ডেঙ্গুর প্রকোপে আতঙ্ক
০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৬ এএম
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুর প্রকোপ রয়েছে। সাধারণত বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গু সংক্রমণ বেশি থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শীতকালেও এর উপস্থিতি অনেক। শীত চলে এলেও এবার এখনো প্রতিদিন শত শত মানুষ ডেঙ্গুতে সংক্রমিত হচ্ছেন। ঘটছে প্রাণহানিও। গত এক মাসে ঢাকা মহানগরীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ও মৃতের সংখ্যা বাড়তে দেখা গেছে। ডেঙ্গু সংক্রমণে মধ্যেই চিকনগুনিয়া এবং জিকা ভাইরাসের সংক্রমণও কিছুটা বেড়েছে, যা নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এসময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬২৯ জন। এ নিয়ে চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫০৯ জন এবং শনাক্ত রোগী বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৪ হাজার ৩১৪ জনে। গতকাল বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া পাঁচজনের মধ্যে ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) দুজন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে দুজন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে একজন রয়েছেন। এতে আরও জানানো হয়েছে, হাসপাতালে নতুন ভর্তি রোগীদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ৫৫, চট্টগ্রাম বিভাগে ৬১, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৫৩, ঢাকা উত্তর সিটিতে ১১২, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৯২, খুলনা বিভাগে ৭৫, রাজশাহী বিভাগে ৩৪, ময়মনসিংহে ২২, রংপুরে ১৬ এবং সিলেট বিভাগে ৯ জন রয়েছেন।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৯৪ হাজার ৩১৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, যার মধ্যে ৬৩ দশমিক ২০ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৬ দশমিক ৮০ শতাংশ নারী। একই সময়ে ৫০৯ জন মৃত্যুবরণ করেছেন, যাদের মধ্যে ৫১ দশমিক ৩০ শতাংশ নারী এবং ৪৮ দশমিক ৭০ শতাংশ পুরুষ। প্রতি বছর বর্ষাকালে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। ২০২৩ সালের জুন মাস থেকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। গত বছর দেশে তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। এর মধ্যে ঢাকায় এক লাখ ১০ হাজার ৮ এবং ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নেন দুই লাখ ১১ হাজার ১৭১ জন। আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন তিন লাখ ১৮ হাজার ৭৪৯ জন। গত বছর এক হাজার ৭০৫ জন মশাবাহিত এই রোগে মারা গেছেন, যা দেশের ইতিহাসে এক বছরে সর্বোচ্চ মৃত্যু। ২০২০ সালে করোনা মহামারিকালে ডেঙ্গুর সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। ওই বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ২০২২ সালে ডেঙ্গু নিয়ে মোট ৬২ হাজার ৩৮২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ওই বছর মশাবাহিত রোগে মারা যান ২৮১ জন।
ডেঙ্গুকে সাধারণত বর্ষা মৌসুমের রোগ ধরা হলেও সাম্প্রতিক সময়ে শীতকালেও এর ভালো প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, বর্ষা মৌসুমের উচ্চ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা এই ভাইরাসগুলোর সংক্রমণ বৃদ্ধিতে অবদান রাখে। ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া ও জিকার সংক্রমণ একসঙ্গে ঘটার হারও উল্লেখযোগ্য, যা প্রধানত জনসংখ্যার ঘনত্ব এবং নিম্ন সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ব্রাজিলে মৌসুমি আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে। এতে করে শীতকালে তাপমাত্রা কিছুটা বেশি থাকছে, যা মশার প্রজনন চালিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট সহায়ক। এডিস মশা দ্রুত পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সক্ষম, ফলে শীতকালেও তাদের বংশবিস্তার এবং ভাইরাস ছড়ানোর ক্ষমতা অব্যাহত থাকে। বাংলাদেশে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া এবং জিকা ভাইরাস নিয়ে সাম্প্রতিক কিছু গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো এ বিষয়ে কাজ করছে।
আইইডিসিআরের গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, এডিস মশার প্রজননের পদ্ধতিতে পরিবর্তন এবং জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে শীতকালেও ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়ছে। সাধারণত বর্ষার সময় এই রোগের প্রকোপ দেখা গেলেও এখন বৃষ্টি-পরবর্তী সময়ে এবং শীতকালেও এর সংক্রমণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মশার ক্রমবর্ধমান অভিযোজন এবং উষ্ণ আবহাওয়ার ধারা এই বিস্তারের প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে।
রাজধানীর মানিকনগরের এক বাসিন্দা জানান, তীব্র জ্বর ও শরীর ব্যাথা দেখা দিলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। ডেঙ্গুর শঙ্কায় পরীক্ষা করা হলেও ডেঙ্গু নেগেটিভ আসে। পরে চিকনগুনিয়া পরীক্ষা করানো হলে পজেটিভ আসে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বাড়িতে থেকে তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে তীব্র শরীর ব্যথায় খুব কষ্ট হচ্ছে তার।
সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর বলেন, ডেঙ্গুর পাশাপাশি দেশে চিকুনগুনিয়া ও জিকা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। তবে দেশে চলতি বছর চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ৬৭ জন এবং জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ১১ জন। এছাড়া জিকা ও চিকুনগুনিয়ায় মৃত্যুহার বেশ কম, তাই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, চলতি বছরের অক্টোবর ও নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে। সেই বৃষ্টিতে মশা ডিম দিয়েছে। ওই ডিম পূর্ণবয়স্ক মশা হয়ে একজন ডেঙ্গু রোগীকে দংশন করে ভাইরাসটা পেটের মধ্যে নিয়ে সুস্থ লোককে কামড় দিচ্ছে। ভাইরাস বা মশার এই জীবনচক্র সম্পন্ন হতে দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগে। ফলে এই প্রকোপ স্বাভাবিক। এরপর পরিস্থিতি ঠিক হবে। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির দিকে সংক্রমণ কিছুটা কমে আসবে বলে আশা করছি। আগামী বছরের মার্চ-এপ্রিলে থেকে বৃষ্টি শুরু হলে তা বাড়তে থাকবে। আমরা অসচেতন তা বলা যাবে না। আমার মতে মানুষ খুবই সচেতন। তবে এর জন্য দায়ী আমাদের নোংরা পরিবেশ। ঘর এবং ঘরের বাইরে অপরিচ্ছন্ন অনুকূল পরিবেশ। এর জন্য অবশ্য আমরাই দায়ী।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
সউদী আরবকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের
গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত আরও ৩৬
যুক্তরাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রফতানিতে চীনের নিষেধাজ্ঞা
বিক্ষোভের মুখে প্রত্যাহার দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক আইন
সিরিয়ার প্রেসিডেন্টকে সতর্ক করে যা বললেন এরদোগান
নভেম্বরে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৫.৬৩ শতাংশ
সৈয়দপুরে পিকআপের ধাক্কায় এক শ্রমিক নিহত
শিক্ষার্থীদের মারধর ও শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে শ্রমিকদের সঙ্গে খুবি শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতীয় ষড়যন্ত্র বরদাস্ত করা হবে না : বিক্ষোভ মিছিলে খেলাফত আন্দোলন
আগরতলায় সহকারি হাইকমিশনে উগ্রবাদীদের হামলার প্রতিবাদে চাঁদপুরে খেলাফত মজলিস বিক্ষোভ
বগুড়ায় ম্যাজিষ্ট্রেটের সিল-স্বাক্ষর জাল করার অভিযোগে ৩ প্রতারক গ্রেফতার
পিলখানা হত্যা, শাপলা চত্বরে গণহত্যা ও ২৪'র গণহত্যার বিচারের জন্য ছাত্র ঐক্যের প্রয়োজন: শিবির সভাপতি
‘কুটনীতিকদের উপর আক্রমণ করে ভারত নিজেদের অসভ্য জাতি হিসেবে পরিচয় দিয়েছে’
ষড়যন্ত্র রুখতে সরকারের পাশে থাকবে বিএনপি
ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে ব্যাপক মিথ্যা ও অপতথ্য ছড়ানোয় বিএফইউজে ও ডিইউজের উদ্বেগ
স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য
ইনকিলাব সাংবাদিকের বাসায় দুর্ধর্ষ চুরি
পঞ্চগড়ে বিএনপির আনন্দ মিছিল
অব্যবহৃত মসজিদ বা তার জায়গা সংরক্ষণ করা প্রসঙ্গে?
চা শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করুন