পলাশি ট্র্যাজেডি দিবস আজ

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

২৩ জুন ২০২৩, ০৮:১৯ এএম | আপডেট: ২৩ জুন ২০২৩, ০৮:১৯ এএম

পলাশী! হায় পলাশী!/ এঁকে দিলি তুই জননীর বুকে/ কলঙ্ক কালিমা রাশি’ এটি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের একটি রচনার অংশ। আজ ২৩ জুন, ঐতিহাসিক পলাশি দিবস। ২৬৬ বছর পূর্বে ১৭৫৭ সালের এ দিনে ভাগীরথী নদীর তীরে পলাশির আম্রকাননে ইংরেজ ও স্বাধীনতাকামী বাঙালিদের মধ্যে এক ‘যুদ্ধ নাটক’ মঞ্চায়িত হয়। প্রহসনমূলক সে যুদ্ধে লর্ড ক্লাইভের নেতৃত্বে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাহিনী জয়লাভ করে। আর মুর্শিদাবাদের কলঙ্ক ইতিহাস ধিকৃত মীরজাফর, ঘসেটি বেগম, উমিচাঁদ, রায়দুর্লভ, রাজবল্লভ, কৃষ্ণচন্দ্র, জগৎশেঠচক্রের ষড়যন্ত্রে স্বাধীনতার প্রতীক নবাব সিরাজউদ্দৌলা ও তার বাহিনী পরাজয়বরণ করেন। সেই সাথে বাংলাসহ উপমহাদেশের স্বাধীনতাসূর্য প্রায় দুইশত বছরের জন্য অস্তমিত হয়।

পলাশির ইতিহাস রক্তাক্ত ইতিহাস, ষড়যন্ত্রের ইতিহাস, বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাস, পরাধীনতার ইতিহাস, মুসলিম সালতানাতের বিলুপ্তির ইতিহাস, আর্য হিন্দু সম্প্রদায়ের পুনরুত্থানের ইতিহাস, ব্রিটিশদের ভারতবর্ষ দখলের ইতিহাস। পলাশি ট্র্যাজেডির পটভূমিকায় তিনটি শক্তির উপস্থিতি ছিল। এক দিকে ছিল বাংলা মসনদ রক্ষার সিপাহসালার বাঙালির গৌরব নবাব সিরাজউদ্দৌলা এবং মীর মদন, মোহনলালসহ স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তি। বিপরীত দিকে ছিল বাংলার শাসনক্ষমতা লাভের গোপন দূরভিসন্ধি নিয়ে বহু বছর যাবৎ ব্যবসা বাণিজ্যে নিয়োজিত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ব্রিটিশ বাহিনী। আর একটি গ্রুপ ছিল বিশ্বাসঘাতকদের। রাজনৈতিক যাত্রামঞ্চের ভার মীরজাফরকে কেন্দ্র করে হিন্দু পুঁজিপতি, ব্যাঙ্কার, মুৎসুদ্দি, প্রশাসনের আমলা ও রাজ মহারাজারা নবাব বিরোধী ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে। এদের প্রত্যক্ষ পরোক্ষ সহযোগিতার ফলেই ইংরেজরা সাহসী হয়ে উঠেছিল এ দেশে আধিপত্য বিস্তারের। সাম্রাজ্যবাদীদের হিংস্র থাবায় সেদিন বাংলার আকাশ কালো মেঘে ছেঁয়ে যায়। যার কুফল আজও আমাদের ভোগ করতে হচ্ছে। আর সুফল ভোগ করছে আধুনিক ইউরোপ।

মুর্শিদাবাদ থেকে ১৫ ক্রোশ দক্ষিণে পলাশির প্রান্তর। সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। জগৎশেঠ, মীরজাফরদের সাথে গোপন চুক্তি মোতাবেক ক্লাইভ বাহিনী সেদিন মধ্যরাতে এসে হাজির হয় পলাশির আম্রকাননে। কোম্পানির বাহিনীতে ছিল মাত্র ৯০০ ইউরোপিয় সৈন্য ও ২০০০ দেশীয় সিপাহি। অন্য দিকে নবাব বাহিনীতে ছিল ৫০ হাজার পদাতিক, ১৫ হাজার ঘোড় সওয়ারি বাহিনী ও ৫৩টি কামান। আপাতদৃষ্টিতে নবাব বাহিনী বড় হলেও যুদ্ধের ফলাফল হয় সম্পূর্ণ বিপরীত। যুদ্ধে মীরজাফর, রায়দুর্লভ, ইয়ার লতিফ প্রমুখ তাদের অধীনস্থ বাহিনীর প্রধান অংশ নিয়ে পুতুলের মতো যুদ্ধের ময়দানে দাঁড়িয়ে থাকে।

মীর মদন, মোহনলাল সামান্য সংখ্যক সৈন্য নিয়ে লড়াই করে ইংরেজদের মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়। কিন্তু ষড়যন্ত্রীদের কুমন্ত্রণায় দুপুরের দিকে যুদ্ধ বন্ধ হলে নবাব বাহিনীর ক্লান্ত সৈনিকদের ওপর পেছন দিক থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে কোম্পানি বাহিনী। নবাব বাহিনী পরাজয়বরণ করলে সিরাজউদ্দৌলা রাজধানী মুর্শিদাবাদের দিকে গমন করেন নতুন করে যুদ্ধ করার জন্য সৈন্য সংগ্রহের লক্ষ্যে। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে বিহারের দিকে যাত্রা করেন। পথে ভগবান গোলার কাছে ধৃত হয়ে মুর্শিদাবাদে নীত হন। ৩ জুলাই মীরনের নির্দেশে মোহাম্মদী বেগ তাকে হত্যা করে। এভাবেই স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়কের জীবনাবসান ঘটে। আর এরই সাথে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নির্বাসিত হয়ে ব্রিটিশদের পিঞ্জরে।

স্বাধীনতা হারিয়ে এ দেশের মানুষ এক দিনেরও জন্যও নীরবে বসে থাকেননি। বিভিন্ন সময় ফকির নেতা মজনু শাহ, বালকী শাহ, নিসার আলী তিতুমীর, হাজী শরীয়ত উল্লাহ, হাবিলদার রজব আলীর নেতৃত্বে ফুঁসে ওঠে এ দেশের জনগণ। ১৮৫৭ সালে আজাদীর জন্য সংঘটিত হয় মহাঅভ্যুত্থান। সিপাহি বিপ্লব ব্যর্থ হওয়ার পর সশস্ত্র সংগ্রাম বন্ধ হয়ে যায়। শুরু হয় বৃদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন। বিংশ শতাব্দির প্রথমার্ধ জুড়ে চলে কংগ্রেস, মুসলিম লীগের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিভিন্ন অধ্যায়।

 


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

জুলাই হতাহতের বিচার আদৌ হবে কিনা সংশয় স্বজনের মধ্যে
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে :পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
সেই সুখরঞ্জন বালির ভারতে গুমের লোমহর্ষক কাহিনী
খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন শাস্তি হলে হাসিনার সুযোগ নেই :অ্যাটর্নি জেনারেল
থার্টি ফাস্ট নাইট নিষিদ্ধ করতে হবে আইন করে :জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ান
আরও

আরও পড়ুন

জুলাই হতাহতের বিচার আদৌ হবে কিনা সংশয় স্বজনের মধ্যে

জুলাই হতাহতের বিচার আদৌ হবে কিনা সংশয় স্বজনের মধ্যে

হরিণাকুন্ডুতে যুবদল সভাপতির উপর গুলি অল্পের জন্য রক্ষা

হরিণাকুন্ডুতে যুবদল সভাপতির উপর গুলি অল্পের জন্য রক্ষা

সচিবালয়ে আগুন, টঙ্গী হত্যাকাণ্ড ও ইসকনের আস্ফালন একই সূত্রে গাঁথা : যুব সমাবেশে মাওলানা মামুনুল হক

সচিবালয়ে আগুন, টঙ্গী হত্যাকাণ্ড ও ইসকনের আস্ফালন একই সূত্রে গাঁথা : যুব সমাবেশে মাওলানা মামুনুল হক

বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে :পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে :পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সেই সুখরঞ্জন বালির ভারতে গুমের লোমহর্ষক কাহিনী

সেই সুখরঞ্জন বালির ভারতে গুমের লোমহর্ষক কাহিনী

খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন শাস্তি হলে হাসিনার সুযোগ নেই :অ্যাটর্নি জেনারেল

খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন শাস্তি হলে হাসিনার সুযোগ নেই :অ্যাটর্নি জেনারেল

থার্টি ফাস্ট নাইট নিষিদ্ধ করতে হবে আইন করে :জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ান

থার্টি ফাস্ট নাইট নিষিদ্ধ করতে হবে আইন করে :জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ান

হাসিনা-জয়ের ৩০০ মিলিয়ন ডলার যুক্তরাষ্ট্রে পাচারের প্রমাণ পেয়েছে এফবিআই

হাসিনা-জয়ের ৩০০ মিলিয়ন ডলার যুক্তরাষ্ট্রে পাচারের প্রমাণ পেয়েছে এফবিআই

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের রহস্য নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের রহস্য নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন

সংস্কারের সঙ্গেই নির্বাচন প্রস্তুতি

সংস্কারের সঙ্গেই নির্বাচন প্রস্তুতি

‘রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে বিকল্প সোলার সিস্টেম চালু করুন’

‘রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে বিকল্প সোলার সিস্টেম চালু করুন’

আসিফ মাহমুদের হেলিকপ্টারে ছয় দিনে ২৮ বার সফর বিতর্ক

আসিফ মাহমুদের হেলিকপ্টারে ছয় দিনে ২৮ বার সফর বিতর্ক

বন্ধ রয়েছে পায়রা বন্দরে পণ্য খালাস কার্যক্রম

বন্ধ রয়েছে পায়রা বন্দরে পণ্য খালাস কার্যক্রম

ডেঙ্গুতে মৃত্যুহীন ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ৫৩

ডেঙ্গুতে মৃত্যুহীন ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ৫৩

নববর্ষ উদযাপনে ৭ বছরে শব্দদূষণ বেড়েছে ৭৪ শতাংশ

নববর্ষ উদযাপনে ৭ বছরে শব্দদূষণ বেড়েছে ৭৪ শতাংশ

হাসিনা পরিবারের দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরুর পরই সচিবালয়ে আগুন : রিজভী

হাসিনা পরিবারের দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরুর পরই সচিবালয়ে আগুন : রিজভী

হাসিনার ফ্যাসিজম নিয়ে সস্তা কথা টিকবে না : শফিকুল আলম

হাসিনার ফ্যাসিজম নিয়ে সস্তা কথা টিকবে না : শফিকুল আলম

চাঁদপুর মেঘনায় ড্রেজারসহ ২৮ জন আটক

চাঁদপুর মেঘনায় ড্রেজারসহ ২৮ জন আটক

ব্যাট হাতেও উজ্জ্বল অভিষিক্ত বশ,চালকের আসনে দক্ষিণ আফ্রিকা

ব্যাট হাতেও উজ্জ্বল অভিষিক্ত বশ,চালকের আসনে দক্ষিণ আফ্রিকা

১৬ বছরের অভিনেতার অকাল প্রয়াণে হলিউডে শোকের ছায়া

১৬ বছরের অভিনেতার অকাল প্রয়াণে হলিউডে শোকের ছায়া