ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে গণমিছিল পূর্ব সমাবেশে মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক বলেন, সারা পৃথিবীতে আজ দুটি জনপদ সবচেয়ে বেশি সমালোচিত। একটি গাজা ভূখণ্ড—যেখানে বর্বর ইসরাইলের গণহত্যা চলছে। আরেকটি হলো চল্লিশ কোটি মুসলমানের ভারত। সেখানে কসাই মোদি সরকার ভারতকে মুসলিমশূন্য করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ভারতের প্রায় নয় লক্ষ একর ওয়াকফকৃত সম্পত্তিতে লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে গুজরাটের কসাই বাহিনীর। ওয়াকফ সংশোধনী বিলের নামে মুসলমানদের ভারত থেকে তাড়ানোর পাঁয়তারা করা হচ্ছে। আমরা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই চরম বিতর্কিত বিল বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।

সেই সঙ্গে বিশ্বমানবতার কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, যেভাবে গাজাবাসির পক্ষে বিশ্ব মানবতা রাজপথে নেমে এসেছে, একইভাবে ভারতের ত্রিশ কোটি মুসলিমদের পক্ষেও নেমে আসুন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মাদ ইউনুসকে উদ্দেশ্য করে মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক বলেন, ভারতের আধিপত্যবাদের টুটি চেপে ধরুন। কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। আঞ্চলিক জোটকে শক্তিশালী করে ভারতের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক যুদ্ধ ঘোষণা করুন। বাংলাদেশের মানুষের পালস বুঝুন। তারা আরো কিছু সহ্য করে নিলেও ভারত তোষণ সহ্য করতে পারে না।

ভারতের বিতর্কিত ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৫ বাতিল এবং দেশটিতে মুসলিমদের ওপর চলমান নিপীড়ন, হত্যাকাণ্ড ও ধর্মীয় বৈষম্যের প্রতিবাদে আজ বুধবার বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের উদ্যোগে ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে গণমিছিল ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি পালন উপলক্ষে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেইটে বিক্ষোভ সমাবেশে মাওলানা মামুনুল হক এসব কথা বলেন। পরে ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে গণমিছিল শুরু হয়। মিছিলটি শান্তিনগর মোড়ে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বারিধারাস্থ ভারতীয় দূতাবাসে গিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেন।

গণমিছিলে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক। সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা ফয়সাল আহমাদ ও মাওলানা এনামুল হক মুসার যৌথ পরিচালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, নায়েবে আমীর মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী, সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট মাওলানা শাহীনূর পাশা চৌধুরী, মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমাদ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, মাওলানা তোফাজ্জল হুসাইন মিয়াজী, মাওলানা নূর হোসাইন নূরানী, খেলাফত শ্রমিক মজলিসের সদস্য সচিব মাওলানা আবু সাঈদ নোমান, খেলাফত যুব মজলিসের সভাপতি মাওলানা জাহিদুজ্জামান, খেলাফত ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মাদ আব্দুল আজিজ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মাওলানা সানাউল্লাহ আমিনী, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মাওলানা আনোয়ার হুসাইন রাজী।

সমাবেশে মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিম নির্যাতন নিপীড়নের ব্যাপারে বাংলাদেশের দায় সবচেয়ে বেশি। ভারতের মুসলমানরা যেকোনো কর্মসূচি গ্রহণ করলে বাংলাদেশের মুসলমানরা তাদের সমর্থন করবে। প্রতিটি জুলুমের বিরুদ্ধে ভারতের মুসলমানদের পক্ষে বাংলাদেশের মুসলমানরা বলিষ্ঠ ভূমিকায় থাকবে। প্রয়োজনে পুরো উপমহাদেশের মুসলমানদেরকে নিয়ে উগ্র-হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে গোটা ভারত-উপমহাদেশীয় ঐক্য গড়ে তোলা হবে।

সমাবেশে মাওলানা মামুনুল হক ইসলাম বিদ্বেষী নারী সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান ও বর্তমান কমিশন বাতিল করে পুনর্গঠন করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে কোন সরকারই বাংলাদেশে এক মুহূর্তও টিকতে পারবে না।

সমাবেশে সংগঠনের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দিন আহমাদ বলেন, অবিলম্বে বিতর্কিত ওয়াকফ সংশোধনী বিল বাতিল করতে হবে। অন্যথায় দেশের জনগণ ভারত অভিমুখে লংমার্চ করতে বাধ্য হবে। সরকারপ্রধানকে বলছি, ভারতের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে নিন্দা জানাতে হবে। স্মারকলিপিতে ভারতের মুসলমানদের ওপর চলমান নিপীড়ন ও বিতর্কিত ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়।

প্রথমত ভারতের সংসদে পাস হওয়া ‘ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৫’ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে, ভারতের মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, মসজিদ, মাদরাসা ও ইসলামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের নিরাপত্তা বিধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, মুসলিমবিরোধী হিংসা, হত্যা এবং বৈষম্যমূলক আইনসমূহ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। ভারতের মুসলমানদের ওপর পরিচালিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে।