প্রশ্ন: তারাবীহ্ নামায আদায়ের সুবিধার্থে হাফেয নিয়োগ ও প্রাসঙ্গিক বিষয়াদির শরঈ বিধান কি?

Daily Inqilab ইনকিলাব

০৫ এপ্রিল ২০২৩, ০৭:২৭ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০১:৪৪ এএম

উত্তর: ১। প্রথমে গোড়ার কথা হিসাবে মনে রাখতে হবে, শরীয়া আইন ও আইন গ্রন্থাদিতে দু’টি শব্দ ব্যবহৃত হয় : (১) ‘কাযাআন’ বা ‘আইনগত’ দায়িত্ব বা বিবেচনা; (২) ‘দিয়ানাতান’ বা ‘নৈতিক দায়িত্ব’ বা বিবেচনা যা আইনত জরুরী নয় বটে, কিন্তু মানবিক বিবেচনায় কাম্য। যে কারণে আইনসংশ্লিষ্ট কিতাবসমূহে বলা হয় Ñ“আইন প্রয়োগযোগ্য বা প্রয়োগকেন্দ্রিক এবং নৈতিকতা বিবেককেন্দ্রিক।”
উক্ত মৌলিক বিষয়টি অনেকের কাছে অস্পষ্ট বা না বোঝার কারণে, কোনো কোনো মুফতী/ইমাম/আলেম তারাবীহ নামাযের হাদিয়া/সম্মানী/পারিশ্রমিক প্রশ্নে বিতর্ক ও বাড়াবাড়ির জন্ম দেন। শরীয়া আইনের আইনী বিবেচনা হচ্ছে, মজুরী-পারিশ্রমিক জ্ঞান করে না দেয়া বা দেয়া যাবে না। তার অর্থ এটা নয় যে, তা একেবারেই না-জাযেয় বা সম্মানী হিসাবেও তেমন কিছু দেয়া যাবে না Ñতেমনটি শরীয়তে বলা হয়নি। ২। মূলত ‘নিয়োগ’ বিষয়টি আইনত বাধ্যতামূলক তথা ফরয বা ওয়াজিব শ্রেণির ইবাদতে সহায়তার প্রয়োজনে এবং যে যেসব কাজে মজুরী বা পারিশ্রমিক ধার্য করা যায়Ñ তেমন ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়ে থাকে। অথচ তারাবীহ নামায তো ফরয/ ওয়াজিব নয় এবং তাতে পারিশ্রমিক বিষয়টিও প্রযোজ্য নয়। অবশ্য শরীয়া আইনের একটি বিধান বা সূত্র হচ্ছে নফল/ সুন্নাত ইবাদতও শুরু করে দিলে, তা সম্পাদন ও সম্পন্ন করা ওয়াজিব হয়ে যায়। যে কারণে এদিক বিবেচনায় তারাবীহ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে এবং সংশ্লিষ্ট হাফেযগণ যেন দায়িত্বটি যথাযথ দায়িত্ববোধের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত পালন করেন, সে হিসাবে ২৫/২৭/২৯ দিনের জন্য নিয়োগদানকে জরুরী মনে করা যেতে পারে। ৩। শুধু তারাবীহ্ নামাযে কুরআন শুনিয়ে বা খতম করে তার বিনিময়ে পারিশ্রমিক জ্ঞান করে টাকা-পয়সা প্রদান বা গ্রহণ কোনোটি শরীয়া আইনে জায়েয রাখা হয়নি। তবে পারিশ্রমিক জ্ঞান না করে সুন্তষ্টটিত্তে হাদিয়া বা সম্মানী মনে করে কম-বেশী যা-ই প্রদান করা হয়; তা প্রদান ও গ্রহণ উভয়টি জায়েয, সমীচীন, নৈতিক দায়িত্ব, এমনকি উত্তমও বটে। ৪। ‘বিনিময়’ বা ‘পারিশ্রমিক’ শব্দ যেক্ষেত্রে বলা হবে সেক্ষেত্রে তা অবশ্যই পূর্ব নির্ধারিত হওয়া জরুরী। কিন্তু হাদিয়া বা সম্মানী শব্দ ব্যবহার করা হলে সেক্ষেত্রে পূর্ব নির্ধারিত হওয়াও জরুরী নয় এবং তা কমবেশি যে-কোনো অংকই হতে পারে। সুতরাং তারাবীহ নামাযের ক্ষেত্রে ‘নিয়োগ’ বিষয়টি বলতে পারলেও ‘নির্ধারণ’পর্যায়ে যাওয়া যাচ্ছে না। ৫। যে কারণে, বিংশ শতাব্দী ও একবিংশ শতাব্দীর গবেষক পর্যায়ের শরীয়া আইন বিশেষজ্ঞ মুফতিগণ একটি সহজ সুরাহার পন্থা নিরূপন করেছেন এভাবে যেÑ “সংশ্লিষ্ট হাফেয সাহেবকে ইশা’র নামায বা অনুরূপ ১/২ ওয়াক্তের নামাযের ইমামতির দায়িত্ব ন্যাস্ত করে বা ‘সানী ইমাম’ বা সহকারী ইমাম হিসাবে মাহে রমজানের জন্য নিয়োগদান করা যেতে পারে। যেন ‘পারিশ্রমিক’ নির্ধারণ বিষয়টি আইনত বৈধ হয়ে যায়।” এতে আরও সুবিধা হচ্ছে, পারিশ্রমিক বাবদ উল্লেখযোগ্য একটি অংক ধার্য করা যায় এবং তা মুসুল্লিদের থেকে আদায় না হলে বা আদায় না করে, পুরো বা আংশিক মসজিদ তহবিল থেকেও প্রদান করা যায়। ৬। সুতরাং তারাবীহ্র উদ্দেশ্যে দু’ভাবেই হাফেয নিয়োগ দেয়া যেতে পারে যথা: (১) সংশ্লিষ্ট হাফেযকে বলে দেয়া যে, “আপনি সম্পূর্ণ সওয়াবের নিয়তে আমাদের এখানে/মসজিদে তারাবীহ পড়াতে সম্মত আছেন তো? আমরা আপনাকে কোনো বেতন/পারিশ্রমিক দেব না। আপনার থাকা-খাওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করবো এবং মুসুল্লিরা খুশিমনে হাদিয়া- সম্মানী প্রদান করলে, সেটি ভিন্ন প্রসঙ্গ।” (২) “আমরা আপনাকে মাহে রমজানের ২৭/৩০ দিনের জন্য সহকারী ইমাম হিসাবে এত .............টাকা বেতন বা সম্মানীতে নিয়োগ দিলাম। আপনি অমুক ওয়াক্ত নামায বা ইমামের অবর্তমানে ইমামতির দায়িত্ব পালন করবেন এবং তার সাথে আল্লাহর ওয়াস্তে তারাবীহ নামাযও পড়িয়ে দেবেন।”

উত্তর দিচ্ছেন: মুফতী মোঃ আবদুল্লাহ্, মুফতী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন


বিভাগ : ধর্ম দর্শন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বড়দিনের ধর্মীয় ইতিহাস ও তাৎপর্য
ইসলামি অর্থনীতির স্বরূপইসলামি অর্থনীতির স্বরূপ
হাজারো পীর-আউলিয়ার শিরোভূষণ সৈয়দ সুফি ফতেহ আলী ওয়াইসি (র.)
আল-কুরআন তাজকেরায়ে মীলাদ নামায়ে আম্বিয়া (আ:)
ঘুষ : দেয়া-নেয়া দুটিই অপরাধ
আরও
Airtel Wecome Banner

আরও পড়ুন

কিশোরগঞ্জের আব্দুল কাহার আকন্দ কোথায়? কেউ জানে না!

কিশোরগঞ্জের আব্দুল কাহার আকন্দ কোথায়? কেউ জানে না!

হাসিনাকে গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি

হাসিনাকে গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি

যুক্তরাষ্ট্র ও লন্ডনে ৩শ’ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে হাসিনা-জয়ের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু

যুক্তরাষ্ট্র ও লন্ডনে ৩শ’ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে হাসিনা-জয়ের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু

রাজশাহী মহানগরীতে ঘন কুয়াশা

রাজশাহী মহানগরীতে ঘন কুয়াশা

আবারও  ভানুয়াতুতে  দ্বীপপুঞ্জে ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্প

আবারও ভানুয়াতুতে দ্বীপপুঞ্জে ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্প

হাজীগঞ্জে ভরাট মিঠানিয়া খালের মুখ, হুমকিতে ফসলি জমি

হাজীগঞ্জে ভরাট মিঠানিয়া খালের মুখ, হুমকিতে ফসলি জমি

রাহাতের সুরের মুর্ছনায় বিমোহিত দর্শক, বাংলায় বললেন 'আমরা তোমাদের ভালোবাসি'

রাহাতের সুরের মুর্ছনায় বিমোহিত দর্শক, বাংলায় বললেন 'আমরা তোমাদের ভালোবাসি'

‘প্রশাসন ক্যাডার নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে’

‘প্রশাসন ক্যাডার নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে’

যুক্তরাজ্যে ট্রাম্পের বিশেষ দূত হিসেবে মার্ক বার্নেট নিযুক্ত

যুক্তরাজ্যে ট্রাম্পের বিশেষ দূত হিসেবে মার্ক বার্নেট নিযুক্ত

ফাইনালে ভারতের কাছে বাংলাদেশের হার

ফাইনালে ভারতের কাছে বাংলাদেশের হার

ফ্রেন্ডলি ফায়ার দুর্ঘটনায় লোহিত সাগরে মার্কিন যুদ্ধবিমান ধ্বংস

ফ্রেন্ডলি ফায়ার দুর্ঘটনায় লোহিত সাগরে মার্কিন যুদ্ধবিমান ধ্বংস

ইরানে যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে নিহত ১০

ইরানে যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে নিহত ১০

বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী কে, জানেন?

বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী কে, জানেন?

বাংলাদেশি রোগী পেতে সীমান্ত পর্যন্ত মেট্রো চালু করবে ভারত

বাংলাদেশি রোগী পেতে সীমান্ত পর্যন্ত মেট্রো চালু করবে ভারত

হাত ফসকে আইফোন পড়ে গেল মন্দিরের দানবাক্সে, ফেরত দিতে অস্বীকৃতি

হাত ফসকে আইফোন পড়ে গেল মন্দিরের দানবাক্সে, ফেরত দিতে অস্বীকৃতি

কুয়াশায় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে একাধিক দুর্ঘটনা: নিহত ১, আহত ১৫

কুয়াশায় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে একাধিক দুর্ঘটনা: নিহত ১, আহত ১৫

ঢাকার বায়ুমানে উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই, বিপজ্জনকের কাছাকাছি

ঢাকার বায়ুমানে উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই, বিপজ্জনকের কাছাকাছি

উগ্রবাদী সন্ত্রাসী 'সাদ' পন্থীদের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন

উগ্রবাদী সন্ত্রাসী 'সাদ' পন্থীদের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন

বাংলাদেশ সীমান্তে অত্যাধুনিক ড্রোন মোতায়েন ভারতের

বাংলাদেশ সীমান্তে অত্যাধুনিক ড্রোন মোতায়েন ভারতের

নরসিংদীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে ছাত্রদলকর্মী নিহত

নরসিংদীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে ছাত্রদলকর্মী নিহত