বঞ্চিতরা থাকছে বঞ্চিতই

প্রশাসনে বিএনপি-জামায়াতপন্থিদের সরাতে মরিয়া ফ্যাসিবাদীরা

Daily Inqilab পঞ্চায়েত হাবিব

০২ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৫৩ এএম | আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৫৩ এএম

ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের ৫ মাস পার হয়েছে। কিন্তু এখনো জুলাই বিপ্লবের স্বীকৃতি বাস্তবায়ন হয়নি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা আবার বলে আসছেন স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের কর্মকর্তাদের বিচার করা হবে। কিন্তু তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি এ সরকার। পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গত ১৫ বছর বঞ্চিত কর্মকর্তারা রাস্তায় রাস্তায় এখনো ঘুরছেন। ফ্যাসিবাদের দোসররা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল রয়েছেন। আবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এখনো ফ্যাসিবাদি কর্মকর্তাদের দখলে।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) প্রশাসন ও ২৫ ক্যাডার কর্মকর্তারা নিজেদের পদ-পদবি, মান-মর্যাদাসহ বিভিন্ন চাওয়া-পাওয়া নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড় করিয়ে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সুবিধাভোগীদের প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন, বঞ্চিত কর্মকর্তাদের কম গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন, দরকারি ক্ষেত্রে বঞ্চিতদের উপেক্ষা, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, কর্মরত কর্মকর্তাদের সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখা, চেয়ার হারোনোর ভয়ে তটস্থ থাকাসহ নানা কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ,পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগ থেকে বিএনপি-জামায়াতপন্থী বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাদের সরিয়ে ছাত্রলীগের নেতাদের পদায়ন করেছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রলালয়ের সিনিয়র সচিব। তবে ফ্যাসিবাদের দোসর এবং সায়লা ফারজানাকে ওএসডি করা হলেও তার বান্ধবী পতিত সরকারে দোসর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মিজ শেখ মোমেনা মনিকে গত ১১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনষ্টিটিউটে বদলী করা হয়। তাকে ২৬ ডিসেম্বর মধ্যে যোগদান করতে বলা হয়। তা না হলে তাকে তৎখনিকভাবে বলদী করা হবে। এমন আদেশ পাওয়ার পরে পতিত সরকারে দোসর অতিরিক্ত সচিব মিজ শেখ মোমেনা মনি থেমে থাকেনি বরং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এক সচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে দিয়ে তার আদেশ বাতিল করিয়েছেন। অন্যদিকে বদলীর আদেশে স্বাক্ষর কারী বঞ্চিত কর্মকর্তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দিয়ে সুবিধাভোগী কর্মকর্তাকে পদায়ন করা হয়েছে বলে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের মাঝে নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এর আগে ডিসি নিয়োগের সময় যুগ্মসচিব কে এম আলী আজমকে যে ভাবে সরিয়েছে ফ্যাসিবাদের দোসরা। ঠিক সেই ভাবে কাজ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গত ১৫ বছরে জনপ্রশাসনে বঞ্চিত ৭৬৪ জন সাবেক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিটি। এর মধ্যে ১১৯ জন কর্মকর্তাকে সচিব পদে পদোন্নতি দেয়ার এবং বঞ্চিত কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে কাউকে কাউকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ থাকলেও সেটি এখন থমকে আছে। বিএনপি-জামায়াত পন্থী কর্মকর্তারা যাতে ভালো ভালো মন্ত্রণালয় না পায় সে জন্য ফ্যাসিবাদি দোসর কর্মকর্তারা পদে পদে ফাইল আটক রাখার ব্যবস্থা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আগামী ১১ জানুয়ারী থেকে জেলা প্রশাসক নিযোগ দেখার পরিক্ষা শুরু হচ্ছে।এবারো ডিসি পদে ফ্যাসিবাদীরা সুযোগ নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

পতিত হাসিনার দোসররা এখনো রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ চেয়ার গুলোতে বসে পরিকল্পিতভাবে আমাদের অভ্যুত্থানকে নস্যাৎ করে দেওয়ার পাঁয়তারা চালাচ্ছে, অথচ অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা চুপচাপ শুধু দেখেই যাচ্ছেন। দেশের পরিস্থিতি এভাবে চলতে পারে না। আমরা অবিলম্বে সচিবালয়, পুলিশ প্রশাসনসহ গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারগুলোকে হাসিনার দোসরমুক্ত দেখতে চাই বলে দাবি জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীরা। এতে একদিকে যেমন জনসাধারণ কাক্সিক্ষত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, তেমনইভাবে সরকারের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

গত মঙ্গলবার রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ শীর্ষক সমাবেশে, জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারগুলোতে এখনো খুনির দোসররা ঘাপটি মেরে আছে। সচিবালয় হোক বা যেকোনো জায়গা থেকে ষড়যন্ত্র করলে আমরা তাদের উৎখাত করে ছাড়বো। গোপালগঞ্জে এখনো কীভাবে আমাদের ভাইদের ওপর হামলা হয়? যদি আমাদের নিরাপত্তা না দিতে পারেন, তাহলে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারগুলোতে আপনাদের আর বসিয়ে রাখবো না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম বলেন, আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি সচিবালয়ের ভেতরে দালাল গুলো ঘাপটি মেরে আছে। পুলিশ প্রশাসনের অসংখ্য দালাল ঘাপটি মেরে আছে। দ্রুত দালালমুক্ত করুন। হাসিনা সরকারের পতনের ৫ মাস পার হয়েছে। কিন্তু এখনো জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র আমরা দেখতে পাইনি। এই বিপ্লবের স্বীকৃতি আমরা চাই। জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র দ্রুততম সময়ে আমরা দেখতে চাই। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) প্রশাসন ও ২৫ ক্যাডার কর্মকর্তারা নিজেদের পদ-পদবি, মান-মর্যাদাসহ বিভিন্ন চাওয়া-পাওয়া নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছেন। অন্তর্বতী সরকারের সাড়ে চার মাসে একের পর এক বিষয় নিয়ে প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা লেগেই আছে। পদোন্নতি, পদায়নসহ নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের। নিয়মিত (রুটিন) কাজ ছাড়া নীতিনির্ধারণী বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে এগোতে পারছে না প্রশাসন।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে বঞ্চনার শিকার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি, পদায়ন, পদমর্যাদা ও আর্থিক সুবিধার ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নাগরিক সেবা সহজ করা, সরকারি কর্মকর্তাদের কাজের গতি বাড়ানো ও দুর্নীতি কমানোর ক্ষেত্রে তেমন নজর দেওয়া হয়নি। প্রশাসনে বিশৃঙ্খলার আরেকটি উদাহরণ হলো, কোনো কর্মকর্তাকে বদলি করে আবার সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হচ্ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে। তদবির করে কেউ কেউ বদলির আদেশ প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। আবার সমন্বয়হীনতার কারণে বদলির সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হচ্ছে সরকারকে। এতে শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ছে। গত ১১ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মিজ শেখ মোমেনা মনিকে বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনষ্টিটিউটে বদলী করা হয়। গত ২৬ ডিসেম্বর মধ্যে যোগদান করতে বলা হয়। তা না হলে তাকে তৎখানিকভাবে বলদী করা হবে এম আদেশ থাকার পরে সেই আদেশ প্রত্যাহার করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। গত ১৮ নভেম্বর যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) গাজী মো. সাইফুজ্জামানকে ওএসডি করা হয়। পরে সেই আদেশ প্রত্যাহার করতে হয়েছে জনপ্রশাসন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মচারীদের কর্মসূচির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে নিয়েছে অন্তর্বকালীন সরকার। অবশেষে সরকারের সর্বস্তরে শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ এর ৩০ এ নং বিধিসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আইন ও বিধি যথাযথভাবে বাস্তবায়নে যাচ্ছে সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছে, কেউ এই বিধি লঙ্ঘন করলে তিনি অসদাচরণের দায়ে ব্যবস্থার আওতায় আসবেন। বিভিন্ন পদমর্যাদার কিছু সরকারি কর্মচারীর বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে সমাবেশ, অবস্থান ধর্মঘট, মানববন্ধন, কলম বিরতিসহ বিবিধ কর্মসূচি পালনের কারণে সরকারি কর্মচারীদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে উল্লেখ করে কর্মচারীদের শৃঙ্খলা বহির্ভূত আচরণের বিষয়ে সরকারের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর বলে জানিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএএসএ) সভাপতি ড. আনোয়ার উল্ল্যাহ ইনকিলাবকে বলেন, ফ্যাসিবাদের দোসররা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকবে আর বঞ্চিত কর্মকর্তারা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবেন, এটা মেনে নেওয়ার যায় না। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে যারা আছেন। তাদের কারণে প্রশাসনে অস্থিরতা কমছে না। তারা ফ্যাসিবাদের দোসরদের পুনর্বাসন করছে। ফ্যাসিবাদের দোসররা স্বৈরাচারের আমলে বিপুল বিত্তভৈববের মালিক হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র, স্থানীয় সরকারসহ এখনো চারটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে সচিব পদ খালি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সচিব পদে যোগ দেওয়া অন্তত ২৭ জন কর্মকর্তা এখনো বহাল রয়েছেন। অন্য সচিবদের মধ্যে কাউকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। কাউকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। কেউ স্বাভাবিক অবসরে গেছেন। তবে যাঁরা এখনো সচিব পদে বহাল আছেন, তাঁরা থাকবেন কি না, সেটি নিশ্চিত নন। তাই বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন না। বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বর্তমান কৃষি সচিব ড. ইমদাদ উল্লাহ মিয়ান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জম্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন কমিটির কো-কনভেনার ছিলেন। জম্মশতবার্ষিকী উদ্যাপনে প্রায় ১৩শ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। বর্তমান সরকার তদন্ত করে তা বের করেছে। সরকারি টাকা লোপাটে ওই কমিটির সদস্য হিসাবে তিনিও দায়ী। কিন্তু তিনি সদর্পে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। জানতে চাইলে কৃষিসচিব ড. ইমদাদ উল্লাহ মিয়ান জানান, বলেন, আমি সরকারি কাজের অংশ হিসাবে ওই দায়িত্ব পালন করেছি। কর্মকর্তারা আরও অভিযোগ করেন, একই মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) রেহানা ইয়াসমিন তিনি কৃষি মন্ত্রণালয়ে দীর্ঘসময় দায়িত্ব পালন করছেন। ৫ আগস্টের পরও বহাল। অথচ বঞ্চিত কর্মকর্তাদের কম গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পদায়ন করা হয়েছে এবং হচ্ছে।

স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. সারওয়ার বারী সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খানের পিএস ছিলেন। এরপর তিনি আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিবসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন পালন করেন। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বভার গ্রহণের পর তাকে সচিব হিসাবে পদায়ন করা হয়। তার বক্তব্য নিতে গেলেও তিনি ফোন ধরেনি। কর্মকর্তারা বলেন, ভূমি মন্ত্রণালয়ের অটোমেশন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন বিগত সরকারের সময় ২০১৮ সালে সাতক্ষীরার ডিসি ছিলেন। তিনি দিনের ভোট আগের রাতেই সেরে ফেলেছেন। তাকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা হয়েছে। তিনি ওখানে বসে ভূমি প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ের কর্মচারীদের মধ্যে বৈষম্য তৈরির চেষ্টা করছেন। মাঠ পর্যায়ে ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তাদের প্রতিবেদন সরাসরি সহকারী কমিশনারদের (ভূমি) কাছে উপস্থাপনের পদ্ধতি চালু করেছেন। আগে ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তাদের সরেজমিন প্রতিবেদন প্রথমে সার্ভেয়ার, পরে কানুনগোর মাধ্যমে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে পেশ করা হতো। ফলে ভুলভ্রান্তি যাচাইয়ের কোনো সুযোগ থাকল না। সহকারী কমিশনার (ভূমি) নবীন কর্মকর্তা হিসাবে অনেক বিষয় বুঝবেন না। এতে সরকারি সম্পত্তি বেহাত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এ নিয়ে সার্ভেয়ার ও কানুনগোদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।

আবার কর্মকর্তাদের একটি অংশ বলছে, সরকারি দায়িত্ব পালনের কারণে অনেক সময় বিগত সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সঙ্গে বিভিন্ন মিটিংয়ে অংশ নিতে হয়েছে। ওইসব মিটিংয়ের ছবি এখন অনেকের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে ওই ছবি দেখিয়ে বলা হচ্ছে, সে স্বৈরাচারের দোসর। যে কারণে অধিকাংশ কর্মকর্তার মনে কোনো শান্তি নেই। তারা বলেন, যারা বিগত সরকারের সময়ে সুবিধাভোগী, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু যারা কোনোভাবেই সুবিধাভোগী না, তারা আতঙ্কিত থাকাত প্রশাসনের জন্য কল্যাণকর কিছু বয়ে আনবে না। গত ১৭ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনপ্রধান সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সচিব আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনে কিছু সুপারিশের সিদ্ধান্তের কথা জানান। যেমন উপসচিব ও তদূর্ধ্ব পদে পদোন্নতির আনুপাতিক হার ৫০:৫০ করা অর্থাৎ প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ পদোন্নতি এবং অন্যান্য ক্যাডার থেকে একই হারে পদোন্নতির কথা উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়া উপসচিব ও যুগ্মসচিব পদে লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতি দেওয়া, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্যাডারকে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের আদলে আলাদা সার্ভিস হিসাবে নিয়ে বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে দেওয়ার সুপারিশের কথাও তিনি জানান। কমিশনপ্রধানের এমন বক্তব্যের পর থেকেই মূলত ক্যাডার সংগঠনগুলোর মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে বিভেদ ও অস্থিরতা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্র্বতী সরকার দায়িত্ব নেয় ৮ আগস্ট। এ সরকারের ৫ মাসেও প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরেনি।
##


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বাবা-চাচা-মামার রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে চাকরি থেকে বঞ্চিত করা হবে কেন, প্রশ্ন সারজিসের
গাড়ি নিয়ে খালেদের বাহাস, স্পষ্ট করে যা বললেন হাসনাত
ভারতে আটক জেলেরা দেশে ফেরত আসতে পারেন সোমবার
আমরা চাঁদাবাজ-দখলদারমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাই : ডা.শফিকুর রহমান
তারেক রহমানের চার মামলা বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল
আরও

আরও পড়ুন

স্বতন্ত্র পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার দাবিতে ইবির  ভবনে তালা

স্বতন্ত্র পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার দাবিতে ইবির ভবনে তালা

পেকুয়ায় বারবাকিয়া টু রাজাখালী সংযোগ সেতুর নির্মাণ কাজ ফের শুরু

পেকুয়ায় বারবাকিয়া টু রাজাখালী সংযোগ সেতুর নির্মাণ কাজ ফের শুরু

মোরেলগঞ্জে পার্টনার ফিল্ড স্কুলের প্রশিক্ষণার্থীরা সনদ ও ভাতা বঞ্চিত

মোরেলগঞ্জে পার্টনার ফিল্ড স্কুলের প্রশিক্ষণার্থীরা সনদ ও ভাতা বঞ্চিত

লক্ষ্মীপুরে আন্দোলনে শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার

লক্ষ্মীপুরে আন্দোলনে শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার

বাবা-চাচা-মামার রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে চাকরি থেকে বঞ্চিত করা হবে কেন, প্রশ্ন সারজিসের

বাবা-চাচা-মামার রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে চাকরি থেকে বঞ্চিত করা হবে কেন, প্রশ্ন সারজিসের

ময়মনসিংহসহ চার শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে ওএসডি

ময়মনসিংহসহ চার শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে ওএসডি

অবশেষে কাজের সমাপ্তি হলো সিকৃবির নান্দনিক অডিটোরিয়ামের

অবশেষে কাজের সমাপ্তি হলো সিকৃবির নান্দনিক অডিটোরিয়ামের

শ্বশুরকে সৌদি প্রবাসীর কাফনের কাপড় উপহার, রাগ করে স্বামীকে স্ত্রীর তালাক

শ্বশুরকে সৌদি প্রবাসীর কাফনের কাপড় উপহার, রাগ করে স্বামীকে স্ত্রীর তালাক

আটঘরিয়ায় জালসায় তুচ্ছ ঘটনায় বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ২

আটঘরিয়ায় জালসায় তুচ্ছ ঘটনায় বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ২

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে বেশি টাকা গুণলেই গোপনে মিলছে সার

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে বেশি টাকা গুণলেই গোপনে মিলছে সার

ঘোড়াঘাটে পাওয়ার টিলার ট্রলি চালাতে গিয়ে শিশুর মৃত্যু

ঘোড়াঘাটে পাওয়ার টিলার ট্রলি চালাতে গিয়ে শিশুর মৃত্যু

সিন্ডিকেটের প্রভাবে পেঁয়াজ চাষীদের মাথায় হাত

সিন্ডিকেটের প্রভাবে পেঁয়াজ চাষীদের মাথায় হাত

গাড়ি নিয়ে খালেদের বাহাস, স্পষ্ট করে যা বললেন হাসনাত

গাড়ি নিয়ে খালেদের বাহাস, স্পষ্ট করে যা বললেন হাসনাত

চন্দ্রঘোনায় প্রতিষ্ঠান ওমরা হজ্জ্ব ঘোষণা

চন্দ্রঘোনায় প্রতিষ্ঠান ওমরা হজ্জ্ব ঘোষণা

অপহরণের ১২ ঘণ্টা পরেও উদ্ধার হয়নি মার্চেন্ট ব্যবসায়ী

অপহরণের ১২ ঘণ্টা পরেও উদ্ধার হয়নি মার্চেন্ট ব্যবসায়ী

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে প্রতিটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে: প্রকৌশলী জাকির সরকার

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে প্রতিটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে: প্রকৌশলী জাকির সরকার

কাতারের কাটারা কালচার ভিলেজে বাংলাদেশি চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর আয়োজন

কাতারের কাটারা কালচার ভিলেজে বাংলাদেশি চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর আয়োজন

সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আরব সফরে অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে বিনিয়োগের আহ্বান জানাবেন

সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আরব সফরে অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে বিনিয়োগের আহ্বান জানাবেন

ভারতে আটক জেলেরা দেশে ফেরত আসতে পারেন সোমবার

ভারতে আটক জেলেরা দেশে ফেরত আসতে পারেন সোমবার

কুষ্টিয়ায় বিএনপি নেতার বাড়ি থেকে অস্ত্র ও বোমা উদ্ধার

কুষ্টিয়ায় বিএনপি নেতার বাড়ি থেকে অস্ত্র ও বোমা উদ্ধার