ভারতের সাথে চুক্তি দেশকে আজীবন গোলামে পরিণত করবে: মির্জা ফখরুল
০১ জুলাই ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৪, ১২:০১ এএম
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে যে ১০টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে একে ‘গোলামির নবতর সংস্করণ’ অভিহিত করে তা প্রত্যাখান করেছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জনগণের ভোটাধিকার হরণকারী বর্তমান অবৈধ মাফিয়া সরকার প্রধান শেখ হাসিনা ভারতের সাথে ১০টি সমঝোতা স্মারক সই করেছে তা গোলামির নবতর সংস্করণ। কানেকক্টিভিটি নামে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের এক অংশ থেকে আরেক অংশ পর্যন্ত রেল যোগাযোগের নামে করিডোর প্রদানের মাধ্যমে যা করা হয়েছে তাতে আমাদের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। তিনি বলেন, গত ২২ জুন ভারতের সাথে সমঝোতার আড়ালে যেসকল চুক্তি করা হলো তা বাংলাদেশকে আজীবনের জন্য ভারতের গোলামে পরিণত করবে। এরফলে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা বিপন্ন হবার আশংকা দেখা দিয়েছে। আমরা পুনর্ব্যক্ত করতে চাই, সার্বভৌমত্ব, জাতীয় নিরাপত্তা বিরোধী এই সকল চুক্তি জনগণ কখনো মেনে নেবে না। বিএনপি এই সকল দেশবিরোধী চুক্তি-সমঝোতা প্রত্যাখান করছে।
রোববার (৩০ জুন) গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সম্পাদিত চুক্তি ও সমঝোতার নানা দিক তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।
ভারতের সাথে চুক্তি ও সমঝোতার বিভিন্ন বিষয়গুলো দেশের স্বার্থের সম্পূর্ণ বিরোধী উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এসব চুক্তি-সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে আমাদের দেশের প্রতিরক্ষা ও জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টি ভারতের জাতীয় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার অংশে পরিণত করা হয়েছে। যা খুবই বিপদজনক এবং দেশের স্বাধীনতার প্রতি হুমকি। এটি শান্তির সহাবস্থান ও জোট নিরপেক্ষ নীতির পরিপন্থি। বস্তুত এই সকল সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতিতে নিরাপত্তার কৌশলগত ‘বাফার স্টেট’ হিসেবে ভারতকে ব্যবহারের সুযোগ দিতে চায়। এর ফলে বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবে আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার জটিলতার মধ্যে জড়িয়ে পড়বে। যে ৭টি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে সেগুলোর প্রায় সবগুলোই দেশের উত্তরাঞ্চল কেন্দ্রিক। প্রয়োজনের সময়ে বাংলাদেশ ভূখ-কে ভারতের সামরিক ও বেসামরিক পণ্য পরিবহনের জন্য কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ‘চিকেন নেক’কে বাইপাস করে ব্যবহার করার সুদূরপ্রসারি মহাপরিকল্পনা থেকেই এসব চুক্তি করা হয়েছে বলে আমরা মনে করি। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে জলাঞ্জলি দিয়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে দীর্ঘ মেয়াদে ভারতের গোলামি চুক্তির গভীর ফাঁদে ফেলার সেই ঘৃণ ষড়যন্ত্রের লিপ্ত হয়েছে।
সম্পাদিত চুক্তি ও সমঝোতায় দেশের প্রাপ্তি শূণ্য উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, নানা নাম দিয়ে যে দশটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হলো তাতে বাংলাদেশের প্রাপ্তি শূণ্য। দেশের স্বার্থ সংরক্ষণের চাইতে ভারতের কাছে শেখ হাসিনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের দায়বদ্ধতা থেকে এসব স্মারক সই হয়েছে তা জনগণের কাছে স্পষ্ট। এগুলোর সাথে বাংলাদেশের মানুষের আকাক্সক্ষা পুরণের ন্যূনতম সংশ্লিষ্টতা নেই। সেই কারণেই বহু পূর্বে ভারত ঘোষিত সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলারের ভারতীয় চুক্তি (লাইন অব ক্রেডিট-এলওসি) বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া তরান্বিত করার বিষয়ে এই সফর (শেখ হাসিনার সফর) ছিলো নিরব। ডলারকে পাশ কাটিয়ে ভারতীয় মুদ্রায় বাণিজ্য পরিচালনার বিষয়ে উঠে এসেছে আলোচনা, অথচ বাংলাদেশের রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ের অন্যতম প্রধান মুদ্রাই হচ্ছে মার্কিন ডলার। এভাবে একতরফা আগ্রাসী বাণিজ্যে বাংলাদেশকে ভারতের বাজারে পরিণত করা হয়েছে। ট্র্যারিফ, নন-ট্যারিফ ব্যারিয়ার পরিহার করে বিপুল বাণিজ্যিক ঘাটতি কাটিয়ে উঠার কিছুই এসব সমঝোতায় স্থান পায়নি।
তিনি বলেন, এবারে সরকার প্রধানের সফরে তিস্তার পানি প্রবাহ বৃদ্ধি এজেন্ডাতেই ছিল না। অথচ এটাই হওয়া উচিত ছিলো সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরকালে তিস্তা চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। এরপর গত ১৪ বছরে তিস্তা শুকিয়ে মরুভূমিতে পরিণত হলেও এই সংকটের সমাধান হয়নি। এহেন অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার লক্ষ্যে তিস্তার পানি সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প গ্রহন করা হলো। প্রশ্ন হলো, যাদের বিমাতাসুলভ আচরণের কারণে তিস্তার ন্যায্য পানি থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হচ্ছে, সেই তাদেরকেই তিস্তার পানি ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত করলে তা যে স্বার্থ সাংঘর্ষিক ও আত্মঘাতি সেটা দেশের মানুষ বোঝে। তিস্তা প্রকল্প নিয়ে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার বর্তমান অবৈধ সরকার প্রকারান্তরে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের উপর অর্পন করেছে বলে প্রতীয়মান হয়। যা বর্তমান গণবিচ্ছিন্ন সরকারের নতজানু পররাষ্ট্র নীতির বহির্প্রকাশ। সীমান্ত হত্যা বন্ধ নিয়ে সরকারের নিশ্চুপ ভূমিকারও সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব।
ভারত সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্য ‘ভারত যদি তিস্তা প্রজেক্টটা করে দেয়, তাহলে আমাদের সব সমস্যাই তো সমাধান হয়ে গেলো’ এবং তিস্তার পানি অভাবে পর্যদুস্ত অসহায় মানুষের আর্তনাদকে প্রধানমন্ত্রী ‘প্যাঁ প্যাঁ’ বলে আখায়িত করাকে ‘উনি সমগ্র জাতির সাথে তামাশা ও হাস্য রসিকতা করেছে’ বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, বিএসএফের গুলিতে প্রতিবছর রেকের্ড পরিমাণ সীমান্ত হত্যাকা- সংঘটিত হবার পরেও প্রধানমন্ত্রীর সফরে এ বিষয়টি বাংলাদেশ সরকার চূড়ান্তভাবে নির্লিপ্ত থেকেছে। ভারত-নেপাল, ভারত-চীন ও ভারত-পাকিস্তান সীমান্তেও এই পরিমাণ হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটতে দেখা যায় না। কিন্তু বাংলাদেশে অহরহ সীমান্তে হত্যা হচ্ছে।
সকল চুক্তি-সমঝোতা জনসমক্ষে প্রকাশ করার দাবি জানিয়ে বিএনপির অন্যতম এই শীর্ষ নেতা বলেন, এবারে শেখ হাসিনার ভারত সফরটি কার্যত ছিলো একপাক্ষিক। এই সফরে স্বাক্ষরিত কিংবা চুক্তি বাংলাদেশের ন্যূনতম স্বার্থ সুনিশ্চিত করে না। সামরিক সহযোগিতার নামে জাতীয় নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে। ইতোপূর্বে আদানির সাথে বিদ্যুৎ আমদানির অন্যান্য চুক্তি, জ্বালানি ও বিদ্যুতের মতো অধিকতর কৌশলগত পণ্যের জন্য ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা করে তোলার চলমান উদ্যোগ দেশবাসী এবং আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ মহল গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে।
তিনি বলেন, ঢাকা ও দিল্লী নতুন যাত্রা শুরু করেছে, উভয় দেশ দেশ রুপকল্প ২০৪১ ও ভারত ২০৪৭ অনুসরণ করে একটি স্মার্ট বাংলাদেশ নিশ্চিত করার জন ভবিষ্যতের কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হয়েছে- শেখ হাসিনার এই বক্তব্যের মাধ্যমেই তার ভারত সফরের প্রকৃত স্বরুপ উন্মোচিত হয়েছে যা দেশবাসী গভীরভাবে উপলব্ধি করেছে বলে বিএনপি বিশ্বাস করে। আমরা এই সফরসহ ভারতের সাথে ইতোপূর্বে স্বাক্ষরিত সকল চুক্তি জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি জানাচ্ছি।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিশ্বায়ন ও মুক্ত বাজার অর্থনীতির এই যুগে সব বন্ধু রাষ্ট্রের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা, বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অংশীদারিত্ব বাড়াতে নানাভাবে কানেক্টিভিটি তৈরি করার পক্ষেই বিএনপির অবস্থান। কিন্তু সড়কপথ, নৌ পথ বা রেলপথে যেভাবে কানেক্টিভিটি বাড়ানো হোক না কেনো তাতে জাতীয় স্বার্থকে বিবেচনা করতে হবে সর্বাগ্রে। কোনোভাবেই সার্ভৌমত্বের সাথে কম্প্রোমাইজ করা যাবে না। কিন্তু বর্তমান অবৈধ শেখ হাসিনার সরকার অবৈধ ক্ষমতা অটুট রাখার হীন স্বার্থে জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ ও জহির উদ্দিন স্বপন উপস্থিত ছিলেন।
বিভাগ : রাজনীতি
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান