ড. ইউনূসের ডানে-বাঁয়ে আওয়ামী লীগের প্রোডাক্ট : মির্জা আব্বাস

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩৪ এএম | আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩৪ এএম

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ডানে-বায়ে আওয়ামী লীগের প্রোডাক্ট রয়েছে উল্লেখ করে তাকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশ্যে বলেন, সুফিউর রহমান (প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারি-পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) আওয়ামী লীগের প্রোডাক্ট, আরও আওয়ামী লীগের প্রোডাক্ট আপনার ডানে-বায়ে আছে।

আপনি (ড. মুহাম্মদ ইউনুস) দয়া করে এদের থেকে সাবধান থাই কেন। ওরা কিন্তু আপনাকে ডিরেল করে ফেলবে। আমি আবারও বলছি সচিবালয়ে চারজন সচিব, সচিবালয়ের বাইরে সচিব মর্যাদায় একজন (আমি নাম বলব না), এরা পাঁচ জন এবং আপনার উপদেষ্টা পরিষদের কিছু লোক আপনাকে কিন্তু সঠিক রাস্তায় চলতে দেবে না। আপনি নভেল লরিয়েট, সারা বিশ্বের মানুষ আপনাকে শ্রদ্ধা করে, আপনার সারা জীবনের অর্জন এরা শেষ করে দেবে। গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে গণতন্ত্র ফোরামের উদ্যোগে ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে গণতন্ত্র, সংস্কার ও বাস্তবতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

ড. ইউনূসের সফলতা কামনা করে মির্জা আব্বাস বলেন, আমরা আপনার সম্মান রক্ষা করে দেশটাকে সুন্দর করতে চাই। এই দেশ সুন্দর হবে, আপনি সফল হবেন, এই দেশটা ভালো হবে। আপনার সফলতা আমার দেশের মানুষ চায়, আমরা চাই, আমার নেতা তারেক রহমান সাহেব তিনিও চান- আপনি সফল হন। আপনার সফলতার ওপরে নির্ভর করছে আমার দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব।

নির্বাচন খুব তাড়াতাড়ি হবে কিনা তা নিয়ে নিজের সংশয় প্রকাশ করে তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করা হচ্ছে। আমি ভালো কিছু আশা করি। খারাপটা ভাবি এভাবে, সম্ভবত নির্বাচন খুব তাড়াতাড়ি উনারা (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) করবেন না। আমি তার কোনো লক্ষণ আমি দেখি না।

মির্জা আব্বাস বলেন, ড. ইউনুস সাহেব বলেছেন, ডিসেম্বরে না হোক জুনে হবে, এই কথাটাই আপনাকে একটা বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। একবার বললেন ডিসেম্বর, আবার বললেন জুন। এই যে একটা বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে সেজন্য আপনি নন, এটার জন্য আপনি দায়-দায়িত্ব বহন করেন না। আপনি ভোট ডিসেম্বর বলার পরপরই অন্য একজন বলে দিলো জুনে, পরে এটা আপনি এনড্রোস করলেন।

জনগণকে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র চলছে মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, দেশটা খুব খারাপ অবস্থায় আছে। আমাদের জাতির, জনগণের, দলের, প্রত্যেকের ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। যদি বাংলাদেশের জনগণকে বিভক্ত করার যায় তাহলে এদেশে আবারও ভারতীয় আধিপত্যবাদের হাতে চলে যেতে হবে। সুতরাং যে দলই হোক- বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ যত দল আছে, মতবিরোধ থাকতেই পারে আমাদের। কিন্তু জাতীয় স্বার্থে, দেশের স্বার্থে আমাদেরকে এ ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’

তিনি বলেন, আমাদের অনেক শক্তি নেই, অস্ত্র নেই, অনেক কিছু নেই, কিন্তু একটা জিনিস আছে ঐক্য। জুলাই-আগস্টে আমরা প্রমাণ করেছি জাতীয় ঐক্য, এই ঐক্যে এদেশ থেকে স্বৈরাচার-ফ্যাসিস্টকে আমরা বিদায় করতে পেরেছে। এরকম ঐক্য আরেকবার হয়েছিলো, কখন? ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়। কিছু লোক ছাড়া পুরো জাতি সেসময় ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলো। এখনো এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, আমাদের বিপরীত শক্তি আমাদের দ্বিধা-বিভক্ত করার চেষ্টা করছে সেদিকেও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।

বিএনপির লোক প্রশাসনে বসে আছে- এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা আব্বাস বলেন, বাচ্চাদের মতো কথা বলতেছেন। বাচ্চারা যেমন কথা বলে আমি খাবো, কেনো খাবো না, খাবো না। সেরকম উনারা বলছেন, আমি নির্বাচনে যাবো না। কেনো যাবো না.. প্রশাসনের বিএনপি বইসা রয়েছে। আরে ভাই, বিএনপি কোথাও নেই। এসব কথা বলবেন না। ১৬ বছর দেশের প্রশাসনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে, সচিবালয়ের ভেতরে এদেশের ফ্যাসিস্টদের দোসর, দেশের শত্রুগুলো বসে আছে, আওয়ামী লীগের দালালরা বসে আছে, তাদের কেনো আপনারা বের করেন না? আমি যদি বলি তাদের কাছ থেকে আপনারা অবৈধ সুবিধা পাচ্ছেন?

ফ্যাসিস্টদের দোসর-আওয়ামী দোসর চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ইদানিং একটি গ্রুপ বলার চেষ্টা করছে যে, বিএনপি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসিত করার চেষ্টা করছে। আরে ভাই, ১৭ বছর এদের (আওয়ামী লীগের) যন্ত্রণায় পাগল হয়ে গেছি, পরিবার-পরিজনসহ অশান্তিতে ভুগেছি, অসুস্থ হয়ে পড়েছি, অকালে বৃদ্ধ হয়ে গেছি, অনেক বিএনপি নেতার পরিবার ধবংস হয়ে গেছে এই আওয়ামী লীগের অত্যাচারে। বরং আমি বলতে চাই, আওয়ামী লীগকে যারা দেশে পুনর্বাসিত করার চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। এদেশে আওয়ামী লীগের অবস্থান থাকতে পারে না। আওয়ামী লীগের শেখ হাসিনাসহ তাদের সমস্ত নেতা-কর্মী, প্রশাসনের তাদের দোসরদের বিচার হতে হবে।

তিনি বলেন, একে অপরকে আমরা দালাল বানাচ্ছি এটা যেমন ঠিক না। আবার দালাল যে আছে এটা অস্বীকার করা যাবে না। সুতরাং একে চিহ্নিত করে এদের হাত থেকে বেঁচে থাকতে হবে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কিছু ব্লগাল তারসহ দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, মরহুম সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন সম্পর্কেও ‘আজে-বাজে’ কথা বলার কঠোর সমালোচনা করে বিএনপির এই নেতা বলেন, অন্য কোনো জুনিয়র নেতা সম্পর্কে কিন্তু কিছু ওরা বলতেছে না। শুধুমাত্র বিএনপির মধ্যে একটু মানুষজন লাইক করে, পছন্দ করে এদের বিরুদ্ধে লেখতেছে, কয়েকটা লোক। আমি মনে করি এই লোকগুলো দেশ এবং জাতির শত্রু।

গণতন্ত্র ফোরামের সভাপতি ভিপি ইব্রাহিমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ ও গণতন্ত্র ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর রহমান টিপু প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।###

 


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

আরাকানকে ‘মানবিক করিডোর’ দেওয়া চরম ঝুঁকিপূর্ণ : বাংলাদেশ ন্যাপ
চলতি বছর কোরবানির জন্য পশু আমদানি করা হবে না: প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা
মিয়ানমারের সঙ্গে কোনো প্রক্সি ওয়ারে জড়াবে না বাংলাদেশ: জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা
অনলাইন জুয়ার বিজ্ঞাপন অপসারণে হাইকোর্টের রুল
জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের স্ট্যান্ডিং কমিটির সভা অনুষ্ঠিত
আরও
X
  

আরও পড়ুন

পাঞ্জাবে ম্যাক্সওয়েলের বদলি ওয়েন

পাঞ্জাবে ম্যাক্সওয়েলের বদলি ওয়েন

দৈনিক ইনকিলাব এ সংবাদ প্রকাশের পর দেবীগঞ্জ উপজেলা জামায়াতে আমিরের পদ স্থগিত

দৈনিক ইনকিলাব এ সংবাদ প্রকাশের পর দেবীগঞ্জ উপজেলা জামায়াতে আমিরের পদ স্থগিত

আরাকানকে ‘মানবিক করিডোর’ দেওয়া চরম ঝুঁকিপূর্ণ : বাংলাদেশ ন্যাপ

আরাকানকে ‘মানবিক করিডোর’ দেওয়া চরম ঝুঁকিপূর্ণ : বাংলাদেশ ন্যাপ

ভারত হতে অবৈধ অনুপ্রবেশকালে ১০ বাংলাদেশী নাগরিক আটক করেছে চুয়াডাঙ্গা বিজিবি সদস্যরা

ভারত হতে অবৈধ অনুপ্রবেশকালে ১০ বাংলাদেশী নাগরিক আটক করেছে চুয়াডাঙ্গা বিজিবি সদস্যরা

নারীর ক্ষমতায়নে শহীদ জিয়া ও বেগম খালেদার অবদান অবিস্মরণীয় : খন্দকার মুক্তাদির

নারীর ক্ষমতায়নে শহীদ জিয়া ও বেগম খালেদার অবদান অবিস্মরণীয় : খন্দকার মুক্তাদির

কমলনগরে খাল দখলমুক্ত করতে কৃষকদের মানববন্ধন

কমলনগরে খাল দখলমুক্ত করতে কৃষকদের মানববন্ধন

প্রাথমিক শিক্ষার উন্নতি না ঘটলে ভবিষ্যৎ কখনো ভালো হবে না : প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা

প্রাথমিক শিক্ষার উন্নতি না ঘটলে ভবিষ্যৎ কখনো ভালো হবে না : প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা

কথা বললেই আয়না ঘরে পাঠিয়ে দেয়া হতো-  মেজর(অব:) ডা: মিনার

কথা বললেই আয়না ঘরে পাঠিয়ে দেয়া হতো- মেজর(অব:) ডা: মিনার

চলতি বছর কোরবানির জন্য পশু আমদানি করা হবে না: প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

চলতি বছর কোরবানির জন্য পশু আমদানি করা হবে না: প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

সালথায় বাড়িঘর ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের মামলায় বিএনপি নেতা গ্রেপ্তার

সালথায় বাড়িঘর ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের মামলায় বিএনপি নেতা গ্রেপ্তার

শেষ হলো ফোটনের ঢাকা কমার্শিয়াল অটোমোটিভ শো

শেষ হলো ফোটনের ঢাকা কমার্শিয়াল অটোমোটিভ শো

মিয়ানমারের সঙ্গে কোনো প্রক্সি ওয়ারে জড়াবে না বাংলাদেশ: জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা

মিয়ানমারের সঙ্গে কোনো প্রক্সি ওয়ারে জড়াবে না বাংলাদেশ: জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা

হিলিতে কমেছে আদা-রসুন ও পেঁয়াজের দাম

হিলিতে কমেছে আদা-রসুন ও পেঁয়াজের দাম

আড়াইহাজারে ডাকাতিকালে  আটক-১, পৌর বাজারে চুরি

আড়াইহাজারে ডাকাতিকালে  আটক-১, পৌর বাজারে চুরি

অনলাইন জুয়ার বিজ্ঞাপন অপসারণে হাইকোর্টের রুল

অনলাইন জুয়ার বিজ্ঞাপন অপসারণে হাইকোর্টের রুল

কৃঞ্চচূড়ার ছবি তুলতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ হারালো যুবক! ভিডিও ভাইরাল

কৃঞ্চচূড়ার ছবি তুলতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ হারালো যুবক! ভিডিও ভাইরাল

আওয়ামী দোসররা বিভিন্ন জায়গায় ঘাপটি মেরে বসে আছে : রিজভী

আওয়ামী দোসররা বিভিন্ন জায়গায় ঘাপটি মেরে বসে আছে : রিজভী

১১ বছরেও গ্যাস সংযোগ পায়নি ঝিনাইদহ বিসিক

১১ বছরেও গ্যাস সংযোগ পায়নি ঝিনাইদহ বিসিক

শেরপুরে ২ শিক্ষকের অপসারণ ও গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন

শেরপুরে ২ শিক্ষকের অপসারণ ও গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন

সালথায় বিএনপি নেত্রী শামা ওবায়েদের গাড়ীবহরে হামলা : ১৮ আ'লীগ নেতাকর্মী কারাগারে

সালথায় বিএনপি নেত্রী শামা ওবায়েদের গাড়ীবহরে হামলা : ১৮ আ'লীগ নেতাকর্মী কারাগারে