৬ দফা দিবসের আলোচনা

আল্লাহ জন বুঝে ধন দেয় : শেখ হাসিনা

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

০৭ জুন ২০২৩, ০৯:২৮ পিএম | আপডেট: ০৮ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম

আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, খালেদা জিয়া যখন গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দেয় তখন আমি একটা কথা বলেছিলাম, আল্লাহতালা জন বুঝে ধন দেয়, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এলে গ্যাস একটু পাবেও না, দিতেও পারবে না। সত্যিই কিন্তু দিতে পারে নাই। যে কটা কূপ খনন করছে সবগুলো শুকনা। কোনো গ্যাস পায়নি, যারা কিনতে চেয়েছিল তারাও নিতে পারেনি। ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস উপলক্ষ্যে বুধবার (৭ জুন) বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, আজকে গণতন্ত্রের কথা বলে, ভোটের অধিকারের কথা বলে, খালেদা জিয়ার ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন করেছিল, কত ভোট পড়েছিল? ২-৩ শতাংশ ভোটও পড়েনি? অথচ ঘোষণা দিলেন তৃতীয়বারের প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের জনগণ এখন তাদের ভোটের অধিকার সম্পর্কে সচেতন। সেই সচেতনতা আমরা চেষ্টা করেছি। খালেদা জিয়া ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ভোট চুরি করেছিল বলেই দেশে মানুষ ফুঁসে উঠেছিল। আন্দোলন করেছিল। আন্দোলনের খালেদা জিয়া বাধ্য হয়েছিল ৩০ মার্চ পদত্যাগ করতে। ভোট চুরি যারা করেছিল তাদের মুখে যখন ভোটের কথা শুনি, গণতন্ত্রের কথা শুনি, মিলিটারি ডিটেকটেড পকেট থেকে বের হওয়া রাজনৈতিক দলের কাছে গণতন্ত্রের কথা শুনতে হয়। তাদের পারদর্শিতা কী এ দেশের মানুষ দেখেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনে কারচুপি করে আওয়ামী লীগকে হারানো হয়েছিল। জনগণের ভোটে আওয়ামী লীগ সবসময়ই জয়ী হয়েছে, জনগণ ভোট দিতে পারলে আওয়ামী লীগ কখনো পরাজিত হয় নাই। আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে জনগণের ভোটে এসেছে, তার বাইরে কোনোভাবে ক্ষমতায় আসে নাই।

তিনি আরও বলেন, আজকে তারা বলেন ভোটারবিহীন, কে ভোটার বিহীন? ভোটারনবিহীন তো ছিল খালেদা জিয়া, ভোটারবিহীন ছিল জিয়াউর রহমান, ভোটারবিহীন ছিল এরশাদ, এটা তারা ভুলে গেছে? তারা তো ভোটারবিহীন হিসেবে ক্ষমতা দখল করেছে। ২০০১ সালে আমাদের সম্পদ গ্যাস বিক্রি করার মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল বিএনপি। কই আমি তো দেখি নাই? আমি বলেছিলাম দেশের সম্পদ দেশের মানুষ ব্যবহার করবে, আগে তাদের স্বার্থ দেখবো, তাদের জন্য আমরা গ্যাস ব্যয় করব।

শেখ হাসিনা বলেন, আজকে আন্দোলন করবে, সংগ্রাম করবে, আমাদের উৎখাত করবে, একদিকে ভালো হয়েছে, এখন যদি জ্বালাও-পোড়াও করে, এখন যদি অগ্নিসন্ত্রাস করে, এখন যদি মানুষ খুন করে, আমেরিকার ভিসা পাবে না। যাদের কথায় নাচে, তারাই খাবে, আমাদের কিছু করা লাগবে না। ওটা (ভিসানীতি) নিয়ে আমাদের চিন্তার কিছু নাই।

তিনি বলেন, তারা কিছু লোক জোগাড় করে আন্দোলন করবে, করতে দাও। আমি বলে দিয়েছি, যত আন্দোলন করা করুক আমি কিছু বলবো না। নজর রাখতে হবে যে, ২০১৩, ১৪ ও ১৫ বা তার পরবর্তী সময়ে অগ্নিসন্ত্রাস করেছে, মানুষ হত্যা করেছে মানুষকে পুড়ে মেরেছে, হাত পা কেটেছে, সেটা যেন করতে না পারে। নিজের চোখ ক্যামেরা সবসময় ঠিক রাখতে হবে। কারণ ওদের ওই দোষ আছে তো, একটা উসকানি দিয়ে ছবি তুলে বাইরে দেশের দিকে তাকিয়ে কাঁদতে থাকবে। জনগণের ক্ষমতা তারা বিশ্বাস করে না। তারা মনে করে অন্যকেউ নাগরদোলায় এসে তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। কেউ বসিয়ে দেবে না। দেয় না কখনো। ব্যবহার করবে, ক্ষমতা দেবে না। এগুলো বাস্তব কথা।

সরকারপ্রধান বলেন, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিতে পেরেছি, দুর্ভাগ্য আমাদের, করোনাভাইরাস, ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধ তিনটা বছর সবকিছু বন্ধ ছিল, অর্থনীতির চাকা স্থবির ছিল, উন্নত দেশগুলোতে মুদ্রাস্ফীতি, পরিবহন ব্যয় বেড়েছে, স্যাংশন পাল্টা স্যাংশনে প্রত্যকটা জিনিসের দাম বেড়ে গেল। এ জাহাজে এলো কেন? ওই জাহাজে এলো কেন এটা ভিড়তে দেবে না-ওটা ভিড়তে দেবে না, শুধু দেশের ওপর স্যাংশন নয়, জাহাজের ওপরেরও স্যাংশন দিয়ে বসে আছে আমেরিকা। ফলে প্রত্যেকটা দেশে আজকে মুদ্রাস্ফীতি।

তিনি বলেন, মানুষের কষ্ট হচ্ছে আমরা জানি, তারপরও আমরা বারবার চেষ্টা করছি মানুষের কষ্ট কীভাবে কমানো যায়। এই কষ্ট শুধু আমাদের একা না, সারা বিশ্বব্যাপী। বৈশ্বিক কারণেই কষ্ট। বাংলাদেশকে আমরা সুন্দরভাবে রেখেছিলাম, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছিলাম, মানুষের খাবার আছে।

তিনি আরও বলেন, দেশি-বিদেশি যতই চাপা শোনান না কেন, সেই চাপের কাছে বাংলাদেশিরা নতি স্বীকার করে না। আমার দেশের মানুষের ভোটের অধিকার আমরা সুরক্ষিত করব। আমরা এ দেশে আন্দোলন সংগ্রাম করে গণতন্ত্র এনেছি। গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা আছে বলে আজকে বাংলাদেশে উন্নত হয়েছে। আর্থসামাজিক উন্নতি হয়েছে।

বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ তারপরও খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা দেশের বাইরেও রপ্তানি করতে পারব। পাশাপাশি আমাদের রপ্তানির ক্ষেত্রে শুধুমাত্র গার্মেন্টসের ওপর নির্ভর করে থাকব না। আমরা আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। এই ডিজিটাল ডিভাইস আমরা তৈরি করব। ইতোমধ্যে অনেক বিনিয়োগ আসছে। একশটা অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিয়েছি সেখানে বিনিয়োগের সুযোগ আসছে। আইসিটি, ডিজিটাল ডিভাইস এগুলো উৎপাদন করে আমরা রপ্তানি করব।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের অনেক জ্ঞানী-গুণী আছে, যারা বুদ্ধি বেঁচে জীবিকা নির্বাহ করেন। বুদ্ধিজীবী। আমি বিদ্যুৎ দিয়েছি, তারা এয়ারকন্ডিশন রুমে বসে বক্তৃতা দেয়। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ নেয়। প্রাইভেট টেলিভিশনও আওয়ামী লীগ সরকারই দিয়েছে। সেই টেলিভিশনের টক শোতে এসে আলোচনা করে- এই বাজেট আওয়ামী লীগ কোনোদিনও কার্যকর করতে পারবে না। আমি স্পষ্ট বলতে চাই, করতে পারব সেটা বুঝে শুনে আমরা বাজেট দিয়েছি। আমরা যা দিয়েছি আমরা তা করতে পারব।

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেওয়া বিদ্যুতে, ইন্টারনেটে, এসিরুমে বসে আমাদেরই সমালোচনা করা হয়। আমরা জানি কখন কোন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কখন কোন কথা বলতে হয়। ১০-১৫ দিনের মধ্যে পরিস্থিতির (বিদ্যুৎ) উন্নতি হবে। অতিরিক্ত গরমে মানুষের কষ্ট বুঝতে পারছি আমরা।’

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, বেগম মতিয়া চৌধুরী, শাহজাহান খান, সিমিন হোসেন রিমিন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি প্রমুখ।

আলোচনা সভায়টি সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ ও উপ-প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল আউয়াল শামীম।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

লক্ষ্মীপুর থেকে সাড়ে ৪ কোটি টাকার কষ্টিপাথর প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে হস্তান্তর

লক্ষ্মীপুর থেকে সাড়ে ৪ কোটি টাকার কষ্টিপাথর প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে হস্তান্তর

অস্ট্রেলিয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি দলে শর্ট ও হার্ডি, কামিন্সকে নিয়ে শঙ্কা

অস্ট্রেলিয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি দলে শর্ট ও হার্ডি, কামিন্সকে নিয়ে শঙ্কা

কমলনগরে ট্রাক্টরট্রলির চাপায় চটপটি বিক্রেতার মৃত্যু

কমলনগরে ট্রাক্টরট্রলির চাপায় চটপটি বিক্রেতার মৃত্যু

রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া মহাসড়কে বাস চলাচল শুরু

রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া মহাসড়কে বাস চলাচল শুরু

ঝিনাইদহে ২৬ টি দোকান দুঃসাহসিক চুরি টাকা ও মালামাল নিয়ে চম্পট

ঝিনাইদহে ২৬ টি দোকান দুঃসাহসিক চুরি টাকা ও মালামাল নিয়ে চম্পট

আর্থিক প্রতিষ্ঠানে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে প্যানেল

আর্থিক প্রতিষ্ঠানে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে প্যানেল

বগুড়ায় মটরসাইকেল - ভটভটি সংঘর্ষে ব্যাংক কর্মকর্তা নিহত

বগুড়ায় মটরসাইকেল - ভটভটি সংঘর্ষে ব্যাংক কর্মকর্তা নিহত

‘জমজমের’ নামে ট্যাপের পানি বিক্রি করছিলেন এক প্রতারক , আয় ৩০ কোটি !

‘জমজমের’ নামে ট্যাপের পানি বিক্রি করছিলেন এক প্রতারক , আয় ৩০ কোটি !

মাদকব্যবসা নিয়ে দু-পক্ষের সংঘর্ষ-বোমা হামলা-ভাঙচুর, আহত ২০

মাদকব্যবসা নিয়ে দু-পক্ষের সংঘর্ষ-বোমা হামলা-ভাঙচুর, আহত ২০

জুলাই-আগস্ট গণহত্যা : হাসিনাসহ জড়িতদের গুরুত্বপূর্ণ কল রেকর্ড প্রসিকিউশনের হাতে

জুলাই-আগস্ট গণহত্যা : হাসিনাসহ জড়িতদের গুরুত্বপূর্ণ কল রেকর্ড প্রসিকিউশনের হাতে

কুষ্টিয়ায় পাওনা টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে স্কুল ছাত্র খুন

কুষ্টিয়ায় পাওনা টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে স্কুল ছাত্র খুন

ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দীদের মুক্তির জন্য উ.কোরিয়ার সৈন্য বিনিময়ে প্রস্তুত জেলেনস্কি

ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দীদের মুক্তির জন্য উ.কোরিয়ার সৈন্য বিনিময়ে প্রস্তুত জেলেনস্কি

তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে ঈশ্বরগঞ্জে ফুটবল টুর্নামেন্ট উদ্বোধন

তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে ঈশ্বরগঞ্জে ফুটবল টুর্নামেন্ট উদ্বোধন

কিয়ার স্টারমার ‘ভালো বন্ধু’ টিউলিপকে কি বরখাস্ত করতে পারবেন ?

কিয়ার স্টারমার ‘ভালো বন্ধু’ টিউলিপকে কি বরখাস্ত করতে পারবেন ?

রেহানার কাছ থেকে রেহাই মিলত না কোনো ব্যাংকের

রেহানার কাছ থেকে রেহাই মিলত না কোনো ব্যাংকের

টিউলিপ সিদ্দিকের বিতর্কিত সেই ফ্ল্যাট কীভাবে কেনা হয়েছিল?যে তথ্য জানা গেল

টিউলিপ সিদ্দিকের বিতর্কিত সেই ফ্ল্যাট কীভাবে কেনা হয়েছিল?যে তথ্য জানা গেল

লস অ্যাঞ্জেলসের দাবানলে হলিউড তারকার মৃত্যু

লস অ্যাঞ্জেলসের দাবানলে হলিউড তারকার মৃত্যু

কুবিতে ছাত্রলীগ নেতাকে গণপিটুনি শেষে পুলিশে দিল শিক্ষার্থীরা

কুবিতে ছাত্রলীগ নেতাকে গণপিটুনি শেষে পুলিশে দিল শিক্ষার্থীরা

সাতক্ষীরা  সীমান্তে  চাষে বাধা দিয়েছে বিএসএফ

সাতক্ষীরা সীমান্তে চাষে বাধা দিয়েছে বিএসএফ

"তালেবান নারীদের মানুষ মনে করে না" : মালালা

"তালেবান নারীদের মানুষ মনে করে না" : মালালা