প্রশ্ন: কুরবানির মধ্যেও কি শান্তির বার্তা নিহিত আছে?

Daily Inqilab ইনকিলাব

০৫ জুলাই ২০২৩, ০৮:০০ পিএম | আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৩, ১২:০১ এএম

উত্তর: কুরবানি মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি মাধ্যম । যেমন- আল্লাহ তায়ালা বলেন- “আমার নামাজ, আমার কুরবানি , আমার জীবন, আমার মৃত্যু একমাত্র আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য”। সুরা আনআম ঃ ১৬২ । এটি একটি আর্থিক ইবাদত । আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন-“তোমার প্রভূর সন্তুষ্টির জন্য নামাজ পড় এবং কুরবানি কর” সুরা আল-কাওছার, আয়াত নম্বর-২ । আর এই কুরবানির গোস্তের বিধান হলো:কুরবানির পশুতে একাধিক ব্যক্তির অংশ থাকলে সে ক্ষেত্রে গোস্ত বণ্টন করার নিয়ম হলো ঃ শরহে বেকায়াহ গ্রন্থকার বলেন ঃ- কুরবানির গোস্ত ওজন করে বণ্টন করা হবে, অনুমান করে নয়। কম-বেশী হলে সকলেরই কুরবানি বাতিল হয়ে যাবে । এছাড়া কুরবানীর পশুটি হালাল উপার্জনে ক্রয় বা হালাল খাদ্যে বড় মোটা তাজা ও নিখুঁত হতে হবে। হযরত ইব্রাহীম আ: এর স্মৃতি বিজড়িত এই কুরবানীর মধ্যে মুমিনের জন্য রয়েছে এক মহা শিক্ষা ও শান্তির আধার। হযরত ইব্রাহীম আ: মহান আল্লাহ তায়ালাকে এই কুরবানীর মাধ্যমে আপন করে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন। আল্লাহ তায়ালাও ইব্রাহীম আ: কে বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে নিজের সান্নিধ্য দান করেছিলেন। আল্লাহ তায়ালা হযরত ইব্রাহীম আ: কে যেসব পরীক্ষা করেছিলেন তার মধ্যে সবচেয়ে বড় পরীক্ষা ছিল তাঁর নিজ সন্তানকে কুরবানী করার নির্দেশ। আল্লাহ বলেন-“অতপর যখন এমন বয়সে পৌছিল যে, পিতার সঙ্গে দৌড়াতে পারবে। ইব্রাহীম পুত্রকে বলল, বৎস! স্বপ্নে দেখলাম, আমি তোমাকে যবাহ করছি। সুতরাং তুমি ভেবে দেখ, তোমার কেমন মনে হয়। পুত্র বলল, পিতা! যে বিষয়ে আপনি আদিষ্ট হয়েছেন, তা করে ফেলুন। ইনশাল্লাহ আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন।” সুরা আছ্ছাফ্ফাত: আয়াত নং-১০২। আল্লাহ তায়ালাকে সন্তুষ্ট করার জন্য হযরত ইব্রাহীম আ: এর এই আত্মত্যাগ কে বিশ^বাসীর নিকট আল্লাহ তায়ালা স্মরনীয় করে রেখেছেন। আর এই ত্যাগের কারণেই হযরত ইব্রাহীম আ: কে আল্লাহ তায়ালা জাতীর পিতা উপাধি দিয়েছেন। হযরত ইব্রাহীম আ: তাঁর সবকিছুই একমাত্র আল্লাহর নিকট উৎসর্গ করেছিলেন। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন-“যখন তাঁর প্রভূ তাঁকে বললেন, তুমি আত্মসমর্পণ কর, তখন তিনি বলেছিলেন আমি বিশে^র পালনকর্তার নিকট আত্মসমর্পণ করলাম।” হযরত ইব্রাহীম আ: এর আত্মসমর্পণই তাঁর বংশধর, দেশ ও জাতির জন্য মহা শান্তির বাতাস বাইয়ে দিল। তাঁর জাতি আত্মত্যাগ করার কঠিন শিক্ষা লাভ করল। আল্লাহ তায়ালা ও অন্য যে কোন বিষয়ের জন্য ত্যাগ এক মহাগুণে পরিণত হলো।‘ আত্মত্যাগ’ গুণটি পরিহার করলে মানুষের মধ্যে মানবতা, উদারতা, মহানুভবতা, ভালোবাসা, মহাব্বত ও সম্প্রীতিবোধ কোন কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। তাই রাসূল (সা:) বলেছেন- “যে ব্যক্তির কুরবানি করার সামর্থ আছে অথচ সে কুরবানি করল না, সে যেন আমাদের ঈদের নামাজের মাঠে না আসে ।” সুনানু ইবনে মাজা,হাদীস নং-৩১২৩ । তাই কুরবানী করার সামর্থ থাকলে তাকে অবশ্যই কুরবানী দিতে হবে। কুরবানীর সামর্থ থাকার পর যদি কেউ কুরবানী না করে, তাহলে তার মধ্যে গরীব মিসকিনদেরকে দান করার অনীহা প্রকাশ পায়। যা মানুষের মধ্যে অশান্তির বিস্তার ঘটতে পারে। ধনীরা যখন গরীব মিসকিনদের দান খায়রাত করা থেকে দূরে থাকবে তখন সমাজের সর্বত্র ফেতনা, ফাসাদ ও অরাজকতা বৃদ্ধি পেতে থাকবে। সমাজের মানুষের মধ্যে মহব্বত ও ভালোবাসা শুন্যের কোঠায় নেমে আসবে। ধনীরা গরীব মিসকিনকে ভালোবাসবে না এবং গরীবরা ধনীদের সম্মান করবে না। হিংসা বিদ্বেষ বৃদ্ধি পাবে। কেউ কাউকে কোন অধিকার দিবে না। তাই ধনীদের কুরবানী করার মাধ্যমে সমাজে মানুষের মধ্যে মহব্বত , ভালোবাসা ও শান্তি ফিরে আসতে পারে। কুরবানী সম্পূর্ণরুপে একটি আর্থিক ইবাদত হওয়ায় একা একা করা যাবে। কুরবানী অংশিদারিত্বের মাধ্যমেও করা যাবে। সে ক্ষেত্রে সবার মধ্যে সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। তাই যে কাজগুলি সমষ্টিগতভাবে করতে হয় সেখানে সবার অধিকার নিশ্চিত করতে না পারলে সে কাজটি সঠিক হয় না। সে কাজ পারিবারিক কাজ হোক বা জাতীয় কাজ হোক বা আন্তর্জাতিক কাজ হোক। কোন সমষ্টিক কাজে সবার অধিকার নিশ্চিত করতে সক্ষম না হলে সেখানে অশান্তি ছাড়া কিছুই আশা করা যায় না। কুরবানীর অংশিদারীদের মধ্যে নিয়ত, অর্থ, গোস্তের বণ্টন সঠিক নিয়মানুযায়ী না হলে কুরবানি বাতিল হয়ে যায় । যে কোন একজনের নিযতের মধ্যে সমস্যা, অর্থের মধ্যে হারাম ও বণ্টনের মধ্যে অসন্তেুাষ থাকলে সবার কুরবানী বাতিল হবে। তাই যে সব কাজে সবার অংশগ্রহণ দরকার বা করতে হয় সে সবকাজে যে কোন একজনের অসুবিধা, সমস্যা ও অধিকার হরণ হলে সবাই অভিযুক্ত হবে। আর এ ক্ষেত্রে পুরো কাজটি বাতিল হয়ে যাবে। কাজেই কামনা হলে,া কুরবানীর মত মহান ইবাদত থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের দেশে সবাই তাদের অধিকার ফিরে পাবে, সুখে ও শান্তিতে দেশ ও রাষ্ট পরিচালিত হবে। ইনশাল্লাহ।

উত্তর দিচ্ছেন: মাওলানা আব্দুর রহীম, মুহাদ্দিস।


বিভাগ : ধর্ম দর্শন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

শুক্রবার হজে যাচ্ছেন ৪ হাজারের বেশি বাংলাদেশি
ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নেপথ্যকথা
মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জীর বর্ণাঢ্য জীবন
‘মহান আল্লাহর নিদর্শন নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য’
রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর আখলাক
আরও
X
  

আরও পড়ুন

ডিমললায় হাজার হাজার মানুষের পাড়া পারের একমাত্র উপায় জোড়া তালি দেওয়া কাঠের সাঁকো

ডিমললায় হাজার হাজার মানুষের পাড়া পারের একমাত্র উপায় জোড়া তালি দেওয়া কাঠের সাঁকো

ভারতের ভূপাতিত পাঁচ যুদ্ধবিমানের তিনটি রাফাল: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী

ভারতের ভূপাতিত পাঁচ যুদ্ধবিমানের তিনটি রাফাল: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের নামে আন্দোলনে বাঁধাদানের মামলা

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের নামে আন্দোলনে বাঁধাদানের মামলা

খেলতে না পারার শঙ্কায় দুই দিন কেঁদেছিলেন মার্তিনেজ

খেলতে না পারার শঙ্কায় দুই দিন কেঁদেছিলেন মার্তিনেজ

মহিপুরে কলেজ ছাত্রদলের কমিটিতে ছাত্রলীগ নেতা, নিন্দার ঝড়

মহিপুরে কলেজ ছাত্রদলের কমিটিতে ছাত্রলীগ নেতা, নিন্দার ঝড়

পেকুয়ায় হিটষ্ট্রোকে ১ জনের মৃত্যু

পেকুয়ায় হিটষ্ট্রোকে ১ জনের মৃত্যু

সোনারগাঁওয়ে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে যুবক গ্রেফতার

সোনারগাঁওয়ে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে যুবক গ্রেফতার

বহিষ্কৃত নেতাদের নিয়ে পথসভা উপজেলা বিএনপির সংবাদ সম্মেলন

বহিষ্কৃত নেতাদের নিয়ে পথসভা উপজেলা বিএনপির সংবাদ সম্মেলন

তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ঢাকা জেলা যুবদলের লিফলেট বিতরণ

তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ঢাকা জেলা যুবদলের লিফলেট বিতরণ

ঋণের কিস্তি নিয়ে পরিশোধ নিয়ে স্বামীর সাথে ঝগড়া।। বগুড়ায় গৃহবধূর আত্মহত্যা

ঋণের কিস্তি নিয়ে পরিশোধ নিয়ে স্বামীর সাথে ঝগড়া।। বগুড়ায় গৃহবধূর আত্মহত্যা

ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ যুক্তরাজ্যের

ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ যুক্তরাজ্যের

শতবর্ষী গাছের উপর নির্মম হামলা অভিযোগ 'শিরক'

শতবর্ষী গাছের উপর নির্মম হামলা অভিযোগ 'শিরক'

১০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্ল্যান্ট স্থাপনে রবি, ফ্লোসোলার ও গ্রিনপাওয়ার এশিয়ার ত্রিপক্ষীয় চুক্তি

১০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্ল্যান্ট স্থাপনে রবি, ফ্লোসোলার ও গ্রিনপাওয়ার এশিয়ার ত্রিপক্ষীয় চুক্তি

ভিক্টোরিয়ার নবজাতক আইসিইউ ইউনিট জেলার স্বাস্থ্য খাতে একটি মাইলফলক: ডিসি

ভিক্টোরিয়ার নবজাতক আইসিইউ ইউনিট জেলার স্বাস্থ্য খাতে একটি মাইলফলক: ডিসি

যুদ্ধের আশঙ্কায় সীমান্ত এলাকায় পুলিশকে সতর্ক থাকার নির্দেশ

যুদ্ধের আশঙ্কায় সীমান্ত এলাকায় পুলিশকে সতর্ক থাকার নির্দেশ

শিক্ষার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে কেমব্রিজে অনুষ্ঠিত হলো দক্ষিণ এশিয়া স্কুল সম্মেলন

শিক্ষার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে কেমব্রিজে অনুষ্ঠিত হলো দক্ষিণ এশিয়া স্কুল সম্মেলন

উচ্চশিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধিতে ইইউ’র সহযোগিতা চেয়েছে ইউজিসি

উচ্চশিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধিতে ইইউ’র সহযোগিতা চেয়েছে ইউজিসি

শেরপুর বিআরটিএ অফিসে দুদকের অভিযান

শেরপুর বিআরটিএ অফিসে দুদকের অভিযান

বাউফলে কলেজ ছাত্রদলের কমিটি গঠন

বাউফলে কলেজ ছাত্রদলের কমিটি গঠন

ভারত-পাকিস্তানের সংঘাত নিয়ে যা বলছে রাশিয়া ও ফ্রান্স

ভারত-পাকিস্তানের সংঘাত নিয়ে যা বলছে রাশিয়া ও ফ্রান্স