১২ বছর পর আজ সেনাকুঞ্জে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া
২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৯ এএম | আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৫ এএম
২০১০ সালের ১৩ নভেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তার পরিবারের দীর্ঘ ৪০ বছরের স্মৃতি বিজড়িত ঢাকা সেনানিবাসের শহীদ মইনুল রোডের বাড়ি থেকে এক কাপড়ে টেনে হিঁচড়ে জবরদস্তি করে বের করে দেওয়া হয়েছিল। আজ বৃহস্পতিবার সেই সেনানীবাসের সেনাকুঞ্জে যাবেন তিনি। সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে বিকেল সাড়ে ৩টায় সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া। এর আগে সর্বশেষ ২০০৯ সালে সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন তিনি । তার পরের বছর বাড়ি থেকে উচ্ছেদের পর তাকে আর আমন্ত্রণ জানানো হয়নি সেনাকুঞ্জের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে।
সেনাকুঞ্জের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গত মঙ্গলবার বেগম খালেদা জিয়াকে আমন্ত্রণ জানায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ। সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল এএসএম কামরুল আহসান এই আমন্ত্রণপত্র বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে পৌঁছে দেন। খালেদা জিয়ার সঙ্গে এবার আমন্ত্রণ পেয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও। ২০০৯ সালের পর এবারই প্রথম বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে আমন্ত্রণ জানানো হলো। এছাড়া বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান এবং অন্য পদমর্যাদার সাবেক সামরিক কর্মকর্তারাসহ ২৬ জন আমন্ত্রণ পেয়েছেন।
যেভাবে টেনে হিঁচড়ে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ:২০১০ সালের ১৩ নভেম্বর শনিবার বেছে নেয়া হয়েছিল তৎকালীন সংসদের বিরোধী দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তার দীর্ঘ ৪০ বছরের স্মৃতি বিজড়িত ক্যান্টমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার জন্য। এক কাপড়ে টেনে হিঁচড়ে জোর করে বের করে দেয়া হয়েছিল তাকে। সেসময় বেগম জিয়া তার আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছা পোষণ করলেও তাকে সে সুযোগ দেয়া হয়নি। উচ্চ আদালতে বিচার নিস্পত্তির আগেই এভাবে উচ্ছেদ করার ঘটনা ছিল নজিরবিহীন। আইন-শৃঙখলা বাহিনী বেগম জিয়াকে উচ্ছেদের সময় তার মালামাল কিছুই আনতে দেয়নি। বেগম জিয়াকে জোর করে বাড়ি থেকে উচ্ছেদের ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে গেলে পুলিশ নেতাকর্মীদের ওপর ব্যাপক লাঠিচার্জ, টিয়ারসেল, শটগানের গুলি ও জলকামান নিক্ষেপ করে। এতে বহু নেতাকর্মী আহত হন।
সেদিন ফজরের নামাযের আগেই সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন বেগম জিয়ার সেনানিবাসের বাড়ির চারদিকে অবস্থান নেয়। সকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। পাশাপাশি ক্যান্টনমেন্টের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনীর লোকজন অবস্থান গ্রহণ করে। জাহাঙ্গীর গেটসহ ক্যান্টনমেন্টে প্রবেশের সব রাস্তায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সকাল আটটার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন বেগম জিয়ার বাসায় যারা কাজ করেন তারাসহ তার আত্মীয়স্বজনদের বের করে দেয়। বের করে দেওয়া হয় বেগম জিয়ার বাবুর্চিদেরও। সকাল ১১টার দিকে পুলিশ ও র্যাব খালেদা জিয়ার বাড়ির প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। এ সময় তারা জঙ্গি ধরার কায়দায় বাড়ির ভেতর ও বাইরে থেকে মাইকে বেগম জিয়াকে বের হয়ে আসতে বলে। তারা বলেন, যদি বেগম জিয়া স্বাভাবিকভাবে বের হয়ে না আসেন তাহলে তারা জোর করে তাকে বের করে আনবেন। তাদের এ আহ্বানে বেগম জিয়া তার আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতে চান। কিন্তু উচ্ছেদকারীরা তাকে সে সুযোগ না দিয়ে বের হয়ে যেতে বলেন। বেগম জিয়া তাদের কথামতো বের হতে না চাইলে পুলিশ তার রুমের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। তারা খালেদা জিয়ার বাড়ির কর্মরত লোকজনদের আটক করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। এরপর ইচ্ছের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার রুমে প্রবেশ করে তাকে টেনে হিঁচড়ে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে গুলশান কার্যালয়ে ছেড়ে দেন। বেগম জিয়াকে উচ্ছেদ করার পরপরই তার বাড়ির বিভিন্ন দরজা জানালাসহ ভবনের অন্যান্য স্থাপনা ভাঙ্গা শুরু হয়। সেখানে রাতারাতি তৈরি করা হয় বহুতল ভবন।
কেন উচ্ছেদ করা হয়েছিল, শেখ হাসিনার স্বীকারোক্তি:২০২৩ সালের ৩ অক্টোবর লন্ডনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেগম খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার কারণ সম্পর্কে বলেন, আমার বাবা দেশ স্বাধীন করেছিল বলেই তো এই ক্যান্টনমেন্ট। আমি এই ক্যান্টনমেন্টে ঢুকলে আমার বিরুদ্ধে মামলা! সেদিন প্রতিজ্ঞা করেছিলাম,ওই ক্যান্টনমেন্টে আর বসবাস করা লাগবে না। খালেদা জিয়াকে বের করে দিবো। যেদিন সময় পাবো এই ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের করে দেবো। তাকে ওই ক্যান্টনমেন্টের বাসা থেকে বের করে দিয়েছি।
প্রসঙ্গত, ১৯৮১ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দেখা গেল তার স্ত্রী এবং দুই সন্তানের মাথা গোঁজার মতো কোনো ঠাঁই নেই। পরে সংসদে আলোচনার পর সর্বসম্মতিক্রমে বেগম খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের ওই বাড়িটি দলিলমূলে রেজিস্ট্রির মাধ্যমে বরাদ্দ দিয়েছিল ওই সময়ের সরকার।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
শহীদদের রক্তের সঙ্গে যাতে বেঈমানি না হয়, সুষ্ঠু নির্বাচনে সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা থাকবে : নতুন সিইসি
খালেদা জিয়াকে ১২ বছর সেনাবাহিনী থেকে দূরে রাখা হয়েছে : মির্জা ফখরুল
সংবিধানে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা বিশ্বাস ফিরে আনতে হবে -আল-কাউসার পরিষদ বাংলাদেশ
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের কুশল বিনিময়
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আইসিসি
শিখ নেতা হত্যা, মোদীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ কানাডার
দলীয় ভিত্তিতে প্রশাসন সাজিয়ে কেউ ক্ষমতায় আসতে পারবে না: এ এম এম বাহাউদ্দীন
আদানির সঙ্গে জড়িত মোদিও: রাহুল গান্ধী
আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি ২৫ নভেম্বর ঢাকায় আসছেন
সোহেল-টুকু-হেলালসহ খালাস পেলেন বিএনপির ২২ নেতাকর্মী
ইরানে উদ্ভাবনে নারীদের অবদান ২৪ শতাংশের বেশি
প্রকাশায় ৯৩ শতাংশ নকল করেও পদোন্নতি পান রাবি অধ্যাপক সাহাল উদ্দিন
বোরহানউদ্দিনে নিখোঁজের দুই ঘন্টা পর লেবু বাগানে মিললো শিশুর লাশ
নাবালক ছাত্রের সঙ্গে জবরদস্তি যৌন সঙ্গম, ৩০ বছরের জেল শিক্ষিকার
সেনাকুঞ্জে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর প্রতিনিধি দলের অংশগ্রহণ
মার্কিন সংসদের নারী শৌচাগার ব্যবহার করতে পারবেন না রূপান্তরকামী এমপি
বাগেরহাটে হত্যা মামলায় যুবকের যাবজ্জীবন কারাদন্ড
অন্তবর্তীকালীন সরকারের নির্দেশনা পালনের প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন জিওসি
কুড়িগ্রামের উলিপুরে অগ্নিদগ্ধ হয়ে শিশুর মৃত্যু
ভারতে পাচারকালে সাতক্ষীরা সীমান্ত থেকে দুই নারী উদ্ধার