সাহিত্য চর্চায় মহানবী সা.-এর প্রেরণা

Daily Inqilab ইনকিলাব

৩০ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৫০ পিএম | আপডেট: ৩১ আগস্ট ২০২৩, ১২:০২ এএম

জীবন বিধান হিসেবে ইসলামের পরিধি ব্যাপক ও সর্বব্যাপী। জীবনের সব ক্ষেত্রে এর সৌরভ ছড়ানো। এ ধারা থেকে সাহিত্য-সংস্কৃতি বাদ যায়নি। জীবনের অন্য সব ক্ষেত্রের মতো সাহিত্য-সংস্কৃতিও এক অপরিহার্য বিষয়। সাহিত্য মানব জীবনের প্রতিচ্ছবি। মানুষের শুভবুদ্ধির উজ্জীবনী শক্তি।জীবন বিধান হিসেবে ইসলামের পরিধি ব্যাপক ও সর্বব্যাপী। জীবনের সব ক্ষেত্রে এর সৌরভ ছড়ানো। এ ধারা থেকে সাহিত্য-সংস্কৃতি বাদ যায়নি। জীবনের অন্য সব ক্ষেত্রের মতো সাহিত্য-সংস্কৃতিও এক অপরিহার্য বিষয়। সাহিত্য মানব জীবনের প্রতিচ্ছবি। মানুষের শুভবুদ্ধির উজ্জীবনী শক্তি।
সাহিত্যিকের কাজ মানুষের সুপ্রবৃত্তিকে জাগিয়ে তোলা। মানব মনকে কল্যাণের দিকে উদ্দীপ্ত করা ও মানব-উদ্দীপনার আবহ তৈরি করা। সাহিত্য মানে কল্পলোকের বিস্তার বা সম্মোহনের স্বপ্নজাল নয়। যে সাহিত্য তার সম্মোহনী জালে আত্মবিলীনতার বীজ রোপণ করে, সে সাহিত্য সৎ ও প্রকৃত সাহিত্য নয়।
সংস্কৃতি তো জীবনের ক্ষেত্রে আরও ব্যাপক, আরও গভীর ও অতলস্পর্শী। শোভমানতা ও ঔদার্যে বিভূষিত। জীবনের সাফল্য ও ব্যর্থতার মাপকাঠি। মানুষ কীভাবে আল্লাহ ও তার রাসূল (সা.)-এর নির্দেশিত পথে জীবনের সাফল্য অর্জন করবে, তার চূড়ান্ত লক্ষ্য ‘ইনসানে কামিল’ হওয়ার পথে অগ্রসর হবে- সংস্কৃতি সেই পথনির্দেশক। এক কথায়, সংস্কৃতি হচ্ছে মানব জীবনের চূড়ান্ত সাফল্যের পাথেয়। দ্বীন ও দুনিয়ার মহত্তম সমন্বয়। এর ব্যাপকতাও জীবনের সব ক্ষেত্রে পরিব্যাপ্ত। যে যতো বেশি সংস্কৃতিবান, তিনি ততই পরিশুদ্ধ, পরিচ্ছন্ন ও সফল মানুষ।মানবজাতির মধ্যে পরম বিশুদ্ধ ও পরিচ্ছন্ন মানুষ হচ্ছেন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল হজরত মুহাম্মদ (সা.)। তিনি ছিলেন এক নয়া সংস্কৃতির নির্মাতা। শুদ্ধতা ও পরিচ্ছন্নতার এক দুর্লভ মহিমায় বিভূষিত। অথচ তার সমাজ ও সময়, তার যুগ ও প্রতিবেশ ছিল পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত। হজরত ঈসা (আ.)কে আসমানে তুলে নেওয়ার পর থেকে তার নবুয়ত প্রাপ্তির আগ পর্যন্ত দীর্ঘদিনব্যাপী মানবসমাজ নিষ্পিষ্ট ছিল পঙ্কিলতা, নির্মমতা, অস্বচ্ছতা, অসততা, অসাধুতা, পৌত্তলিকতা ও পেশিশক্তিমত্তার এক অসহনীয় অনাচার ও দুর্বৃত্তপরায়ণতায়। এ যুগসন্ধিক্ষণে তার আগমন ঘটে। গোটা মানবম-লীর কল্যাণকামী হয়ে তিনি যখন দ্বীন প্রচারে লিপ্ত, শত বাঁধা-বিঘেœর মধ্যেও তিনি ছিলেন অবিচল ও সুদৃঢ়। অথচ তার কোনো শিক্ষক ছিল না। তিনি জাগতিক কোনো পাঠ গ্রহণ করেননি। নবুওয়তের আগে প্রকৃতিই ছিল তার শিক্ষক। তার প্রজ্ঞা, তার বিচক্ষণতা, তার ঔদার্য, তার বিবেচনাবোধ তার সময় ও পরিবেশ থেকে তাকে স্বাতন্ত্র দিয়েছেন। সেই সমাজের সম্মানিত ও মর্যাদাবান পুরুষ হিসেবে, পরিশুদ্ধ ও পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে দুর্লভ সম্মানে তিনি সম্মানিত হয়েছেন। ভাষার শুদ্ধতা, সাংস্কৃতিক পরিচ্ছন্নতা ও মানসিক ঔজ্জ্বল্যে তিনি ছিলেন এক মহিমান্বিত মানুষ। নবুওয়ত লাভের পর স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার শিক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সে ক্ষেত্রেও তিনি এক প্রজ্ঞাবান, দূরদর্শী, সুচিবেচক, ভারসাম্যপূর্ণ ও পরিপূর্ণ মানুষ। জীবনের কোনো কালিমা তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। পৃথিবীর অগ্নিকু- থেকে তার মতো এমন অক্ষত অবস্থায় মুক্ত থাকা জীবন মানব ইতিহাসে বিরল। তাই সাহিত্য-সংস্কৃতির মতো জীবনবোধে নিবিষ্ট ও মানুষের সহজাত এবং আত্মলগ্ন জীবনাচরণের সমন্বয়ক উপাদান দুটিও তার স্পর্শে পল্লবিত হয়েছে।
তিনি বলতেন, ‘আমি শুদ্ধতম আরব, কেননা কোরাইশদের ভেতর আমার জন্ম। কিন্তু আমি আমার শৈশব কাটিয়েছি সাদ বিন বকর গোত্রে। তার যুগও ছিল কবিতার ছন্দ-উপমা, শব্দ-উৎপ্রেক্ষা ও বাণী-রূপকল্পে প্লাবিত। আরবদের জীবন ও জীবিকা, স্বপ্ন ও বাস্তবতা, আশা ও আনন্দ, শত্রুতা ও মিত্রতার বাহন ছিল কবিতা। কবিতা ছিল তাদের ইতিহাস, তাদের বিজ্ঞান, তাদের সংস্কৃতি ও তাদের সভ্যতা। এক কথায় তৎকালীন আরবে কবি ও কবিতা বহুল প্রচলিত ও চর্চিত একটি বিষয় ছিল।
আরবের মানুষের মন ও মনন, আরবের পথ ও প্রান্তর কবি ও কবিতার দ্বারা মেঘমালার মতো আবৃত ছিল। সেই কাব্যপ্লাবী সমাজের একজন প্রাগ্রসর ও শুদ্ধভাষী মানুষ হয়েও রাসূলুল্লাহ (সা.) নবুওয়তের আগে কোনো কবিতার আসরে যোগ দেননি। যে দু’একবার যোগ দিতে আগ্রহী হয়েছেন, অলৌকিকভাবে পথিমধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছেন বা অন্যভাবে ফিরে এসেছেন। তারপরও যখন তার ওপর নবুওয়তের আসমানি গুরুদায়িত্ব অর্পিত হলো, তখন তাকে শত্রুপক্ষের পক্ষ থেকে বলা হলো ‘কবি’ এবং তার ওপর নাজিলকৃত কিতাব আল-কোরআনকে বলা হলো ‘কবিতা।’আল কোরআনই এর প্রতিবাদে সোচ্চার হলো। বলা হলো, ‘আমি রাসূলকে কাব্য রচনা করতে শিখাইনি এবং তা তার জন্য শোভনীয়ও নয়। এ তো কেবল এক উপদেশ এবং সুস্পষ্ট কোরআন।’ (চলবে)
লেখক: গবেষক, কলামিস্ট।


বিভাগ : ধর্ম দর্শন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বড়দিনের ধর্মীয় ইতিহাস ও তাৎপর্য
ইসলামি অর্থনীতির স্বরূপইসলামি অর্থনীতির স্বরূপ
হাজারো পীর-আউলিয়ার শিরোভূষণ সৈয়দ সুফি ফতেহ আলী ওয়াইসি (র.)
আল-কুরআন তাজকেরায়ে মীলাদ নামায়ে আম্বিয়া (আ:)
ঘুষ : দেয়া-নেয়া দুটিই অপরাধ
আরও
Airtel Wecome Banner

আরও পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্র ও লন্ডনে ৩শ’ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে হাসিনা-জয়ের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু

যুক্তরাষ্ট্র ও লন্ডনে ৩শ’ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে হাসিনা-জয়ের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু

রাজশাহী মহানগরীতে ঘন কুয়াশা

রাজশাহী মহানগরীতে ঘন কুয়াশা

আবারও  ভানুয়াতুতে  দ্বীপপুঞ্জে ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্প

আবারও ভানুয়াতুতে দ্বীপপুঞ্জে ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্প

হাজীগঞ্জে ভরাট মিঠানিয়া খালের মুখ, হুমকিতে ফসলি জমি

হাজীগঞ্জে ভরাট মিঠানিয়া খালের মুখ, হুমকিতে ফসলি জমি

রাহাতের সুরের মুর্ছনায় বিমোহিত দর্শক, বাংলায় বললেন 'আমরা তোমাদের ভালোবাসি'

রাহাতের সুরের মুর্ছনায় বিমোহিত দর্শক, বাংলায় বললেন 'আমরা তোমাদের ভালোবাসি'

‘প্রশাসন ক্যাডার নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে’

‘প্রশাসন ক্যাডার নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে’

যুক্তরাজ্যে ট্রাম্পের বিশেষ দূত হিসেবে মার্ক বার্নেট নিযুক্ত

যুক্তরাজ্যে ট্রাম্পের বিশেষ দূত হিসেবে মার্ক বার্নেট নিযুক্ত

ফাইনালে ভারতের কাছে বাংলাদেশের হার

ফাইনালে ভারতের কাছে বাংলাদেশের হার

ফ্রেন্ডলি ফায়ার দুর্ঘটনায় লোহিত সাগরে মার্কিন যুদ্ধবিমান ধ্বংস

ফ্রেন্ডলি ফায়ার দুর্ঘটনায় লোহিত সাগরে মার্কিন যুদ্ধবিমান ধ্বংস

ইরানে যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে নিহত ১০

ইরানে যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে নিহত ১০

বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী কে, জানেন?

বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী কে, জানেন?

বাংলাদেশি রোগী পেতে সীমান্ত পর্যন্ত মেট্রো চালু করবে ভারত

বাংলাদেশি রোগী পেতে সীমান্ত পর্যন্ত মেট্রো চালু করবে ভারত

হাত ফসকে আইফোন পড়ে গেল মন্দিরের দানবাক্সে, ফেরত দিতে অস্বীকৃতি

হাত ফসকে আইফোন পড়ে গেল মন্দিরের দানবাক্সে, ফেরত দিতে অস্বীকৃতি

কুয়াশায় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে একাধিক দুর্ঘটনা: নিহত ১, আহত ১৫

কুয়াশায় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে একাধিক দুর্ঘটনা: নিহত ১, আহত ১৫

ঢাকার বায়ুমানে উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই, বিপজ্জনকের কাছাকাছি

ঢাকার বায়ুমানে উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই, বিপজ্জনকের কাছাকাছি

উগ্রবাদী সন্ত্রাসী 'সাদ' পন্থীদের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন

উগ্রবাদী সন্ত্রাসী 'সাদ' পন্থীদের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন

বাংলাদেশ সীমান্তে অত্যাধুনিক ড্রোন মোতায়েন ভারতের

বাংলাদেশ সীমান্তে অত্যাধুনিক ড্রোন মোতায়েন ভারতের

নরসিংদীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে ছাত্রদলকর্মী নিহত

নরসিংদীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে ছাত্রদলকর্মী নিহত

সিনেটে প্রার্থী হতে সরে দাঁড়ালেন লারা ট্রাম্প

সিনেটে প্রার্থী হতে সরে দাঁড়ালেন লারা ট্রাম্প

আমাদেরকে আর স্বৈরাচার হতে দিয়েন না : পার্থ

আমাদেরকে আর স্বৈরাচার হতে দিয়েন না : পার্থ