চিরদিনের জন্য বাংলাদেশের মানুষকে ভারতের ক্রীতদাস বানানোর গভীর ষড়যন্ত্র: রিজভী

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

০৩ জুলাই ২০২৪, ০৬:৪১ পিএম | আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৪, ০৬:৪১ পিএম

 

 

 

নানা চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে বাংলাদেশের মানুষকে চিরদিনের জন্য ভারতের ক্রীতদাস বানানোর গভীর ষড়যন্ত্র চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ডামি সরকারের প্রধানমন্ত্রী ভারতের সাথে নানা চুক্তি ও সমাঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছেন। বাংলাদেশের জনগণ এহেন দুই সরকারের সমাঝোতার উদ্যোগ অসম এবং বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী বলে মনে করে। এতে বাংলাদেশের মানুষ তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। ট্রানজিট ও এশিয়ান হাইওয়ের নামে শেখ হাসিনা মূলত ভারতকে করিডোর দিচ্ছেন। চিরদিনের জন্য বাংলাদেশের মানুষকে ভারতের ক্রীতদাস বানানোর গভীর অভিসন্ধি। মঙ্গলবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ১৯৯৬ সালে ভারতের স্ট্র্যাটিজিক এনালাইসিস নামে একটি মাসিক প্রকাশনার রিসার্চ এনালিস্ট সঙ্গীতা থাপলিয়ান লিখেছিলেন-১৯৯৬ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ সরকারের ক্ষমতা গ্রহণকে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের ট্রানজিট পাওয়ার একটি সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হবে। এই রেলওয়ে করিডোর স্থাপনের চুক্তি তারাই প্রতিফলন। বাংলাদেশের মানুষ কখনই দিল্লীর অধীনতা বশ্যতা মানেনি এবং ভবিষ্যতেও মানবেনা, যেমন পিন্ডির বশ্যতা মানেনি। অসংখ্য আত্মহুতি দিয়ে রক্তক্ষয়ি যুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতা, তাই এই স্বাধীনতাকে দুর্বল করা যাবে না।

তিনি বলেন, বিএনপি শাসন আমলে কোন ট্রানজিট আদায় করা ভারতের পক্ষে সম্ভব হয়নি। ভারতের নীতি নির্ধারকরা বাংলাদেশ এবং জনগণের প্রতি তাচ্ছিল্লের দৃষ্টিতে দেখে। অভিন্ন নদীর পানি, সীমান্ত হত্যা, বাণিজ্যিক ভারসাম্যসহ নানা সমস্যা সমাধানে আগ্রহী নয় তারা। ভারতের সাথে অমীমাংসিত বিষয়গুলোকে পাশ কাটিয়ে বাংলাদেশের বুকচিরে রেল লাইন স্থাপন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জনগণের স্বাধীনতাকে অবজ্ঞা করার সামিল।

রিজভী বলেন, শেখ হাসিনা বলেছেন “ইউরোপেতো কোন বর্ডার নেই”, তারা কি বিক্রি হয়ে গেছে? ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলোতো কাছাকাছি অর্থনীতি, সংস্কৃতি এবং একই বর্ণের দেশ। কিন্তু তুরস্ককে নেওয়া হয়নি কেন? ইউরোপের শেনজেনের অন্তর্ভূক্ত দেশ যাদের অভিন্ন মুদ্রা, ভিসা ছাড়াই গমনাগমন, বিচার ব্যবস্থাসহ এবং চাকরি-বাকরির ক্ষেত্রে কোন বাধা নেই। কিন্তু বেশকিছু পূর্ব ইউরোপের দেশ এর অন্তর্ভূক্ত নয়। বিভিন্ন ইনডেক্সগুলো একই রকম নয়। তাই জনগণের প্রতিবাদ সত্ত্বেও ভারতকে রেল করিডোর সুবিধা প্রদানের চুক্তি বাংলাদেশের ভূখ- দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে অস্ত্রশস্ত্র, সৈন্য প্রেরণ করতে সক্ষম হবে। এর ফলে বাংলাদেশের নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পতিত হবে। বাংলাদেশের জনগণ জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এই চুক্তি তারা কোন দিনই মেনে নিবে না।

গায়ে দুর্নীতির কালিমাখা আওয়ামী সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়াটা জাতীয় কৌতুক ছাড়া আর কিছু নয় মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ডামি সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেনে, দুর্নীতি দমন কমিশন স্বাধীন, সুতরাং যে ব্যাক্তি যত শক্তিশালী হোক না কেন দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেলে কমিশন নিজ প্রক্রিয়া অনুযায়ী কাজ করে যাবে। আজকাল সংবাদপত্রের পাতায় দৃষ্টি দিলেই বেনজির, মতিউর, আসাদুজ্জামান আরও কত নাম আমরা দেখতে পাচ্ছি, এই সমস্ত দুর্নীতির মহানায়করা সরকারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে বড় বড় সরকারি পদে অধিষ্ঠিত থাকল কিভাবে? এর উত্তর কি প্রধানমন্ত্রী দিতে পারবেন। তাহলে কি কোন ভাগ-বাটোয়ারার কারণে সমস্যা হওয়ায় এই সমস্ত নিষ্ঠুর পুলিশ কর্মকর্তাদের সব গোপন বিষয় ফাঁস করে দেওয়া হচ্ছে? তথাকথিত স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন শেখ হাসিনার মুখাপেক্ষী। তার কোন শক্ত মেরুদ- নেই। কিন্তু সরকারের নির্দেশমত বিরোধী দলকে নির্যাতন করা আওয়ামী-দুর্নীতি দমন কমিশনের কাজ। তা না হলে বিগত ১৫-১৬ বছরে আওয়ামী লুটপাটের সরকার যে অনিয়ম, অপচয় এবং মহাদুর্নীতিকে দুর্নীতি দমন কমিশন কার্পেটের তলায় ঢেকে রাখে, সেই কমিশনারদের দ্বারা প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ পুলিশ এবং সরকারি উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের দুর্নীতির সঠিক তদন্ত হবে বলে জনগণ বিশ^াস করে না।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, পর্দাকা-, বালিশকা- থেকে শুরু করে মতিউর কা- পর্যন্ত অসংখ্য কা--কারখানা এবং পাচারকৃত লুটের টাকার অনুসন্ধানে উদাসীনতা দীর্ঘ দেড় দশক ধরে জনগণ দেখে আসছে। অথচ দুর্নীতি দমন কমিশন “রিপ ভ্যান উইংক্যাল” এর মতো ঘুমিয়ে থেকেছে। জনগণের টাকার একচেটিয়া লুন্ঠন ও আত্মসাৎকারীদের ডামি আওয়ামী সরকার মাফ করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, আজিজ, বেনজির এর মত ব্যাক্তিরা, যারা নিরস্ত্র গণতন্ত্রকামী জনগণের বিরুদ্ধে হুমকি দিয়ে নিজ বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন-বন্দুক দেওয়া হয় কি ঘরে রাখার জন্য! অর্থ্যাৎ দেশের সাধারণ নাগরিকদের নিয়মতান্ত্রিক গণতন্ত্রের আন্দোলনকে কোন প্রকার মানবতার তোয়াক্কা না করে রক্তাক্ত পন্থায় দমন করার পুরস্কার হিসেবে শেখ হাসিনার আশির্বাদে তারা বিত্ত-বৈভবে প্রকা- স্ফীত হয়ে উঠেছিল। আলীশান বাড়ী, অসংখ্য ফ্ল্যাট, শত শত একর জমি তারা দখন করেছিল আন্দোলন দমনের কৃতিত্ব হিসেবে।

প্রত্যয় স্কিমের নামে সরকার শিক্ষকদের অনাহারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, শিক্ষকদের পেনশন বিরোধী প্রতিবাদকে বিএনপি সমর্থন জানায়। এই সরকার প্রত্যয় স্কিমের নামে শিক্ষকদের অনাহারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিরোধী নেতাকর্মীদের নতুন করে আবারও গুম করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ব্যর্থ আওয়ামী সরকার পুনরায় গুমের মত নৃশংস পন্থা অবলম্বন করে আবারও জনমনে ভীতি তৈরী করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। নতুন করে আবার গুম শুরু করেছে।

রিজভী বলেন, সোমবার রাত আড়াইটার সময় রাজধানীর শিশু হাসপাতাল থেকে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মারজুক আহমেদ আল-আমিনকে সাদা পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে যায়। এখন পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। গত ৩০ জুন সাতক্ষীরা জেলাধীন কালিগঞ্জ উপজেলা কৃষকদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. কামরুজ্জামানকে রতনপুরস্থ নিজ বাড়ি থেকে ডিবির এস আই কবির হোসেনের নেতৃত্বে একদল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে যায়। এখন পর্যন্ত তারও কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। তিনি অবিলম্বে তাদের জনসম্মুখে হাজির করে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জোর আহ্বান জানান। এছাড়া সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও আক্রমণের তথ্য তুলে ধরেন।

এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল,সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইদুল আলম বাবুল, সহ-সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, নির্বাহী কমিটির সদস্য ফজলুর রহমান খোকন, তারিকুল আলম তেনজিং প্রমুখ।


বিভাগ : রাজনীতি


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

৩৬ বছরের অপেক্ষা আরও দীর্ঘ হল জার্মানির,রুদ্ধশ্বাস জয়ে সেমিতে স্পেন

৩৬ বছরের অপেক্ষা আরও দীর্ঘ হল জার্মানির,রুদ্ধশ্বাস জয়ে সেমিতে স্পেন

খেলতে খেলতেই মারা গেলেন গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়া

খেলতে খেলতেই মারা গেলেন গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়া

স্ত্রী গর্ভবতী হওয়ার পর তার সাথে যৌন সম্পর্ক করা প্রসঙ্গে।

স্ত্রী গর্ভবতী হওয়ার পর তার সাথে যৌন সম্পর্ক করা প্রসঙ্গে।

লোক নাট্যদলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী

লোক নাট্যদলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী

১৩ বছর পর অভিনয়ে ফিরছেন মেহের আফরোজ শাওন

১৩ বছর পর অভিনয়ে ফিরছেন মেহের আফরোজ শাওন

মাধ্যমিক পর্যায়ে কোডিং শিক্ষা প্রসঙ্গে

মাধ্যমিক পর্যায়ে কোডিং শিক্ষা প্রসঙ্গে

প্রাকৃতিক রক্ষাব্যুহ সুন্দরবনের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে

প্রাকৃতিক রক্ষাব্যুহ সুন্দরবনের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে

অসত্য তথ্য ও পরিসংখ্যান থেকে বের হয়ে আসতে হবে

অসত্য তথ্য ও পরিসংখ্যান থেকে বের হয়ে আসতে হবে

চাঁদাদাবি করায় আখাউড়ায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

চাঁদাদাবি করায় আখাউড়ায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

পশ্চিম তীরে পাঁচ সহস্রাধিক নতুন আবাসন অনুমোদন নেতানিয়াহুর

পশ্চিম তীরে পাঁচ সহস্রাধিক নতুন আবাসন অনুমোদন নেতানিয়াহুর

হীরার গয়নায় শাস্তির মুখে বলসোনারো

হীরার গয়নায় শাস্তির মুখে বলসোনারো

ইসরাইলকে থামাতে হবে, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে বাধ্য করতে হবে : এরদোগান

ইসরাইলকে থামাতে হবে, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে বাধ্য করতে হবে : এরদোগান

মানুষের কামড়ে সাপের মৃত্যু

মানুষের কামড়ে সাপের মৃত্যু

রকেট হামলায় ইসরাইলি কোম্পানি কমান্ডার নিহত

রকেট হামলায় ইসরাইলি কোম্পানি কমান্ডার নিহত

ভোট দিয়ে যে আহ্বান জানালেন খামেনি

ভোট দিয়ে যে আহ্বান জানালেন খামেনি

যুক্তরাষ্ট্র বাহিনীকে জাপানের হুঁশিয়ারি

যুক্তরাষ্ট্র বাহিনীকে জাপানের হুঁশিয়ারি

গাজা-ইসরাইল যুদ্ধে পশ্চিমের নেতৃত্ব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র-জার্মানি

গাজা-ইসরাইল যুদ্ধে পশ্চিমের নেতৃত্ব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র-জার্মানি

এসসিও’র শীর্ষ সম্মেলনে মোদি কেন গেলেন না

এসসিও’র শীর্ষ সম্মেলনে মোদি কেন গেলেন না

জিম্মি প্রশ্নে মধ্যস্থতাকারী দল পাঠাবে ইসরাইল

জিম্মি প্রশ্নে মধ্যস্থতাকারী দল পাঠাবে ইসরাইল

আটলান্টিক থেকে ৮৯ লাশ উদ্ধার

আটলান্টিক থেকে ৮৯ লাশ উদ্ধার