. ইউনূস
আদানির দুর্নীতি : এবার ভারতেই বির্তকের মুখে মোদি সরকার
প্রেসিডেন্টর সঙ্গে তিন বাহিনী প্রধানের সৌজন্য সাক্ষাৎ
নিজ্জর হত্যায় মোদীর সংশ্লিষ্টতার দাবি কানাডার সংবাদমাধ্যমের ,‘হাস্যকর’ দাবি ভারতের
পাকিস্তানে যাত্রীবাহী গাড়িতে গুলি, নিহত ৪২
এক সপ্তাহে রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার
ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক সংঘাতে পরিণত হচ্ছে : পুতিন
মুরগি-সবজিতে কিছুটা স্বস্তি, আলু এখনো চড়া
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা, যা বলল যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন শ্রম প্রতিনিধি দল ঢাকা আসছে আজ
পার্থে শুরুতেই চাপে ভারত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা
সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়ার সঙ্গে জামায়াত আমীরের কুশল বিনিময়
সিঙ্গেল সিটের দাবিতে গভীর রাতেও হলের বাইরে ছাত্রীরা
ইসরাইলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ৪৪ হাজার অতিক্রম করলো