আত্মশুদ্ধির মাস রমজান

Daily Inqilab ইনকিলাব

২৯ মার্চ ২০২৩, ০৭:২০ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৩৭ এএম

ক্ষমা ও মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের সুযোগ মিলে রমজান মাসে। এ মাসে বিশেষ কিছু আমলের সুযোগ পাওয়া যায়। এ সময়টায় আল্লাহকে যতটা আন্তরিকতার সঙ্গে ডাকা হবে, মহান আল্লাহ ততটা আন্তরিকতার সঙ্গে আমাদের ডাকে সাড়া দেবেন। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে এবং সওয়াব অর্জনের আশায় রোজা পালন করবে, তার অতীতের সব গোনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (মিশকাত শরিফ : ১৯৫৮)। আত্মার পরিশুদ্ধি প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমাদের পূর্ববর্তীদের ন্যায় তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সুরা বাকারা : ১৮৩)। আয়াতের শেষাংশ থেকে এ কথা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়, ‘তাকওয়া’ বা পরহেজগারির শক্তি অর্জনে রোজার একটি বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। এতে মানুষ মোত্তাকি হয়। (মাআরেফুল কোরআন)।

মোত্তাকি হওয়ার অর্থ : তাকওয়া অর্জনের অর্থ হলো রোজাদার ব্যক্তি শয়তানি সব ধরনের কর্মকা- থেকে পবিত্র হয়ে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর জন্য প্রস্তুত হওয়া। গোনাহের সব পথ ও রাস্তা বন্ধ করে প্রবৃত্তির তাড়না নিয়ন্ত্রণ করা। এতে একজন মুমিন মানবিক গুনাবলির উৎকর্ষ সাধনে সফল হয়। আত্মশুদ্ধির সারকথা হলো তাকওয়া অর্জন ও পাপ বর্জন। (তাফসিরে কাবির)।

রোজা কেন পরিশুদ্ধকারী : রোজা মানুষের তাকওয়া অর্জনে সহায়তা করে। কেননা এর দ্বারা কুপ্রবৃত্তিকে দমন করা সহজতর হয়। ফলে মানুষ সব প্রকার মন্দ কর্মকা- থেকে বিরত থাকতে পারে। দুনিয়ার সুখ-সাচ্ছন্দ থেকে নিজেকে ফিরিয়ে রাখতে সক্ষম হয়। তাছাড়া রোজা মানুষের পেট ও লজ্জাস্থানের শক্তি বিনষ্টকারী। দুনিয়াতে মানুষ গোনাহের বড় একটি অংশ এই দুই অঙ্গ দ্বারা সম্পাদন করে। এমতাবস্থায় যদি এ দুই অঙ্গের শক্তি নষ্ট করা যায়, তাহলে নষ্ট করা যাবে গোনাহের সব চাহিদা। ফলে মানুষ সব ধরনের পাপাচার থেকে বেঁচে থাকতে পারবে। (তাফসিরে কাবির)। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত নবী করিম (সা.) বলেন, তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে না তারা যেন রোজা রাখে। কারণ, রোজা যৌন প্রবৃত্তি নিবৃত্ত করে। (সহিহ্ বোখারি : ২৬৮৫)।

মানুষ মোত্তাকি হয় না কেন : মুমিন বান্দাদের আত্মশুদ্ধি ও মানবিক গুণাবলির উৎকর্ষ সাধন রোজাপালনের অন্যতম উদ্দেশ্য। আত্মশুদ্ধির সারকথা হলো তাকওয়া অর্জন ও পাপ বর্জন। পবিত্র রমজানে সিয়াম পালন করা সত্ত্বেও মানুষ মোত্তাকি কেন হচ্ছে না? এর উত্তরে বলা যায়, গোনাহের দ্বার উন্মুক্ত রেখে নেকির কাজ কখনো ফায়দাজনক হতে পারে না। এ প্রসঙ্গে হাদিস শরিফে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা ও অশ্লীলতা থেকে বিরত থাকতে না পারে, তার পানাহার থেকেও বিরত থাকার কোনো প্রয়োজন নেই।’ (মিশকাত : ১৯৯৯)।

অর্থাৎ অবান্তর মিথ্যা, অশ্লীল কথাবার্তা ও গোনাহের কাজকর্ম থেকে কোনো মুমিন যদি বিরত থাকতে না পারে, তাহলে কি প্রয়োজন তাদের রোজা রাখার? কেননা, রোজা কেবল উপবাস করাকে বলে না; বরং প্রবৃত্তির তাড়না নিয়ন্ত্রণ ও রাগ দমন করে এবং নফসে আম্মারাকে (মন্দ আত্মা) নফসে মুতমাইন্যায় (প্রশান্ত আত্মা) পরিণত করা। যেহেতু এসবের কিছুই অর্জন হচ্ছে না, সেহেতু তার রোজা কেবল উপবাসেরই নাম।

তাকওয়া কীভাবে অর্জন করা যায় : আল্লাহতায়ালার ইবাদতের মাধ্যমে অন্তরে তাকওয়া সৃষ্টি হয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে লোকসকল! তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ইবাদত কর, তিনি তোমাদের এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদের সৃষ্টি করেছেন। তাতে আশা করা যায়, তোমরা পরহেজগারী অর্জন করতে পারবে।’ (সুরা বাকারা : ২১)।

রোজার প্রকৃত ফায়দা অর্জন করতে বুজুর্গ আলেমরা রমজানে কিছু আমলের কথা বলেন। এর অন্যতম হলো গোনাহের পথ ও পদ্ধতি বন্ধ রাখা : গোনাহের সব পথ ও পদ্ধতি বন্ধ করা। ইচ্ছা-অনিচ্ছায় মনের সব চাহিদা উপেক্ষা করতে হবে। এই গরমের মৌসুমে রোজা রেখে মানুষের মেজাজ খিটখিটে হয়ে ওঠে। তখন জবানকে খুব কম মানুষই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। অধিকন্তু জবান এবং নজর দ্বারা গোনাহ বেশি হয়, তাই জবান ও নজরের হেফাজত করতে হবে। গোনাহের পথ বন্ধ রাখতে নামাজ বেশ কার্যকর একটি আমল। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে জামাতের সঙ্গে আদায় করা, বিশেষ করে তারাবি। তারাবির ফজিলত সম্পর্কে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে এবং সওয়াব অর্জনের আশায় রমজানের রাতে তারাবির নামাজ পড়বে, সে গোনাহ থেকে এরূপ পবিত্র হবে; যেরূপ নিষ্পাপ শিশু মাতৃগর্ভ থেকে নিষ্পাপ অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয়।’ (সুনানে নাসায়ি : ২৩৯)।

আত্মশুদ্ধির মাসেও যারা অভিশপ্ত : হজরত কাব বিন আজরা (রা.) বলেন, একদা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) উপস্থিত সাহাবিদের উদ্দেশ্যে বললেন, ‘তোমরা মিম্বরের কাছাকাছি হয়ে বসো। সাহাবায়ে কেরাম সবাই মিম্বরের কাছাকাছি বসলে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) মিম্বরের প্রথম সিঁড়িতে পা রাখেন এবং বলেন ‘আমিন।’ অত:পর দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখেন এবং বলেন, ‘আমিন।’ অনুরূপ তৃতীয় সিঁড়িতে পা রেখেও বললেন, ‘আমিন।’

বয়ান শেষে নবী করিম (সা.) মিম্বর থেকে নেমে আসলে সাহাবায়ে কেরাম কৌতূহলি হয়ে জিজ্ঞেস করেন, আপনাকে তো আগে কখনো এমন করতে দেখিনি। আমাদের এ বিষয়ে কিছু বলুন। তখন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমি যখন প্রথম সিঁড়িতে পা রাখি তখন হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম উপস্থিত হয়ে বললেন, যে ব্যক্তি রমজান মাস পেয়েছে; কিন্তু গোনাহ মাফ করাতে পারেনি সে ধ্বংস হোক। তখন আমি বললাম, ‘আমিন।’

অতঃপর যখন দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখি, তখন হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম বললেন, যার কাছে আপনার নাম পেশ করা হয়েছে; কিন্তু সে আপনার প্রতি দরুদ প্রেরণ করেনি সেও ধ্বংস হোক। তখনো আমি বললাম, ‘আমিন।’ সর্বশেষ যখন তৃতীয় সিঁড়িতে পা রাখি, তখন হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম বললেন, যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতার কাউকে তাদের বৃদ্ধাবস্থায় পেয়েছে; কিন্তু তাদের সেবা-যতœ করে জান্নাতের মালিক হতে পারেনি সেও ধ্বংস হোক। তখনো আমি বললাম, ‘আমিন।’ (বায়হাকি : ১৫৭২)।

লেখক: উস্তাদ, আল মারকাজুল ইসলামী (এএমআই) বাংলাদেশ


বিভাগ : ধর্ম দর্শন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

শুক্রবার হজে যাচ্ছেন ৪ হাজারের বেশি বাংলাদেশি
ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নেপথ্যকথা
মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জীর বর্ণাঢ্য জীবন
‘মহান আল্লাহর নিদর্শন নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য’
রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর আখলাক
আরও
X
  

আরও পড়ুন

১০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্ল্যান্ট স্থাপনে রবি, ফ্লোসোলার ও গ্রিনপাওয়ার এশিয়ার ত্রিপক্ষীয় চুক্তি

১০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্ল্যান্ট স্থাপনে রবি, ফ্লোসোলার ও গ্রিনপাওয়ার এশিয়ার ত্রিপক্ষীয় চুক্তি

ভিক্টোরিয়ার নবজাতক আইসিইউ ইউনিট জেলার স্বাস্থ্য খাতে একটি মাইলফলক: ডিসি

ভিক্টোরিয়ার নবজাতক আইসিইউ ইউনিট জেলার স্বাস্থ্য খাতে একটি মাইলফলক: ডিসি

যুদ্ধের আশঙ্কায় সীমান্ত এলাকায় পুলিশকে সতর্ক থাকার নির্দেশ

যুদ্ধের আশঙ্কায় সীমান্ত এলাকায় পুলিশকে সতর্ক থাকার নির্দেশ

শিক্ষার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে কেমব্রিজে অনুষ্ঠিত হলো দক্ষিণ এশিয়া স্কুল সম্মেলন

শিক্ষার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে কেমব্রিজে অনুষ্ঠিত হলো দক্ষিণ এশিয়া স্কুল সম্মেলন

উচ্চশিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধিতে ইইউ’র সহযোগিতা চেয়েছে ইউজিসি

উচ্চশিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধিতে ইইউ’র সহযোগিতা চেয়েছে ইউজিসি

শেরপুর বিআরটিএ অফিসে দুদকের অভিযান

শেরপুর বিআরটিএ অফিসে দুদকের অভিযান

বাউফলে কলেজ ছাত্রদলের কমিটি গঠন

বাউফলে কলেজ ছাত্রদলের কমিটি গঠন

ভারত-পাকিস্তানের সংঘাত নিয়ে যা বলছে রাশিয়া ও ফ্রান্স

ভারত-পাকিস্তানের সংঘাত নিয়ে যা বলছে রাশিয়া ও ফ্রান্স

জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমান কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়লো, কমলো রাফায়েলের

জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমান কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়লো, কমলো রাফায়েলের

পাকিস্তানের পাল্টা হামলায় ভারতে নিহত বেড়ে ১৫

পাকিস্তানের পাল্টা হামলায় ভারতে নিহত বেড়ে ১৫

ড. ইউনূসের বার্তা পেয়েছেন সউদী যুবরাজ

ড. ইউনূসের বার্তা পেয়েছেন সউদী যুবরাজ

মধুপুরে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক দখল করে চলছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কলার হাট

মধুপুরে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক দখল করে চলছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কলার হাট

এএসপির লাশের পাশে চিরকুট— ‘বউ যেন সব সোনা নিয়ে যায়’

এএসপির লাশের পাশে চিরকুট— ‘বউ যেন সব সোনা নিয়ে যায়’

কুষ্টিয়ায় যুবদল নেতার পুকুরে বিষ দিয়ে অর্ধ কোটি টাকার মাছ নিধন

কুষ্টিয়ায় যুবদল নেতার পুকুরে বিষ দিয়ে অর্ধ কোটি টাকার মাছ নিধন

জামায়াত নেতার মুক্তির দাবিতে পঞ্চগড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ

জামায়াত নেতার মুক্তির দাবিতে পঞ্চগড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ

১০ মে 'জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ ২০২৫' উদ্বোধন ও প্রাথমিক শিক্ষা পদক ২০২৪ বিতরণ

১০ মে 'জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ ২০২৫' উদ্বোধন ও প্রাথমিক শিক্ষা পদক ২০২৪ বিতরণ

সিংগাইরে গণসংযোগ ও অগ্নিনির্বাপক প্রশিক্ষন অনুষ্ঠিত

সিংগাইরে গণসংযোগ ও অগ্নিনির্বাপক প্রশিক্ষন অনুষ্ঠিত

নুরুল-মাহিদুলের জোড়া শতকে উড়ে গেল নিউজিল্যান্ড ‘এ’

নুরুল-মাহিদুলের জোড়া শতকে উড়ে গেল নিউজিল্যান্ড ‘এ’

যুদ্ধের মধ্যেও কি ভারত সফর করবেন পুতিন?

যুদ্ধের মধ্যেও কি ভারত সফর করবেন পুতিন?

নতুন পোপ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু, সমবেত হয়েছেন কার্ডিনালরা

নতুন পোপ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু, সমবেত হয়েছেন কার্ডিনালরা