মুসলিম নবজাতকের নামকরণে ইসলামের নির্দেশনা
০৭ জুন ২০২৩, ০৯:১৫ পিএম | আপডেট: ০৮ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
পৃথিবী জুড়ে মানুষের ঘরে ঘরে প্রতিদিন নব সৌরভ আর নতুন দিনের বার্তা নিয়ে নতুনের দূত হাজির হয়, আগমন ঘটে নবজাতকের। কারও পরিচিতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল তার নাম। নাম ছাড়া কোন ব্যক্তি বা বস্তুর পরিচয় দেয়া সম্ভব নয়। তাই মানব সমাজে সন্তান জন্মগ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে তার একটি উত্তম নাম রাখা সার্বজনীন রীতি। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) ও আয়েশা (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘সন্তানের সুন্দর নাম রাখা ও তার উত্তম তরবিয়তের ব্যবস্থা করা বাবার ওপর সন্তানের হক।’ (মুসনাদে বাজজার (আলবাহরুজ জাখখার): ৮৫৪০)
খারাপ বা কুৎসিত নাম রাখলে পরিবর্তন করা: মনে রাখতে হবে, নাম শুধুমাত্র দুনিয়ার পরিচিতির জন্য নয়, মৃত্যুর পরেও মানুষের নাম বেঁচে থাকে। হাদিসে বলা আছে, ‘হাশরের ময়দানে প্রত্যেককে তার নামেই ডাকা হবে’ (আবু দাউদ: ২/৬৭৬)। আর ব্যক্তির চরিত্রেও সুন্দর এবং মন্দ নামের প্রভাব পড়ে। তাই কুৎসিত অর্থবোধক এবং আপত্তিকর নাম রেখে থাকলে তা পরিবর্তন করে দিতে হবে। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘নবীজি (স.) মন্দ ও অসুন্দর নাম পরিবর্তন করে দিতেন।’ (জামে তিরমিজি: ২৮৩৯)। একজন অপরজনের নাম সম্পর্ক অবগত হওয়া ঈমানি ভালোবাসা এবং মুসলিম ভ্রাতৃত্বের দাবি। তাই এমন নাম রাখা উচিত নয়, যা বলতে মানুষ লজ্জাবোধ করে।
নবীগণ ও নেককার বুযুর্গদের নামে নাম রাখা: বড়দের নামে নাম রাখার ক্ষেত্রে এ রীতিটিও অনেক প্রাচীন। হাদীসের কিতাবে এ সংক্রান্ত একটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের মায়ের নাম ছিল মারইয়াম। তাঁর জন্মের কাহিনী পবিত্র কুরআনে আলোচিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা যখন নিজের কুদরতের প্রকাশ ঘটিয়ে কোনো পুরুষের সংস্পর্শ ছাড়াই হযরত মারইয়ামের গর্ভ থেকে হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের জন্ম দিলেন, তার গোত্রের লোকেরা তাকে বলেছিল- (তরজমা) ‘হে হারুনের বোন! তোমার বাবা তো মন্দ মানুষ ছিলেন না, তোমার মাও অসৎ চরিত্রের কোনো নারী ছিলেন না।’ (সূরা মারইয়াম (১৯) : ২৮) আবার নবী হযরত মূসা আলাইহিস সালামের ভাইয়ের নামও ছিল হারুন। তিনিও ছিলেন নবী! অথচ মূসা আলাইহিস সালাম ছিলেন হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের চেয়ে অনেক আগের। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, সময়ের বিস্তর ব্যবধান সত্ত্বেও পবিত্র কুরআনে এভাবে মারইয়ামকে হারুনের বোন বলে উল্লেখ করা হল কেন? সাহাবী হযরত মুগীরা ইবনে শো‘বা রা. গিয়েছিলেন খ্রিস্টানদের এলাকা নাজরানে। নাজরানবাসী তখন তাকে এ প্রশ্ন করে, তোমরা তো পড় হে হারুনের বোন, অথচ মূসা ও ঈসার মধ্যে কী দূরন্ত ব্যবধান! এরপর তিনি মদীনায় ফিরে এসে যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্নটি করেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তারা তাদের নবীদের নামে ও তাদের পূর্বসূরি নেককার লোকদের নামে নামকরণ করত’। (-সহীহ মুসলিম, হাদীস ২১৩৫)। আমরা উপরে নবীদের নামে নামকরণের বিষয়টি উল্লেখ করেছি। পূর্বসূরি নেককার ব্যক্তিদের তালিকায় প্রথমেই তো নবীগণ, এরপর তাঁদের অনুসারী সাহাবীগণ, এরপর উম্মাহর পরবর্তীকালের বুযুর্গ ব্যক্তিগণ। নবীদের পর সাহাবীগণ শ্রেষ্ঠ মানবকাফেলা। তাদের সকলকে নিয়েই পবিত্র কুরআনের ঘোষণা ‘আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট, তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট।’ তারা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সান্নিধ্য লাভ করেছেন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র মুখে তাদের নাম উচ্চারিত হয়েছে। তাদের সেসব নাম ধরে তিনি তাদের ডেকেছেন; একটি নাম বরকতময় হওয়ার জন্যে আর কী চাই! (আল-কাউসারে প্রকাশিত)
সুন্দর ও অর্থবোধক নাম রাখা: সুন্দর ও অর্থবহ নাম রাখার ব্যাপারে হজরত রাসূল (সা.) গুরুত্বারোপ করেছেন। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর সুন্দর ও অর্থবোধক নাম রাখা মাতা-পিতা ও অভিভাবকের ওপর অপরিহার্য কর্তব্য। আল্লাহ তা›য়ালার গুণবাচক নামের সঙ্গে সংযুক্ত করে এবং তার প্রিয় বান্দাদের নামে নামকরণ করা উত্তম।
নাম পরিচয়ের মাধ্যম: নাম মানুষের পরিচয়ের মাধ্যম। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হল, বর্তমান মুসলিম সমাজ ইসলামের দৃষ্টিতে নাম রাখার এ মহান গুরুত্ব পরিহার করে দিন দিন উদাসীনতার দিকে ছুটছে। ইহুদি, খিস্টান, হিন্দু ও বৌদ্ধদের নামে মুসলমানগণ নিজেদের সন্তান-সন্ততির নামকরণ করছে। নাম শুনে বুঝা যায় না, মানুষটি মুসলিম কি না। আবার অনেক সময় দেখা যায়, মূল নাম আরবি ও অত্যন্ত সুন্দর হলেও পিতা-মাতা তথা অভিভাবকগণ ডাক নাম এমন শব্দের রেখেছেন, যা অনেক ক্ষেত্রে অর্থহীন এবং বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুসরণ প্রমাণ করছে। যেমন- জর্জ, মাইকেল, জ্যাকার, ডলি, মলি, রতন, বিদ্যুৎ, বিউটি, বল্টু, মন্টু, নান্টু, পিন্টু, রঞ্জন, রবি, শশী ইত্যাদি।
নামকরণে আল্লাহর নির্দেশ: নাম রাখার গুরুত্ব সম্পর্কেও ইসলামে রয়েছে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তা›য়ালা বলেন, ‘হে জাকারিয়া, আমি (আল্লাহ) তোমাকে একপুত্রের সুসংবাদ দিচ্ছি। তার নাম হবে ইয়াহইয়া। এই নামে এর আগে আমি কারও নামকরণ করিনি।’(সূরা মারিয়াম, আয়াত : ৭ (দ্বিতীয় পর্ব)
একটি সুন্দর নামে ভূষিত হওয়া প্রতিটি শিশুরই জন্মগত অধিকার। সন্তানের সুন্দর নামকরণ পিতামাতার ধর্মীয় ও নৈতিক দায়িত্ব। বাঙালি মুসলমান এই জাতিকে বিশে^র তৃতীয় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের আসনে বসিয়েছে। তাদের শক্তিশালী ইসলামী সংস্কৃতির পটভূমি থাকা সত্তেও সন্তানের নামকরণের ক্ষেত্রে তারা অন্যান্য ক্ষতিকর সংস্কৃতির অনুসরণ করে থাকে। বর্ণনা ও বিশ্লেষণমূলক পদ্ধতিতে রচিত এ প্রবন্ধ থেকে প্রমাণিত হয়েছে, পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান হিসেবে ইসলাম নবজাত শিশুদের নামের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নীতিমালা প্রদান করেছে। কিন্তু অনেক মুসলিম সন্তানের নামকরণের ক্ষেত্রে সে নীতিমালা প্রতিভাত হয় না। সন্তানের নামকরণের ক্ষেত্রে তাই আরও জনসচেতনতা প্রয়োজন।
লেখক : তরুণ আলেম, সাংবাদিক ও সংগঠক।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রাজশাহী মহানগরীতে ঘন কুয়াশা
আবারও ভানুয়াতুতে দ্বীপপুঞ্জে ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্প
হাজীগঞ্জে ভরাট মিঠানিয়া খালের মুখ, হুমকিতে ফসলি জমি
রাহাতের সুরের মুর্ছনায় বিমোহিত দর্শক, বাংলায় বললেন 'আমরা তোমাদের ভালোবাসি'
‘প্রশাসন ক্যাডার নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে’
যুক্তরাজ্যে ট্রাম্পের বিশেষ দূত হিসেবে মার্ক বার্নেট নিযুক্ত
ফাইনালে ভারতের কাছে বাংলাদেশের হার
ফ্রেন্ডলি ফায়ার দুর্ঘটনায় লোহিত সাগরে মার্কিন যুদ্ধবিমান ধ্বংস
ইরানে যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে নিহত ১০
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী কে, জানেন?
বাংলাদেশি রোগী পেতে সীমান্ত পর্যন্ত মেট্রো চালু করবে ভারত
হাত ফসকে আইফোন পড়ে গেল মন্দিরের দানবাক্সে, ফেরত দিতে অস্বীকৃতি
কুয়াশায় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে একাধিক দুর্ঘটনা: নিহত ১, আহত ১৫
ঢাকার বায়ুমানে উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই, বিপজ্জনকের কাছাকাছি
উগ্রবাদী সন্ত্রাসী 'সাদ' পন্থীদের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন
বাংলাদেশ সীমান্তে অত্যাধুনিক ড্রোন মোতায়েন ভারতের
নরসিংদীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে ছাত্রদলকর্মী নিহত
সিনেটে প্রার্থী হতে সরে দাঁড়ালেন লারা ট্রাম্প
আমাদেরকে আর স্বৈরাচার হতে দিয়েন না : পার্থ
মার্চের মধ্যে রাষ্ট্র-সংস্কার কাজ শেষ হবে : ধর্ম উপদেষ্টা