ফ্যাসিস্ট পতিত হাসিনার দোসরদের বাচানোর জন্য গভীর রাতে সবিচালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতে সেনাবাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি উত্থাপন করেছেন বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতৃবৃন্দ। সচিবালয়ে বিল্ডিংয়ে রাতের বেলা অগ্নিকাণ্ডে পৃথক পৃথথক বিবৃতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতৃবৃন্দ।

পীর সাহেব চরমোনাই: দেশের প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ে বুধবার রাতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই। তিনি বলেন, সচিবালয়ে এমন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা স্বাধীনতার ৫৩ বছরে আর কখনো ঘটেছে বলে আমাদের জানা নেই। এমন ঘটনায় দেশের মানুষ আতঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন। দেশের প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ নথি যদি ধ্বংস হয়ে যায়, তাহলে বাংলাদেশ কতটুকু সুরক্ষিত জনগণের মনে এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সচিবালয়ের ন্যায় দেশটাও কি অরক্ষিত ? গতকাল বৃহস্পতিবার বরিশালের চরমোনাই মাদরাসা মিলনায়তনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের উচ্চপর্যায়ের দায়িত্বশীলদের সমন্বয়ে গুরুত্বপূর্ণ এক সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এতে আলোচনা করেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মাদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, প্রেসিডিয়াম সদস্য খন্দকার গোলাম মাওলা, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান ও সহকারী মহাসচিব মাওলানা সৈয়দ এছাহাক মোহাম্মদ আবুল খায়ের।

পীর সাহেব চরমোনাই আরো বলেন, গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা পরিকল্পিত হতে পারে বলে অনেকের আশংকা। এজন্য শুধু একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বসে থাকলে চলবে না, একাধিক ব্যক্তি ও সংস্থাকে দিয়ে গভীরভাবে তদন্ত করে দ্রুত সময়ের মধ্যে কারণ খুঁজে বের করে তার প্রতিবেদন জনসম্মুক্ষে প্রকাশ করতে হবে। প্রয়োজনে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে দিয়ে পৃথক একটি তদন্ত কমিটি গঠন করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর বলেন, সচিবালয়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে যারা ছিলেন সাম্প্রতিক সময়ে তাঁদের কর্মতৎপরতা, দায়িত্ব পালনের বিস্তারিত কিছু অনুসন্ধান করতে হবে। এদের মধ্যে কেউ দায়িত্ব পালনে উদাসীন বা অবহেলা করে থাকলে তাঁদেরকে আইনের আওতায় এনে প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করতে হবে। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, সেতু মন্ত্রণালয়ের কন্ট্রাকটর ও কর্মকর্তাদের মধ্যে যারা দুর্নীতি করে অবৈধ সম্পত্তি অর্জন করে আঙ্গুল ফুলে বটগাছ হয়েছে এদের কোন সম্পৃক্ততা ঘটনার সাথে থাকলে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে কঠিন বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। পীর সাহেব চরমোনাই দেশের গুরুত্বপুর্ণ ও স্পর্শকাতর সকল স্থাপনা নিরাপত্তা আরো জোরদার ও নিচ্ছিদ্র করার আহবান জানান।

বাংলাদেশ ইসলামী দল: বাংলাদেশ ইসলামী দলের আমির ড. আব্দুল্লাহ আল নাসের বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে তাড়াহুড়া দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়া হবে। তিনি বলেন, সচিবায়লে গভীর রাতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা খুনি হাসিনা সরকারের অর্থলোপাট, হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার, দুর্নীতির ফাইলপত্র পুড়িয়ে দিয়ে খুনি হাসিনা সরকারকে বাচানোর একটা অপচেষ্টা কি না তা’খতিয়ে দেখতে হবে। তিনি বলেন, প্রথম সংস্কার, ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনা সরকারের বিচার এরপর জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে। তিনি বলেন, সংবিধান পরিবর্তন জরুরী হয়ে পড়েছে। ড. আব্দুল্লাহ আল নাসের বলেন, হাজার হাজার মা-বাবার বুক খালি করেছে খুনি হাসিনা সরকার ও তাদের দোসরদের বিচার করতে হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে গুলশানের শাহাজাদপুরে বাংলাদেশ ইসলামী দল ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত এককর্মী সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা উত্তর এর আমির আব্দুর রহিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মী সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, দলের সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা মুফতী এমদাদুল্লাহ আনসারী, মো. মোশারফ হোসেন, মো. আরিফ চৌধুরী ও আলহাজ মনজরুল ইসলাম, শওকত হাসান মামুন গাজী, মাওলানা আবু হোসাইন, মাওলানা ইসলাম উদ্দিন।

খেলাফত মজলিস: সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে খেলাফত মজলিস। এক বিবৃতিতে খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, সচিবালয়ের মত রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অগ্নিকাণ্ড ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি কোন সাধারণ ঘটনা নয়। রাষ্ট্রীয় এমন স্পর্শকাতর ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড এবং ফায়ার ব্রিগেডের সদস্যকে ট্রাক চাপায় হত্যার ঘটনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এতে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ নথি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আমরা এই ঘটনার জন্য অবিলম্বে তদন্ত কমিশন গঠন করার দাবি জানাচ্ছি। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানাচ্ছি।

ইসলামী ঐক্যজোট: ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট মাওলানা আব্দুর রকিব সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ফ্যাসিস্ট পতিত হাসিনার প্রেতাত্ম্যারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ এবং দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার সূত্রপাত কি না তা’শক্তিশালী তদন্ত কমিটির মাধ্যমে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন, গভীর রাতে সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত কিভাবে ঘটেছে তা’জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। তিনি প্রশাসনের সর্বস্তর থেকে ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনার দোসরদের দ্রুত অপসারণের জোর দাবি জানান। অন্যথায় জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী করা হবে।

বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন: বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী সচিবালয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, এ অগ্নিকাণ্ডের কারণে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সব গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট পুড়িয়ে বিপুল ক্ষয়-ক্ষতি সাধন অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে হচ্ছে। সেখানে ২৪ ঘণ্টা সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকা সত্তে¡ও কিভাবে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে তা দেশবাসীর বোধগম্য নয়। তিনি আরো বলেন, গভীর রাত্রের এ অগ্নিকাণ্ড যে পরিকল্পিত অগ্নিকান্ড তাতে কোনো সন্দেহ নেই। দুর্ঘটনা হলে কোনো একটি নির্দিষ্ট জায়গায় আগুন লাগবে, এভাবে জায়গায় জায়গায় একসাথে আগুন লাগতে পারে না। এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার সাথে জড়িতদের তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে। তিনি দেশ ও সম্পদ ও মানুষের জানমাল হেফাজতে আরো সোচ্চার ভ‚মিকা রাখা এবং সতর্ক থাকার জন্য সরকার ও প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।