সভ্যতায় হিজরী সনের প্রভাব
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:২৭ পিএম | আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম
হিজরী সনের প্রথম মাস মুহাররম। শুরু হয়ে হয়েগেছে! এই হিজরী সনের সূচনা, প্রেক্ষাপট, মুসলিম-জীবনে এর প্রভাব!
হজরত ওমর রা. তার খিলাফতকালে হিজরতের ১৭তম বর্ষে হিজরী সন গণনা শুরু করেন। এর প্রেক্ষাপট ছিল এরকম—হজরত ওমর রা.-এর কাছে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় চিঠি আসত। সেখানে মাসের নাম ও তারিখ লেখা হতো। কিন্তু সনের নাম থাকত না। এতে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হতো। তখন পরামর্শের ভিত্তিতে একটি সন নির্ধারণ ও গণনার সিদ্ধান্ত হয়। বিভিন্ন উপলক্ষ থেকে সন গণনার মতামত আসলেও শেষ পর্যন্ত হিজরতের ঘটনা থেকে সন গণনার সিদ্ধান্ত হয়। সন গণনার আলোচনার সময় প্রস্তাব উঠেছিল,ঈসায়ী সনের সূচনার সঙ্গে মিল রেখে নবীজীর জন্মের সন থেকে ইসলামী সনের শুরু হওয়া। এ রকম আরও কিছু কিছু উপলক্ষের কথাও আলোচিত হয়। কিন্তু হিজরতের সন থেকে সন গণনা চূড়ান্ত হওয়ার পেছনে তাৎপর্য হল,হিজরতকে মূল্যায়ন করা হয় ‘আল ফারিকু বাইনাল হাক্কি ওয়াল বাতিল’ অর্থাৎ সত্য-মিথ্যার মাঝে সুস্পষ্ট পার্থক্যকারী বিষয় হিসেবে। হিজরতের পর থেকেই মুসলমানরা প্রকাশ্য ইবাদত ও সমাজ-গঠনের রূপরেখা বাস্তবায়ন করতে পেরেছিলেন। প্রকাশ্যে আযান, নামায, জুমা, ঈদ সবকিছু হিজরতের পর থেকেই শুরু হয়েছে। এসব তাৎপর্যের দিকে লক্ষ্য করেই মুসলমানদের সন গণনা হিজরত থেকেই শুরু হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। হিজরী সনের মাসগুলো তো আগে থেকেই ছিল। সে হিসেবে এ সনটিকে কেবল আরবী সন হিসেবে সাব্যস্ত করা যায় কি না?
মাসগুলো আরবী মাস হলেও সনটিকে গোটা মুসলিম উম্মাহর সন হিসেবেই গ্রহণ করতে হবে। মাসগুলো আসলে চান্দ্র বর্ষের মাস। আরবীতে ‘আশশুহূরুল কামারিয়্যা’ বলা হয়। এজন্য হিজরী সনও একটি চান্দ্রবর্ষ। যেমন ঈসায়ী সনের মাসগুলোকে বলা হয় ‘আশশুহূরুশ শামসিয়্যা’ বা সৌরবর্ষের মাস। এই চান্দ্রবর্ষকে তাই কেবল আরবদের সন হিসেবে আখ্যায়িত করা যায় না। এই চান্দ্রবর্ষের ও চান্দ্রমাসের প্রভাব মুসলমানদের জীবনে ব্যাপক। জীবনের সব ক্ষেত্রেই এর প্রভাব ও গুরুত্ব রয়েছে। বিশেষত ইবাদতের তারিখ,ক্ষণ ও মৌসুম নির্ধারণের ক্ষেত্রে হিজরী সনের প্রভাব ও গুরুত্ব অপরিসীম। একারণে হিজরী সনের হিসাব স্মরণ রাখা মুসলমানদের জন্য জরুরি। অনেক ক্ষেত্রেই এর প্রভাব রয়েছে। যেমন রমযানের রোযা,দুই ঈদ,হজ্ব,যাকাত ইত্যাদি ক্ষেত্রগুলোতে চান্দ্রবর্ষ বা হিজরী সন ধরেই আমল করতে হয়। রোযা রাখতে হয় চাঁদ দেখে, ঈদ করতে হয় চাঁদ দেখে। এভাবে অন্যান্য আমলও। এমনকি স্বামীর মৃত্যুর পর মহিলাদের ইদ্দতের ক্ষেত্রগুলোতেও চান্দ্রবর্ষের হিসাব গণনা করতে হয়। অর্থাৎ মুসলমানদের ধর্মীয় কতগুলো দিন-তারিখের হিসাব-নিকাশের ক্ষেত্র রয়েছে,সেগুলোতে চাঁদের হিসাবে দিন,তারিখ,মাস ও বছর হিসাব করা আবশ্যকীয়।
চান্দ্রবর্ষের হিসাব মেলালে দেখা যায়,একটি ইবাদতের মৌসুম কয়েক বছরের ব্যবধানে শীত-গরম-বর্ষায় পরিবর্তিত হতে থাকে। সৌরবর্ষের হিসাবে এটা হয় না। এতে কি কোনো হিকমত বা কল্যাণ রয়েছে?
আসলে ইসলাম হচ্ছে ‘দ্বীনুল ফিতরাহ’ বা স্বভাব-অনুকূল ধর্ম। ইসলামের বিধিবিধান এমনভাবে দেয়া হয়েছে যে, শিক্ষিত-অশিক্ষিত,শহুরে-গ্রাম্য, সমতলবাসী বা পাহাড়ি,তথ্য ও প্রযুক্তির সুবিধাপ্রাপ্ত ও বঞ্চিত-সবাই যেন স্বাচ্ছন্দে আল্লাহর বিধিবিধানগুলো পালন করতে পারে। চাঁদের মাস ও বছরের হিসাবেই সহজে এটা করতে পারা যায়। জোতির্বিদ্যা বা আবহাওয়া বিষয়ক তথ্য যাদের কাছে থাকে না তারাও চাঁদ দেখে স্বাচ্ছন্দ্যে এ বিধানগুলো পালন করতে পারে। ,চান্দ্রবর্ষের হিসাব অনুযায়ী হওয়ায় একটি ইবাদত বিভিন্ন মৌসুমে পালনের সুযোগ মুসলমানরা পান। কখনও রোযা ছোট দিনের হয়,কখনও দীর্ঘ দিনের। কখনও ঈদ ও হজ্ব হয় শীতকালে,কখনও গ্রীষ্মকালে। মৌসুমের এই বৈচিত্র্যের কারণে মুসলমানরা একটি ইবাদত বা উৎসব আল্লাহর দেওয়া সব ক’টি মৌসুমেই পালন করতে পারেন। ইসলামের ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর দিন-তারিখগুলোকে খ্রিস্টীয় সন-তারিখে রূপান্তরিত করে পালন করা হয় বা স্মরণ করা হয়।
আমার মনে হয় এটা যুক্তিযুক্ত নয় এবং এমনটি করা উচিত নয়। কারণ, এসব ঘটনা যেসব মাস বা দিনে হয়েছে সেগুলোর আলাদা তাৎপর্য আছে। যেমন বদর যুদ্ধের দিনের কথা বলতে পারেন। যুদ্ধটি হয়েছে রমযান মাসে। কোরআন নাযিলের মাসে। এখন এ যুদ্ধদিনের তারিখকে খ্রিস্টীয় সনে অনুসরণ করে স্মরণ করলে একসময় দেখা যাবে যে,দিনটি আর রমযান মাসে নেই। তখন এ যুদ্ধের ইতিহাসের যে আবেদন রয়েছে,তা কিছুটা হারিয়ে যাবে। তাই এজাতীয় ঘটনা ও দিবসকে হিজরী সন ও তারিখ দিয়েই গণনা করা উচিত। তবে হিজরী সন ঠিক রেখে কেউ যদি এর সঙ্গে খ্রিস্টীয় সনকে মিলিত করে উল্লেখ করেন, সেটা দোষণীয় নয়। হিজরী সন বা ইসলামী সনকে স্মরণ ও অনুশীলনে রাখা! শুধু হিজরী সন নয়,হিজরী সনের মাসগুলোর তারিখ ব্যবহারে ও চর্চায় রাখা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য কর্তব্য। মুসলমানদের হিসাব-নিকাশগুলো হিজরী তারিখ উল্লেখ করেই করা উচিত। অন্য সনের হিসাব অনুগামী হিসেবে আসতে পারে। (অসমাপ্ত)
লেখক-গবেষক, কলামিস্ট।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
যুক্তরাষ্ট্র ও লন্ডনে ৩শ’ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে হাসিনা-জয়ের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু
রাজশাহী মহানগরীতে ঘন কুয়াশা
আবারও ভানুয়াতুতে দ্বীপপুঞ্জে ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্প
হাজীগঞ্জে ভরাট মিঠানিয়া খালের মুখ, হুমকিতে ফসলি জমি
রাহাতের সুরের মুর্ছনায় বিমোহিত দর্শক, বাংলায় বললেন 'আমরা তোমাদের ভালোবাসি'
‘প্রশাসন ক্যাডার নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে’
যুক্তরাজ্যে ট্রাম্পের বিশেষ দূত হিসেবে মার্ক বার্নেট নিযুক্ত
ফাইনালে ভারতের কাছে বাংলাদেশের হার
ফ্রেন্ডলি ফায়ার দুর্ঘটনায় লোহিত সাগরে মার্কিন যুদ্ধবিমান ধ্বংস
ইরানে যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে নিহত ১০
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী কে, জানেন?
বাংলাদেশি রোগী পেতে সীমান্ত পর্যন্ত মেট্রো চালু করবে ভারত
হাত ফসকে আইফোন পড়ে গেল মন্দিরের দানবাক্সে, ফেরত দিতে অস্বীকৃতি
কুয়াশায় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে একাধিক দুর্ঘটনা: নিহত ১, আহত ১৫
ঢাকার বায়ুমানে উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই, বিপজ্জনকের কাছাকাছি
উগ্রবাদী সন্ত্রাসী 'সাদ' পন্থীদের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন
বাংলাদেশ সীমান্তে অত্যাধুনিক ড্রোন মোতায়েন ভারতের
নরসিংদীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে ছাত্রদলকর্মী নিহত
সিনেটে প্রার্থী হতে সরে দাঁড়ালেন লারা ট্রাম্প
আমাদেরকে আর স্বৈরাচার হতে দিয়েন না : পার্থ