ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১২ পৌষ ১৪৩১
১০০ দিনের কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা দিলেন তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা

বন্ধ হচ্ছে না পলিথিনের ব্যবহার

Daily Inqilab রফিক মুহাম্মদ

০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম

সরকারের অভিযানেও বন্ধ হচ্ছে না পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর নিষিদ্ধ পলিথিন। রাজধানী ঢাকার সুপারশপগুলোতে বন্ধ হলেও সারা দেশে অবাধে ব্যবহার হচ্ছে পলিথিনের ব্যাগ। রাজধানীর বড় কাঁচাবাজারগুলোতে পলিথিনের ব্যাগের বিকল্প রাখা হলেও মহল্লার ছোট ছোট বাজার ও দোকানে তা নেই। এখনো পলিথিন দেদারসে উৎপাদন ও বিপণন চলছে। আবার অবৈধ পলিথিন উৎপাদনকারী কারখানার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে যৌথ বাহিনীকে বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে। শ্রমিকদের বাধার মুখে অভিযান বন্ধ রেখে যৌথবাহিনীকে চলে যেতে হয়েছে।

পলিথিন নিষিদ্ধের ব্যাপারে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বড় বড় বুলি আওড়ালেও এ বাস্তব প্রতিফলন এখনো দেখা যাচ্ছে না। পলিথিনি নিষিদ্ধ করতে হলে যে জনসচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন সে বিষয়ে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কোন উদ্যোগ নেই। উপদেষ্টা সেমিনার সিম্পোজিয়ামে বক্তৃতা দিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাতে বিভিন্ন এনজিও হয়তো ফায়দা নিচ্ছে, কিন্তু তাতে জাতির কোন উপকার হচ্ছে না। অনেক পরিবেশবিদ অভিযোগ করে বলছেন, উপদেষ্টা নিজেকে এখনো এনজিও প্রতিনিধির বাইরে ভাবতে পারছেন না। তিনি যে এখন রাষ্ট্রের প্রতিনিধি, তাকে যে দেশের বৃহত্তর বিষয় নিয়ে, দেশের সব মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে এটা যেন উপলব্ধিই করতে পারছেন না। এনজিওর স্বার্থ রক্ষার জন্য শুধু কিছু প্রকল্প গ্রহণ করার জন্য তিনি উপদেষ্টা হননি এই বোধ তার মধ্যে জাগ্রত থাকতে হবে। তাই শুধু পলিথিনের বিরুদ্ধে নয়, সার্বিক পরিবেশ উন্নয়নে তাকে ভাবতে হবে। ঢাকার বায়ুদূষণ চরম আকার ধারণ করেছে। এই বায়ুদূষণ রোধ করার উদ্যোগ নিতে হবে। দেশের নদীগুলো মরে যাচ্ছে। ভারত আমাদের পানি দিচ্ছে না। বাঁধ ও ব্যারেজের মাধ্যমে নদীগুলোকে শুকিয়ে মারছে। এ সব বিষয়ে উপদেষ্টা শুরুতে কথা বললেও এখন নীরব। তার এই নীরবতার রহস্য কি সেটা নিয়েও পরিবেশবাদীরা নতুন করে ভাবছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দুই যুগ আগে পরিবেশের সুরক্ষায় পলিথিনের ব্যাগ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এসংক্রান্ত আইনও প্রণয়ন করা হয়। শুরুতে আইন কিছুটা কার্যকর হলেও বিগত কয়েক বছরে তা অকার্যকর হয়ে পড়ে। অন্তর্বর্তী সরকার আইনটি কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছে। গত পয়লা অক্টোবর থেকে সুপারশপে এবং পয়লা নভেম্বর থেকে কাঁচাবাজারগুলোতে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে অভিযান চালানোর কথা জানান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। একই সঙ্গে পলিথিন ও পলিপ্রপাইলিন শপিং ব্যাগ উৎপাদন, মজুদ, পরিবহন, বিপণন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। ঘোষণা অনুযায়ী, নিষিদ্ধ পলিথিনের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছে পরিবেশ মন্ত্রণালয়। তবে তাতে সফলতা খুবই সামান্য।

এ বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত মনিটরিং কমিটির সভাপতি ও অতিরিক্ত সচিব তপন কুমার বিশ্বাস জানিয়েছেন, পলিথিন শপিং ব্যাগের নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে সরকার বদ্ধপরিকর। এ জাতীয় ব্যাগের ব্যবহার বন্ধে সবাইকে সরকারের নির্দেশনা মানতে হবে, না হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পলিথিন শপিং ব্যাগ নিষিদ্ধে গত ৩ নভেম্বর থেকে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত ১৬৬টি অভিযান চালানো হয়েছে। এতে ৩৪৯টি প্রতিষ্ঠানকে ১৯ লাখ ২৯ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ সময়ে ৪০ হাজার কেজি পলিথিন জব্দ করা হয়েছে। সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক বন্ধেও কাজ চলছে। সচেতনতা বৃদ্ধি, বিকল্প সরবরাহ এবং নিয়ম বাস্তবায়নে একসঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

সর্বশেষ গত ১২ নভেম্বর পুরান ঢাকার চকবাজারে পলিথিন কারখানার শ্রমিকদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে অভিযান পরিচালনাকারী যৌথ বাহিনী। স্থানীয়রা জানায়, চকবাজারের কামালবাগ এলাকায় অভিযানে যাওয়া যৌথ বাহিনীর (সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশ) সদস্যরা কয়েকটি কারখানার তালা ভেঙে পলিথিন তৈরির বিপুল কাঁচামাল উদ্ধার করেন। তিনটি কারখানাকে জরিমানা ও সিলগালা করেন। তবে অভিযান শুরুর আগে কারখানার শ্রমিকরা রাস্তায় বেঞ্চ দিয়ে পথরোধ করে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। তাঁরা বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে কারখানা বন্ধের দাবি জানান। এতে অভিযান বন্ধ রেখে যৌথবাহিনী চলে যায়। এ অভিযান অনেকটা ইঁদুর বিড়াল খেলার মতো চলছে। একদিকে অভিযান শেষ করে চলে যাওয়ার সাথে সাথে আবার উৎপাদন শুরু হয়। এভাবেই এখনো উৎপাদন এবং বিপণন চলছে।

তবে রাজধানীর সুপারশপে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। সেখানে পলিথিনের বদলে কাগজের ঠোঙায় পণ্য দেওয়া হচ্ছে। পলিথিনের বিকল্প কাপড় ও পাটের ব্যাগ বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারা বাধ্য হয়ে সেসব ব্যাগ কিনছে কিংবা বাসা থেকে ব্যাগ নিয়ে আসছে। তবে নানা অজুহাতে রাজধানীর বৃহত্তম কাঁচাবাজার কাওরান বাজারসহ অন্যান্য কাঁচাবাজারে পলিথিনে পণ্য দেওয়া হচ্ছে। বড় বাজারগুলোতে কিছুটা কম হলেও পাড়া-মহল্লায় অবাধে ব্যবহার হচ্ছে পলিথিন শপিং ব্যাগ। অনেক দোকানে বিকল্প ব্যাগও রাখা হয় না। রাজধানীর কাওরান বাজার, মোহাম্মদপুর টাউন হল, রায়ের বাজার, হাতিরপুল বাজার, রায়সাহেব বাজার, খিলগাঁও, মালিবাগসহ বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, মুদি দোকান, সবজি বিক্রেতা, মাছ গোশতের বাজার, খাবারের হোটেলসহ সব স্থানেই ব্যবহার হচ্ছে পলিথিন। খুব কমসংখ্যক ক্রেতার হাতে পাটের বা পরিবেশবান্ধব ব্যাগ রয়েছে।

পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্যে বাংলাদেশের অন্যতম দূষিত নদীতে পরিণত হয়েছে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা, কর্ণফুলী ও সুরমা নদী। বর্তমানে এ নদীগুলোর মরণদশা। অন্যদিকে পদ্মা, যমুনা ও মেঘনা নদী দিয়ে প্রতিদিন ৭৩ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য সাগরে মিশছে। এ কারণে সমুদ্রের তলদেশে যে হারে বাড়ছে পলিথিন-প্লাস্টিকের স্তর, তাতে আগামী ৫০ বছর পর সমুদ্রে মাছের চেয়ে পলিথিনের পরিমাণ বেশি হবে। জাতিসংঘের পরিবেশবিষয়ক কর্মসূচি (ইউএনইপি) তাদের বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক উৎপাদন ও ব্যবহার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশের পদ্মা, যমুনা ও মেঘনা নদী দিয়ে প্রতিদিন ৭৩ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য সাগরে মিশছে। এছাড়া ভারত, নেপাল ও চীনের বর্জ্য গঙ্গা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের মাধ্যমে প্রবাহিত হচ্ছে। প্লাস্টিক ও পলিথিনের অবাধ ব্যবহার নানা মাত্রায় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

সচিবালয়ে আগুন পরিকল্পিত: প্রকৌশলী ইকরামুল খান
উচ্চ পর্যায়ের নতুন কমিটি গঠন, ৩ কর্মদিবসে প্রাথমিক প্রতিবেদন
কালীগঞ্জে পুকুর থেকে ২ শিশুর লাশ উদ্ধার
বিসিএ নির্বাচন সম্পন্ন: মিজান সভাপতি, মতিন সম্পাদক
‘প্রতিবন্ধীদের সংগঠন ও সম্পদ দখল করে পতিত সরকারের শিল্পমন্ত্রীর কন্যা’
আরও

আরও পড়ুন

সচিবালয়ে আগুন পরিকল্পিত: প্রকৌশলী ইকরামুল খান

সচিবালয়ে আগুন পরিকল্পিত: প্রকৌশলী ইকরামুল খান

সেন্ট মার্টিন থেকে ফেরার পথে আটকা পড়েছেন ৭১ পর্যটক

সেন্ট মার্টিন থেকে ফেরার পথে আটকা পড়েছেন ৭১ পর্যটক

জকিগঞ্জে মোটরসাইকেল দূর্ঘটনায় এক যুবকের মৃত্যু

জকিগঞ্জে মোটরসাইকেল দূর্ঘটনায় এক যুবকের মৃত্যু

বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের চামড়া শিল্পের অগ্রগতির লক্ষে ইসিফোরজে’র প্রি-ওয়ার্কশপ

বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের চামড়া শিল্পের অগ্রগতির লক্ষে ইসিফোরজে’র প্রি-ওয়ার্কশপ

উচ্চ পর্যায়ের নতুন কমিটি গঠন, ৩ কর্মদিবসে প্রাথমিক প্রতিবেদন

উচ্চ পর্যায়ের নতুন কমিটি গঠন, ৩ কর্মদিবসে প্রাথমিক প্রতিবেদন

ব্রাহ্মণপাড়ায় ছুরিকাঘাতে এক যুবককে হত্যা

ব্রাহ্মণপাড়ায় ছুরিকাঘাতে এক যুবককে হত্যা

কালীগঞ্জে পুকুর থেকে ২ শিশুর লাশ উদ্ধার

কালীগঞ্জে পুকুর থেকে ২ শিশুর লাশ উদ্ধার

নিবন্ধন চূড়ান্ত: হজযাত্রী ৮৩ হাজার ২৪২ জন

নিবন্ধন চূড়ান্ত: হজযাত্রী ৮৩ হাজার ২৪২ জন

হল্যান্ডের পেনাল্টি মিস,বিবর্ণ সিটি ফের হারাল পয়েন্ট

হল্যান্ডের পেনাল্টি মিস,বিবর্ণ সিটি ফের হারাল পয়েন্ট

শরীফ থেকে শরীফার গল্প বাতিল করতে হবে: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ

শরীফ থেকে শরীফার গল্প বাতিল করতে হবে: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ

বিসিএ নির্বাচন সম্পন্ন: মিজান সভাপতি, মতিন সম্পাদক

বিসিএ নির্বাচন সম্পন্ন: মিজান সভাপতি, মতিন সম্পাদক

ডেঙ্গুতে আরও ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৫৩

ডেঙ্গুতে আরও ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৫৩

বিএনপি মুক্ত সাংবাদিকতায় বিশ্বাসী: শাহজাহান চৌধুরী

বিএনপি মুক্ত সাংবাদিকতায় বিশ্বাসী: শাহজাহান চৌধুরী

সচিবালয়ে আগুন: গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ব্যর্থতাকে দায়ী করলো এবি পার্টি

সচিবালয়ে আগুন: গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ব্যর্থতাকে দায়ী করলো এবি পার্টি

পরকীয়া প্রেমের ঘটনায় গৌরনদীতে উপ-সহকারী ২ কৃষি কর্মকর্তা এলাকাবাসীর হাতে আটক

পরকীয়া প্রেমের ঘটনায় গৌরনদীতে উপ-সহকারী ২ কৃষি কর্মকর্তা এলাকাবাসীর হাতে আটক

‘প্রতিবন্ধীদের সংগঠন ও সম্পদ দখল করে পতিত সরকারের শিল্পমন্ত্রীর কন্যা’

‘প্রতিবন্ধীদের সংগঠন ও সম্পদ দখল করে পতিত সরকারের শিল্পমন্ত্রীর কন্যা’

আশিয়ান সিটির স্টলে বুকিং দিলেই মিলছে ল্যাপটপ

আশিয়ান সিটির স্টলে বুকিং দিলেই মিলছে ল্যাপটপ

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি পরিকল্পিত নাশকতা: ইসলামী আইনজীবী পরিষদ

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি পরিকল্পিত নাশকতা: ইসলামী আইনজীবী পরিষদ

গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়

গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়

মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু

মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু