প্রশ্ন: শিশুদের প্রতি রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর স্নেহ কিরূপ ছিল?

Daily Inqilab ইনকিলাব

২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৫৪ পিএম | আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম

উত্তর: রাসুলেপাক (সা.) শিশুদের প্রতি অত্যন্ত স্নেহ প্রবণ ছিলেন। তাঁর একটি অভ্যাস ছিল, যখন তিনি কোনো সফর থেকে ফিরতেন তখন রাস্তায় যে সব শিশু সামনে পড়ত, তাদেরকে স্বীয় বাহনের পিঠে নিজের আগে পিছে বসিয়ে নিতেন । আর তাদের সঙ্গে দেখা হলে প্রথমেই তিনি তাদেরকে সালাম করতেন। একদিন তাঁর দরবারে খালেদ বিন সাইন (রা.) উপস্থিত হলেন। সঙ্গে তাঁর শিশুকন্যাটিও ছিল। তার গায়ে লাল রঙের জামা ছিল । রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, সানা। হাবশি ভাষায় হুসনাকে সানা অর্থাৎ সুন্দরী বলা হতো। মেয়েটির যেহেতু হাবশায় জন্ম হয়েছিল, তাই রাসূলেপাক (সা.) তাকে ঐভাবে ‘সানা’ বলেছিলেন। মেয়েটি রাসূলেপাক (সা.)-এর পৃষ্ঠদেশের মোহরে নবুয়ত নিয়ে খেলা করতে লাগল । হযরত খালেদ (রা.) তাকে ধমক দিলেন। কিন্তু রাসূলেপাক (সা.) তাকে ধমক দিতে নিষেধ করে বললেন, না তাকে খেলতে দাও। একবার কোনো স্থান থেকে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর খেদমতে কিছু কাপড় এলো। তার মধ্যে কালো রঙের একটি চাদরও ছিল । তার উভয় পাশে আঁচল ছিল । তিনি উপস্থিত লোকদের লক্ষ্য করে বললেন, এ চাদরটি কাকে দেব? লোকেরা চুপ রইল । তিনি বললেন, উম্মে খালেদকে ডেকে আন। সে এলে তিনি তাকে চাদরটি পরিয়ে দিয়ে বললেন, এটাকে পরে পুরানো করা উচিত। উম্মে খালেদের বয়স এত কম ছিল যে, তাকে কোলে করে আনা হয়েছিল। চাদরে যে বুটা ছিল, এগুলো দেখিয়ে রাসূলেপাক (সা.) তাকে বললেন, এগুলো সোনা, এগুলো সোনা, এগুলো সোনা। একজন সাহাবি বলেন, আমি শৈশবে আনসারদের খেজুরবাগানে ঢুকে ঢিল ছুড়ে খেজুর পেড়ে খেতাম। একদিন বাগানের মালিক আমাকে ধরে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দরবারে নিয়ে গেল । তিনি আমাকে শান্ত স্বরে বললেন, যে খেজুরগাছের তলায় এমনি পড়ে, সেগুলো কুড়িয়ে খেয়ো। গাছে ঢিল ছুড়ো না। এ কথা বলে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে আমাকে দোয়া করে দিলেন।

মা এবং শিশুর স্নেহ-ভালোবাসার দৃশ্য ও ঘটনাবলি রাসূলেপাক (সা.)-কে খুবই আকর্ষণ করত। একবার একজন গরিব মহিলা হযরত আয়েশা (রা.)-এর কাছে এলো। দুটি শিশুকন্যাও তার সঙ্গে ছিল। তখন হযরত আয়েশা (রা.)-এর কাছে কিছুই ছিল না । একটি খেজুর মাটিতে পড়েছিল। তা উঠিয়ে তিনি বাচ্চাদের দিলেন। মহিলাটি ঐ খেজুর দু ভাগ করে শিশু দুটিকে দিল। এমন সময় রাসূলেপাক (সা.) গৃহে ঢুকলেন। হযরত আয়েশা (রা.) এই ঘটনা তাঁকো বললেন। তিনি শুনে বললেন, আল্লাহপাক যার মধ্যে সন্তানদের মহব্বত প্রদান করেছেন, সে যদি এই দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করে তাহলে দোজখ থেকে নিরাপদ থাকবে । হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, রাসূলেপাক (সা.) বলতেন, আমি যখন নামাজ আরম্ভ করি তখন মন চায় যে, তা লম্বা করি; কিন্তু যখন কোনো শিশুর কান্না শুনতে পাই, তখন তা সংক্ষিপ্ত করি। কারণ তার মা হয়তো এর জন্য কষ্ট পাবে। এই মহব্বত ও স্নেহ শুধু মুসলমান শিশুদের জন্য সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং মুশরিকদের শিশুদের জন্যও বর্তমান ছিল। একবার যুদ্ধে কিছু বাচ্চা নিহত হয়েছিল। তিনি সেটা জানতে পেরে খুবই অসন্তুষ্ট হলেন। এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সা.)! এরা মুশরিকদের সন্তান । তিনি বললেন, মুশরিকদের সন্তান তোমাদের চেয়ে উত্তম। খবরদার! কখনো বাচ্চাদেরকে হত্যা করবে না । প্রতিটি সন্তানই আল্লাহর স্বভাবধর্মের ওপরই পয়দা হয়। তাঁর অভ্যাস ছিল এই যে, মৌসুমের নতুন ফল যখন তাঁর খেদমতে পেশ করা হতো, তখন উপস্থিত লোকদের মধ্যে যে সর্বাপেক্ষা কনিষ্ঠ হতো তাকেই তা প্রদান করতেন। একবার তিনি বাচ্চাদের আদর করছিলেন। এমন সময় এক বেদুইন উপস্থিত হলো এবং বলল, তোমরা বাচ্চাদেরকে আদর কর, আমার দশটি বাচ্চা রয়েছে কিন্তু কাউকে আমি কোনোদিন আদর করিনি। রাসূলেপাক (সা.) বললেন, আল্লাহপাক যদি তোমার থেকে শিশুদের ভালোবাসা ছিনিয়ে নিয়ে থাকেন তাহলে আমি কী করতে পারি? জাবের বিন সামুরাহ একজন সাহাবি ছিলেন। তিনি নিজের শৈশবের ঘটনা বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন, একবার আমি রাসূলেপাক (সা.)-এর পেছনে নামাজ আদায় করলাম । নামাজ শেষে তিনি গৃহের দিকে রওয়ানা হলেন এবং আমিও তাকে অনুসরণ করলাম। আমার সঙ্গে আরো কিছু ছেলেমেয়ে জড়ো হলো। তিনি সবাইকে আদর করলেন। আমাকেও স্নেহ করলেন। হিজরতের প্রাক্কালে যখন তিনি মদিনায় প্রবেশ করছিলেন, তখন আনসারদের ছোট ছোট মেয়েরা দরজা খুলে গান গাইছিল । যখন তিনি পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন বললেন, হে আমিও মেয়েরা! তোমরা আমাকে ভালোবাস? সবাই বলল, হাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সা.)! তিনি বললেন, তোমাদেরকে ভালোবাসি । হযরত আয়েশা (রা.)-এর বিবাহ হয়েছিল খুবই অল্প বয়সে। মহল্লার মেয়েদের সঙ্গে তিনি খেলাধুলা করতেন। রাসূলেপাক (সা.) প্রবেশ করলে মেয়েরা ছুটে পালিয়ে যেত। তিনি তাদেরকে উৎসাহ দিতেন এবং খেলা করতে অনুমতি দিতেন ।

উত্তর দিচ্ছেন : আল্লামা শিবলী নোমানী ও সৈয়দ সুলাইমান নাদভী


বিভাগ : ধর্ম দর্শন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

শুক্রবার হজে যাচ্ছেন ৪ হাজারের বেশি বাংলাদেশি
ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নেপথ্যকথা
মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জীর বর্ণাঢ্য জীবন
‘মহান আল্লাহর নিদর্শন নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য’
রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর আখলাক
আরও
X
  

আরও পড়ুন

বৈশ্বিক শান্তি রক্ষায় পাক-ভারত যুদ্ধ কাম্য নয়: ববি হাজ্জাজ

বৈশ্বিক শান্তি রক্ষায় পাক-ভারত যুদ্ধ কাম্য নয়: ববি হাজ্জাজ

পরিচয় মেলেনি সেই নবজাতকের, বেড়ে উঠবে শিশু নিবাসে

পরিচয় মেলেনি সেই নবজাতকের, বেড়ে উঠবে শিশু নিবাসে

ব্যাপক দরপতনে শেয়ারবাজার, দু’দিন এভাবে থাকলে অস্তিত্ব সংকটে পড়বে বাজার

ব্যাপক দরপতনে শেয়ারবাজার, দু’দিন এভাবে থাকলে অস্তিত্ব সংকটে পড়বে বাজার

মোরেলগঞ্জে গণপিটুনিতে নিহত সাফায়েতের পরিবারের পাশে বিএনপি নেতা কাজী শিপন

মোরেলগঞ্জে গণপিটুনিতে নিহত সাফায়েতের পরিবারের পাশে বিএনপি নেতা কাজী শিপন

মাস্টারকার্ড, এমটিবি’র সঙ্গে যৌথভাবে রেনেটা’র জন্য বিজনেস ক্রেডিট কার্ড সলিউশন প্রদান

মাস্টারকার্ড, এমটিবি’র সঙ্গে যৌথভাবে রেনেটা’র জন্য বিজনেস ক্রেডিট কার্ড সলিউশন প্রদান

আ.লীগের কোন্দলে আহসান উল্লাহ খুন, প্রতিহিংসার শিকার বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম: আলোচনায় বক্তারা

আ.লীগের কোন্দলে আহসান উল্লাহ খুন, প্রতিহিংসার শিকার বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম: আলোচনায় বক্তারা

পাকিস্তান ও ভারতকে হুঁশিয়ারি আফগানিস্তানের

পাকিস্তান ও ভারতকে হুঁশিয়ারি আফগানিস্তানের

ডিমললায় হাজার হাজার মানুষের পাড়া পারের একমাত্র উপায় জোড়া তালি দেওয়া কাঠের সাঁকো

ডিমললায় হাজার হাজার মানুষের পাড়া পারের একমাত্র উপায় জোড়া তালি দেওয়া কাঠের সাঁকো

ভারতের ভূপাতিত পাঁচ যুদ্ধবিমানের তিনটি রাফাল: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী

ভারতের ভূপাতিত পাঁচ যুদ্ধবিমানের তিনটি রাফাল: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের নামে আন্দোলনে বাঁধাদানের মামলা

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের নামে আন্দোলনে বাঁধাদানের মামলা

খেলতে না পারার শঙ্কায় দুই দিন কেঁদেছিলেন মার্তিনেজ

খেলতে না পারার শঙ্কায় দুই দিন কেঁদেছিলেন মার্তিনেজ

মহিপুরে কলেজ ছাত্রদলের কমিটিতে ছাত্রলীগ নেতা, নিন্দার ঝড়

মহিপুরে কলেজ ছাত্রদলের কমিটিতে ছাত্রলীগ নেতা, নিন্দার ঝড়

পেকুয়ায় হিটষ্ট্রোকে ১ জনের মৃত্যু

পেকুয়ায় হিটষ্ট্রোকে ১ জনের মৃত্যু

সোনারগাঁওয়ে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে যুবক গ্রেফতার

সোনারগাঁওয়ে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে যুবক গ্রেফতার

বহিষ্কৃত নেতাদের নিয়ে পথসভা উপজেলা বিএনপির সংবাদ সম্মেলন

বহিষ্কৃত নেতাদের নিয়ে পথসভা উপজেলা বিএনপির সংবাদ সম্মেলন

তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ঢাকা জেলা যুবদলের লিফলেট বিতরণ

তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ঢাকা জেলা যুবদলের লিফলেট বিতরণ

ঋণের কিস্তি নিয়ে পরিশোধ নিয়ে স্বামীর সাথে ঝগড়া।। বগুড়ায় গৃহবধূর আত্মহত্যা

ঋণের কিস্তি নিয়ে পরিশোধ নিয়ে স্বামীর সাথে ঝগড়া।। বগুড়ায় গৃহবধূর আত্মহত্যা

ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ যুক্তরাজ্যের

ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ যুক্তরাজ্যের

শতবর্ষী গাছের উপর নির্মম হামলা অভিযোগ 'শিরক'

শতবর্ষী গাছের উপর নির্মম হামলা অভিযোগ 'শিরক'

১০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্ল্যান্ট স্থাপনে রবি, ফ্লোসোলার ও গ্রিনপাওয়ার এশিয়ার ত্রিপক্ষীয় চুক্তি

১০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্ল্যান্ট স্থাপনে রবি, ফ্লোসোলার ও গ্রিনপাওয়ার এশিয়ার ত্রিপক্ষীয় চুক্তি