ঢাকা   রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ | ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

পৃথিবীকে বাঁচাতে নতুন সভ্যতা গড়ার বার্তা ড. ইউনূসের

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১৭ পিএম | আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১৭ পিএম

 

জলবায়ু সংকট দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে। এটি মানব সভ্যতার ধ্বংস ডেকে আনছে। এই অবস্থায় পৃথিবীকে বাঁচাতে নতুন সভ্যতা গড়ার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বলেছেন, মানব সভ্যতা টিকিয়ে রাখতে হলে গ্রহণ করতে হবে ভিন্ন জীবনধারা, গড়ে তুলতে হবে ভিন্ন এক সংস্কৃতি। আর সেটা হতে পারে তার দীর্ঘদিনের লালিত ‘থ্রি জিরো’ বা ‘তিন শূন্য’ ধারণা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে।

 

বুধবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে (কপ২৯) দেওয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

 

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, জলবায়ু সংকট তীব্রতর হচ্ছে। আমাদের সভ্যতা গুরুতর ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কেননা, আমরা আত্ম-ধ্বংসাত্মক মূল্যবোধের প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি। একটি নতুন সভ্যতার স্ব-সংরক্ষিত ও স্ব-শক্তিশালী সভ্যতার ভিত্তি স্থাপনের জন্য আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক, আর্থিক এবং যুব-শক্তিকে সংগঠিত করতে হবে।

 

এই গ্রহের মানব বাসিন্দারাই এই গ্রহের ধ্বংসের কারণ জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা ইচ্ছাকৃত-ভাবে এটা করছি। আমরা এমন একটি জীবনধারা বেছে নিয়েছি, যা পরিবেশের বিরুদ্ধে কাজ করে। আর আমরা এটিকে অর্থনৈতিক কাঠামো দিয়ে ন্যায্যতা দিই। আর এই অর্থনৈতিক কাঠামো আমাদের ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

 

তরুণদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তারা যেন তিন শূন্যের আদর্শ নিয়ে গড়ে ওঠে এবং পুরো জীবন সেই আদর্শে অটল থাকে। ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ, শূন্য দারিদ্র্য আর শূন্য বেকারত্ব অর্জনের পথ ধরে মানুষ পৌঁছাতে পারে সেই নতুন জীবনধারায়, যা আত্ম-বিধ্বংসী নয়, বরং নিজেই নিজের আবাসভূমিকে রক্ষা করবে।

 

ড. ইউনূস বলেন, এই দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের শুধু মেরামত করার কথা বলবে না, বরং আমাদের আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য একটি নতুন পথে নিয়ে যাবে। এটা অনেক বড় কাজ, অনেক প্রশ্নও উঠবে।

 

বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতা তুলে ধরে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমরা জেনেশুনে এই ধ্বংস-প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছি। এমন এক জীবনধারা আমরা বেছে নিয়েছি, যা পরিবেশের ক্ষতির কারণ। তিনি বলেন, আপনি যত বেশি ভোগ করবেন, তত বেশি উৎপাদন আপনাকে করতে হবে। আপনি যদি বেশি উৎপাদন করবেন, তত বেশি অর্থ আপনি উপার্জন করবেন। আমাদের সকল কর্মকাণ্ডের মূলে রয়েছে সর্বোচ্চ লাভের ওই আকাঙ্ক্ষা, যা কি না এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সমস্ত কিছুকে আমাদের ইচ্ছা অনুযায়ী পরিচালিত করে।

 

শূন্য বর্জ্যের নীতি মানুষের ভোগে লাগাম দেবে জানিয়ে তিনি বলেন, যা একান্ত জরুরি, কেবল তাই মানুষ ব্যবহার করবে। তাতে কোনো বর্জ্য অবশিষ্ট থাকবে না। এটা সেই জীবনধারা, যেখানে কার্বন নিঃসরণ নামবে শূন্যের ঘরে, কোনো জীবাশ্ম জ্বালানি মানুষ ব্যবহার করবে না। মানুষের চাহিদা মেটাবে কেবল নবায়নযোগ্য জ্বালানি।

 

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নতুন এই অর্থনীতি গড়ে উঠবে প্রাথমিকভাবে শূন্য ব্যক্তিগত লাভের নীতিতে, অর্থাৎ সামাজিক ব্যবসা হবে এর ভিত্তি। এটা সেই ব্যবসা কাঠামো যার উদ্দেশ্য থাকবে সামাজিক ও পরিবেশগত সমস্যার সমাধান করা, ব্যবসা থেকে লাভ করা নয়। সামাজিক ব্যবসার একটি বড় অংশ নজর দেবে পরিবেশ ও মানবজাতির সুরক্ষার দিকে।

 

শান্তিতে নোবেলজয়ী ইউনূস বলেন, সাশ্রয়ী মূল্যের স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের জীবন কেবল সুরক্ষিতই হবে না, গুণগত-ভাবেও উন্নত হবে। এ ব্যবস্থা তরুণদের জন্য উদ্যোক্তা হওয়ার পথ খুলে দেবে। উদ্যোক্তা হওয়ার নতুন শিক্ষার মধ্য দিয়ে তরুণরা নিজেদের প্রস্তুত করবে। চাকরি-প্রার্থী তৈরির শিক্ষা ব্যবস্থার জায়গা নেবে উদ্যোক্তা তৈরির শিক্ষা ব্যবস্থা।

 

জলবায়ু সম্মেলনে উপস্থিত সবার উদ্দেশে বাংলাদেশের সরকারপ্রধান বলেন, আশা করি এই স্বপ্নের পথে আপনারাও আমার সঙ্গে যোগ দেবেন। আমরা যদি একসাথে স্বপ্ন দেখি, তাহলে সেটা বাস্তব হবেই।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক
পাঠ্যবই ছাপায় অনিয়মে আনন্দ প্রিন্টার্সকে সতর্কতা
জনগণের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে হবে
আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী না কেউ গায়ে পড়লে জবাবের প্রস্তুতি রাখতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা
আরও

আরও পড়ুন

কুরস্কে ৪০ শতাংশ এলাকার দখল হারিয়েছে ইউক্রেন

কুরস্কে ৪০ শতাংশ এলাকার দখল হারিয়েছে ইউক্রেন

আমরা জমিদার নই,মানুষের পাহারাদার : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আমরা জমিদার নই,মানুষের পাহারাদার : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

জর্ডানে ইসরাইলি দূতাবাসের কাছে গুলি, বন্দুকধারী নিহত

জর্ডানে ইসরাইলি দূতাবাসের কাছে গুলি, বন্দুকধারী নিহত

ট্রাম্পের জয়ের পর ইলন মাস্কের সম্পদ বাড়ছে রকেট গতিতে

ট্রাম্পের জয়ের পর ইলন মাস্কের সম্পদ বাড়ছে রকেট গতিতে

ভয়াবহ তুষারঝড়ে বিপর্যস্ত যুক্তরাজ্য, বহু ফ্লাইট বাতিল

ভয়াবহ তুষারঝড়ে বিপর্যস্ত যুক্তরাজ্য, বহু ফ্লাইট বাতিল

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ১২০ ফিলিস্তিনি

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ১২০ ফিলিস্তিনি

ইভেন্টের  সেরা লড়াইটি উপহার দিলেন আফরা-সানজিদা

ইভেন্টের সেরা লড়াইটি উপহার দিলেন আফরা-সানজিদা

ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান পাহাড়ের পর জয়-জাকিরকে হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ

ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান পাহাড়ের পর জয়-জাকিরকে হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ

নাটকীয় শেষ দশ মিনিটে দুই গোল শোধ করে বার্সাকে রুখে দিল সেল্তা

নাটকীয় শেষ দশ মিনিটে দুই গোল শোধ করে বার্সাকে রুখে দিল সেল্তা

বিবর্ণ সিটিকে ইতিহাদেই বিধ্বস্ত করলো টটেনহ্যাম

বিবর্ণ সিটিকে ইতিহাদেই বিধ্বস্ত করলো টটেনহ্যাম

নটিংহ্যামকে হারিয়ে চার ম্যাচের জয়খরা কাটালো আর্সেনাল

নটিংহ্যামকে হারিয়ে চার ম্যাচের জয়খরা কাটালো আর্সেনাল

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক

পাঠ্যবই ছাপায় অনিয়মে আনন্দ প্রিন্টার্সকে সতর্কতা

পাঠ্যবই ছাপায় অনিয়মে আনন্দ প্রিন্টার্সকে সতর্কতা

দক্ষিণ লেবাননে ৬ চিকিৎসাকর্মী নিহত

দক্ষিণ লেবাননে ৬ চিকিৎসাকর্মী নিহত

জনগণের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে হবে

জনগণের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে হবে

আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী না কেউ গায়ে পড়লে জবাবের প্রস্তুতি রাখতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী না কেউ গায়ে পড়লে জবাবের প্রস্তুতি রাখতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথের কাছে ২৭ রেফারির চিঠি

বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথের কাছে ২৭ রেফারির চিঠি

ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা

ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা

বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!

বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা