উপজেলা নির্বাচন : বর্জনেই লাভ দেখছে বিএনপি
২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৬ এএম
চট্টগ্রামে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সংগঠিত : চলছে প্রহসনের ভোট বর্জনে গণসংযোগ : নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন গায়েবি মামলায়
উপজেলা নির্বাচন বর্জনেই লাভ দেখছেন বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিএনপির নেতারা। তারা বলছেন, আমি-আর ডামির এই নির্বাচনে সাধারণ ভোটারদেরও কোন আগ্রহ নেই। তাছাড়া এই সরকারের অধীনে যে কোন নির্বাচনই সুষ্ঠু হয় না তা এখন দিবালোকের মতো পরিস্কার। প্রতিষ্ঠান হিসাবে নির্বাচন কমিশনের উপরও সাধারণ মানুষের কোন আস্থা নেই। আর এ অবস্থায় জনগণের দল হিসাবে বিএনপির নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত যথাযথই বলে মনে করেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
এই সরকারের অধীনে আর কোন নির্বাচনে না যাওয়ার এ সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন দলের নেতাকর্মীরা। আর এ জন্যই চট্টগ্রাম অঞ্চলের কোথাও এখনো পর্যন্ত বিএনপির কোন পর্যায়ের কোন নেতা তো দূরের কথা একজন সমর্থকও চলমান উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হননি। বিএনপির মতো জামায়াতে ইসলামী, এলডিপিসহ অন্যান্য সমমনা এবং ইসলামী দলের নেতারাও উপজেলা নির্বাচন বর্জন করছেন।
ফলে গেল জাতীয় নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনও একতরফা এবং প্রহসনে পরিনত হয়েছে। মাঠ খালি থাকায় নির্বাচনে সরকারি দলের একাধিক প্রার্থী লড়াইয়ে নেমে পড়েছেন। তাদের পেছনে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন দলের নেতাকর্মীরা। তাতে কলহ বিরোধ আরো চরমে উঠেছে। আর উল্টো চিত্র বিরোধী শিবিরে। নির্বাচন বর্জন করে একতরফা ভোটে অংশ না নিতে সাধারণ মানুষকে উৎসাহিত করছেন বিএনপির নেতারা। গ্রামে গ্রামে, পাড়ায় মহল্লায় চলছে গণসংযোগ। আর এই সুযোগে তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠনকে গুছিয়ে নিচ্ছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। জামায়াতে ইসলামীও গণসংযোগ কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে।
চট্টগ্রামে প্রথম ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ আগামী ৮ মে। ওইদিন চট্টগ্রামের তিনটি উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। উপজেলাগুলো হলো- স›দ্বীপ, মীরসরাই ও সীতাকুÐ। দ্বিতীয় ধাপে উপজেলা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২১ মে। ওইদিন রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী, ফটিকছড়ি ও রাউজানে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তবে সরকারি দলের দুই এমপির ইশারায় একক প্রার্থী হওয়ায় রাউজান ও রাঙ্গুনিয়ায় ভোট হচ্ছে না। তৃতীয় ধাপে ভোট হবে আগামী ২৯ মে। এইদিন চট্টগ্রামের আনোয়ারা, বোয়ালখালী, পটিয়া ও চন্দনাইশ উপজেলা পরিষদে ভোটগ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছে। বাকি আছে কর্ণফুলী, সাতকানিয়া, বাঁশখালী ও লোহাগাড়া উপজেলা। পরবর্তী ধাপে এসব উপজেলার তফসিল ঘোষণা হবে।
কেন্দ্রীয়ভাবে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ দেশের বেশিরভাগ বিরোধীদল এই নির্বাচন বর্জন করেছে। চট্টগ্রামের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা দলের নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তে খুশি। দীর্ঘ সতের বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। ওয়ান ইলেভেনের পর দলের নেতাকর্মীদের উপর রাজনৈতিক সিডর বয়ে যায়। এরপর শুরু হয় আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম নির্যাতন। বিগত দেড় দশকে দলের নেতাকর্মীদের উপর চলে নির্যাতনে স্টিম রোলার। গুম, খুনের শিকার হন দলের অনেক নেতাকর্মী। অনেকে জীবনের তরে পঙ্গু হয়ে যান। হামলা, মামলা আর পুলিশী ধরপাকড়সহ নানামুখি নির্যাতন নিপীড়নে অতিষ্ট অনেক নেতাকর্মী ঘর বাড়ি ছেড়ে যেতে বাধ্য হন। বছরের পর বছরে কারাভোগ অথবা পলাতক থাকায় অনেকের চাকরি চলে গেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য লাঠে উঠেছে। মামলার খরচ জোগাতে গিয়ে অনেকের পথে বসার উপক্রম হয়েছে।
মহানগর, জেলা থেকে শুরু করে থানা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড এমনকি ইউনিট বিএনপি ও তাদের অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাদের নামেও মামলা দেওয়া হয়েছে। একাধীক মামলা নেই এমন নেতাকর্মী এবং সমর্থক খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিগত দেড় দশকে প্রায় সবনেতাই কমবেশি সময় জেল খেটেছেন। কোন কোন নেতার নামে শতাধিক মামলা রয়েছে। বিএনপির তরফে এসব মামলাকে গায়েবি মামলা হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। বিএনপি নেতাদের অভিযোগ আজগুবি সব অভিযোগে এসব গায়েবি মামলায় নেতাদের আসামি করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম মহাগর জেলায় কয়েক হাজার মামলায় হাজার হাজার নেতকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। সর্বশেষ ৭ জানুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপির আন্দোলন দমাতে প্রায় পাঁচ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের নামে একাধিক মামলা দেওয়া হয়। অন্য আন্দোলন কর্মসূচিতে দলের নেতা এবং কর্মীদের গ্রেফতার কিংবা তাদের নামে মামলা দেওয়া হতো। কিন্তু গেল জাতীয় নির্বাচনের আগে পুলিশী অভিযানে গণহারে দলের সমর্থক এমনকি নেতাদের বাবা, ভাই, বোন, স্ত্রী, সন্তানসহ অরাজনৈতিক ব্যক্তিদেরও গ্রেফতার করা হয়, তাদের নামেও মামলা দেওয়া হয়। এসব মামলা হাজিরা দিতেই নেতাকর্মী ও সমর্থকদের দিন চলে যাচ্ছে। আদালতের বারান্দায় কাটছে তাদের দিন।
তবে এতো সব জুলুম নির্যাতনের মধ্যেও বিএনপির নেতাকর্মীরা মাঠ ছেড়ে যায়নি। দলের নেতারা বলছেন, শাসক দলের শত জুলুম নির্যাতনে বিএনপির নেতাকর্মীরা এক একজন খাঁটি সোনায় পরিনত হয়েছে। তারা এখন দলের ঐক্য অটূট রাখতে এবং যে কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সীসাঢালা প্রাচীরের মতো ঐক্যবদ্ধ।
বিগত রমজানে সরকারি তরফে এবং দল হিসাবে আওয়ামী লীগ ইফতার মাহফিল করা থেকে বিরত থাকে। কিন্তু বিএনপি ও তাদের অঙ্গ, এবং সহযোগী ও সমমনা সংগঠনগুলো ব্যাপকহারে ইফতার মাহফিল করেছে। ইফতার মাহফিল ও ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও শামিল ছিলেন। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়াম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা নিয়মিত নিজ নিজ এলাকায় আসছেন। দলের নেতাদের সাথে বৈঠকে মিলিত হচ্ছেন। দলের সিনিয়র নেতাদের পাশাপাশি হুমাম কাদের চৌধুরী, ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের মতো তরুণ নেতারা কর্মীদের সংগঠিত করছেন। পবিত্র মাহে রমজানেও তারা ইফতার মাহফিলের মাধ্যমে দলকে সংগঠিত করেছে। সেই ধারাবাহিকতায় এখনও নানা আয়োজনে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সুসংহত হচ্ছেন। জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে সাংগঠনিক সভা হচ্ছে। উপজেলা নির্বাচন বর্জনে সাধারণ ভোটারদের আহŸান জানাতে চলছে গণসংযোগ।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহŸায়ক আবু সুফিয়ান বলেন, উপজেলা নির্বাচন বর্জন করে আমরা জনগণের কাতারে এসে দাঁড়িয়েছি। জনগণ বিশ^াস করে এই সরকার এবং এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে দেশে কোন নির্বাচনই সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। গেল জাতীয় নির্বাচনই তার বড় প্রমাণ। ওই আমি-আর ডামির নির্বাচনের আরেক রূপ হলো উপজেলা নির্বাচন। দলের সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে সরকারের এই পাতানো নির্বাচনে বিএনপির কোন নেতা তো দূরের কথা কোন সমর্থকও ভোটে যায়নি। আমরা আশাকরি ভোটারেরাও ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের মতো এই একতরফা বির্নাচন বর্জন করবে। নির্বাচন বর্জনের ফলে বিএনপির লাভ হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, আমরা সরকারের ফাঁদে পা দেইনি। জনগণের কাতারে শামিল হয়েছি। দলকে সংগঠিত করতে পারছি।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহŸায়ক ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন বলেন, শেখ হাসিনা দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকেই ধ্বংস করে দিয়েছেন। এদেশে ভোট বলে কিছু অবশিষ্ট আছে তা সাধারণ মানুষও বিশ^াস করে না। নির্বাচন কমিশনের প্রতি মানুষের কোন আস্থা নেই। তারা সরকারের আজ্ঞাবহ হিসাবে কাজ করছে। যেখানে নির্বাচন নিয়ে ভোটারদেরই কোন আগ্রহ নেই, সেখানে বিএনপির ভোটে যাওয়া প্রশ্নই উঠে না। আমরা তৃণমূলের মতামত হাইকমান্ডকে জানিয়েছি। এরপরই তারা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন, বিএনপি মনে করে জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া কোন নির্বাচনই অর্থবহ হতে পারে না। আওয়ামী লীগ তাদের অবৈধ ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে এসব নির্বাচনের নাটক করছে। ৭ জানুয়ারি ভোট বর্জনের আহŸান জানিয়ে আমরা সফল হয়েছি, পাঁচ ভাগ ভোটারও কেন্দ্রে যায়নি। এবারও আমরা সফল হবো।
এদিকে দলীয় পরিচয় গোপন রেখে জামায়াত উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বলে শুরুতে যে গুনঞ্জন ছিল তাও ভূয়া প্রমাণিত হয়েছে। জামায়াতের কেউ কোন উপজেলায় নির্বাচনে প্রার্থী হননি। বিগত নির্বাচনে ওই দলের নেতারা একাধিক উপজেলায় বিজয়ী হয়েছিলেন। বিএনপির সমমনা অন্যদলগুলোও এই নির্বাচন বর্জন করছে। আওয়ামী লীগের নেতারাই নিজেদের মধ্যে লড়াইয়ে আছেন। সাধারণ মানুষের মাঝে ভোট নিয়ে কোন আগ্রহ নেই কোথাও।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
পিরিয়ডে হেভি ফ্লো নিয়ে হ্যাসেল-ফ্রি থাকতে, কী করবেন
বান্দরবানে মাইন বিস্ফোরণে দুই পা বিচ্ছিন্ন, আহত ৩
বিদ্যুৎ গেল কোথায়, আমার এলাকাতেই ৫ ঘণ্টা থাকে না
হৃদয়-মাহমুদউল্লার ব্যাটে বাংলাদেশের অনায়াস জয়
আমরা চাই বারবার মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় আসুক- গৃহায়ণ মন্ত্রী
ভোটের দিন অস্ত্র নিয়ে যেতে বললেন ইউপি মেম্বার!
আখাউড়ায় আ. লীগের ঐক্যের প্রার্থীর সমর্থনে সরে দাঁড়ালেন সাবেক চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন
নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ: উদ্বোধনী দিনেই মাঠে নামবে বাংলাদেশ
কালিয়াকৈরে বনবিভাগের অবৈধ দখলে থাকা কোটি টাকার জমি উদ্ধার
৯ মে ঢাকায় আসছেন ভারতীয় পররাষ্ট্রসচিব
দুইসপ্তাহ জুড়ে পথচারীদের মাঝে পানিও স্যালাইন বিতরণ
বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে ম্যাচে বৃষ্টির বাধা
দরকারী কাগজে নাপাকি লাগলে কী করণীয় প্রসঙ্গে।
দুই দিনে সোনার দাম বাড়ল ১৭৮৫ টাকা
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক পিএলসি. এর শরি‘আহ্ সুপারভাইজরি কমিটির ৪৪তম সভা অনুষ্ঠিত
‘বিশ্ব কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য দিবস ২০২৪’ পালন করলো এনার্জিপ্যাক
মোদির মুসলিম বিদ্বেষী প্রচারণায় এবার উপজীব্য ভোট জিহাদ, তারপর কী?
সুদহার শিগগিরই বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া হবে: গভর্নর
মুস্তাফিজকে ছাড়াই চেন্নাইয়ের বড় জয়
শাহজালালে তিনদিন ৩ ঘণ্টা করে ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ