অধ্যক্ষ হয়ে ভাগ্য বদলে যায় অনুতোষ কুমারের

Daily Inqilab ঝিনাইদহ সদর উপজেলা সংবাদদাতা

১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫:২৫ পিএম | আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫:২৫ পিএম

অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকেই অনুতোষ কুমারের ভাগ্য বদলে যায়। হাতে পান আলাদ্বীনের চেরাগ। আশ্চর্য়্য এই চেরাগ হাতে পেয়ে সহায় সম্পদে ফুলে ফেপে উঠতে থাকেন তিনি। ৫০ টাকার বৈদ্যুতিক বাল্ব ৭৫০ টাকা দেখিয়ে করেন ভাউচার জালিয়াতি। এ ভাবে সরকারী কলেজের ফান্ড তছরুপ করে নামে বেনামে অঢেল সম্পদের মালিক হন তিনি।

 

কোটচাঁদপুর সরকারি খন্দকার মোশাররফ হোসেন কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালনের আগে তিনি ভাড়া বাসায় থাকলেও এখন তার ঝিনাইদহ শহরের একাধিক ফ্লাট ও চারতলা বাড়ির সন্ধান মিলেছে। অনুতোষের রাতারাতি এই ভাগ্য বদলের নেপথ্যে রয়েছে সরকারী কলেজ ফান্ডের টাকা তছরুপ। কোটচাঁদপুর কলেজ থেকে ঝিনাইদহ সরকারী নরুন্নেহার মহিলা কলেজে বদলী হয়ে এসেও তার দুর্নীতি থেমে নেই। আ’লীগ সরকারের আমলে অধ্যক্ষ অনুতোষের বিরুদ্ধে মাউশি ও শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে লিখিত অভিযোগ জমা পড়লেও ইসকন সদস্য হওয়ার কারণে তাকে “দুধে ধুয়া তুলশি পাতা” হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ফলে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি করেও এখনো তিনি দিব্যি চাকরী করে যাচ্ছেন। কোন তদন্তের মুখোমুখি হতে হয়নি তাকে। কোটচাঁদপুরের সরকারি খন্দকার মোশাররফ হোসেন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অনুতোষ কুমারের বিরুদ্ধে নির্দ্রষ্টি ১৪টি খাতে দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

 

সরকারি-বেসরকারি বরাদ্দের অর্থ আত্মসাৎ, প্রশাসনিক অনিয়ম, ক্রয় সংক্রান্ত অনিয়ম, ভুয়া ভাউচার তৈরী ও সরকারি সম্পদের অপব্যবহারের মতো  গুরুতর অভিযোগ ওঠে। কিন্তু ফ্যাসিবাদের দোসর হওয়ার কারণে তিনি বারবার পার পেয়ে গেছেন। উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে জেলা জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। কোটচাঁদপুর উপজেলা কুশনা ইউনিয়নের অভিভাবক শামসুল আলম অভিযোগ করেন, অধ্যক্ষ অুনতোষ কুমার ২০১৯ সালের মে মাসে সরকারী কেএমএইচ ডিগ্রী কলেজে যোগদান করে চার বছর ছিলেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি কলেজের বিজ্ঞান এবং গবেষণাগারের যন্ত্রপাতি, কম্পিউটার ক্রয় ও মেরামত, বইপত্র ও সাময়িকী,  অফিস সরঞ্জমা, ব্যবহার্য দ্রব্যাদি, আপ্যায়ন ও মনোহরি দ্রব্যাদি কেনায় বিপুল পরিমাণ টাকা পকেটস্থ করেন। এছাড়া শিক্ষা উপকরণ ক্রয়, আসবাবপত্র ক্রয় ও মেরামত, ক্রীড়া সামগ্রী ক্রয়, অনুষ্ঠান উদযাপন বিল ও ভ্রমণ ব্যয় বিলসহ ইন্টারনেট বিলের ভুয়া ভাউচার তৈরী করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। মাসুম আহম্মেদ নামে এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, করোনাকালীন (২০২১-২২ অর্থবছর) এবং করোনা পরবর্তী শিক্ষা সফর না করেই জোরপূর্বক বিভাগীয় প্রধানের মাধ্যমে শিক্ষা সফরের টাকা উত্তোলন করে তা লোপাট করেন।

 

কলেজের বিজ্ঞানাগারে এখন পর্যন্ত কোন যন্ত্রপাতি ও রাসায়নিক দ্রব্য নেই। অথচ এই খাতের পুরো টাকা মেরে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া লাইব্রেরির বই, চেয়ার টেবিল, স্টিলের আলমারী, সাইন্সল্যাব এ্যাপারেটাস, বৈদ্যুতিক বাল্ব, ফ্যানসহ সার্চ লাইট না কিনে সরকারী তহবিল সাবাড় করে দেন অধ্যক্ষ অনুতোষ কুমার। শামসুল আলম আরো জানান, বাজারে একটি বৈদ্যুতিক বাল্বের দাম মাত্র ৫০ টাকা। কিন্তু সেই বৈদ্যুতিক বাল্বের দাম ভুয়া ভাউচার তৈরী করে প্রতি পিস বাল্বে দাম ৭৫০ টাকা দেখিয়েছেন। কথিত আছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অডিটে দূর্নীতির বিষয়টি ধরা পড়লেও অডিট খরচের কথা বলে সেই অভিযোগটি ৭ লাখ টাকার উৎকোচের মাধ্যমে রফাদফা করেছিলেন অনুতোষ কুমার। সরজমিন কলেজটি পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, কলেজের সকল পরীক্ষা, ভর্তি, ম্যানেজমেন্ট ফি, ইনকোর্স পরীক্ষা ফি, ফরম ফিলাপের টাকা ফান্ড থেকে তুলে অধ্যক্ষ অনুতোষ আত্মসাৎ করেন। কলেজে রোভার স্কাউটসের কোন কর্মকান্ড না থাকা সত্তেও রোভার মুট এর নাম করে ভুয়া বিল করেছেন। তিনটি নিম্মমানের কেরাম বোর্ড কেনা দেখিয়েছেন ৬০ হাজার টাকা।

 

মুজিব বর্ষে মাত্র দুইটি গাছের চারা লাগিয়ে ৩০ হাজার টাকা তুলে নিয়েছেন। প্রসাশনিক ভবন রং করা বাবদ সাড়ে তিন লাখ ও ফুল বাগান করার নামে দুই লাখ ৬০ হাজার টাকা তুলে নিয়েছেন। আর এই কাজটি করা হয়েছে প্রতিটি কাজে আহবায়ক কমিটি করে। পরবর্তীতে আহবায়ক কমিটির সদস্যদের চাপ দিয়ে ভুয়া বিল ভাউচারে সাক্ষর করে নিয়েছেন তিনি। অভিযোগ উঠেছে কলেজের লুটপাটের টাকায় ঝিনাইদহ শহরের চাকলাপাড়ায় প্লট ও শহরের মোদনমহন পাড়ায় বহুতল ভবনে আলিশান ফ্লাটসহ বহু সম্পত্তির মালিক বনে গেছেন অধ্যক্ষ অনুতোষ। বর্তমানে তিনি ঝিনাইদহ শহরে সরকারি নুরুন্নাহার মহিলা কলেজে কর্মরত আছেন। সেখানেও তিনি লাগামহীন দুর্নীতি ও ফান্ড তছরুপে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।

 

এ বিষয়ে অধ্যক্ষ অনুতোষ কুমার জানান, এসব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। একটি মহল আমার বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রানলয়ে অভিযোগ করেছিলেন। অডিট টিম ৪ বছরের কেনাকাটার ভাউচার নিয়ে গেছেন। তারা কোন দুর্নীতি পায়নি। তবে শহরে তার ফ্ল্যাট ও প্লট রয়েছে। এগুলো তিনি পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করে কিনেছেন বলে অধ্যক্ষ অনুতোষ দাবী করেন।  


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইবির আইন প্রশাসক হলেন ড. নুরুন নাহার

ইবির আইন প্রশাসক হলেন ড. নুরুন নাহার

নাটকীয় জয়ে রংপুরের সাতে সাত

নাটকীয় জয়ে রংপুরের সাতে সাত

নতুন ফেসবুক পেইজের ঠিকানা দিলেন সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন

নতুন ফেসবুক পেইজের ঠিকানা দিলেন সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন

ভক্তদের হঠাৎ কি বার্তা দিলেন ঢালিউড কুইন শাবনূর?

ভক্তদের হঠাৎ কি বার্তা দিলেন ঢালিউড কুইন শাবনূর?

পেকুয়ায় ইউপি চেয়ারম্যান কারামুক্ত

পেকুয়ায় ইউপি চেয়ারম্যান কারামুক্ত

ধ্বংস হওয়া রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠনের জন্যই ৩১ দফা কার্যকর প্রয়োজন: আমিনুল হক

ধ্বংস হওয়া রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠনের জন্যই ৩১ দফা কার্যকর প্রয়োজন: আমিনুল হক

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা জানাল ভারত

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা জানাল ভারত

হাসিনার এপিএস লিকুর ১৫০ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেন, দুদকের ৪ মামলা

হাসিনার এপিএস লিকুর ১৫০ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেন, দুদকের ৪ মামলা

মারের কোচিংয়ে জোকোভিচের প্রথম জয়

মারের কোচিংয়ে জোকোভিচের প্রথম জয়

উত্তরখানে ভূয়া পুলিশ গ্রেফতার

উত্তরখানে ভূয়া পুলিশ গ্রেফতার

মাত্র ৯৫ দিনে মুহিব্বুল মুরসালিন খানের পবিত্র কুরআন হিফয সম্পন্ন

মাত্র ৯৫ দিনে মুহিব্বুল মুরসালিন খানের পবিত্র কুরআন হিফয সম্পন্ন

চীনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে মির্জা ফখরুলের বৈঠক

চীনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে মির্জা ফখরুলের বৈঠক

হাজীগঞ্জে ননদ ভাবির ঝগড়া থামাতে গিয়ে বাবার মৃত্যু

হাজীগঞ্জে ননদ ভাবির ঝগড়া থামাতে গিয়ে বাবার মৃত্যু

মাসরুর আরেফিন পুনরায় সিটি ব্যাংকের এমডি

মাসরুর আরেফিন পুনরায় সিটি ব্যাংকের এমডি

নতুন বছরে টেকনোর অসাধারণ অফার

নতুন বছরে টেকনোর অসাধারণ অফার

‘১৫ জানুয়ারি ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ'র ঈসালে সাওয়াব মাহফিল সফল করুন’

‘১৫ জানুয়ারি ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ'র ঈসালে সাওয়াব মাহফিল সফল করুন’

মালয়েশিয়ার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে চায় বাংলাদেশ

মালয়েশিয়ার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে চায় বাংলাদেশ

বিদ্যালয়ের পাশে হাসপাতালের আবর্জনা, মালিককে অর্থদণ্ড

বিদ্যালয়ের পাশে হাসপাতালের আবর্জনা, মালিককে অর্থদণ্ড

স্ত্রীর দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করার আগে স্ত্রী মারা যাওয়া প্রসঙ্গে।

স্ত্রীর দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করার আগে স্ত্রী মারা যাওয়া প্রসঙ্গে।

দাম কমল বিকনলিংক ফিচারযুক্ত অপো ফোনের

দাম কমল বিকনলিংক ফিচারযুক্ত অপো ফোনের