জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে 'সমস্যা সমাধানের রাজনীতি'
১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৬ এএম
জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে মানুষের আগ্রহ অনেক বেশি,বিশেষ করে তরুণদের রাজনীতিতে আগ্রহ এবং অংশ গ্রহণ বাড়ছে । সাধারণ মানুষের প্রত্যাশাও অতীতের সরকার গুলোর চেয়ে সামনের নতুন সরকার কিংবা এই অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে আকাশ চুম্বী। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্টেইক হোন্ডার অনেক, অনেক মানে অনেকই। এই লড়াইয়ে ফ্যাসিস্ট ছাড়া ডান, বাম,উদারপন্থী, মধ্যমপন্থী- সকল চিন্তা, বিশ্বাস এবং বলয়ের মানুষ অংশ গ্রহণ করেছে।
নয় জন হিন্দু ভাই -বোন জীবন দিয়েছে। চব্বিশ জন রিক্সা চালক জীবন দিয়েছে। কওমী মাদ্রাসার অর্ধশতাধীক আলেম শিক্ষার্থী জীবন দিয়েছে। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সব ধর্ম বিশ্বাসের মানুষের রক্ত রাজপথে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে এক মোহনায় এসে মিলিত হয়েছে। ছাত্র,শিক্ষক, কৃষক,শ্রমিক, পেশাজীবী,সাংবাদিক,শিল্পী, সাহিত্যিক,রিক্সা চালক,সিএনজি চালক,পোশাক শ্রমিক সবার চাওয়া ছিল একটিই- সেটা হচ্ছে একটি ফ্যাসি-স্ট শাসনব্যবস্থার পতন। হয়েছেও তাই।
ভিন্ন চিন্তা, বিশ্বাস, আদর্শের মানুষ যে একটা দাবীতে ঐক্যমত পোষণ করে একসাথে রাজপথে এসে দাঁড়িয়ে গেল এইটা যে কোনো জাতির জীবনে একটা ঐতিহাসিক ঘটনা। এমন সুযোগ এবং সম্ভাবনা কোনো জাতির জীবনে হয়তো বার বার আসবে না। বাংলাদেশের মানুষ এই সুযোগ এবং সম্ভাবনাকে শতভাগ কাজে লাগিয়ে মুক্তির নতুন ঠিকানা খুঁজে নিয়েছে। রাষ্ট্র হিসেবে জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে বাংলাদেশ গর্ব করতে পারে। বাংলাদেশের জনগণ এই অর্জনের নায়ক-মহানায়ক যারা রাষ্ট্র এবং সমাজে ইনসাফ কায়েম করার স্বপ্ন দেখে।
সমস্যা হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতিতে "পাঁচই আগস্টের সকালের মতো ঐক্য" এখন আর নেই। বিভক্তি সবখানে। রাজনৈতিক দল গুলো নিজ নিজ দর্শনের কথা বলছে। নতুন বাংলাদেশের রাজনীতির ইশতেহার ঘোষণা হচ্ছে রাজনৈতিক দল, ইন্টেলেকচুয়াল সোসাইটি এবং তরুণ প্রজন্মের পক্ষ থেকে। এটা একটা এডভান্সড সোসাইটির জন্য আমি পজেটিভ ভাবেই দেখি। রাজনীতির ময়দানে চিন্তার বৈচিত্র্য থাকা খুব স্বাভাবিক।
পুরো এবং নতুন চিন্তার প্রগতিশীল ধারাকে ধারণ করেই নতুন বাংলাদেশে নতুন দিনের রাজনীতি বিনির্মাণ করতে হবে।
বাংলাদেশকে একটি জাতি রাষ্ট্র বলা হলেও দেশটি কিন্তু এক জাতির নয়। পাঁচই আগস্টের বিক্ষোভ মিছিলে শুধু এক চিন্তা, বিশ্বাস, ধর্ম এবং দলের মানুষ ছিল না। নানা শ্রেণি, পেশা, বিশ্বাসের কম্বিনেশন ছিল সেই দিনের রাজপথে। সুতরাং সেই দিন মিছিলে যাওয়া মানুষ গুলোর (পাঁচই আগস্টের রাজপথের) যে স্বপ্ন, সম্ভাবনা এবং প্রত্যাশা- এগুলোই জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতি মূলমন্ত্র হওয়া উচিত এবং তাই হতে হবে। নতুন দিনের রাজনীতি মুক্তিকামী মানুষের স্লোগানের ভাষাকে ধারণ করতে হবে, দেয়াল দেয়ালে লিখা মুক্তির পঙক্তি মালাকে বরণ করতে হবে। নতুন দিনের রাজনীতি হতে হবে 'নিট এন্ড ক্লিন' । রাজনীতিকে রাজনীতির "লাল ফিতার দৌরাত্ম" থেকে মুক্ত করে গণ মানুষের সমস্যা সমাধানের কারণ হয়ে উঠতে হবে।
একটা ফ্যাসিস্ট সরকারকে হঠাতে এই যে লাখ লাখ মানুষ রাজপথে নেমে আসলো, তাদের চাওয়াটা কী? প্রত্যাশা কী?
যে মানুষটার রাষ্ট্রের কোন গুরুত্বপূর্ণ পদে যাওয়ার প্রত্যাশা নেই, কোনো দিন রাজনীতি করে নাই,করবেও না কিন্তু জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল, সে কী চায়? জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতিতে এইসব প্রশ্নের জবাব থাকতে হবে। না হয় সব তত্ত্ব এবং তথ্যই ব্যর্থতায় নিমজ্জিত হবে। বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের যত কর্মী মাঠে নেমেছিল জুলাই গণঅভ্যুত্থানে এর চেয়ে অনেক বেশি ছিল সাধারণ মানুষ, যারা কোনো দিন রাজনীতি করেনি কিংবা করবে না। তাদের জন্য রাজনৈতিক দল গুলোর বক্তব্য কী- সেটাই হবে সামনের দিনের রাজনীতির মূল জায়গা। যেহেতু চিন্তা, বিশ্বাস এবং রাজনৈতিক দর্শনের বৈচিত্র্য এই রাষ্ট্রে ব্যাপক আকারে দৃশ্যমান, সে জন্যই নতুন বাংলাদেশে নতুন দিনের রাজনীতিতে প্রয়োজন -"সমস্যা সমাধানের রাজনীতি"।
এই 'সমস্যা সমাধানের রাজনীতি'র মূল বক্তব্য হবে- রাষ্ট্র নাগরিকের সমস্যা সমাধানে সর্বাত্মক সহায়তা করবে। রাজনৈতিক দর্শন, ধর্ম, বিশ্বাস, ভিন্ন মতের জন্য কোনো মানুষের উপর রাষ্ট্র কোনো ধরনের বৈষম্য করবে না। মানুষের মৌলিক অধিকার এবং মানবাধিকার রক্ষায় রাষ্ট্র সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। 'সমস্যা সমাধানের রাজনীতি' একটি রাষ্ট্রকে চূড়ান্ত পর্যায়ে welfare state বা কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলবে। একটি কল্যাণ রাষ্ট্রে কোনো মানুষ তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়না।
সমস্যা সমাধানের রাজনীতি বাস্তবায়নে রাষ্ট্রকে কিছু নাগরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সিরিয়াসলি কাজ করতে হবে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতি গণমানুষের সমস্যা সমাধানের কারণ হয়ে উঠুক।
লেখক : সহ-সভাপতি, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, কেন্দ্রীয় সংসদ।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে : তারেক রহমান
ঋণখেলাপিরা যাতে মনোনয়ন না পায় চেষ্টা করবো : মির্জা ফখরুল
অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর না হলে রাজনৈতিক সংস্কার টেকসই হবে না : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
টিসিবি’র এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর মধ্যে ৩৭ লাখই ভুয়া: বাণিজ্য উপদেষ্টা
ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিশ্চিতে কারখানা পরিদর্শন ভোক্তা অধিকারের
গণপরিবহনে শৃঙ্খলায় কাউন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা
রাজধানীর তিন পার্কে ভেন্ডারের চুক্তি : শর্ত ভঙ্গের তদন্তে ডিএনসিসি
বাবা-মায়ের পুরোনো বাড়িতে যাই : শফিকুল আলম
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় ১৫০ কোটি টাকা অনুদান
২০২৪ সালে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
ভারতীয় ৭২ গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে অপতথ্য প্রচার
লেবানন থেকে দেশে ফিরলেন আরো ৪৭
প্লাটফর্ম বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত
শক্তিশালী অর্থনীতি ও গর্বিত জাতি গড়তে শহীদ জিয়ার দর্শন ধারণ করতে হবে : আমির খসরু
কী আছে তৌফিকার লকারে?
ঘটনার তিনদিন পর থানায় মামলা
অনিয়ম ঢাকতে তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের পাঁয়তারা
শেবাচিম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের দুরবস্থা
৯৬টি সিএনজি ভাঙ্গাড়ি হিসাবে সাড়ে ১১ লাখ টাকায় বিক্রি
৩১ দফা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে রূপগঞ্জে বিএনপির সমাবেশ