কারিগররা চান ঐতিহ্য রক্ষায় সামান্য পৃষ্ঠপোষকতা

প্লাস্টিক সামগ্রীর সাথে লড়াই করে বেঁচে আছে বাঁশ শিল্প

Daily Inqilab শাহেদ রহমান, যশোর থেকে

১০ মে ২০২৪, ১২:১৫ এএম | আপডেট: ১০ মে ২০২৪, ১২:১৫ এএম

যশোরের চৌগাছায় কাঁচামালের অপ্রতুলতা ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাব সত্তে¡ও টিকে রয়েছে বাঁশ শিল্প। বর্তমান বাজারে প্লাস্টিক পণ্য সামগ্রীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প।
তবে, উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় অভাব-অনটনের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন বাঁশ শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলো। পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকতে তারা এ পেশাকে ছেড়ে অন্য পেশায় ঢুকে পড়ছেন। ঐতিহ্যবাহী শিল্পকর্মটি এ এলাকা তথাদেশ থেকে বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, উপজেলার খড়িঞ্চা দাসপাড়া, সলুয়া, বিশ্বনাথপুর, পুড়াপাড়া, সুখপুকুরিয়া ও গুয়তলাীসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে বিগত কয়েক দশক ধরে প্রায় দুই শতাধিক পরিবার বাঁশ শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত। এক সময় চৌগাছায় গৃহস্থ পর্যায়ে প্রচুর বাঁশ উৎপাদিত হতো। এ ছাড়া পাশের উপজেলা থেকেও প্রচুর বাঁশ আনা হতো। ওই বাঁশ দিয়ে চালুন, কুলা, টেপারি, ডালা, ঝুঁড়ি ধান-চাল ও ডাল সংরক্ষণের জন্য গোলা, ডোল, বাজার করার খাড়ই, মাটি কাটার ঝুড়ি, মাছ ধরার যন্ত্রপাতি, চাষাবাদের জন্য সৌখিন অনেক পণ্যসহ গৃহস্থালী কাজের অনেক জিনিস তৈরি করা হতো। এগুলো প্রত্যেক পরিবারের জন্যই ছিল অপরিহার্য। কিন্তু কালের বিবর্তনে বাজারে প্লাস্টিকের হরেক রকমের পণ্য আসায় চরম প্রতিযোগিতায় পড়েছে শিল্পটি।
একদিকে যেমন এলাকায় বাঁশ উৎপাদন কম হয়ে গেছে, তেমনি অন্য কোনো অঞ্চল থেকেও বাঁশ এ অঞ্চলে আসছে না। অপরদিকে, প্লাস্টিকের বাজারে প্রতিযোগিতায় বাঁশের পণ্যগুলো টিকতেও পারছে না। ফলে এ শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলোতে নেমে এসেছে দুর্দিন। বেঁচে থাকার তাগিদে অনেকেই পেশা বদল কলছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে উপজেলায় হাতে গোনা ১০০ থেকে ১১০টি পরিবার এ শিল্পের সাথে কোনো রকমে টিকে রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, পুরুষদের পাশাপাশি বাঁশ শিল্পের সাথে তিন শতাধিক নারী জড়িত ছিলেন। এছাড়া পরিবারের মেয়ে সন্তানরাও এ কাজে সহায়তা করত। বাঁশের কাজ করে নারীরা স্বাবলম্বী ছিলেন এবং তাদের কাছে জমাকৃত টাকা মেয়ের বিয়ে কিংবা স্বামী-সংসারের প্রয়োজনীয় অন্য কাজে লাগাতেন। এখন কাজ না থাকায় ওই নারী শিল্পীরা বেকার হয়ে পড়েছেন।
বাঁশ শিল্পের সাথে জড়িত উপজেলার টেঙ্গুরপুর গ্রামের সবিতা দাস নামের এক গৃহবধূ জানান, বাঁশের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, চাহিদা কম, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি এবং পণ্য বিক্রি করতে গিয়ে বাধ্য হয়ে বাজারে অতিরিক্ত খাজনা দিতে হয়। ফলে এখন আর লাভ হয় না। তাই তাদের সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকে।
মির্জাপুর গ্রামের দূর্গারানী দাস, ঠান্ড রানী দাস ও সুচিত্রা রাণী দাস নামের বাঁশ শিল্পীরা জানান, কাজ না থাকায় তাদের হাতে কোনো টাকা পয়সা থাকে না। ফলে নিজের রুচি কিংবা চাহিদা মোতাবেক কোনো জিনিষপত্রও কিনতে পারছেন না। যে কোনো প্রয়োজনে স্বামী বা সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে থাকতে হয়।
তাদের অভিমত, বাঁশ শিল্পকে রক্ষা করতে হলে বাজারে বাঁশপণ্যের খাজনাবিহীন বিক্রির সুযোগ ও সরকারি ভাবে সুদ মুক্ত সহজ কিস্তিতে লোন দিতে হবে। করতে হবে সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা। সরকারিভাবে প্লাস্টিক ব্যবহারের খারাপ দিকগুলো প্রচার করতে হবে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী চৌগাছা কামিল মাদরাসা এলাকার রবিন দাস বলেন, এ শিল্পটি ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের অন্তর্ভুক্ত হলেও সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো সংস্থাই এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখার ভ‚মিকা নিচ্ছে না। বাঁশ শিল্পকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে জরুরি ভিত্তিতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, পরিকল্পনা ও আধুনিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার। সে সঙ্গে পেশায় জড়িতদের তালিকা করে সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা উচিত।
এ বিষয়ে চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুস্মিতা সাহা বলেন, শিল্পটি আমাদের বাঙালি সংস্কৃতিরই অংশ। আমরা চেষ্টা করবো এদেরকে সার্বিক সহায়তা দিতে। এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হবে।

 

 


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

রাইসির মৃত্যুতে বেড়েছে তেলের দাম

রাইসির মৃত্যুতে বেড়েছে তেলের দাম

ওলামা লীগের ইতিহাস খুব সুখকর নয় : ওবায়দুল কাদের

ওলামা লীগের ইতিহাস খুব সুখকর নয় : ওবায়দুল কাদের

ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসিসহ সবার লাশ উদ্ধার

ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসিসহ সবার লাশ উদ্ধার

বাজারে সংকট নাই, কিছু পণ্যের দাম বাড়ছে মনিটরিং করা নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

বাজারে সংকট নাই, কিছু পণ্যের দাম বাড়ছে মনিটরিং করা নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

ইজি বাইকের ধাক্কায় শেরপুরে বৃদ্ধা নিহত

ইজি বাইকের ধাক্কায় শেরপুরে বৃদ্ধা নিহত

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি’র মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি’র মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক

প্রিমিয়ার লিগে গোলের রেকর্ড

প্রিমিয়ার লিগে গোলের রেকর্ড

বজ্রপাতে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের রানওয়েতে ফাটল, বিমান চলাচলে বিঘ্ন

বজ্রপাতে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের রানওয়েতে ফাটল, বিমান চলাচলে বিঘ্ন

লন্ডনে লেবার পার্টির সভায় জয়নুল আবদীন ফারুক

লন্ডনে লেবার পার্টির সভায় জয়নুল আবদীন ফারুক

বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে অটোরিক্সা বন্ধ অমানবিক : বাংলাদেশ ন্যাপ

বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে অটোরিক্সা বন্ধ অমানবিক : বাংলাদেশ ন্যাপ

কুষ্টিয়ায় বিপন্ন প্রজাতির গন্ধগোকুল আহত অবস্থায় উদ্ধার

কুষ্টিয়ায় বিপন্ন প্রজাতির গন্ধগোকুল আহত অবস্থায় উদ্ধার

ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলে অনুমতি প্রধানমন্ত্রীর

ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলে অনুমতি প্রধানমন্ত্রীর

টানা দ্বিতীয়বার গোল্ডেন বুট হালান্ডের

টানা দ্বিতীয়বার গোল্ডেন বুট হালান্ডের

আগামীকাল দুইটি উপজেলায় নির্বাচন হরিণাকুন্ডু ও শৈলকুপা উপজেলায় আ’লীগে আ’লীগে টক্কর

আগামীকাল দুইটি উপজেলায় নির্বাচন হরিণাকুন্ডু ও শৈলকুপা উপজেলায় আ’লীগে আ’লীগে টক্কর

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন ডিপজল

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন ডিপজল

জরুরি বৈঠকে ইরানের মন্ত্রীসভা; ৫০ দিনের মধ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

জরুরি বৈঠকে ইরানের মন্ত্রীসভা; ৫০ দিনের মধ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

শিল্পী সমিতির ভোটে অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশ

শিল্পী সমিতির ভোটে অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশ

পুত্র সন্তানের মা হলেন ইয়ামি গৌতম

পুত্র সন্তানের মা হলেন ইয়ামি গৌতম

ইরানকে সাহায্যের জন্য রাশিয়া সবকিছু করতে প্রস্তুত রয়েছে: পুতিন

ইরানকে সাহায্যের জন্য রাশিয়া সবকিছু করতে প্রস্তুত রয়েছে: পুতিন

গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু ২ বাইক আরোহীর, রচনা লেখার শর্তে জামিন চালককে

গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু ২ বাইক আরোহীর, রচনা লেখার শর্তে জামিন চালককে