অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হাসিনার গণহত্যা মামলার দ্রুত তদন্ত চলছে
২২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫:৪০ পিএম | আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:০৪ পিএম
সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-জনতা গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা সকল মামলার তদন্ত কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে চলেছে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
সম্প্রতি দৈনিক ইনকিলাবের সহাকারী সম্পাদক মেহেদী হাসান পলাশকে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে তিনি এই তথ্য জানান।
চিফ প্রসিকিউটর গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে এক দীর্ঘ সাক্ষাতকারে বলেন, এই মুহূর্তে রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার হচ্ছে জুলাই-আগস্ট গণহত্যার বিচার করা। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সহ বর্তমান সরকারের প্রত্যেকেই বলছেন, আমাদের মূল অগ্রাধিকার হচ্ছে বাংলাদেশের গত ১৫ বছরের গুম-খুন বিশেষ করে জুলাই-আগস্ট গণহত্যার সাথে জড়িতদের বিচার করে এই জাতিকে কলঙ্ক মুক্ত করা। শহিদ ও নির্যাতিতদের প্রতি রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা পালন করা।
তাজুল ইসলাম বলেন, মামলার তদন্ত কাজ চলছে। পাশাপাশি আমরা ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর কাছ থেকে অভিযোগ শুনেছি। জুলাই-আগস্টের অপরাধটা ৫৬ হাজার বর্গমাইলের সারা বাংলাদেশ জুড়ে হয়েছে। হাজার হাজার অপরাধী এর সাথে জড়িত। পুলিশ-র্যাব সহ বিভিন্ন বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি অক্সিলারি ফোর্স হিসেবে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ সশস্ত্র অবস্থায় নিরস্ত্র নিরাপরাধ ছাত্র-জনতার ওপর হামলা করেছে, তাদের হত্যা করেছে।
গণহত্যা মামলার তদন্ত অগ্রগতি নিয়ে তিনি আরও বলেন, মামলার যে ব্যাপকতা তাতে আমাদের (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল) তদন্ত সংস্থার একসাথে দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করা প্রায় অসম্ভব। এটার জন্য অনেকটা সময় লাগবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, যারা মূল পারপ্রিয়েটর-সুপিরিয়র ছিলেন, কমান্ডার ছিলেন বিশেষ করে একজন ব্যক্তি যাকে ক্ষমতায় রাখার জন্য এবং যার ক্ষমতায় থাকার অভিচ্ছা পূরণ করতে গিয়ে পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে অপরাধী সংগঠনের মতো করে ব্যবহার করেছেন। তার বিচার সর্বাগ্রে করার জন্য সংশ্লিষ্ট মামলাগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।
‘‘সেই ক্ষেত্রে শীর্ষ কমান্ডার ওই সময়কার স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী এবং তার যারা প্রধান কমান্ডার ছিলেন, তাদের মামলাগুলো তদন্তে আগে নিয়ে এসেছি। আমরা দৃড়ভাবেই আশাবাদি, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই অন্তত শেখ হাসিনার গণহত্যার সংশ্লিষ্ট মামলাগুলোর তদন্ত প্রতিবেদন পেয়ে যাবো। আমাদের তদন্ত সংস্থা দিনরাত এটা নিয়ে কাজ করছে’’, বলেন তাজুল ইসলাম।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর যে প্রধান রেসপনসিবিলিটি, সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি রয়েছে সেটা প্রমাণ করার জন্য মেটারিয়াল পেয়েছি। প্রতিটা শহিদ পরিবার আমাদের কাছে আলাদাভাবে অভিযোগ নিয়ে এসেছেন। সেখানে তারা মাঠে যাদের দেখেছেন যাদের চিহ্নিত করেছেন যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন। তাদের প্রত্যেককে এখানে বিচারের জন্য আনতে একটু সময় লাগবে।
তদন্ত প্রক্রিয়ায় সময় লাগার কারণ ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, আমরা ভিডিও ফুটেজগুলো দেখে জড়িতদের শনাক্ত করছি। অনেকক্ষেত্রে ভিডিও ফুটেজ নাই। যাত্রাবাড়ীতে কয়েক দিনব্যাপী কয়েকশ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এখানে কোন কোন পুলিশ অফিসার ছিল। যারা পোস্টেড ছিলেন সেই পোস্টেড পুলিশ অফিসার বা সদস্যদের বাইরেও সেখানে বাইরে থেকে প্রচুর বাহিনীকেও নেওয়া হয়েছে হত্যাকাণ্ডগুলো সংঘটিত করার জন্য।
‘‘তারা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে চলে গেছে। কোথাও কোনো রেকর্ড সংগ্রহ করা হয়নি। পুলিশ অপারেশনে গেলে কমান্ড সারটিফিকেট (সিসি) থাকে, সেগুলো কিন্তু করেনি। তাদেরকে হুকুম দিয়েছে একদম পেটোয়া বাহিনীর মতো গুলি করে মানুষ মেরে আবার চলে এসেছে। এই লোকগুলোকে শনাক্ত করার জন্য আমরা প্রযুক্তির সহযোগিতা নিচ্ছি। শনাক্ত করার চেষ্টা করছি এই সময় কারা সেখানে উপস্থিত ছিল’’ বলেন চিফ প্রসিকিউটর।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, এই জটিল তদন্ত্র প্রক্রিয়া সম্পন্নের জন্য আমাদের অনেকটা সময় প্রয়োজন। ভুক্তভোগী পরিবারের অনেকেই অভিযোগ করছেন, তাদের আসামিকে ধরা যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে সমস্যা একটাই যে, তাদের শনাক্ত করার কাজটা একটু সময়সাপেক্ষ। কিন্তু তাদের প্রত্যেককেই ধরা পড়তে হবে।
তিনি বলেন, বাস্তবিক সমস্যা হচ্ছে, পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে আমরা ওই পুলিশকেই আবার ব্যবহার করছি এবং গ্রেফতার করার কাজটা তারাই করছেন। সেক্ষেত্রে অনেক অপরাধী আমরা ধরতে পারছি না। আমাদের (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল) তদন্ত সংস্থার হাতে কিন্তু গ্রেফতারের ক্ষমতা নেই। এটা গ্রেফতার করে পুলিশ। সেই জায়গা থেকে গ্রেফতারের ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি নেই। গোটা পুলিশ ব্যবস্থায় ভেঙে পড়েছিল। এখনও ভঙুর অবস্থায় আছে। যদিও অনেকটা উন্নতি হয়েছে। এই কারণে তাদের ধরতে রাষ্ট্রের একটু সময় লাগছে। এটার বিকল্প ম্যাকানিজম বের করা সহজ নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
মাদারীপুরে হত্যার দায়ে ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
রোহিতকে পাকিস্তানে পাঠাবে না ভারত
র্যাগিংয়ের দায়ে অভিযুক্ত ১৩ শিক্ষার্থীকে শোকজ
দাউদকান্দিতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২
সাতক্ষীরায় ইজিবাইকের ধাক্কায় শিশু নিহত
কুয়েট ভাইস-চ্যান্সেলরের সাথে অফিসার্স এসোসিয়েশনের নব-নির্বাচিত নেতৃবৃন্দের সাক্ষাৎ
হরিপুরে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে গণপিটুনিতে, প্রাণ গেল যুবকের
বাংলাদেশে তৈরি এয়ার কন্ডিশনার বাজারে নিয়ে এসেছে প্যানাসনিক
মহার্ঘ ভাতার সঙ্গে ভ্যাট বাড়ানোর সম্পর্ক নেই: অর্থ উপদেষ্টা
মেক্সিকো উপসাগরের নাম পরিবর্তন নিয়ে যা বললেন মেক্সিকান প্রেসিডেন্ট
প্রয়োজনে এনটিআরসিএ’র মাধ্যমে একসঙ্গে নিয়োগ-এমপিভুক্তি: শিক্ষা উপদেষ্টা
লক্ষ্মীপুরে সড়কে অবৈধ ড্রাম ট্রাক বন্ধের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
গোবিন্দগঞ্জে অগ্নিকাণ্ডে ১০ পরিবার সর্বস্বান্ত, ৭টি গরুর মৃত্যু
বিপিএলে তানজিদের ছক্কার রেকর্ড
ট্রাম্পের গণ-নির্বাসন এবং আইসিই অভিযান পরিকল্পনা কীভাবে কাজ করছে?
নতুন বাংলাদেশে চাঁদাবাজদের ঠাঁই নেই -মাওলানা ইমতিয়াজ আলম
বেক্সিমকোর শ্রমিকদের নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ, বাস ও ট্রাকে আগুন
ভোলা-৩ আসনের সাবেক সাংসদ শাওন এর মিথ্যা অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বিএনপির সংবাদ সম্মেলন
গভীর রাতে জানালার গ্রীল কেঁটে কচুয়ায় প্রবাসীর বাড়ীতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি
হাসিনাকে 'মা' ডেকে অনুতপ্ত নন জয়, প্রয়োজনে ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে ডাকবেন বাবা