মধুখালী ট্র্যাজেডির আজ ১৫ দিন

ধরা পড়েনি কিলিং মিশনের ১২ খুনি, অভিযোগ ভুক্তভোগীদের

Daily Inqilab আনোয়ার জাহিদ, ফরিদপুর থেকে

০৩ মে ২০২৪, ১২:২৮ এএম | আপডেট: ০৩ মে ২০২৪, ১২:২৮ এএম

মধুখালি ট্র্যাজেডির আজ ১৫ দিন। ধরা পড়েনি কিলিং মিশনের ১২ খুনি। ওসি মিরাজ হোসেন এখনও ফুরফুরে মেজাজে। অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। আটক হয়নি সরাসরি কিলিং মিশনের সাথে জড়িত তারা ১২ জনের কেউ। এমন অভিযোগ নিহতদের পরিবারের।

দৈনিক ইনকিলাব ঘটনার পর থেকে মধুখালীর ডুমাইন পঞ্চপল্লী এবং নিহতদের নিজ গ্রামের বাড়ি নওপাড়া ইউনিয়নের চোপেরঘাট এলাকার সর্বশ্রেনির মানুষের সাথে কথা বলে সংবাদ পরিবেশন করে আসছেন। প্রতিদিন যোগাযোগ করা হচ্ছে নিহতদের পরিবারের এবং স্থানীয়দের জানা হচ্ছে সব ঘটনার আপডেট। গতকাল একটি বিশ্বস্ত সূত্রে পাওয়া যায় পঞ্চপল্লীতে দুই সহোদরকে পিটিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা কিলিংম্যানের ১২ জনের ছবি। ছবিগুলো ইনকিলাবের হাতে এসে পৌঁছেছে। খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে এবং গতকাল পর্যন্ত মধুখালীর ট্র্যাজেডির ঘটনায় যে ৪টি ভিডিও ক্লিপ প্রকাশে, যাদের ছবি ভেসে উঠছে তাদের সাথে প্রাপ্ত ছবির হুবাহু মিল আছে। কিন্ত পাওয়া যায়নি সকলের নাম ঠিকানা। নাম ঠিকানা নেওয়ার চেষ্টা চলছে। ঐ ভিডিও দেখে এবং এলাকাবাসীর তথ্যমতে নিশ্চিত হওয়া গেছে ইনকিলাবের হাতে যে ১২ জনের ছবি আসছে। তারা গত ১৮ এপ্রিল হত্যা মিশনের সাথে সরাসরি জড়িত এমনটা লোকমুখে শোনা যায়। ডুমাইন পঞ্চপল্লী এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ক্রাইম সিন এলাকা বা জোন। ফলে ঐখানে খুব একটা যাওয়া আসা যাওয়া না। প্রয়োজনে মন খোলা প্রয়োজনীয় কথাও বলা যায় না কারোর সাথে।

গতকাল বৃহস্পতিবার ইনকিলাবের সাথে কথা হয় নিহত আশরাফুল ও আরশাদুল পিতা মো. শাহজাহান খান এবং চাচা মো. রাজ্জাক খানের সাথে। তারা ইনকিলাবকে বলেন, দুটো ছেলে খুন হয়েছে আমাদের। আমরা কষ্টে বাঁচি না। কিন্তু পুলিশ আমাদের উল্টো অশান্তি করছে। তাদের আচরণে আমরা আরো কষ্ট পাচ্ছি। আমাদের হলো শোকের বাড়ি যে যেখান থেকে শুনছেন তারাই এখান থেকে ছুঁটে আসছেন। কথা বলছেন, কারো মন চাইলে কেউ সাহায্যও করছেন। বাড়ি থাকবো সবাই বাড়ি ঘুমাবো। থানার ওসি মিরাজ হোসেন, অন্যান্য দারোগা পুলিশরাও এখন বাড়ি ঘুমাতে দেয় না। সকাল-বিকেল ও রাতে ওসি মিরাজ-দারোগা-পুলিশ বাড়ি আসেন।

তিনি বলেন, সবাইকে আপনারা বাড়ি থেকে কোথাও চলে যান। নতুন জায়গায় বেড়ালে মন ভাল হবে। তিনি ইনকিলাবকে আরো বলেন, আমি সব ঘটনা ডিসি, এসপি এবং ইউএনও সাহেবকে জানাইছি। রাতের বেলা পুলিশ, সন্ধ্যায় পুলিশ, ভোর বেলা পুলিশ। এ কি জ্বালায় পড়ছি আমরা। কেউ এসে কথা বলবে। কি বলবে। আসবে কেন? কারা আসবে কখন আসবে। কজন আসবে নানান প্রশ্নে আমাদেরকে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলে।
আবার মাঝ রাতে থানার ওসি মিরাজ হোসেন থানার গাড়ি পাঠান আমাদের অন্য কোনো জায়গায় গিয়ে বেরিয়ে আসতে বলে। যাওয়ার গাড়ি ওসি দিবে। তা হলে আমাদের কাছে যারা আসে তাদের সাথে কথা বলবে কে?

নিহতের বাবা মো. শাহজাহান খান ইনকিলাবকে আরো বলেন, ১৮ এপ্রিল আমার মনিগের পিটায়ে মারলো হিন্দুরা। ১৯ এপ্রিল থানায় একটা মামলা হলো ৪০ জন অজ্ঞাত নামা আসামি করা হলো। আমারে সই করতে বললো সই করলাম। আসামি আটক করলো কিনা? কাদের ধরলো কিছুই জানতে পারেননি। কিন্তু ওসি মিরাজ সাহেব আছেন তার মতো। তার মেজাজ ফুরফুরে। কান্নায় মরি আমরা। ওনি আছেন আমরা বাড়ি থাকি কেন এই নিয়া।

নিহতদের চাচা মো. রাজ্জাক খান ইনকিলাব বলেন, খুনিদের আটক করতে এবং হত্যার প্রতিবাদে ২৪ এপ্রিল মধুখালীতে প্রতিবাদ সমাবেশ হলো, পুলিশ এবং মিছিলকারীরা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হলো আমার এলাকার ৫ জন লোক গুলিতে আহত হইলো, হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ঘুমাতে আসলো ২ জনকে পুলিশ আটক কইরা নিয়া গেল। অথচ আমার মনিগের খুনিগের খুঁজে পায় না।

তিনি আরো বলেন, বড় বড় কোনো নেতারা আমাদের বাড়ি আসতে চাইলে মধুখালী থানার ওসি মিরাজ হোসেন আমাদের ভারী জালান জালায়। গত বুধবার বিএনপির সাবেক মন্ত্রী নিতাই রায় চৌধুরী, শামা ওবায়েদসহ ১০ জন ঢাকার নেতা আমাদের বাড়ি আসছেন। ঐদিন গহরডাঙ্গা বোর্ডের মহাসচিবসহ ১০০ জনের দল আসছেন। একইদিন ফরিদপুর বোয়ালমারীর ডোবরার পীর সাহেব আসছেন। এরকম শ’ খানেকেরও বেশি লোক আমাদের বাড়ি আসছেন যাচ্ছেন। থানার পুলিশ ৪ থেকে ৫ গাড়ি ভরে রাস্তায় দাঁড়াইয়া থাকেন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। কিন্তু আমাদের মামলার আসামি ধরার খবর নেই। তিনি বলেন, আমাদেরকে বেশি জালাইলে সবাই মিলে রাস্তায় ঝাপ দিবো।

 

 


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

৫ দিনের ছুটির কবলে বেনাপোল স্থলবন্দর

৫ দিনের ছুটির কবলে বেনাপোল স্থলবন্দর

গোদাগাড়ীতে কৃষি মন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানালেন নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান সোহেল

গোদাগাড়ীতে কৃষি মন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানালেন নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান সোহেল

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী তৎপরতার তথ্য পেলেই অভিযান : র‌্যাব পরিচালক

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী তৎপরতার তথ্য পেলেই অভিযান : র‌্যাব পরিচালক

যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল

যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল

প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত

প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত

ফ্রান্সে ইহুদি উপাসনালয়ে আগুন, অভিযুক্তকে গুলি করে হত্যা

ফ্রান্সে ইহুদি উপাসনালয়ে আগুন, অভিযুক্তকে গুলি করে হত্যা

নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে

নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে

বেলজিয়াম-নেদারল্যান্ডস-জার্মানিকে হারিয়ে বিশ্বকাপের আয়োজক ব্রাজিল

বেলজিয়াম-নেদারল্যান্ডস-জার্মানিকে হারিয়ে বিশ্বকাপের আয়োজক ব্রাজিল

নদী ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘূম রাত কাটে উপকূলবাসীর

নদী ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘূম রাত কাটে উপকূলবাসীর

দিঘিতে মিলল এক মণ ওজনের কোরাল, বিক্রি ৪০ হাজারে

দিঘিতে মিলল এক মণ ওজনের কোরাল, বিক্রি ৪০ হাজারে

সুধা রানীর হাদিসের প্রভাষক পদে উত্তীর্ণ হওয়া নিয়ে তোলপাড়, যে ব্যাখ্যা এনটিআরসির

সুধা রানীর হাদিসের প্রভাষক পদে উত্তীর্ণ হওয়া নিয়ে তোলপাড়, যে ব্যাখ্যা এনটিআরসির

গাজায় ইসরায়েলের অভিযান বন্ধে আন্তর্জাতিক আদালতের নির্দেশ চেয়েছে দ. আফ্রিকা

গাজায় ইসরায়েলের অভিযান বন্ধে আন্তর্জাতিক আদালতের নির্দেশ চেয়েছে দ. আফ্রিকা

১০ হাজারের বেশি বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাবে যুক্তরাজ্য

১০ হাজারের বেশি বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাবে যুক্তরাজ্য

দৌলতপুরে পদ্মায় নিখোঁজ কিশোরের লাশ উদ্ধার

দৌলতপুরে পদ্মায় নিখোঁজ কিশোরের লাশ উদ্ধার

কলকাতায় ফের করোনা আতঙ্ক, এক সপ্তাহে আক্রান্ত ৫

কলকাতায় ফের করোনা আতঙ্ক, এক সপ্তাহে আক্রান্ত ৫

মুখোমুখি বিতর্কে রাজি বাইডেন ও ট্রাম্প, কবে হবে জোড়া বাকযুদ্ধ?

মুখোমুখি বিতর্কে রাজি বাইডেন ও ট্রাম্প, কবে হবে জোড়া বাকযুদ্ধ?

তিন দশকের মধ্যে গড় আয়ু পাঁচ বছর বাড়বে

তিন দশকের মধ্যে গড় আয়ু পাঁচ বছর বাড়বে

জার্মানিতে বিস্ফোরণের পরে বাড়িতে আগুন, নিহত তিন

জার্মানিতে বিস্ফোরণের পরে বাড়িতে আগুন, নিহত তিন

ইসরাইলের বিরুদ্ধে গণহত্যা মামলার শুনানি শুরু

ইসরাইলের বিরুদ্ধে গণহত্যা মামলার শুনানি শুরু

শেখ হাসিনাকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন

শেখ হাসিনাকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন