নতুন প্রেসিডেন্টে আগ্রহ কম, মূল লক্ষ্য নির্র্দলীয় সরকার: মির্জা ফখরুল
২৪ এপ্রিল ২০২৩, ০৭:১৪ পিএম | আপডেট: ০১ মে ২০২৩, ১২:১৫ এএম
দেশের ২২তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন মো. সাহাবুদ্দিন। তাঁকে নিয়ে বিএনপির আগ্রহ কম জানিয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে যে রাজনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে সেদিকেই বিএনপির মূল দৃষ্টি। তিনি বলেন, আজকে নির্বাচন প্রক্রিয়া গণতান্ত্রিক নয়, নির্বাচন যদি গ্রহণযোগ্য না হয়, আমরা যদি অংশগ্রহণ করতে না পারি, বিরোধী দলগুলো যদি অংশগ্রহণ করতে না পারে। একটা নিরপেক্ষ সরকার যদি না হয়, তাহলে সবকিছুই অহেতুক, অর্থহীন হয়ে যাবে। সে কারণেই আমরা তার উপরে জোর দিচ্ছি।
সোমবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। সংবিধান অনুযায়ি প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন রাষ্ট্রের প্রধান অভিভাবক। যদিও তার নির্বাহী ক্ষমতা অত্যন্ত সীমিত। দুই-একটি বিষয় ছাড়া প্রেসিডেন্টের তেমন কোন ফাংশন নেই। সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও কিছু আনুষ্ঠানিকতা, প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগের মধ্যে সীমাবদ্ধ। দৈনিন্দিন বিষয় ও রাজনীতিতে তার কোন ভূমিকা নেই। সংসদে তিনি বছরে একবার বক্তৃতা করেন, সেটাও সরকার তৈরি করে দেয়। সংসদীয় সরকার পদ্ধতিতে সাধারণত প্রেসিডেন্টের ভূমিকা সীমিতই থাকে। কিন্তু তারপরও উনি রাষ্ট্রের প্রধান, স্বাভাবিকভাবেই দেশে বর্তমানে যে রাজনৈতিক পরিবেশ বিরাজ করছে এই সময়ে তার গুরুত্ব কম তা মনে করি না। কারণ সামনে যে নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনের উপর এই দেশের ভবিষ্যত নির্ভর করছে। বর্তমানে যে রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে সেই সঙ্কটকে খাটো করে দেখার কোন কারণ নেই। দেশে বিরোধী দল বলতে সংসদে যেটা থাকার কথা সেটা নেই, বাইরে প্রধান প্রধান বিরোধীদলগুলো যারা আছে তারা সকলেই বলছে যে আসন্ন নির্বাচনে সরকারের অধীনে হওয়ার কোন সুযোগ নেই। তত্ত্বাবধায়ক তথা নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলা হয়েছে। এই বিষয়ে আবার যারা ক্ষমতায় আছে, যেকোন উপায়ে হোক তারা ক্ষমতায় আছে, তারা আবার ভিন্নমত পোষণ করছে। এখানে পয়েন্ট অব নো রিটার্নের মতো অবস্থায় আছে।
তিনি বলেন, অতীতে দেখেছি যে, যাদের প্রেসিডেন্ট নিয়োগ দেয়া হয়েছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মো. আব্দুল হামিদ সাহেব পর্যন্ত রাজনীতিতে দীর্ঘকাল অভিজ্ঞ, প্রধান বিচারপতি, গ্রহণযোগ্য, প্রফেসর, ভাইস-চ্যান্সেলর, বরেন্য ব্যক্তি, যাদেরকে গোটা দেশের মানুষ শ্রদ্ধা করে, সম্মান করে পরিচিত এই সমস্ত ব্যক্তিরাই প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পেয়েছেন।
কিন্তু এবার প্রেসিডেন্ট নিয়োগ সকলের কাছেই হঠাৎ করে, অপ্রত্যাশিতভাবে এসেছে। নতুন যিনি প্রেসিডেন্টের শপথ নিয়েছেন তার সম্পর্কে আমি কোন মন্তব্য করতে চাই না। জনগণের কাছে উনার নামটা আসেনি, পরিচিত ছিলেন না। ফলে এখানে সঙ্কট কাটিয়ে উঠার ব্যাপারে একটি সন্দিহান আছে। প্রশ্ন আছে যে, উনি কি ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন। পত্র-পত্রিকায় উনার যে ব্যাকগ্রাউন্ড দেখেছি যে, জেলা সিনিয়র জজ হিসেবে তার কর্মকাল ছিলেন, পরে তিনি দুদকে কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন।
রাজনৈতিক সঙ্কট চরমভাবে ঘনিভূত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে, সরকারের উদ্দেশ্যই হচ্ছে একটা দলীয় সরকারের দিকে যাচ্ছে, ইতোপূর্বেও তারা গেছে, এবারও তারা আগের মতোই ২০১৪, ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন ২০২৩ সালেও করতে চায়। তাদের লক্ষণগুলো এখন পর্যন্ত সেরকমই দেখা যাচ্ছে। তারা পরিষ্কার করে বলছে যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে কোন আলাপ হবে না, বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে কোন আলোচনা হবে না। সঙ্কটটা এই জায়গায়। তাহলে কি নিয়ে আলোচনা করবেন? আমরা তো পরিষ্কার করে বলছি যে, তত্ত্বাবধায়ক, নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া আমরা নির্বাচনেই যাবো না। সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। শুধু আমরা না, বহির্বিশ্বের যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে তারাও বলছে যে, বাংলাদেশের জন্য, বাংলাদেশের মানুষের জন্য, ভবিষ্যতের অগ্রগতি, উন্নয়নের জন্য একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন খুব জরুরি। এই বিষয়টাতে তারা আগ্রহী না। তারা আগের মতোই ক্ষমতায় থাকার জন্য এককভাবে নির্বাচন করে ফেলতে চায়। তার জন্য তারা সব প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই প্রেসিডেন্টের দিকে জনগণের একটা প্রত্যাশা থাকবে। তিনি কতটুকু ভূমিকা পালন করতে পারবে কি পারবেন না? এখন পর্যন্ত যতটুকু দেখেছি সে ধরণের জনগণ যে আশ্বস্ত হবে আশা করবে, প্রত্যাশা করবে সেধরণের কিছু দেখিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, তিনি (নতুন প্রেসিডেন্ট) যে ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছেন, যে প্রক্রিয়ায় তাকে নির্বাচন করা হয়েছে তাতে জনগণের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে বর্তমান সরকার প্রধানেরই তিনি সবচেয়ে বেশি আস্থাভাজন। কারণ আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ তারা কেউ এ বিষয়ে জানতেন না। তিনিই (প্রধানমন্ত্রী) এককভাবে নির্বাচন করেছেন, সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগ পারতো সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে এমন কোন ব্যক্তিতে নির্বাচিত করতে। এখান থেকেই বোঝা যায় যে তাদের ইচ্ছা হচ্ছে সমস্ত রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণ করে যে কোনভাবেই হোক আবারো ক্ষমতায় আসা, ক্ষমতা ধরে রাখা।
বিএনপির অন্যতম এই শীর্ষ নেতা বলেন, দেশে রাজনৈতিক সঙ্ঘাতকে এড়িয়ে কোন কিছু করতে হয় তাহলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি চূড়ান্ত করতে হবে। ওটাই একমাত্র সমাধান। সেটাই হলো দেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ, গণতান্ত্রিক পরিবেশ ধরে রাখার একমাত্র পথ।
দাবি আদায়ে বিএনপির আন্দোলন চলমান রয়েছে জানিয়ে দলটির মহাসচিব বলেণ, ইতোমধ্যে আমাদের ১৭ জন প্রাণ দিয়েছেন। হাজার হাজার মানুষের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, এখনো শত শত মানুষ কারাগারে রয়েছে। আমাদের আন্দোলন চলমান আছে। মাঝখানে রোজা-রমজান ছিল, কিন্ত তারপরও আমরা ইউনিয়ন পর্যন্ত অবস্থান ধর্মঘট করেছি। আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। সামনে আরো বেগবান হবে। সরকারের আচরণের উপর নির্ভর করবে সামনে আন্দোলন ধরন কেমন হবে। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ও মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান।
বিভাগ : রাজনীতি
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান