বর্তমান সরকার মেয়াদোত্তীর্ণ : গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট
১৮ আগস্ট ২০২৩, ০৭:৩৯ পিএম | আপডেট: ১৮ আগস্ট ২০২৩, ০৭:৩৯ পিএম
২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। তাই এই সরকারের মেয়াদ শেষ হয়েছে এবং এই সরকার মেয়াদোত্তীর্ণ সরকার বলে মন্তব্য করেছেন গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের নেতারা।
শুক্রবার (১৮ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৪টায় রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সরকারের পদত্যাগসহ গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের ১৩ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে আয়োজিত ছাত্র জনতা সমাবেশে তারা এসব কথা বলেন।
বক্তারা বলেন, বর্তমানে দেশে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। আমরা কিছুদিন আগেও যে চাল ৩৫ টাকায় কিনেছি, সেই চাল এখন ৫৩ টাকায় কিনতে হচ্ছে। যেই মুরগি ১১০-২০ টাকায় কিনেছিলাম সেটা এখন প্রায় ২০০ টাকা। মানুষ গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিল কিন্তু সেটা এখন নেই। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দিয়ে যা ছিল সেটাও নির্মূল করা হয়েছে। এখন ডিজিটাল আইনের পরিবর্তে সাইবার নিরাপত্তা আইন বানিয়েছে। এই সরকার মানুষকে বোকা পেয়ে ইচ্ছে মতো খেলে যাচ্ছে। মানুষ স্বাধীন হয় সাম্রাজ্যবাদীদের হাত থেকে রক্ষা পেতে কিন্তু আমাদের নির্বাচন হচ্ছে তাদেরকে ডেকে আনার জন্য।
তারা আরও বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে দেশে এক দলীয় নির্বাচন সম্ভব নয়। দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। যেই সংবিধান জনগণ বিরোধী, পূর্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল, যা এই সরকার পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাতিল করে নিজের মতো করে সাজিয়ে এখন বলছে আমরা সংবিধান বিরোধী কাজে লিপ্ত।
সমাবেশে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. আনু মোহাম্মদ বলেন, দেশের মানুষ এখন ভয়ের মধ্যে বসবাস করছে। কারণ শুধু কথা বলার জন্য তার ওপর নির্যাতন নেমে আসতে পারে। আজ শ্রমজীবী মানুষ ফুটপাতে দোকান দিলে তাকে চাঁদা দিতে হয়, রিকশাচালককে পুলিশের কাছে হয়রানি হতে হয়, শ্রমিকের আয় কমে গেছে। আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে শিক্ষার্থীদের সরকার দলীয় প্রোগ্রাম করতে বাধ্য করা হচ্ছে। তাদের জিম্মি করে রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে- আমার ভোট আমি দিব, যাকে খুশি তাকে দিব; স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক– এই দুটি স্লোগানের ভিত্তিতে আন্দোলন হয়েছিল কিন্তু এখনো সেই দুটি দাবি পূর্ণ হয়নি। এখনো এই দুটি স্লোগান জাতীয় স্লোগান হিসেবে আন্দোলনের মূল হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। ’৯৬ সালের পরবর্তীতে সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস হলেও সেই একই সরকার ক্ষমতায় এসে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল বাতিল করে। সুতরাং এখন আমাদের একটা কাজই করতে হবে, সেটা হলো এই গণবিরোধী সরকারকে পদত্যাগ করাতে হবে। অন্যথায় দেশকে কখনোই পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করা সম্ভব নয়।
ড. আনু মোহাম্মদ বলেন, দেশের সব মেগা প্রজেক্ট বিদেশিদের খুশি করতেই করা হচ্ছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র আমাদের দরকার না থাকলেও রাশিয়াকে খুশি করতে ঋণ করে পরিচালনা করা হচ্ছে। পদ্মা সেতু জাপানকে খুশি করতে, রামপাল চীনকে খুশি করতে তৈরি করা হচ্ছে। অথচ সরকার প্রধান বলেন তিনি কোনো বিদেশিদের কথায় চলবেন না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে তারা দেশের মানুষের ক্ষতি করেই যাচ্ছে, যা অন্য কোনো সরকার করতে পারেনি। সরকার বলছে তারা দেশকে পাকিস্তান মডেল থেকে বের করতে চেষ্টা করছে কিন্তু দেশ এখনো পাকিস্তান মডেলেই চলছে।
বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মিতু সরকার বলেন, বর্তমান পাঠ্যপুস্তক ভুলে ভরা আবার সেটা নিম্নমানের। যার ফলে ৬০ লাখ বই প্রেসেই পুড়িয়ে ফেলতে হয়েছে। স্কুল-কলেজের বইগুলোতে সরকার দলীয়দের গুণগান লেখা হয়েছে, ইতিহাস বিতর্কিত করা হয়েছে। বর্তমান সরকার বিরোধী দল ও মতের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে রাতের ভোটে, এমনকি বিনা ভোটেও নির্বাচিত হয়েছে। বর্তমানে মানুষের ভোটাধিকার নেই। জনগণের ভোটের অধিকার নেই বলেই আমরা এই সরকারের পদত্যাগের দাবি করছি।
তিনি বলেন, ইডেন কলেজে নারী নির্যাতন করা হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের রুমে টর্চার সেল করা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের গণরুম-গেস্টরুমে নির্যাতন করা হচ্ছে। আমরা এসব থেকে মুক্তি পেতে চাইলে অবশ্যই এই সরকারকে পদত্যাগ করাতে হবে। নয়তো আমরা গণতান্ত্রিক ঐক্য জোট গঠন করতে পারব না। আগামী দিনের লড়াইয়ে শেখ হাসিনা পদত্যাগ না করলে তাকে টেনে হিঁচড়ে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করা হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি সাফিকুল ইসলাম সোহেল বলেন, এই সরকারকে পদত্যাগ করাতে হলে ছাত্র, কৃষক-শ্রমিকের মেলবন্ধন। আমরা আশির দশকে স্বৈরাচারকে পদত্যাগ করিয়ে গণতান্ত্রিক সরকার নিয়ে আসলাম, তাহলে কেন আমাদের আবার এই আন্দোলন করতে হচ্ছে? এই সরকার আবার নির্বাচিত হলে দেশে গণতন্ত্রের ছিটাফোঁটাও থাকবে না, শেখ হাসিনা শুধু মাফিয়াদের নিয়ে দেশ চালাবেন। তারা লক্ষ মানুষের সামনে হাসিমুখে মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছে। দালালদের চীন ভারত পাঠানো হয় কিন্তু আমরা বলতে চাই, এবার আপনাদের বিদায় নিতে হবে। আশির দশকের আন্দোলনে সবচেয়ে কম ভূমিকা ছিল ছাত্রলীগের। সেখানে বাম দলগুলো ছিল সম্মুখসারিতে। কিন্তু এখন আপনারা আমাদের হল থেকে বের করে দিয়ে নিজেরা হলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন।
গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের উদ্যোগে আয়োজিত ছাত্র জনতার সমাবেশে নয়া মোর্চার সমন্বয়ক জাফর, উদীচীর সহ সভাপতি জামশেদ আনোয়ার তপন, বিবর্তন সাংস্কৃতিক সংসদের মফিজুর রহমান মন্টু, বাসদের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাসুদ রানা, ছাত্র জোটের সভাপতি মিতু সরকার, শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি আ ক ম জহিরুল ইসলামসহ অন্যরা বক্তব্য দেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বাংলাদেশ মাঠ প্রশাসন প্রশাসনিক কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতি টাঙ্গাইল জেলা শাখার কমিটি গঠন
মুকসুদপুর উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বিএনপির দু গ্রুপের সভা হয়নি গোটা উপজেলার পরিবেশ শান্ত
সংস্কারের ৩১দফায় তারেক রহমান শিক্ষকদের অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন - ডা. মাজহার
৪৩তম বিসিএসের ২৬৭ জনকে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন
মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্ম জয়ন্ত ও মধুমেলা উপলক্ষে আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক সভা
পাকিস্তানের সামরিক আদালতের বিচারকদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন
রেকর্ড ও পরিসংখ্যানের আয়নায় তামিম
আমরা বিগত ১৮ বছর আওয়ামী জাহেলিয়াতের যুগ পার করেছি- মাওলানা এ টি এম মা’ছুম
টঙ্গীতে নূরুল ইসলাম সরকারের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন ও মহাসড়ক অবরোধ
দোয়ারাবাজারে সেনাবাহিনীর শীতবস্ত্র বিতরণ
ক্যাম্পাস সমূহ র্যাগিং ও মাদকমুক্ত রাখতে হবে: প্রফেসর ড. মাছুমা
নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে নবীনদের বরণ করে নিলো শহীদ নূর আলী কলেজ
ঈশ্বরগঞ্জে শহীদ পরিবার ও আহতদের মাঝে আর্থিক সহায়তা
ডনবাসের তিনটি এলাকা মুক্ত করেছে রাশিয়া
মার্চের মধ্যে সাড়ে ৪ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হবে: পরিবহন উপদেষ্টা
খনন ফিল্ডে প্রত্নতাত্ত্বিক তারিখ নির্ধারন সংক্রান্ত মাঠ কর্মশালা
বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ফরিদপুরে যুব সমাবেশ
ফ্যাসিস্ট দোসর তাপসকে হঠাৎ হিরো বানানোর চেষ্টা!
আ’লীগের নিবন্ধন থাকবে কি না সময় বলে দিবে: সিইসি
সিনিয়র জুনিয়র দ্বন্দ্ব ব্যাডমিন্টন খেলা নিয়ে সংঘর্ষ, আহত ৪ নিহত ১