চামড়ার বাজারে এবারো দর পতন : গরিব মেরে ব্যবসায়ীদের পোয়াবাড়ো

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

১৮ জুন ২০২৪, ০৩:৩৫ পিএম | আপডেট: ১৮ জুন ২০২৪, ০৩:৩৫ পিএম



কোরবানির চামড়ার বাজারে এবারও দরপতন। লাখ টাকার গরুর চামড়া ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। সেখানে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চামড়ার দাম কম হওয়ায় অনেক ক্ষতি হয়েছে। ট্যানারি মালিকেরা বলছেন, মৌসুমী ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা সিন্ডিকেট করে চামড়া কম দামে কিনেছে। এতে করে তারাই সুবিধাভোগী হবে।

আড়তদার ও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, ট্যানারি মালিকেরা গত বছরের চামড়ার দাম পরিশোধ করেনি। এছাড়া গত বছর বেশি দামে চামড়া কেনায় কয়েক লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। তাই এবার আমরা কম মূল্যে চামড়া ক্রয় করেছি।

সোমবার ও মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার চামড়ার অস্থায়ী বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি ছোট চামড়ার দাম ৪০০ থেকে ৪০০ টাকা, মাঝারি ও বড় আকারের প্রতিটি চামড়া ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।

রাজধানীর কাপ্তান বাজারের ব্যবসায়ী কবিরুল ইসলাম বলেন, লবণযুক্ত চামড়াও নির্ধারিত দামে কিনতে চান না। কেউ কেউ চামড়া নিয়ে নিজের এলাকায় ফেরত নিয়ে গেছেন। আবার কেউ কেউ লবণ দিয়ে রেখেছেন। চামড়ার প্রত্যাশিত দাম না পাওয়ার কারণে তারা কাঁচা চামড়া এতিমখানায় দিয়েছেন। ব্যবসায়ীরা এতিমখানা থেকে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করেছেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, চামড়ার দাম নিশ্চিত করতে কাঁচা চামড়া রপ্তানির অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, চামড়ার প্রকৃতমূল্য না পেলে এ শিল্পের অনেক ক্ষতি হবে। চামড়ার বাজার বাস্তবায়নে সরকারকে আরও কার্যকরী উদ্যোগী হতে হবে।

তিনি বলেন, চামড়ার বাজার যদি মধ্যস্বত্বভোগীরা নিয়ন্ত্রণ করে তাহলে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা কী করছেন? এর পেছনে কোন চক্র কাজ করে তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা দরকার। পরিস্থিতি থেকে বোঝা যাচ্ছে, বাজার পর্যবেক্ষণ ঠিকমতো হয়নি।

রায়েরবাগের ব্যবসায়ী আম্বর আলী জানান, এবার গরু কিনেছেন ২ লাখ টাকায়। তিনি গরুর চামড়ার টাকা দিয়ে দেন বাসার কাজের লোককে। কিন্তু মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়ার দাম বলছেন ৭০০ টাকা। ছাগলের চামড়া কিনছেন না তারা।

সরকার ঢাকায় প্রতি পিস গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে ১ হাজার ২০০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ১ হাজার টাকা। এক থেকে দেড় লাখ টাকায় যে গরু বিক্রি হয়েছে, সেসব গরুর চামড়ার আয়তন ২৪ থেকে ৩০ বর্গফুট। ৫০ টাকা করে দাম ধরলেও একেকটি চামড়ার দাম হওয়ার কথা ১ হাজার ২৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা।

বংশালে মৌসুমি ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, যেহেতু চামড়া কিনে আবার ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করবো, এরপর ট্যানারি মালিকরা এ চামড়ায় লবণ দিবেন। সেখানেও রয়েছে একটি খরচ। তারা আমাদের একটি দাম বলে দিয়েছে সেই দামেই কিনি। গত কয়েক বছর ১০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। তাই এ বছর ৬০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে চামড়া কিনছি। আর ছাগলের চামড়া চাহিদা কম থাকায় চামড়া ক্রয় করি না।

কামরাঙ্গীরচরে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার গরু কোরবানি দিয়েছেন মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, সরকার যে মূল্য নির্ধারণ করেছে যদি এই দামে চামড়া বিক্রি করা যেত, তাহলে কোরবানির গরুর চামড়ার দাম কম হলেও ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা হতো। কিন্তু দাম বলেছে মাত্র ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। তাই বিক্রি না করে এলাকার এতিমখানায় দিয়ে দিয়েছি।

লালবাগের পোস্তায় আড়তদার মোখলেস উদ্দিন বলেন, সারাদিন কোনো সরকারি লোক এসে একবার জিজ্ঞেস করল না আমরা কেন কম দামে চামড়া কিনছি।

বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আফতার উদ্দিন বলেন, লবণ ও মৌসুমি শ্রমিকদের মজুরি বাড়ার কারণে এবার সরকারের নির্ধারিত দামে চামড়া কেনা সম্ভব হয়নি। ঢাকার বাইরে চামড়াগুলো রাতে (সোমবার) এবং মঙ্গলবার রাজধানীতে আসবে। তাই কাঁচা চামড়ার দাম বাড়তে পারে।

বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিএইচএসএমএ) মহাসচিব টিপু সুলতান বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার চামড়ার দাম একটু ভালো। সরকার লবণসহ চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছে। মৌসুমি ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা কাঁচা চামড়ার দামের সাথে মেলালে হবে না। এক পিস কাঁচা চামড়ায় ২০০ থেকে ২৫০ টাকার লবণ মেশাতে হয়।

উল্লেখ্য, গত ৩ জুন পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে সরকার। গতবারের চেয়ে এবার প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম ৫টাকা বাড়ানো হয়। ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়া ৬০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ ও মালদ্বীপ জলবায়ু কূটনীতিতে একযোগে কাজ করবে : পরিবেশ মন্ত্রী

বাংলাদেশ ও মালদ্বীপ জলবায়ু কূটনীতিতে একযোগে কাজ করবে : পরিবেশ মন্ত্রী

দুধকুমার নদের ভাঙ্গনে কবর বিলীন, বেড়িয়ে এলো আট বছর আগে দাফন করা লাশ

দুধকুমার নদের ভাঙ্গনে কবর বিলীন, বেড়িয়ে এলো আট বছর আগে দাফন করা লাশ

অবৈধভাবে নির্মিত সাদিক এগ্রোর স্থাপনা উচ্ছেদ করবে ডিএনসিসি

অবৈধভাবে নির্মিত সাদিক এগ্রোর স্থাপনা উচ্ছেদ করবে ডিএনসিসি

যে পেনশন স্কিম শিক্ষকদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ বৈষম্যমূলক : ড. জিনাত হুদা

যে পেনশন স্কিম শিক্ষকদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ বৈষম্যমূলক : ড. জিনাত হুদা

লক্ষাধিক সউদীগামী কর্মী বিপাকে!

লক্ষাধিক সউদীগামী কর্মী বিপাকে!

ইরান আগামী সপ্তাহে দুটি বড় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করবে

ইরান আগামী সপ্তাহে দুটি বড় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করবে

কাঞ্চন পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন দেওয়ান আবুল বাশার বাদশা

কাঞ্চন পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন দেওয়ান আবুল বাশার বাদশা

বুড়িগঙ্গায় ট্রলারের আগুনে একজনের মরদেহ উদ্ধার

বুড়িগঙ্গায় ট্রলারের আগুনে একজনের মরদেহ উদ্ধার

জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ কাল থেকে শুরু

জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ কাল থেকে শুরু

হাসিমুখে করমর্দন করলেন মোদি-রাহুল

হাসিমুখে করমর্দন করলেন মোদি-রাহুল

অর্থ সংস্থান না থাকায় এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অবসরভাতা ৬ মাসে দেওয়া সম্ভব নয় : শিক্ষামন্ত্রী

অর্থ সংস্থান না থাকায় এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অবসরভাতা ৬ মাসে দেওয়া সম্ভব নয় : শিক্ষামন্ত্রী

ভারতের পার্লামেন্টে ‘জয় ফিলিস্তিন’ বলে আওয়াজ দিলেন আসাদউদ্দিন ওয়াইসি

ভারতের পার্লামেন্টে ‘জয় ফিলিস্তিন’ বলে আওয়াজ দিলেন আসাদউদ্দিন ওয়াইসি

সমাজ পরিবর্তনে সার্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থার বিকল্প নেই : প্রেসিডেন্ট

সমাজ পরিবর্তনে সার্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থার বিকল্প নেই : প্রেসিডেন্ট

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে জাতীয় লজিস্টিক নীতি হবে অন্যতম চালিকাশক্তি: তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে জাতীয় লজিস্টিক নীতি হবে অন্যতম চালিকাশক্তি: তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া

চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম বাগান পরিদর্শনে যাচ্ছেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত

চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম বাগান পরিদর্শনে যাচ্ছেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত

আখাউড়া থানা পুলিশের অভিযানে ৯০টি স্কফসহ ১ জন গ্রেফতার

আখাউড়া থানা পুলিশের অভিযানে ৯০টি স্কফসহ ১ জন গ্রেফতার

চট্টগ্রাম বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ১ লাখ ৬ হাজার

চট্টগ্রাম বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ১ লাখ ৬ হাজার

প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ উন্নয়নের রোড মডেল হয়েছে : নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ উন্নয়নের রোড মডেল হয়েছে : নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী

নড়িয়ায় গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু

নড়িয়ায় গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু

সাংবাদিকদের সাথে পুলিশের দ্বন্ধ আলোচনার মধ্য দিয়ে নিরসন হবে - আইজিপি

সাংবাদিকদের সাথে পুলিশের দ্বন্ধ আলোচনার মধ্য দিয়ে নিরসন হবে - আইজিপি