ঢাকা   শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৩ পৌষ ১৪৩১
৬৫ বিঘা জমিতে কুলের পাশাপাশি করছেন মিশ্র চাষ

কুল চাষে ভাগ্য বদল মুরাদনগরে প্রবাসফেরত ইউনুস ভুইয়ার

Daily Inqilab মনির হোসাইন, মুরাদনগর (কুমিল্লা)

৩০ মার্চ ২০২৩, ১০:২২ পিএম | আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৩, ০৬:৩৬ এএম

বলসুন্দরী কুল চাষ করে নিজের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন কুমিল্লার মুরাদনগরের প্রবাসফেরত ইউনূস ভ‚ঁইয়া। ইতোমধ্যে তিনি ৬৫ বিঘা জমিতে বলসুন্দরী কুল চাষের পাশাপাশি মিশ্র ফল চাষ শুরু করেছেন। প্রবাস ফেরত এ কৃষি উদ্যোক্তার ফল চাষে এমন সাফল্য দেখে এলাকার বিভিন্ন শ্রেনিপেশার মানুষ ছুটে আসছেন তার বাগান দেখতে। ইউনূস ভ‚ঁইয়া উপজেলার দারোরা ইউনিয়নের কাজিয়াতল গ্রামের মোসলেম ভ‚ঁইয়ার ছেলে। তাছাড়া ইউনূসের বাগানে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে ১৫ জন শ্রমিকের। যারা এখানে নিয়মিত কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
বলসুন্দরী কুলের একটি গাছ ৪-৫ ফুট লম্বা। গাছের প্রতিটি ডালে ঝুলছে থোকায় থোকায় বলসুন্দরী কুল। কুলের ওপরের অংশে হালকা লালচে রং রয়েছে। আকারে বাজারের কুলের তুলনায় বেশ বড়, খেতেও বেশ সুস্বাদু। মুরাদনগর উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে এ অস্ট্রেলিয়া জাতের বলসুন্দরী চাষ শুরু হয়েছে প্রথমবারের মতো। পতিত জমিতে এ কুল চাষ করে বেশ সফলতা পেয়েছেন কৃষি উদ্যোক্তা ইউনূস ভ‚ঁইয়া।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিলের মাঝখানে বিশাল জায়গা জুড়ে চারপাশে বাঁধ দিয়ে লাগানো হয়েছে বলসুন্দরী কুলের গাছ। প্রতিটি গাছেই থোকায় থোকায় ঝুলছে কুল। ফলের ভারে নুয়ে পড়েছে অনেক গাছের ডাল। পাখির কলরবে মনোমুগ্ধকর এক পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে এ বাগানে। প্রায় ৬৫ বিঘা জমিতে কুলের পাশাপাশি তিনি এখন আম, লিচু, মাল্টা, কলা ও লেবুর মিশ্রচাষ করছেন। বর্তমানে তার বাগানে রয়েছে ৩ হাজার বলসুন্দরী কুলের গাছ, আম গাছ ৬শ’, লিচুর গাছ ২শ’, মাল্টার গাছ ২শ’ কলা গাছ ৮শ’, লেবু গাছ ৬শ’।

ইউনূস বলেন, দীর্ঘ ১৪ বছর আমি সউদী আরবে ছিলাম। ২০১৮ সালে দেশে চলে আসি। সউদী আরবে থাকাকালীন কৃষি খামারে কাজ করেছি। দেশে আসার পর বেকার হয়ে পড়ি, কী করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। নিজের ১৬ বিঘা জমি রয়েছে মাঝ বিলে তা নিয়েই স্বপ্ন দেখছিলাম আর ফলের বাগান করার পরিককল্পনা নিয়েছিলাম। তাই নিজের জমির পাশে ৪৭ বিঘা জমি লিজ নেই। দেশে ফল চাষের অভিজ্ঞতা না থাকায় ওই জমিগুলোতে মাছ চাষের পরিকল্পনা করি। কিন্তু জমিগুলো বেশ উঁচু হওয়ার কারণে পানি সঙ্কট থাকায় মাছ চাষে সফলতা আসেনি। পরে ইউটিউব দেখে বলসুন্দরী কুল চাষ পদ্ধতি শিখে নেই এবং এই কুলের চারা নাটোর থেকে সংগ্রহ করি।

চারা রোপণের আট মাস পর ২০২১ সালের শেষের দিকে গাছে ফল আসে। বাজারে এ কুলের বেশ চাহিদা রয়েছে। এ কুল খুচরা বিক্রি হয় ১০০ টাকা কেজি ও পাইকারী বিক্রি হয় ৮০ টাকা কেজি দরে। প্রথমবার কুল বিক্রি করি প্রায় ৩০ লাখ টাকার। এবছরও গাছগুলো একটু পুরাতন হওয়ায় ১৫-১৮ লাখ টাকার কুল বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। একটি গাছ থেকে ৩ বার ফল ওঠানো যায়। ৩ বার ফল ওঠানোর পর কুলের সাইজ ছোট হয়ে যায়। তাই ৩ বার কুল সংগ্রহ করার পর আবার নতুন করে চারা রোপণ করব।

ইউনূস ভ‚ঁইয়া আরো বলেন, জমি লিজ নিয়ে এ বাগান গড়ে তুলতে ৫০ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। আশা করছি চলতি বছর এ বাগানের পুঁজি উঠে আসবে। ৩য় বছর পর্যন্ত ফলের সাইজ ঠিক থাকবে। তাই আগামীতে কুলসহ অন্যান্য ফসল থেকে বেশ লাভের সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি সরকারের কাছ থেকে সুদবিহীন ঋণ পেলে এ বাগান আরো বড় করতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ পাবেল খাঁন পাপ্পু বলেন, শুধু এ উপজেলায় নয়, কুমিল্লার মধ্যে তার কুলবাগান সবচেয়ে বড়। বলসুন্দরী কুল চাষে তিনি ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন। আমরা নিয়মিত তার বাগানটি পরিদর্শন করছি এবং সরকারি সকল সহায়তা ও কৃষি উপকরণ তার কাছে পৌঁছে দিচ্ছি। তার বাগান দেখে অনেক যুবক ফল বাগান করতে আগ্রহী হয়েছেন। যারা নতুন করে বাগান করতে ইচ্ছুক তাদের পাশে সর্বদায় রয়েছি। তাছাড়া এ উপজেলার কৃষিতে আধুনিক পরির্বতন আনতে কৃষকের পাশে থেকে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

 


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

সংস্কার ও নির্বাচনী প্রস্তুতি একই সঙ্গে চলবে: প্রধান উপদেষ্টা
ইংরেজি নববর্ষে আতশবাজি ও পটকা ফোটানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশ
ইন্টারপোলের তালিকায় হাসিনার নাম যুক্ত হওয়া নিয়ে যা জানা গেল, খোঁজা হচ্ছে আরও যেসব বাংলাদেশিকে
জাহাজে ছেলে হত্যা: শোকে মারা গেলেন বাবা
টাকা খেয়ে আ.লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে ভারতের মিডিয়া : সারজিস
আরও

আরও পড়ুন

অনূর্ধ্ব-১৯ নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল ঘোষণা

অনূর্ধ্ব-১৯ নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল ঘোষণা

আফগানিস্তানকে পেয়ে আবারও জ্বলে উঠলেন উইলিয়ামস

আফগানিস্তানকে পেয়ে আবারও জ্বলে উঠলেন উইলিয়ামস

অস্ট্রিয়ার তিরোলে তুষারধসে বাবা-ছেলের মৃত্যু

অস্ট্রিয়ার তিরোলে তুষারধসে বাবা-ছেলের মৃত্যু

বিয়ে-বাচ্চা সব মানুষ হওয়ায় দিছে: জেফার

বিয়ে-বাচ্চা সব মানুষ হওয়ায় দিছে: জেফার

নতুন শাসকদের সাথে সংঘর্ষে সিরিয়ায় আসাদ অনুসারীদের হাতে ১৪ জন নিহত

নতুন শাসকদের সাথে সংঘর্ষে সিরিয়ায় আসাদ অনুসারীদের হাতে ১৪ জন নিহত

কালকিনিতে ইউপি সদস্য নিহত, আহত ১০

কালকিনিতে ইউপি সদস্য নিহত, আহত ১০

রাজধানীতে শীতের ছোঁয়ায় শীতল সবজির বাজার

রাজধানীতে শীতের ছোঁয়ায় শীতল সবজির বাজার

উত্তরা ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হলেন ফয়সাল তাহের

উত্তরা ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হলেন ফয়সাল তাহের

মাদারীপুরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ২ গ্রুপের সংঘর্ষ, ইউপি সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা

মাদারীপুরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ২ গ্রুপের সংঘর্ষ, ইউপি সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা

সংস্কার ও নির্বাচনী প্রস্তুতি একই সঙ্গে চলবে: প্রধান উপদেষ্টা

সংস্কার ও নির্বাচনী প্রস্তুতি একই সঙ্গে চলবে: প্রধান উপদেষ্টা

ইংরেজি নববর্ষে আতশবাজি ও পটকা ফোটানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশ

ইংরেজি নববর্ষে আতশবাজি ও পটকা ফোটানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশ

ইন্টারপোলের তালিকায় হাসিনার নাম যুক্ত হওয়া নিয়ে যা জানা গেল, খোঁজা হচ্ছে আরও যেসব বাংলাদেশিকে

ইন্টারপোলের তালিকায় হাসিনার নাম যুক্ত হওয়া নিয়ে যা জানা গেল, খোঁজা হচ্ছে আরও যেসব বাংলাদেশিকে

দক্ষিণ কোরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিশংসন ভোট, মুদ্রার মান পতন

দক্ষিণ কোরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিশংসন ভোট, মুদ্রার মান পতন

কটিয়াদীতে তুচ্ছ ঘটনায় শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে জখম

কটিয়াদীতে তুচ্ছ ঘটনায় শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে জখম

জাহাজে ছেলে হত্যা: শোকে মারা গেলেন বাবা

জাহাজে ছেলে হত্যা: শোকে মারা গেলেন বাবা

ভারত থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকালে বিজিবি’র হাতে ১৬ বাংলাদেশি আটক

ভারত থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকালে বিজিবি’র হাতে ১৬ বাংলাদেশি আটক

সৈয়দপুরে রাস্তা সংস্কারে নিম্নমানের কার্পেটিংয়ের অভিযোগে কাজ বন্ধ করে দিলো ছাত্ররা

সৈয়দপুরে রাস্তা সংস্কারে নিম্নমানের কার্পেটিংয়ের অভিযোগে কাজ বন্ধ করে দিলো ছাত্ররা

শার্শায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২ গ্রুপে সংঘর্ষ

শার্শায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২ গ্রুপে সংঘর্ষ

ইউক্রেনে আহত উত্তর কোরীয় এক সেনা আটক

ইউক্রেনে আহত উত্তর কোরীয় এক সেনা আটক

টাকা খেয়ে আ.লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে ভারতের মিডিয়া : সারজিস

টাকা খেয়ে আ.লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে ভারতের মিডিয়া : সারজিস