প্রশ্ন: পর্নোগ্রাফি কী ঈমান ধ্বংসের ছোবল?
০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৪১ পিএম | আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম
উত্তর: পর্নোগ্রাফি বলতে প্রকাশ্যে যৌনতা উৎপাদন ও প্রদর্শন করাকে বোঝায়। পাশ্চাত্য জগৎ স্বতন্ত্র শিল্পের দাবি নিয়ে প্রাপ্তবয়স্কদের চিত্তবিনোদনের জন্য আইনের স্বীকৃতিসহ আবির্ভূত প্রকাশ্যে যৌন দৃশ্য উৎপাদন, সংরক্ষণ, বাজারজাত ও বিপণন করে। এটি সত্য, আদিকাল থেকেই নারী-পুরুষের শারীরিক সম্পর্কের উপস্থাপন নানাভাবে হয়েছে। সাহিত্য, সংগীত, চিত্রকলা ও স্থাপত্যে নানাভাবে শিল্পসম্মত উপায়ে যৌনতা উপস্থাপিত হয়েছে। যৌনতার শিল্পসম্মত উপস্থাপন শিল্প, সাহিত্য ও জীবনবোধকে সমৃদ্ধ করেছে। কিন্তু টেলিভিশন, ভিডিও ও ইন্টারনেট আবিষ্কারের পর ‘প্রাপ্তবয়স্কদের চিত্তবিনোদন’ বা মনোরঞ্জনের কথা বলে পর্নো ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠেছে।
বিভিন্ন দেশে পর্নোগ্রাফির বিপুল চাহিদা সৃষ্টির পাশাপাশি পর্নো বাণিজ্যের সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে এর পেছনে অত্যন্ত শক্তিশালী অর্থনৈতিক কার্যকারিতাকে যৌক্তিক রূপে দৃশ্যমান করে তোলা হচ্ছে। অথচ সমাজের ওপর তার ফলাফল মারাত্মক নেতিবাচক। পর্নোশিল্প শিশু, নারী-পুরুষ ও সমাজে বিষাক্ত দূষণ ছড়িয়ে দিচ্ছে। শিশু পর্নোগ্রাফি কোমলমতি শিশুদের সুন্দর মনকে অজ্ঞাতসারে বিষিয়ে তুলছে। পর্নোগ্রাফির ক্ষতিকর প্রভাবে ধর্ষণ, যৌন অপরাধ এবং পুরুষ-নারীর বিপথগামী আচরণ বাড়ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও অনেক দিন ধরে অশ্লীল ছবি ও চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী চলছে এবং মুঠোফোনের মাধ্যমে পর্নোগ্রাফি ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়ছে। অথচ বাংলাদেশের সংস্কৃতি, প্রচলিত মূল্যবোধ ও ধর্মীয় বিধিনিষেধ পর্নোগ্রাফি বা অশ্লীল ছবির উৎপাদন, সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণ ও প্রদর্শনীকে অনুমোদন করে না। এখানকার জনসাধারণের অধিকাংশের ধর্ম ইসলামে পর্নোগ্রাফিসহ সব ধরনের অশ্লীলতা নিষিদ্ধ।
পর্নোগ্রাফি একটি সর্বজন স্বীকৃত অশ্লীলতা। মানবসমাজকে পূতপবিত্র এবং বিশৃঙ্খলামুক্ত রাখার উদ্দেশ্যে ইসলামে সব ধরনের অশ্লীলতাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘আপনি বলুন, আমার পালনকর্তা কেবল অশ্লীল বিষয়সমূহ হারাম করেছেন-যা প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য এবং হারাম করেছেন গোনাহ, অন্যায়-অত্যাচার, আল্লাহর সঙ্গে এমন বস্তুকে অংশীদার করা, তিনি যার কোনো সনদ অবতীর্ণ করেননি এবং আল্লাহর প্রতি এমন কথা আরোপ করা, যা তোমরা জান না। আল্লাহ সব ধরনের অশ্লীলতা পরিহারের নির্দেশ প্রদান করে বলেন, ‘আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচারণ এবং আত্মীয়স্বজনকে দান করার আদেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসঙ্গত কাজ এবং অবাধ্যতা করতে বারণ করেন। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন-যাতে তোমরা স্মরণ রাখ।’
কোনো মুসলিম অশ্লীল কোনো কাজে জড়িত হওয়া তো দূরের কথা, বরং অশ্লীল কাজে বাধার প্রাচীর হয়ে দাঁড়ানো তার দায়িত্ব। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ অন্যায়-অশ্লীল কর্ম দেখলে তা শক্তি দ্বারা প্রতিহত করবে। যদি সমর্থ না হয়, তাহলে কথার দ্বারা প্রতিবাদ করবে। এতেও সমর্থ না হলে, বিবেক দ্বারা প্রতিহত করবে। আর এটিই হচ্ছে সবচেয়ে দুর্বল ইমান। ফলে ইসলাম প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব ধরনের অশ্লীলতাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। আল্লাহ বলেন, ‘লজ্জাকর কার্যে জড়িত হয়ো না, সে প্রকাশ্যেই বা গোপনে। ফলে অশ্লীল কর্ম সমাজে ছড়িয়ে দেওয়াও মারাত্মক অপরাধ। আল্লাহ বলেন, ‘যারা পছন্দ করে, ইমানদারদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার লাভ করুক তাদের জন্য ইহকাল ও পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ জানে, তোমরা জান না। কোনো নারীকে কটু কথা বলা, খারাপ ইশারা-ইঙ্গিত করা, হয়রানি করা, গালি দেওয়া, ঢিল মারা, পথরুদ্ধ করা যেমন অশ্লীল কাজ, তেমনি কোনো নারী-পুরুষের বিকৃত স্থির চিত্র বা নগ্ন ভিডিও ধারণ ও ছড়িয়ে দেওয়া কিংবা প্রত্যক্ষ করা অশ্লীল কাজ।
রাসূলুল্লাহ (সা.) সব ধরনের অশ্লীল কাজকে নিষেধ করে বলেন, “অশ্লীলতা এবং অশ্লীলতার প্রসার কোনোটির স্থান ইসলামে নেই। নিশ্চয় ইসলামে সর্বোত্তম মানুষ হচ্ছে যার স্বভাব-চরিত্র সবার চেয়ে সুন্দর। ইসলাম এ অপরাধকে সরাসরি নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পাশাপাশি এ অপরাধ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অযাচিত ও রুচিহীন কয়েকটি কর্মকেও নিষিদ্ধ করেছে। নিুে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণে ইসলামের ঐতিহাসিক বিধিবিধানের প্রায়োগিক দিকগুলো তুলে ধরা হলো-পরিপ্রেক্ষিতে প্রতীয়মান হচ্ছে, ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ পর্নোগ্রাফি উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও প্রদর্শনীতে কখনোই অনুমোদন করেনি। এখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জীবনাদর্শ ইসলাম পর্নোগ্রাফিসহ সব ধরনের অশ্লীলতাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। ফলে এ অঞ্চলের মুসলিমরা ছিল সব ধরনের অশ্লীলতামুক্ত ও রুচিহীন ক্রিয়াকর্মের বিপরীতে উন্নত জীবনযাপনের প্রতি প্রত্যয়শীল। তাদের শিল্প, সাহিত্য, নাটক, সিনেমাসহ সব ধরনের সাংস্কৃতিক উপস্থাপনা এ উন্নত তাহযিব-তামাদ্দুনের পক্ষেই স্বাক্ষর বহন করে। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় স্যাটেলাইট, মোবাইল প্রযুক্তি, ইন্টারনেট, সাইবার ক্যাফে ইত্যাদি উদ্ভাবনের পর নৈতিকতাবিরোধী যে অশ্লীল ভিডিও ও স্থিরচিত্র ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে তা নিয়ন্ত্রণে সুস্পষ্ট আইনগত পদক্ষেপ হিসাবে সরকার নতুন আইন প্রণয়ন করে। প্রস্তাবিত আইনে পর্নোগ্রাফি সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
আইন প্রণয়নের আবশ্যকতা সম্পর্কে প্রদত্ত বিবৃত্তি ও মূল আইনের শিরোনাম পরবর্তী উল্লিখিত আইন প্রণয়নের প্রেক্ষাপট বর্ণনায় আইনটির যে প্রাসঙ্গিকতা ফুটে উঠেছে তা পক্ষান্তরে অশ্লীলতা নিয়ন্ত্রণে ইসলামি নৈতিকতায় ঐতিহাসিক ও উন্নত পদক্ষেপগুলোর তাৎপর্যই বহন করছে। ইসলাম মানবজীবন পরিচালনায় একটি ভারসাম্যপূর্ণ নৈতিক চরিত্রে বিকশিত শাশ্বত আদর্শ। পর্নোগ্রাফির মতো একটি অনৈতিক কর্ম ইসলামি মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ জাতির ভেতর কখনোই সৃষ্টি হতে পারে না। বাংলাদেশে পর্নোগ্রাফি ও সংশ্লিষ্ট অপরাধ থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা ও জীবন নির্ধারণের সঠিক ও পূর্ণ অনুসরণ।
উত্তর দিচ্ছেন: মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান, কলামিস্ট-গবেষক।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
কিশোরগঞ্জের আব্দুল কাহার আকন্দ কোথায়? কেউ জানে না!
হাসিনাকে গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি
যুক্তরাষ্ট্র ও লন্ডনে ৩শ’ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে হাসিনা-জয়ের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু
রাজশাহী মহানগরীতে ঘন কুয়াশা
আবারও ভানুয়াতুতে দ্বীপপুঞ্জে ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্প
হাজীগঞ্জে ভরাট মিঠানিয়া খালের মুখ, হুমকিতে ফসলি জমি
রাহাতের সুরের মুর্ছনায় বিমোহিত দর্শক, বাংলায় বললেন 'আমরা তোমাদের ভালোবাসি'
‘প্রশাসন ক্যাডার নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে’
যুক্তরাজ্যে ট্রাম্পের বিশেষ দূত হিসেবে মার্ক বার্নেট নিযুক্ত
ফাইনালে ভারতের কাছে বাংলাদেশের হার
ফ্রেন্ডলি ফায়ার দুর্ঘটনায় লোহিত সাগরে মার্কিন যুদ্ধবিমান ধ্বংস
ইরানে যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে নিহত ১০
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী কে, জানেন?
বাংলাদেশি রোগী পেতে সীমান্ত পর্যন্ত মেট্রো চালু করবে ভারত
হাত ফসকে আইফোন পড়ে গেল মন্দিরের দানবাক্সে, ফেরত দিতে অস্বীকৃতি
কুয়াশায় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে একাধিক দুর্ঘটনা: নিহত ১, আহত ১৫
ঢাকার বায়ুমানে উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই, বিপজ্জনকের কাছাকাছি
উগ্রবাদী সন্ত্রাসী 'সাদ' পন্থীদের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন
বাংলাদেশ সীমান্তে অত্যাধুনিক ড্রোন মোতায়েন ভারতের
নরসিংদীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে ছাত্রদলকর্মী নিহত