মার্কিন উচ্চশিক্ষার চরম পতন

Daily Inqilab আল জাজিরা

২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৫৮ এএম | আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৫৮ এএম

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাম্পাস বিক্ষোভের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক দমনপীড়ন, বৈচিত্র্য, ন্যায্যতা এবং অন্তর্ভুক্তি কাঠামো বিরোধী পরিবেশ, এবং বিদেশী শিক্ষার্থীদের উপর মার্কিন সরকারের নির্যাতনের ফলে দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলি সত্যিই একটি সুনামির মুখে পড়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ হয়ে যাওয়ার বা প্রান্তিক পর্যায়ে চলে যাওয়ার প্রবণতা এখন প্রায় নিশ্চিত।

যুক্তরাষ্ট্রের সোনোমা স্টেট ইউনিভার্সিটি, মার্কিন সরকার কর্তৃক অনুদান কাটছাঁটের মুখোমুখি হওয়া সর্বশেষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে একটি। আদালতের রায় সত্ত্বেও, যা বিশ্ববিদ্যালয়টির পরিকল্পনা সাময়িকভাবে স্থগিত রেখেছে, বিশ^বিদ্যালয়টি বাতিল করতে যাচ্ছে ২২টিরও বেশি মেজর বা প্রধান বিষয়, ৬টি বিভাগ এবং ১শ’রও বেশি অনুষদের পদ, যার বেশিরভাগই মানবিক, কলা এবং সামাজিক বিজ্ঞান।

যুক্তরাষ্ট্রে, গত দশকের সর্বোচ্চ ছাঁটাই ঘটেছিল ২০২৩ সালে ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভর্তি বৃদ্ধির জন্য ছয় বছরের প্রচারণার পর, বিশ্ববিদ্যালয়টি ঘোষণা করেছে যে এটি ৪কোটি ৫লাখ ডলার বাজেট ঘাটতিতে রয়েছে। এটির কৃচ্ছ্রতা পরিকল্পনায় শেষ পর্যন্ত ২৮টি মেজর (এর স্নাতক শিকক্ষার প্রায় এক-পঞ্চমাংশ) এবং ১শ’ ৪৩টি অনুষদ বন্ধ হচ্ছে।

যুক্তরাষ্টের অন্যান্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবস্থা আরও খারাপ। উদাহরণস্বরূপ, পেনসিলভানিয়ার ক্লারিয়ন ইউনিভার্সিটি, ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি, নিউ ইয়র্কের সেন্ট রোজ কলেজ এবং উটাহের ইন্ডিপেন্ডেন্স ইউনিভার্সিটি। এগুলি দেশটির সেই ৭৬টি কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে, যাদেরকে হয় তাদের দরজা বন্ধ করে দিতে হয়েছে, অথবা দেশের অন্যান্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে একীভূত হতে হয়েছে, যা লাখ লাখ শিক্ষার্থী এবং কয়েক হাজার অনুষদ সদস্যের জীবনকে প্রভাবিত করছে।

মার্কিন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য করা ফিলাডেলফিয়ার ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ‘আর্থিক চাপ পরীক্ষার মডেল’ অনুসারে, ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের শেষ নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৮০টি কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এটি আসন্ন জনসংখ্যাতাত্ত্বিক খাড়া পতন (অথবা ভর্তির ১৫ শতাংশ হ্রাস) থেকে আসা সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির পূর্বাভাসের উপর ভিত্তি করে পূর্বাভাসটি তৈরি করেছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের ১৭শ’রও বেশি বিদেশী অনুষদ ও শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করার এবং আরও অনেককে অপহরণ ও বহিষ্কার করার পদক্ষেপ (বেশিরভাগই ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলন এবং প্রশাসনের স্বার্থের বিরুদ্ধে বিবেচিত অন্যান্য রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে) মার্কিন উচ্চশিক্ষার টেকসই প্রবৃদ্ধির একমাত্র ক্ষেত্রকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে।

কয়েক দশক ধরে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলি পূর্ণ-মেয়াদ, রক্ষণশীলরা মানুষ এবং বিশ্ব সম্পর্কে জ্ঞান সম্প্রসারণের প্রকৃত অর্থের বিপরীতে উদার মানবিক ও শিল্পকলার ক্ষেত্রগুলিকে অনৈতিক, অন্ধ-মতবাদ এবং সংস্কারবাদী হিসাবে বিবেচনা করে এগুলিকে বাতিল করার কারণে, মেয়াদ-কালীন প্রশিক্ষক এবং গবেষকদের পরিবর্তে খ-কালীন অধ্যাপকদের নিয়োগ দানের কারণে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকে এর সভাপতিদের দ্বারা শুধুমাত্র একটি লাভজনক ব্যবসা হিসেবে পরিচালিত করার কারণে, মার্কিন উচ্চশিক্ষায় ক্ষোভের একটি বিস্ফোরণ প্রায় অনিবার্য হয়ে উঠেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে স্টেম বা বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গণিত-এর উপর কয়েক দশক ধরে অতিরিক্ত জোর দেওয়া হয়েছে। ট্রাম্পের প্রকল্প-২০২৫ গুরুদের সরকারী ছাত্র ঋণ কর্মসূচিকে বেসরকারীকরণের সম্ভাবনা এই মুহুর্তে মার্কিন উচ্চশিক্ষার কোমর ভেঙে দেয়ার জন্য আরেকটি আঘাত হবে। এর সাথে, বৃহত্তর সংখ্যক জেষ্ঠ্য অনুষদ সদস্যরা ছাঁটাই, বেতন কর্তন, আগাম অবসর গ্রহণ, অথবা বরখাস্তের শিকার হবেন। যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চশিক্ষার ক্রমশ সঙ্কুচিত হয়ে আসা পরিস্থিতিতে, অ-মেয়াদী অনুষদ সদস্য এবং কর্মীরাও অনেক ক্ষেত্রে নিয়োগের অযোগ্য এবং বেকার হয়ে পড়বেন।

সর্বোপরি, যেসব শিক্ষার্থী শীর্ষ ১শ’ ৩৬টি অভিজাত মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয় বা দেশটির ৫০টি শীর্ষস্থানীয় সরকারী কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের কোনও প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেন, তারাও আর শিক্ষা খরচ বহন করতে পারবেন না। ফলে, হাজার হাজার শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষাক্রম সম্পন্ন করতে অক্ষম হবেন। এর মধ্য দিয়ে, মার্কিন উচ্চশিক্ষা কেবল অতল গহ্বরে পতিত হবে না, এটি ইতিমধ্যেই পতিত হয়েছে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

কোথায় কিভাবে লুকিয়ে ছিল স্বৈরাচারের দোসর মমতাজ?
বিপুর দুর্নীতি অনুসন্ধানে ১৫৬ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নথি তলব দুদকের
প্রথমবার চট্টগ্রামে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস, যা থাকছে কর্মসূচিতে
হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হলো সাবেক এমপি মমতাজকে
শিশু আছিয়া হত্যা মামলার রায় ১৭ মে
আরও
X
  

আরও পড়ুন

কোথায় কিভাবে লুকিয়ে ছিল স্বৈরাচারের দোসর মমতাজ?

কোথায় কিভাবে লুকিয়ে ছিল স্বৈরাচারের দোসর মমতাজ?

প্রবাসীদের সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসে এবি পার্টির স্মারকলিপি প্রদান

প্রবাসীদের সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসে এবি পার্টির স্মারকলিপি প্রদান

পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার পথে বাস চাপায় একই পরিবারের ৩ জন নিহত

পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার পথে বাস চাপায় একই পরিবারের ৩ জন নিহত

রায়পুর পৌরসভার অপসারিত পলাতক মেয়রের সই নকল করে কমিটি পরিবর্তন, ৯ কোটি টাকা লুটের পাঁয়তারা!

রায়পুর পৌরসভার অপসারিত পলাতক মেয়রের সই নকল করে কমিটি পরিবর্তন, ৯ কোটি টাকা লুটের পাঁয়তারা!

শেষ মার্কিন জিম্মিকে মুক্তি দিয়ে ট্রাম্পের প্রতি যে আহ্বান হামাসের

শেষ মার্কিন জিম্মিকে মুক্তি দিয়ে ট্রাম্পের প্রতি যে আহ্বান হামাসের

বিপুর দুর্নীতি অনুসন্ধানে ১৫৬ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নথি তলব দুদকের

বিপুর দুর্নীতি অনুসন্ধানে ১৫৬ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নথি তলব দুদকের

তুরস্ক এখন শান্তি ও কূটনীতির এক শক্তিশালী নাম: এরদোগান

তুরস্ক এখন শান্তি ও কূটনীতির এক শক্তিশালী নাম: এরদোগান

প্রথমবার চট্টগ্রামে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস, যা থাকছে কর্মসূচিতে

প্রথমবার চট্টগ্রামে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস, যা থাকছে কর্মসূচিতে

হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হলো সাবেক এমপি মমতাজকে

হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হলো সাবেক এমপি মমতাজকে

রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে মামলা

রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে মামলা

শিশু আছিয়া হত্যা মামলার রায় ১৭ মে

শিশু আছিয়া হত্যা মামলার রায় ১৭ মে

চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ নেত্রী জিনাত সোহানা গ্রেপ্তার

চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ নেত্রী জিনাত সোহানা গ্রেপ্তার

১১ হাজার ৬শত পিস ইয়াবাসহ ২জন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করছে কোম্পানীগঞ্জ পুলিশ

১১ হাজার ৬শত পিস ইয়াবাসহ ২জন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করছে কোম্পানীগঞ্জ পুলিশ

দেশি-বিদেশি চক্ষু বিশেষজ্ঞদের তিন দিনব্যাপী সম্মেলন শুরু

দেশি-বিদেশি চক্ষু বিশেষজ্ঞদের তিন দিনব্যাপী সম্মেলন শুরু

তাপ-খরায় বিশ্বজুড়ে হুমকিতে প্রধান ফসল উৎপাদন

তাপ-খরায় বিশ্বজুড়ে হুমকিতে প্রধান ফসল উৎপাদন

সউদীর উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়লেন ট্রাম্প

সউদীর উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়লেন ট্রাম্প

রংপুরে কেন্দ্রে যাওয়ার পথে বাসচাপায় এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ নিহত ৩

রংপুরে কেন্দ্রে যাওয়ার পথে বাসচাপায় এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ নিহত ৩

জামায়াতের আপিল শুনানি বুধবার পর্যন্ত মুলতবি

জামায়াতের আপিল শুনানি বুধবার পর্যন্ত মুলতবি

বহুল আলোচিত রমনা বটমূলে বোমা হামলার রায়ের শেষ অংশ ঘোষণা চলছে

বহুল আলোচিত রমনা বটমূলে বোমা হামলার রায়ের শেষ অংশ ঘোষণা চলছে

ভাগ্যিস বিজয় ছিল, নাহলে মেয়ের বিয়ে দিতে পারতাম না'

ভাগ্যিস বিজয় ছিল, নাহলে মেয়ের বিয়ে দিতে পারতাম না'