বৈষম্যের শিকার বঞ্চিত কর্মকর্তাদের পদায়ন দাবি

প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরাতে আইনের সংশোধন আনছে সরকার

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩৮ এএম | আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩৮ এএম

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আট মাস পেরিয়ে গেলেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে শৃঙ্খলা ফেরেনি। কয়েকজন উপদেষ্টার কারণে প্রশাসনে গতি ফিরছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। অবশেষে প্রশাসনে বদলি নিয়োগ বাণিজ্য ঠেকাতে কঠোর হয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

গত ১৭ বছর রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় চাকরিচ্যুত প্রশাসনে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের ভ‚তাপেক্ষ পদোন্নতি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে আট মাসেও বঞ্চিত কর্মকর্তাদের পদায়ন বা পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে না। প্রশাসনে উপসচিব থেকে সচিব পদে পদোন্নতির কোটাসহ জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। জনগণের সেবাকে সহজ ও হয়রানিমুক্ত করতে যে কমিশন গঠিত হয়েছিল, তা নিয়েই এখন বিভিন্ন ক্যাডারের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে। আন্তঃক্যাডার বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করেছে। ক্যাডার সংগঠনগুলো সরকারি চাকরির আচরণবিধির বাইরে গিয়ে নিজেদের স্বার্থ নিয়ে অফিসের বাইরেও প্রতিবাদমুখর হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ সংশোধনের পরিকল্পনা করছে, যার মাধ্যমে দাফতরিক কাজে বিঘœ সৃষ্টি করা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত ছাড়াই আট দিনের নোটিশে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়ার বিধান অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অপর দিকে, ফ্যাসিস্ট আমলে বৈষম্যের শিকার বর্তমানে কর্মরত সকল ক্যাডার, নন-ক্যাডার কর্মকর্তা/কর্মচারীদের মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ অন্যান্য সংস্থা/দফতরের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করতে হবে। বৈষম্যের শিকার এখনো বঞ্চিত সকল ক্যাডার, নন-ক্যাডার কর্মকর্তা/কর্মচারীদের পদোন্নতিসহ নিয়োগের দাবি জানিয়ে আসছে বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম।

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে পেশাগত দ্ব›দ্ব, কিছু কর্মচারীর কর্মস্থলে অনুপস্থিতি, সচিবালয়ে কর্মকর্তাদের রুমে হাতাহাতি, সচিবের রুম আটকিয়ে আন্দোলনসহ বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার এমন উদ্যোগ নিচ্ছে। সংশোধিত আইনটি কার্যকর হলে, সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ কোনো সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে তদন্ত ছাড়াই আট দিনের নোটিশে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে পারবে। এই সিদ্ধান্তের জন্য পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) মতামত বা পূর্বানুমতির প্রয়োজন হবে না। এতে বলা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অন্তত পাঁচটি দায়িত্বশীল সূত্র আইন সংশোধনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। কর্মকর্তরা জানিয়েছেন, ২০১৮ সালে বাতিল হয়ে যাওয়া ‘সরকারি কর্মচারী (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশ, ১৯৭৯’-তে যা ছিল, সরকারি কর্মচারী আইনে তা প্রতিস্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আইনের খসড়াটি প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদন পেলে মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন হবে। বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের সভাপতি এ বি এস আব্দুস সাত্তার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হচ্ছেÑ সিভিল প্রশাসনে কর্মরত সকল ক্যাডার, নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে যারা ফ্যাসিস্টদের দোসর ও দুর্নীতিপরায়ণ তাদের অবিলম্বে চাকরি থেকে অপসারণ এবং আইনের আওতায় আনতে হবে। নিরপেক্ষ প্রশাসনিক কাঠামো নিশ্চিত করার স্বার্থে সকল চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করতে হবে। ফ্যাসিস্ট আমলে বৈষম্যের শিকার বর্তমানে কর্মরত সকল ক্যাডার, নন-ক্যাডার কর্মকর্তা/কর্মচারীদের মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ অন্যান্য সংস্থা/দফতরের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করতে হবে। বৈষম্যের শিকার এখনো বঞ্চিত সকল ক্যাডার, নন-ক্যাডার কর্মকর্তা/কর্মচারীদের পদোন্নতিসহ প্রাপ্য সুবিধা দিতে হবে। ফ্যাসিস্টের দোসর ও দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা/কর্মচারীদের পদোন্নতি/পদায়নে যারা পৃষ্ঠপোষকতা করছেন এবং করবেন, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক সচিব আব্দুল আওয়াল মজুমদার জানান, ১৯৭৯ সালের বিশেষ বিধানটি অনেক কঠোর, কেউ কেউ কালো আইন বললেও বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রশাসন চালাতে গেলে এই আইনের প্রয়োজনীয়তা আছে। তিনি বলেন, সরকার চাইলে চাকরিতে অনুপস্থিত কর্মচারীকে আট দিনের নোটিশে চাকরিচ্যুত করতে পারবে। এর জন্য পিএসসির মতামত বা তদন্তের প্রয়োজন হবে না বলেও জানান তিনি। জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বর্তমান প্রশাসনিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এই ধরনের বিধান প্রয়োজনীয়। তবে, এই বিধান প্রয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা জরুরি, যাতে কোনো কর্মচারী অন্যায়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হন।
এ বিষয়ে প্রশাসন ও স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহিদ খান বলেন, আসলে রহিত অধ্যাদেশটি ছিল একটি কালো আইন। এ কারণে রহিত হয়েছিল। এটি ফের বহাল হলে তা হবে আত্মঘাতী। ২৫ বছর পর চাকরি থেকে বরখাস্ত করার বিধানটি বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে মুয়ীদ কমিশনের প্রতিবেদনেও। সুতরাং এটি বহাল কোনোভাবেই কাম্য নয়।

 

 

 

 


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

প্রকাশিত হলো আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২০ আসামির মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনের যাবজ্জীবন বহালের রায়
স্বাধীন কণ্ঠের আহ্বান: বিভক্ত বিশ্বের বিপরীতে মুক্ত গণমাধ্যম
কৈফিয়ত
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয় করণের ঘোষণা দ্রুত বাস্তবায়নে দাবি
হেফাজত ইসলামের সমাবেশে শাপলা চত্বরে গণহত্যার তদন্ত কমিটি গঠন হলো না কেন?
আরও
X

আরও পড়ুন

মেয়র ঘোষনার দাবী মুফতি ফয়জুল করিমের

মেয়র ঘোষনার দাবী মুফতি ফয়জুল করিমের

প্রকাশিত হলো আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২০ আসামির মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনের যাবজ্জীবন বহালের রায়

প্রকাশিত হলো আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২০ আসামির মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনের যাবজ্জীবন বহালের রায়

স্বাধীন কণ্ঠের আহ্বান: বিভক্ত বিশ্বের বিপরীতে মুক্ত গণমাধ্যম

স্বাধীন কণ্ঠের আহ্বান: বিভক্ত বিশ্বের বিপরীতে মুক্ত গণমাধ্যম

সখিপুরে দুইজনের অপমৃত্যু

সখিপুরে দুইজনের অপমৃত্যু

কুষ্টিয়ার খোকসায় প্রধান সড়ক বেহাল দশা; ১৫ বছরেও হয়নি সংস্কার

কুষ্টিয়ার খোকসায় প্রধান সড়ক বেহাল দশা; ১৫ বছরেও হয়নি সংস্কার

তালপাতার পাখা: প্রয়োজন কমেছে, আবেদন কমেনি

তালপাতার পাখা: প্রয়োজন কমেছে, আবেদন কমেনি

কুষ্টিয়ার মিরপুরে দুই পুলিশকে হাতুড়িপেটা করলো আসামি

কুষ্টিয়ার মিরপুরে দুই পুলিশকে হাতুড়িপেটা করলো আসামি

অগ্নি দগ্ধ হয়ে মারা গেলেন সংগীতশিল্পী জিল

অগ্নি দগ্ধ হয়ে মারা গেলেন সংগীতশিল্পী জিল

  
কাশ্মীর ঘিরে নাটকীয়তার দাপটে হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃত সংবাদ

কাশ্মীর ঘিরে নাটকীয়তার দাপটে হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃত সংবাদ

গাজায় নিহত ২ শতাধিক সাংবাদিক, জাতিসংঘের সতর্কতা জারি

গাজায় নিহত ২ শতাধিক সাংবাদিক, জাতিসংঘের সতর্কতা জারি

সিঙ্গাপুরে নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে, মুখ্য ইস্যু ব্যয়-নেতৃত্বের বদল

সিঙ্গাপুরে নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে, মুখ্য ইস্যু ব্যয়-নেতৃত্বের বদল

কৈফিয়ত

কৈফিয়ত

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয় করণের ঘোষণা দ্রুত বাস্তবায়নে দাবি

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয় করণের ঘোষণা দ্রুত বাস্তবায়নে দাবি

হেফাজত ইসলামের সমাবেশে শাপলা চত্বরে গণহত্যার তদন্ত কমিটি গঠন হলো না কেন?

হেফাজত ইসলামের সমাবেশে শাপলা চত্বরে গণহত্যার তদন্ত কমিটি গঠন হলো না কেন?

নেত্রকোনার কলমাকান্দায় ট্রাক চাপায় এক শিশু নিহত

নেত্রকোনার কলমাকান্দায় ট্রাক চাপায় এক শিশু নিহত

এলপি গ্যাসের দাম বাড়বে না কমবে—জানা যাবে রবিবার

এলপি গ্যাসের দাম বাড়বে না কমবে—জানা যাবে রবিবার

কোরআন সুন্নাহ বিরোধী প্রতিবেদন বাতিলে কঠিন হুঁশিয়ারি হেফাজতের

কোরআন সুন্নাহ বিরোধী প্রতিবেদন বাতিলে কঠিন হুঁশিয়ারি হেফাজতের

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য বহিরাগত প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য বহিরাগত প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা

যুক্তরাষ্ট্রে বাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ৭, আহত ৮

যুক্তরাষ্ট্রে বাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ৭, আহত ৮

এবার উটের দুধের ব্যবসা করবেন মিষ্টি জান্নাত

এবার উটের দুধের ব্যবসা করবেন মিষ্টি জান্নাত