রাজনৈতিক সেল্টারে রাজধানীর উত্তরায় বহাল তবিয়তে রয়েছে জুলাই-২৪ গণহত্যা মামলার আসামি ও আওয়ামী লীগের দোসররা।
সরকারি চাকুরীতে কোটাসংস্কারের দাবিতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তোপের মুখে লেজ গুটিয়ে স্বৈরাচার খুনি হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেও অদৃশ্য কারণে উত্তরার রাজপথে মিছিল করতে দেখা যায় তাদের দোসরদের।
প্রায় প্রতিদিনই প্রশাসনের হাতে গ্রেফতার হচ্ছে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের দোসর ও গণহত্যা মামলার আসামিরা। হঠাৎ কোন সাহসে গ্রেফতার ও ভয়ভীতির উর্ধ্বে এসে র্যাব-১,এপিবিএন হেড কোয়ার্টার ও বিমানবন্দর গোল চক্কর ট্রাফিক পুলিশ বক্স এলাকায় ঝটিকা মিছিল করেন খুনি লীগ। এমন প্রশ্ন থেকেই যায়।
একদিকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন অপরদিকে তাদেরকে লালন-পালন এ সব নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলছেন গত ১৫ বছর খুনি হাসিনা এ দেশের মানুষের নাগরিক অধিকার কেঁড়ে নিয়ে দেশটাকে নড়কে পরিনত করে একনায়কতন্ত্র কায়েম করেছে। অনেকে বলছে ছাত্র- জনতার রক্তে অর্জিত এ সফলতা কিছু অতিলোভী রাজনৈতিক নেতার কারণে আজ ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। তারা প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি করেন।
একাধীক সুত্রে জানা যায়, ৫ আগষ্টের পর রাজনৈতেক সেল্টারে বহাল তবিয়্যতে রয়েছে এখানকার আওয়ামী লীগের দোসর ও হত্যা মামলার আসামিরা। স্থানীয়রা বলছেন, প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় উত্তরায় প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে ফ্যাসিবাদের দোসর খুনি লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ। কেউ কেউ বলছেন,গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের ব্যবসা বানিজ্য দেখভাল করছেন স্থানীয় কয়েকজন বিএনপি-র সিনিয়র নেতা। পাশাপাশি হত্যা মামলার আসামিদের সেল্টার দেওয়ার কথা বলে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা।
সুত্রে আরো জানা যায়, আওয়ামী লীগ নেতাদের সেল্টার দিয়ে তাদের কাছ থেকে ছাত্র আন্দোলনে নিহত শহীদের নামে গড়ে উঠা সংগঠনের নাম ভাঙ্গীয়ে গোপনে আঁতাত করে একটি চক্র আওয়ামী ঘরনার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিলেও নিহত শহীদ ও আহতদের খোঁজ খবর নিচ্ছে না তারা কেউ।
এসময় বিএনপির ত্যাগী নেতারা বলেন, নামধারী এ সব ছাত্র সমন্বয় ও রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকে এ ধরনের আশকারা পেয়েই দিনে দিনে ভয়ংকর হয়ে উঠছে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা। গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০-৩০টি মামলা খেয়ে পালিয়ে বেরিয়েছে এবং জেল খেটেছে
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন কয়েকজন ত্যাগী নেতা ইনকিলাবকে বলেন,জুলাই-২৪শে যারা রাজপথে রক্ত দিয়েছে তাদের রক্তের দাগ মুছতে না মুছতেই কিছু কিছু হাইব্রিড নেতা খুনি লীগের সাথে গোপনে আঁতাত করে তাদের ব্যবসা বানিজ্য দেখভাল করছেন। তারা আরো বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তারাও গ্রেফতার এড়াতে তাদের সাথে আঁতাত করে চলছে। আওয়ামী লীগের সাথে আঁতাতের কারণে ঔ সময় তারা তাদের ব্যবসা বানিজ্য ঠিক রাখার পাশাপাশি কোন মামলায় গ্রেফতার হয়নি।
গত কয়েকদিন যাবত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে দেখা যায়, লন্ডন ও ভারতে বসে আওয়ামী লীগের খুনিরা বিএনপি নেতাদের আর্শীবাদে চলমান তাদের ব্যবসার লভ্যাংশের টাকা নিয়ে বিদেশের মাটিতে বসেও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকা-১৮ আসনের সাবেক এমপি খসরু চৌধুরীর রাজত্ব দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে এক হেভিওয়েট রাজনৈতিক নেতা। ঔ নেতার ছত্র ছায়ায় চলছে আওয়ামী লীগের দোসর খসরুর মালিকানাধীন দক্ষিণখান উত্তরখানের নিপা গার্মেন্টসের বড় বড় কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠান।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাবেক শিল্প ও বানিজ্য বিষয় সম্পাদক সাবেক এমপি খসরু চৌধুরীর রয়েছে উত্তরাতে ১০-১২টি বাড়ী। শ্রমিকদের রক্ত চুষে এবং সাব-কন্ট্রাকে কাজ করিয়ে ছোট ছোট ফ্যাক্টরীর মালিকদের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে গড়ে তুলেছেন তিনি সম্পদের পাহাড়। অথচ তারই পালিত গুন্ডা বাহিনীরা উত্তরখান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান মিলনের নেতৃত্বে কসাইবাড়ি-বিমানবন্দর সড়ক এলাকায় জয়বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা ভয় নেই, রাজ পথ ছাড়ি নাই,এ্যাকশন এ্যাকশন ডাইরেক্ট এ্যাকশান,কে বলেছে মুজিব নাই, মুজিব সাড়া বাংলায়, "শেখ হাসিনা আসবে" বাংলাদেশ হাঁসবে এমন স্লোগান দিয়ে রাজপথে মিছিল করে। জানা যায়, মিছিল কারীরা অনেকে হত্যা মামলার এজাহার ভুক্ত আসামি। দীর্ঘ ৫ মিনিট যাবত মিছিল করেন তারা। মিছিল শেষে সটকে পড়ে তারা।
পরেরদিন আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিলে সম্পৃক্ততার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের এক নেতাকে। এর মধ্যে সেই ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়াতে থানার ওসিকে ফোন দেন ঐ থানা ছাত্রদল সভাপতি রিপন।জানা যায়, পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া রকিবুল ইসলাম নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উত্তরা পূর্ব থানার সামনে পুলিশ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগকে সাথে নিয়ে নিরীহ ছাত্রদের উপর গুলি চালানো খুনি হাসিনার খাস দোসর সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামের ব্যাবসা বানিজ্য ও সকল বৈধ ও অবৈধ সম্পদ টাকার বিনিময়ে পাহাড়া দিচ্ছে বলে উত্তরার সিনিয়র এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও বিমানবন্দর মহাসড়কে আওয়ামী লীগ মিছিলকারীদের সহায়তাকারী সাবেক ৫০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর খুনি ডিএম শামীমকে আত্মীয় পরিচয়ে নিরাপত্তা দিচ্ছেন স্থানীয় এক বিএনপি নেতা।
সরেজমিনে দেখা যায়, ফুটপাত থেকে শুরু করে দিয়াবাড়ী ও তুরাগের হাট বাজার, হোটেল রেস্তোরা,বড় বড় শপিংমল, আব্দুল্লাহপুর বাসস্ট্যান্ড, বিভিন্ন অটোস্ট্যান্ড গুলোতে এখনো রয়েছে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের আধিপত্য।
উত্তরখানের হেলাল মার্কেট, মাউ সাইদ, কাঁচকুড়া, দক্ষিণখানের ফায়দাবাদ,দেওয়ান সিটি, আসকোনা, তুরাগের রূপায়ণ সিটি ও ১৮ নং সেক্টরে লুকিয়ে আছে অসংখ্য হত্যা মামলার এজাহার ভুক্ত আসামি ও পদধারী আওয়ামী লীগ নেতা। নিজেদের আসল রূপ পাল্টিয়ে কখনো কখনো প্রশাসনের নাকের ডগায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে জুলাই-২৪ নিরীহ ছাত্র-জনতা হত্যা মামলার আসামি ও পদধারী আওয়ামী লীগ নেতারা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কিছু কিছু স্থানীয় বিএনপি নেতার সাথে আতাঁত করে যুবলীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা কর্মীরা নিজের নাম পরিচয় গোপন রেখে বিএনপির মিছিলে অংশ গ্রহন করে নিজেকে বিএনপি নেতা দাবি করছে। অনেকে হকার সেজেছে, আবার কেউ কেউ সেজেছে অটোরিকশা চালক। এরাই মূলত উত্তরাতে চুরি ছিনতাই ও দখল বানিজ্যে জড়িত।
গত ১৫ বছর যাবত আওয়ামী লীগের দুঃশাসনামলে মানুষের কথা বলার অধিকার ছিলো না। মানুষের অধিকার কেঁড়ে নেওয়া স্বৈরাচারের দোসররা ঘাপটি মেরে বসে আছে কি ভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বেকায়দায় ফেলা যায়। সম্প্রতি উত্তরা বিমানবন্দর মহাসড়কে আওয়ামী লীগ তাদের শক্তির জানান দিয়েছে।
তারা সাধারণ মানুষকে বুঝাতে চেয়েছে তাদেরকে কেউ দমাতে পারবেনা। এঘটনায় উত্তরার বিপ্লবী ছাত্র-জনতা ও সাধারণ মানুষের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। উত্তরাতে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল পরবর্তীতে স্থানীয় বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও এনসিপি উত্তরায় কয়েক দফা প্রতিবাদ মিছিল করেন।
উত্তরার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-আন্দোলন শিক্ষার্থী ও আমজনতা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে পালন করছে নানান কর্মসূচি। উত্তরা বিএনএস সেন্টার ও মুগ্ধ মঞ্চে প্রতিদিন আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ ও গণহত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে কোন না কোন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ ও এনসিপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দরা বলছেন,আওয়ামী লীগকে গণহত্যাকারী হিসেবে ঘোষণার আগ পর্যন্ত তারা রাজপথে থাকবে। পাশাপাশি খুনিদের বিচার,আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ও জুলাই হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেফতারে দাবি জানান তারা।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে গণজাগরণ সৃষ্টি করতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা উত্তরায় "জুলাই ব্রিগেড " নামে একটি নতুন সংগঠনের আত্মপ্রকাশ করেন।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, চাঁদা না দেওয়ায় উত্তরা পশ্চিম থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি কিশোর গ্যাং নেতা আলাউদ্দিন সোহেল, সাবেক কাউন্সিল আফসার খান ও কাউন্সিলর নাঈম এর পালিত সন্রাসীরা এখনো উত্তরার বিভিন্ন বাসা বাড়ি ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে হামলা ও হুমকি দিয়ে দাবিয়ে বেড়াচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, গণহত্যা মামলার আসামি হয়েও অনেকে এখনো যার যার এলাকায় বীর দর্পে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এ বিষয়ে স্থানীয় রাজনিতীবীদ ও ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা আওয়ামী লীগের গুন্ডা বাহিনির অত্যাচারে এখনো অতিষ্ঠ। ব্যবসায় মনোযোগ দিতে পারে না তারা। চাঁদার জন্য কথিত আওয়ামী লীগ নেতারা এখনো তাদেরকে অনবরত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। তারা আরো বলেন, প্রশাসনের চোখে ফাঁকি দিয়ে তারা উত্তরখান হেলাল মার্কেট, ময়নারটেক ও কাঁচকুড়া এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দোসরা কি ভাবে এখনো বহাল তবিয়তে বিভিন্ন এলাকায় অপকর্ম করছে। এমন ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা আরো বলেন,যারা জুলাই২৪-এ মানুষের রক্ত দিয়ে হলি খেলেছে সে সব কুলাংগার আওয়ামী লীগ নেতাদের খুটির জোর কোথায়? কি ভাবে তারা এখনো কিশোর গ্যাং দিয়ে ব্যবসায়ীদের হয়রানি,রাষ্ট্রিয় সম্পদ নষ্ট, সাধারণ মানুষের বাড়িঘর ও দোকানপাট ভাংচুরসহ দখল বানিজ্যে পাশাপাশি উত্তরার রাজপথে মিছিল করছে। এ সব ঘটনায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরো বেশী সচেতন ও আন্তরিক হওয়ার অনুরোধ করেন তারা।
গণহত্যা মামলার আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে কারণ জানতে চাইলে, উত্তরা বিভাগের উপ- পুলিশ কমিশনার মোঃ মুহিদুল ইসলাম (পিপিএম)ইনকিলাবকে বলেন,গা ঢাকা দেয়া পদধারী কোন আওয়ামী লীগ নেতাকে ছাড় দেওয়া হবে না। ফ্যাসিস্টদের গ্রেফতারে পুলিশ প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কোন ধরনের হেলামীর অভিযোগ পেলে পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, ছাত্র-জনতা হত্যাকারী মামলার আসামি ও খুনি হাসিনার দোসরদের গ্রেফতারে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।